সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

যেখানে একবার যেয়ে মন ভরে না!





যেখানে একবার যেয়ে মন ভরে না!


 মদমহেশ্বর ট্রেক মদমহেশ্বর ট্রেক

উত্তরখণ্ডের গাড়োয়াল হিমালয়ের কোলে এক ছোট্ট গ্রাম, নাম তার মানসুনা ভিলেজ। হিমালয়ের আর দশটা পাহাড়ি গ্রামের মতই সাধারণ এ গ্রাম টাকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করছে মর্যাদাপূর্ণ এক মন্দির। ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংগ হয়ে উঠেছে এই গ্রাম। কারণ পঞ্চ কেদারের একটা অংশ রয়ে গেছে এখানেই। গাড়োয়াল হিমালয়ের পাঁচ শিব মন্দিরের একটি এখানেই, কেও পাঁচ কেদার দেখতে চাইলে তাকে এখানে আসতেই হবে, তবে তার থেকেও বড় কথা, এই ট্রেকের পথে ঘাটে প্রকৃতি যে অকৃপণ হাঁতে সৌন্দর্য্য ছিটিয়েছে তা দেখতে হলেও আসতে হবে এখানে। এই ট্রেকের ব্যাপারে ট্রেকারদের বহুল প্রচলিত মন্তব্য হল- এখানে একবার যেয়ে মন ভরে না, বারবার ফিরে যেতে হয় এই ট্রেকে। ভারতের এক জনপ্রিয় গ্রুপে ‘কোন ট্রেকে তারা বারংবার ফিরে যেতে চান’ এমন প্রশ্ন করা হলে বেশিরভাগ উত্তরে আসে মদমহেশ্বর এর নামটি। কি এমন আছে এই ট্রেকে?  
মদমহেশ্বর এর গল্পটা শুরু অনেক আগে, সেই মহাভারতের যুগে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে জয়লাভ করতে কৌরবদের হত্যা করলেন পঞ্চপান্ডব, কিন্তু এতে করে তারা ভাই হত্যা ও ব্রাহ্মণ হত্যার মত গুরুতর পাপে পাপী হলেন। অনেক রক্ত ঝরিয়ে যুদ্ধ তো একসময় শেষ হল, কিন্তু পান্ডব ভাইয়েরা নিজেদের মনের শান্তি হারিয়ে ফেললেন চিরতরে। 
স্বজনদের হাতে রাজ্য পরিচালনার ভার ছেড়ে দিয়ে পাঁচ ভাই বেড়িয়ে পড়লেন শিব এর খোঁজে। উদ্দেশ্য তার আশীর্বাদ নিয়ে কিছুটা হলেও মনের শান্তি ফিরে পাওয়া। অনুশোচনার আগুন দগ্ধ হয়ে কিছুটা হলেও পাপমোচন।  প্রথমেই তারা গেলেন কাশী। কারন এটাই শিবের ধাম নামে পরিচিত, এখানেই আছে অসংখ্য শিব মন্দির। কিন্তু শিব তাদের কেবলি এড়িয়ে যাচ্ছিলেন, এরকম ভয়ংকর পাপবিদ্ধ মানুষকে আশীর্বাদ করা সম্ভব নয় তার পক্ষে। 
কাশী তে শিব কে না পেয়ে তারা গেলেন গাড়োয়াল হিমালয়ে, সেখানে দুই পাহাড়ের মাঝামাঝি দাড়িয়ে তারা দেখলেন গুপ্ত কাশীর কাছাকাছি এক বিশাল ষাড়। পঞ্চপান্ডবের এক পান্ডব ভীম দর্শনমাত্র চিনে ফেললেন যে এই ষাড়ের ছদ্মবেশে লুকিয়ে আছেন স্বয়ং শিব! তড়িৎ ছুটে যেয়ে তিনি ষাড়ের লেজ ও পেছনের পা জড়িয়ে ধরলেন। 
শিব তৎক্ষণাৎ হাওয়ায় মিলিয়ে যান, এবং খন্ডবিখন্ড হয়ে পুনরায় আবির্ভুত হন। কেদারনাথে তার কুজ আবির্ভুত হয়, বাহুদ্বয় তুঙ্গনাথ এ, চেহারা রুদ্রনাথ এ, চুল ও মাথা কল্পেশর এ এবং নাভি ও পেট আবির্ভূত হয় মদমহেশ্বর এ।  পান্ডব ভাইয়েরা এই পাচজায়গাতেই মন্দির স্থাপন করে, যা এখন পাচকেদার নামে তীর্থস্থান হিসেবে সুপরিচিত।
এই পাচকেদার এর অন্যতম এক কেদার হল মদমহেশ্বর। 
মন্দির এ তীর্থ দর্শন ছাড়াও আর একশ্রেনীর লোক আসে এই বরফ শীতল পাথুড়ে ভূমিতে বহু পথ মাড়িয়ে, তারাও তীর্থ দর্শনেই আসে, কিন্তু তাদের তীর্থ হল পাহাড়, প্রকৃতি।  ধর্মীয় মিথ কে ছাপিয়ে  এই পাহাড়ের এক আলাদা আকর্ষনী শক্তি আছে, যা ট্রেকারদের টেনে নিয়ে আসে এই পথে, বারবার।  
মদমহেশ্বর এর পুরো ট্রেক যেন হিমালয়ের সবটুকু সৌন্দর্য্য বুকে জড়িয়ে স্থানু হয়ে আছে এখানটায়। কি নেই এই পথে, তুষার ঢাকা বিশাল সব শুভ্র পাহাড়, নীল জলের সরোবর, আর আদিগন্ত বিস্তৃত চোখ ধাঁধানো সবুজ, আছে মেঘ পাহাড়ের মিতালি। 
একটি রোদঝলমল দিনে মদমহেশ্বর মন্দির। ছবি- Sumit Pantf
একটি রোদঝলমল দিনে মদমহেশ্বর মন্দির। 
ট্রেইল। ছবি- Varun Shiv Kapur
ট্রেক রুটে যেতে চোখে পড়বে এমন মেঘের খেলা। ছবি- euttaranchal.com
ট্রেক রুটে যেতে চোখে পড়বে এমন মেঘের খেলা।
উপর থেকে মদমহেশ্বর এর চিত্র

