জিওর্দানো ব্রুনো সত্যি কথা বলার কারনে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করাহয় যে বিজ্ঞানীকে -
এই মহাবিশ্বের মতো আরো মহাবিশ্ব আছে, পৃথিবী গোল, সূর্য এই মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় এবং এটি একটি নক্ষত্র ছাড়া আর কিছু নয়"- এই ধারণা পোষণ করা।
৪১৩ বছর আগে ইতালির দার্শনিক, গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ
গিয়োরদানো ব্রুনোকে খ্রিস্টান চার্চের নির্দেশে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় খ্রিস্ট ধর্মের
কথিত নীতিমালার বিরোধী বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সংক্রান্ত বক্তব্য রাখার দায়ে।
তার ওই বক্তব্যটি ছিল এই বৈজ্ঞানিক সত্য যে সূর্য
হচ্ছে অবশ্যই গতিশীল একটি নক্ষত্র। এ ছাড়াও গোটা বিশ্বে রয়েছে অসংখ্য গ্রহ।
ব্রুনো জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ে মুসলিম মনীষী ও বিজ্ঞানীদের লেখা বই পড়ে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। এইসব বই আরবী থেকে ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়েছিল।
ব্রুনো তার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সংক্রান্ত বক্তব্যগুলো প্রত্যাহার করে নিতে অস্বীকার করায় ততকালীন ক্যাথলিক চার্চ কর্তৃপক্ষ তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এর আগে এখন থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে খ্রিস্টান গির্জা কর্তৃপক্ষের একই ধরনের বর্বরতার মুখে জীবন বাঁচানোর জন্য আপোষ করতে বাধ্য হয়েছিলেন বিখ্যাত ইতালিয় বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি।
ব্রুনো জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ে মুসলিম মনীষী ও বিজ্ঞানীদের লেখা বই পড়ে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। এইসব বই আরবী থেকে ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়েছিল।
ব্রুনো তার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সংক্রান্ত বক্তব্যগুলো প্রত্যাহার করে নিতে অস্বীকার করায় ততকালীন ক্যাথলিক চার্চ কর্তৃপক্ষ তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এর আগে এখন থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে খ্রিস্টান গির্জা কর্তৃপক্ষের একই ধরনের বর্বরতার মুখে জীবন বাঁচানোর জন্য আপোষ করতে বাধ্য হয়েছিলেন বিখ্যাত ইতালিয় বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি।
বিজ্ঞানীরাও মানুষ। সাধারণ মানুষের মতো তারাও
মাঝে মাঝে দ্বন্দ্বে মেতে ওঠেন। তাদের কাজ-কারবার বড় বড় ও বিজ্ঞান নিয়ে। তাদের
দ্বন্দ্বের কারণও তাই বিজ্ঞানের বড় বড় বিষয়। বিজ্ঞানের ইতিহাসে প্রথম দ্বন্দ্বটা
বাধে অ্যারিস্টোটলকে ঘিরে। পৃথিবী গোলাকার এ ধারণা অ্যারিস্টোটলই প্রতিষ্ঠিত করেন।
কিন্তু তিনি মনে করতেন, পৃথবী স্থির এবং একে কেন্দ্র করে সূর্য, গ্রহ ও উগ্রহগুলো
ঘুরছে। সে যুগে অ্যারিস্টোলে প্রভাব ছিল অকল্পনীয় মাত্রায়। ক্ষমতার দাপট নয়।
জ্ঞান-গরিমায় সে কালে তার সমতূল্য কেউ ছিল না। স্বয়ং সম্রাট পর্যন্ত
অ্যারিস্টোটলের কথা অন্ধের মতো মেনে নিতেন।
অ্যারিস্টোটলের মৃত্যুর ১২ বছর পর জন্ম আরেক