উপর থেকে মদমহেশ্বর এর চিত্র

মন্দির থেকে চৌখাম্বা পিক এর দৃশ্য

মন্দির থেকে চৌখাম্বা পিক এর দৃশ্য

ট্রেইলে কোথাওট্রেইলে কোথাও
পথে পরবে নীল জলের হ্রদ পথে পরবে নীল জলের হ্রদ
মদমহেশ্বর গঙ্গা নদী। ছবি-Varun Shiv Kapur

মদমহেশ্বর গঙ্গা নদী।

বনতলী তে গঙ্গা ও স্বরস্বতী নদীর মিলন স্থল

বনতলী তে গঙ্গা ও স্বরস্বতী নদীর মিলন স্থল

মেঘে ঢাকা পাহাড়। ছবি- : Sumit Pantf
মেঘে ঢাকা পাহাড়। 
ট্রেইল। ছবি- Sumit Pantf
মদমহেশ্বর সমতল থেকে ৩৪৯৭ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। তাই এই ট্রেকে যেতে হলে মনোবল এর পাশাপাশি উচ্চতায় মানিয়ে নেয়ার ও ব্যাপার আছে। অপরদিকে, এই মন্দির বছরে মাত্র ৬ মাস খোলা থাকে ( মে থেকে অক্টোবর), তাই যাওয়ার আগে এই বিষয়গুলো একটু খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়ে যাওয়া উচিৎ হবে। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ দুর্ঘটনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।

বাংলাদেশের সকল রাজবাড়ী ও জমিদার বাড়ীগুলির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্হা কি (ভিডও সহ )