গ্রিক পণ্ডিত অ্যারিস্টার্কাসের। তিনি অ্যারিস্টোটলের মতের বিরোধিতা করেন। বলেন,
পৃথিবী নয়, সূর্যই মহাবিশ্বের কেন্দ্র। অনেক দার্শনিকই তখন অ্যারিস্টার্কাসের নতুন
তত্ত্ব মেনে নিতে পারেননি। ক্লিনথেসের মতো বিখ্যাত দার্শনিকও তাকে ধিক্কার দেন।
১৩০ খ্রিষ্টাব্দে আরেক বিখ্যাত দার্শনিক টোলেমি অ্যারিস্টার্কাসের ধারণা বাতিল করে
দেন। পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন অ্যারিস্টোটটোলের পৃথিবীকেন্দ্রীক মহাবিশ্বের ধারণা।
মধ্যযুগ পর্যন্ত গ্যালিলিও-টোলেমির তত্ত্বকেই
মেনে চলত সবাই। সে সময় অ্যারিস্টোটলের তত্ত্বে আবার আঘাত হানেন পোল্যান্ডের
গণিতবিদ নিকোলাস কোপার্নিকাস। তিনি মনে করতেন, মহাবিশ্ব সম্পর্কে
অ্যারিস্টার্কাসের ধারণাই ঠিক। সূর্যকে কেন্দ্র করেই পৃথিবী ও গ্রহ-উপগ্রহগুলো
ঘুরছে। এ নিয়ে বিস্তারিত একটা বই লেখেন তিনি। কিন্তু সেটা ছাপতে সাহস করেননি।
কারণ, সে সময় বেশ কটি ধর্মে মহবিশ্ব সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা ছিল তা অ্যারিস্টোটলের
ধারণার মতোই। তাই নতুন মত ধর্ম যাজকরা ভালো ভাবে নাও নিতে পারেন। কোপার্নিকাস ১৫৪৩
সালে মৃত্যুর কিছুদিন আগে বইটা প্রকাশ করেন। তখন নিষিদ্ধ করা হয় কোপার্নিকাসের বই।
পরবর্তীকালে কোপার্নিকাসের মতবাদ প্রচার করার
জন্য জিওর্দানো ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হয়। আরেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও
গ্যালিলিওকে দেয়া হয় আমৃত্যু কারাদণ্ড।
আল বিরুনির মত প্রখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানীদের গবেষণা-কর্ম অনুসরণ করে তিনি জানান যে সূর্য হচ্ছে সৌর জগতের ও পৃথিবীসহ সব গ্রহের মূল কেন্দ্র এবং এইসব গ্রহ সূর্যের চারদিকে ঘুরে। ফলে রোমান চার্চ বা গির্জা কর্তৃপক্ষ গ্যালিলিও'র বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগ আনে এবং তাকে হয় এই মত ত্যাগ করার অথবা মৃত্যুদণ্ড বরণ করার দুটি পথের মধ্যে যে কোনো একটিকে বেছে নিতে হবে বলে জানিয়ে দেয়। এ অবস্থায় গ্যালিলিও প্রাণভয়ে তার বৈজ্ঞানিক মতামত বাতিল বলে ঘোষণা করেন। গ্যালিলিও মারা যান ১৬৪২ সনে। তিনি বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে আল হাইসামের উদ্ভাবিত লেন্স ব্যবহার করে গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণের জন্য টেলিস্কোপ বা দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন।
মুসলিম বিজ্ঞানীদের লেখা গবেষণা-কর্ম হতেই তিনি এই সত্য তুলে ধরেন যে চাঁদে রয়েছে সমতল ও উচ্চ ভূমি এবং প্রতিটি ছায়াপথে রয়েছে ছোট ও বড় অনেক নক্ষত্র।
গ্যালিলিও'র কয়েক শত বছর আগে বিশ্বনবী (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইত (রাঃ)'র অনুসারী ইরানর প্রখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ও মনীষী আল বিরুনি (আবু রাইহান আল বিরুনি) সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর বৃত্তাকার আবর্তনের বিষয়টি প্রমাণ করেছিলেন। পৃথিবী যে (মোটামুটি) গোলাকার তাও তিনি প্রমাণ করেছিলেন।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম জ্ঞান-বিজ্ঞানের ওপর অশেষ গুরুত্ব আরোপ করায় এবং অতীতের মুসলিম রাজা-বাদশাহরা বিজ্ঞানীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন বলে মুসলিম মনীষী ও বিজ্ঞানীরা এক সময় জ্ঞান-বিজ্ঞান সবচেয়ে বেশি অগ্রসর ছিলেন।
১৬০০ সালের ২০ জানুয়ারি পোপ ৮ম ক্লেমেন্ট ব্রুনোকে একজন ধর্মদ্রোহী বলে রায় দেন ও তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে রোমের কেন্দ্রীয় বাজার Campo de' Fioriএ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে সবার সামনে খুঁটির সাথে বেঁধে পুড়িয়ে মারা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল- "এই মহাবিশ্বের মতো আরো মহাবিশ্ব আছে, পৃথিবী গোল, সূর্য এই মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় এবং এটি একটি নক্ষত্র ছাড়া আর কিছু নয়"- এই ধারণা পোষণ করা।
বর্তমান যুগকে বলা হয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগ। পৃথিবীতে এখন প্রতিদিন প্রতি মূহুর্তে হয়ে চলেছে নিত্য-নতুন উদ্ভাবন আর আবিষ্কার। আর এদের পেছেনে রয়েছেন অসংখ্য নাম-না-জানা কিংবা চেনা-জানা বিজ্ঞানীর অবদান। আবার বৈজ্ঞানিক সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে ধর্মগুরু, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের কর্ণধারদের রোষানলে পড়ে জীবন হারানো বিজ্ঞানীর সংখ্যাও কম নয়। আজকে আমরা সেরকমই এক নিবেদিতপ্রাণ বিজ্ঞানী সম্পর্কে জানবো, যাঁকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। তাঁর নাম জিওদার্নো ব্রুনো। তিনি ছিলেন একাধারে দার্শনিক, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও জ্যোতিষী। ব্রুনোর জন্ম ১৫৪৮ সালে ইতালির নেপলস(সেই সময়ের কিংডম অব নেপলস) এর ‘নোলা’তে। তাঁর বাবার নাম ছিল জিওভান্নি ব্রুনো, আর মা ছিলেন ফ্রলিসা সভোলিনো। একটু বড় হলে তাঁকে শিক্ষাগ্রহণের জন্য নেপলসে পাঠানো হয়। প্রথমে তিনি অগাস্টিনিয়ান মঠে শিক্ষাগ্রহণ করেন। ১৭ বছর বয়সে তিনি San Domenico Maggiore মঠে যান এবং সেখানেই তিনি ‘জিওর্দানো’ নাম গ্রহণ করেন। এটি তিনি রাখেন মঠে তাঁর মেটাফিজিক্সের শিক্ষক জিওদার্নো ক্রিস্পোকে সম্মান দেখিয়ে। ১৫৭২ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি পাদ্রী হিসেবে মনোনীত হন। ব্রুনো তাঁর অসাধারণ স্মৃতিশক্তির জন্য সবার কাছেই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তাঁর মুক্ত ও অনুসন্ধানী চিন্তা এবং সেযুগে গির্জা কর্তৃক বাজেয়াপ্ত বই পড়ার বিষয়টি তাঁকে সমস্যার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। ১৫৭৬ সাল থেকে ব্রুনো ইতালির বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। এসময়েই তিনি তাঁর রচনা On The Signs of the Times প্রকাশ করেন। ১৫৭৯ সালে নানা জায়গা ঘুরে জেনেভাতে পৌঁছান। জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক Antoine de la Faye এর লেখার প্রতিবাদ করে এক লেখা প্রকাশ করার অপরাধে ব্রুনো ও তাঁর প্রকাশক গ্রেপ্তার হন। তাঁকে ক্ষমা চাইতে বলা হয় ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পবিত্র হতে বলা হয়। তিনি এর কোনটিই করতে অস্বীকৃতি জানান ও জেনেভা ত্যাগ করেন।
এরপর তিনি ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে লিও তে পৌঁছান। সেখান থেকে যান টুলুজে। এখানে তিনি ধর্ম তত্ত্বের উপর ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। সেখানকার ছাত্ররা তাকে দর্শন শাস্ত্রের লেকচারার হিসেবে মনোনীত করে। ১৫৮১সালে তিনি প্যারিসে আসেন। এখানে তিনি ঈশ্বর ও ধর্মতত্ত্ব নিয়ে ত্রিশটির মত বক্তৃতা দেন। ধীরে ধীরে তিনি তাঁর বাগ্মীতা ও অসাধারণ স্মৃতিশক্তির জন্য খ্যাতি লাভ করতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর মেধা রাজা ৩য় হেনরির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। প্যারিসে থাকাকালীন ব্রুনো একের পর এক প্রকাশ করেন De umbris idearum (On The Shadows of Ideas, ১৫৮২), Ars Memoriae (The Art of Memory, ১৫৮২) ও Cantus Circaeus (Circe's Song, ১৫৮২). এছাড়া তিনি তৎকালীন কিছু প্রচলিত দার্শনিক ধারণাকে হাস্য-রসাত্বকভাবে তুলে ধরেন তাঁর লেখা বই Il Candelaio (The
Torchbearer, ১৫৮২)তে। ১৫৮৩ সালে ব্রুনো ইংল্যান্ডে গমন করেন। সেখানে তিনি কবি ফিলিপ সিডনির সাথে পরিচিত হন। ব্রুনো পরবর্তীতে তাঁর লেখা দুটি বই ফিলিপকে উৎসর্গ করেছিলেন। ব্রুনো অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দেন। কিন্তু ধীরে ধীরে অনেকের সাথে তাঁর মতের অমিল হতে শুরু করে। বিশেষ করে লিংকন কলেজের রেক্টর জন আন্ডারহিল ও অক্সফোর্ডের বিশপ (পরবর্তীতে আর্চ বিশপ অব ক্যান্টারব্যারি) জর্জ এবটের সাথে ব্রুনোর দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। এবট প্রায়ই ব্রুনোকে খোঁচা মারতেন কারণ ব্রুনো বিশ্বাস করতেন পৃথিবী ‘গোল’। সেযুগে মানুষের ধারণা ছিল পৃথিবী ‘সমতল’। এছাড়া তিনি এই অভিযোগ আনেন যে, ব্রুনোর লেখাগুলো আরেক ইতালীয় জ্যোতির্বিদ মারশিলো ফিচিনোর কাছ থেকে চুরি করে লেখা।
যাই হোক, এর মাঝেও ব্রুনো তাঁর লেখালেখি চালিয়ে যান। একে একে প্রকাশিত হয় মহাশূন্য নিয়ে তাঁর লেখা La Cena de le Ceneri (The Ash Wednesday Supper, ১৫৮৪), De la Causa, Principio et Uno (On Cause, Principle and Unity,
১৫৮৪), De l'Infinito Universo et Mondi (On the
Infinite Universe and Worlds, ১৫৮৪) as well as Lo
Spaccio de la Bestia Trionfante (The Expulsion of the Triumphant Beast, ১৫৮৪) and De gl' Heroici Furori (On Heroic Frenzies, ১৫৮৫)। এর মাঝে প্রথম লেখাটি নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিজের যুগের চেয়ে এগিয়ে থাকা বৈপ্লবিক ধ্যান-ধারণার কারণে ব্রুনো ধীরে ধীরে তাঁর বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের হারাতে শুরু করেন। ১৫৮৫ সালে তিনি আবার ফ্রান্সে ফিরে যান। এবার পরিস্থিতি তাঁর অনুকূলে ছিল না। তাঁর লেখা বইগুলো নিয়ে আগে থেকেই বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। ফ্রান্সে এসে তিনি গণিতবিদ ফিব্রিজো মরদেন্তের সাথে ভয়াবহ বাকবিতণ্ডাতে জড়িয়ে পড়েন। বিষয় ছিল ফিব্রিজোর উদ্ভাবিত ‘ডিফ্রেন্সিয়াল কম্পাস’। ব্রুনো ফ্রান্স থেকে চলে গেলেন জার্মানী। তিনি মারবার্গ থেকে যান উইটেনবার্গ। সেখানে মহান দার্শনিক এরিস্টটলের উপর বক্তব্য দেন। এরিস্টটলের অনেক তত্ত্বের সাথে তিনি একমত ছিলেন না। যে কারণে তাঁকে সেখানে কেউ পছন্দ করে নি। জার্মানীতে থাকাকালীন ১৫৮৯ থেকে ৯০ সাল নাগাদ ল্যাটিন ভাষায় তাঁর লেখাগুলো প্রকাশিত হয় যার মাঝে ছিল De Magia (On Magic), Theses De Magia (Theses
On Magic) and De Vinculis In Genere (A General Account of Bonding). All these
were apparently transcribed or recorded by Besler (or Bisler) . এছাড়া প্রকাশিত হয় De Imaginum,
Signorum, Et Idearum Compositione (On The Composition of Images, Signs and
Ideas, ১৫৯১). ১৫৯১ সালে তিনি ইতালি ফিরে আসেন। আসার কিছুদিন পরই জিওভাননি মচেনিগো নামে এক ব্যক্তি তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ম ও ঈশ্বরে বিরোধীতার অভিযোগ আনেন। ১৫৯২ সালের ২২ মে ব্রুনোকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে ভেনিশিয়ান ইনকুইজিশনের মুখোমুখি করা হয়। ইনকুইজিশন হলো রোমান ক্যাথলিক গির্জার একটি বিচার ব্যবস্থা, যেখানে ধর্ম অবমাননাকারীদের বিচার করা হতো। ব্রুনো খুব দক্ষতার সাথে তাঁর বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করেন ও তাঁর বিরোধীতাকারীদের যুক্তি খণ্ডন করেন। বেশ কয়েক মাস ধরে জেরা চলার পর ১৫৯৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে রোমে পাঠানো হয়। সাত বছর ধরে রোমে ব্রুনোর বিচারকাজ চলতে থাকে। এসময়ে তাঁকে নোনা টাওয়ারে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। সেই মহা ঐতিহাসিক বিচারকাজের গুরত্বপূর্ণ কিছু নথি হারিয়ে গিয়েছে। বেশিরভাগই সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল এবং ১৯৪০ সালে বিচারকাজের সেসময়ের একটি সার-সংক্ষেপ পাওয়া যায়। এতে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত প্রধান অভিযোগগুলো ছিল- (১) ক্যাথোলিক ধর্ম মত ও ধর্মীয় গুরুদের মতের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ (২) খ্রিস্টীয় ধর্মমত অনুসারে স্রষ্টার ত্রি-তত্ত্ববাদ, যীশুর মৃত্যু ও পরে আবার শিষ্যদের কাছে দেখা দেয়ার বিষয়গুলো বিশ্বাস না করা (৩) যীশু ও তাঁর মা মেরিকে যথাযথ সম্মান না করা (৪) এই মহাবিশ্বের মতো আরো মহাবিশ্ব আছে, পৃথিবী গোল, সূর্য এই মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় এবং এটি একটি নক্ষত্র ছাড়া আর কিছু নয়- এই ধারণা পোষণ করা
রোমান ইনকুইজিশনের ইনকুইজিটর কার্ডিনাল বেলারমাইন ব্রুনোকে তাঁর ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে বলেন। কিন্তু ব্রুনো তা করতে অস্বীকৃতি জানান। ১৬০০ সালের ২০ জানুয়ারি পোপ ৮ম ক্লেমেন্ট ব্রুনোকে একজন ধর্মদ্রোহী বলে রায় দেন ও তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায় শুনে ব্রুনো বিচারকদের শাসিয়ে দিয়ে বলেন, “ আপনারা হয়তো আমার সাথে হেরে যাবার ভয়ে আমার বিরুদ্ধে এই রায় দিয়েছেন। আমি এটি গ্রহণ করলাম।‘ ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে রোমের কেন্দ্রীয় বাজার Campo de' Fioriএ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে সবার সামনে খুঁটির সাথে বেঁধে পুড়িয়ে মারা হয়। তাঁর দেহভস্ম এরপর ছড়িয়ে দেয়া হয় টিবের নদীতে। ব্রুনো তাঁর মৃত্যুর পর প্রভূত সম্মান লাভ করেন। মহাশূন্য নিয়ে তাঁর মতবাদই ধীরে ধীরে সবার কাছে সঠিক বলে পরিগণিত হয়। তাঁকে ‘বিজ্ঞানের জন্য শহীদ’ বলে সম্মান জানানো হয়। তাঁর জন্য রইলো অনেক অনেক শ্রদ্ধা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন