রাসুল (সা) এর অসাধারন ভবিষ্যতবাণী



ঠিক বা বেঠিক যাই হোক না কেন, সাধারন মানুষ অনেক ভবিষ্যতবানী করে। আমার মতন একজন ক্ষুদ্র মানুষ বছর দশেক আগে ভবিষ্যতবানী করেছিলাম – ভবিশ্যতে ল্যাপটপের কী-বোর্ড অংশটি বাদ দিয়ে শুধু স্ক্রীনটি থাকবে। সেই জিনিস কিন্তু এখন বাজারে পাওয়া যায়। এভাবে সাধারন লোকের কথা অনেক সময়ে সত্য হয়ে যায়। ওদিকে জ্ঞানী লোকেরা বেশ চিন্তা ভাবনা করে ভবিষ্যতবানী করেন যা অনেক ক্ষেত্রে সত্য হয়ে যায়। বিখ্যাত বা জ্ঞানী, গুনী হলেই যে তার কথা সত্য হবে এমন কোন কথা নেই। অনেক বড় মনিষীর ভবিষ্যতবানী পরবর্তীতে একেবারে উল্টো প্রমাণীত হয়েছে।

নবী রাসুলদের ভবিষতবাণী সাধারন মানুষের মতন নয় আবার মনিষীদের মতনও নয়। সেই ভবিষতবাণী একেবারে অক্ষরে অক্ষরে সত্য হয়। কারন একটাই, তাদের কাছে আল্লাহর কাছ থেকে সরাসরি জ্ঞান আসে। এসব ভবিষতবাণী  তাদের একটা মুজেজা। রাসুল (সা) সর্বশেষ নবী ও রাসুল। তাই ভবিষতবাণী করার দরকার সবচেয়ে বেশী তারই ছিল। সেটা তিনি করেছেনও। বিভিন্ন সাহাবী বিভিন্ন সময় ভবিষত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছেন আর রাসুল (সা) আল্লাহর দেওয়া জ্ঞান থেকে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। ভবিষত দুনিয়া কেমন হবে, কেয়ামতের আগে কেমন হবে এমনকি কেয়ামতের পরে শেষ বিচার কেমন হবে ইত্যাদি বস্তারিত বর্ননা পাওয়া যায় তার হাদিসে। রাসুল (সা) এর এমন কিন্তু ভবিষতবাণীর কথা সবাই জানেন, সেগুলোর কিছু বাস্তবায়নও নিজের চোখেই দেখছেন। তবে এমন কিছু ভবিষতবাণী আছে যেগুলো আসলে কারো কাছ থেকে শিখে বলা যায় না, দেখে বলতে হয়। আল্লাহ কিভাবে রাসুল (সা) কে সেসব দেখিয়েছেন সেটা আল্লাহই ভালো জানেন। এমনই কিছু অবাক করা ভবিষতবাণীর বর্ননা আছে এই লেখাতে।        

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ নামক এক সাহাবীর প্রশ্নের উত্তরে শেষ জামানার মানুষ নিয়ে বিস্তারিত এক বর্ননা দিয়েছিলেন রাসুল (সা)।  সেই বিস্তারিত বর্ননার থেকে বাছাই করা কয়েকটি বিষয় এই লেখাতে তুলে ধরেছি। এগুলো শুনলে আপনার কাছেও মনে হবে সে রাসুল (সা) নিজে জিনিসগুলো দেখেছেন। তবে বিষয়গুলি আলোচনা করার আগে এটা জানা জরুরী যে রাসুল (সা) এর আমলে (৬০০ খ্রিস্টাব্দে) দুনিয়া কি অবস্থায় ছিল। বিস্তারিত বলার দরকার নেই, একটি উদাহরন দিলেই বিষয়টি স্পস্ট হয়ে যাবে। ইটালীর বিজ্ঞানী জিওর্ডানো ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল।  তার অপরাধ ছিল “পৃথিবী সুর্যের চারিদিকে ঘোরে” এই ধারনাটা প্রথমে তিনিই দেন। এই ধারনাটা খ্রিস্টান ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে খাপ খায় না আর সে কারনেই রোমান ধর্মীয় গুরুরা তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করার আদেশ দেন। এই ঘটনাটা ঘটেছিল ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে। সেই আমলেই যদি মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি এতখানি থাকে যে “পৃথিবী সুর্যের চারিদিকে ঘোরে”  এই ধারনা দেবার জন্য একজনকে পুড়িয়ে মারা হয় তাহলে তার ১ হাজার বছর আগে রাসুল (সা) এর আমলের মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি কেমন ছিল সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। আপনারা যত জ্ঞান বিজ্ঞানের কথা শোনের বা লেখা পড়া করেন তার প্রায় সবই আবিস্কার হয়েছে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের পরে। আর যত আধুনিক যন্ত্রপাতি দেখেন তার প্রায় সবই আবিস্কার হয়েছে গত ১০০ বছরের ভেতরে। দেড় হাজার বছর আগে রাসুল (সা) এর আমলে আসলে মানুষ কিছুই জানত না। আরবের লোকদের ধারনা ছিল, দুনিয়াটা হল সমতলভূমি। এর চারপাশে পাহাড় দিয়ে ঘেরা। সেই পাহাড়ের উপরে ভর দিয়ে তাবুর মতন টানানো আছে আকাশ। এমনই একটা সময়ে  রাসুল (সা) এসব অসাধারন ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন।


গান বাজনা বৃদ্ধি পাবে, মানুষের মাথার উপরে গান বাজনা থাকবে

মানুষের আওয়াজ রেকর্ড করে রাখার প্রথম যন্ত্র ফোনোগ্রাফ (গ্রামোফোন বা কলের গান) আর শত বছর আগে আবিস্কার হলেও বাংলাদেশ সেটা জনপ্রিয় হয় বা সাধারন মানুষ দেখতে বা শুনতে পায় ৫০ এর দশকে। সেই সময় আমার বাবা বালক ছিলেন। তিনি বলেছেন যে উঠানের মাঝখানে এই কলের গান বাজানো হোত, আর সারা গ্রামের মানুষ আর চারিদিকে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে বা বসে আশ্চর্য হয়ে গান শুনতো। বালক বয়সে আমার বাবা আর তার বন্ধুরা ভাবতো এই যন্ত্রের ভেতরে নিশ্চয়ই কোন মানুষের মাথা কেটে বসানো আছে যেটা বিভিন্ন গান গায়। কালো যাদুর ব্যাপার আর কি। এই হল মাত্র ৫০ বছর আগের অবস্থা। আমাদের দাদার আমলে তো গ্রামোফোন চোখেই দেখে নি। এর আগে গান বাজনা বলতে ছিল সরাসরি গায়ক আর বাদক সামনে বসিয়ে রেখে আয়োজন। রাসুল (সা) এর আমলেও তেমনই ছিল। সেই আমলে “মাথার উপরে গান বাজনা থাকবে” কথাটা একেবারেই দুর্বোধ্য ছিল। 

মাথার উপরে গান বাজনা রাখার যন্ত্র “হেডফোন” কিন্তু আবিস্কার হয়েছে ৯০ বছর আগে। এর ব্যাবহারও ছিল ব্যাপক। যদিও “মাথার উপরে গান বাজনা থাকবে”  এই জিনিসটা সত্যিকার অর্থে শুরু হয় ৮০ র দশকে যখন সনি কোম্পানী বাজারে “ওয়াক-ম্যান” নিয়ে আসে। গান বাজানোর যন্ত্রটি কোমরে গোজা থাকতো আর মাথার উপরে থাকতো হেডফোন। সেই জিনিস উন্নত হতে হতে, ডিস্ক ম্যান, আই পড ইত্যাদির পরে এখন মোবাইল ফোনেই গান বাজনা ভরে রাখা যায়। মাথার উপরের হেডফোনেরও অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন এমন হেডফোন পাওয়া যায়, যার ভেতরেই মিউজিক প্লেয়ার আছে (ছবিতে দেখুন)। একেবারে শতভাগ, মাথার উপরে গান বাজনা।  


থালাগুলি যোগাযোগ করতে থাকবে

প্রায় দেড়শ বছর আগে রেডিও আবিস্কার হয়। এটাই ছিল প্রথম তারবিহীন  যোগাযোগ। এর পরে টেলিভিশন, স্যাটালাইট মোবাইল ফোন, জিপিএস ইত্যাদি অনেক তারবিহীন যোগাযোগ ব্যাবস্থা চলছে। এসব প্রযুক্তিতে কিন্তু একটা জিনিস আছে যার কোন বিকল্প নেই। সেটা হল, থালা (Dish)। স্যাটালাইট, ভু-উপগ্রহ কেন্দ্র, সিগনাল রিসিভার, এন্টেনা সবকিছুতেই এই থালা আছে। এই ক্ষেত্রে রাসুল (সা) কাছাকাছি কিছু বলেননি। বলেননি “গোল বস্তু”। একেবারে সঠিক শব্দটিই (طبق) ব্যাবহার করেছেন। আপনাকে যদি এখন বলা হয় “পানির বোতল সাইকেল চালাবে”। এই কথাটা যেমন হাস্যকর আর অবিশ্বাস্য, ঠিক তেমনি অবিশ্বাস্য ছিল “থালা যোগাযোগ করবে” কথাটি। কিন্তু এখন এই থালার যোগাযোগ আমরা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি। 


তাদের মাথার চুল হবে উঠের মতন

দুনিয়াতে প্রধানত দুই ধরনের উট আছে। এর এক প্রজাতী Arabian camel অন্যটি  Bactrian camel আমরা সচারচর আরবীয় উটই দেখে থাকি। অপর প্রজাতীর উট Bactrian camel এর গায়ে ভেড়ার মতন লোম থাকে। আরবে ওই ধরনের উট ইরান থেকে আসতো। রাসুল (সা) এই Bactrian camel এর সাথে মানুষের মাথার চুল তুলনা করেছেন। এমন ধরনের চুলের স্টাইল আমরা এখন আধুনিক ফ্যাশন হিসাবে দেখতে পাচ্ছি। এখানে আসলে তেমন নারীদের কথা বলা হয়েছে যারা কাপড় পড়েও উলঙ্গ থাকবে, পুরুষকে আকৃস্ট করার জন্য হেলে দুলে হাটবে এবং তাদের চুল হবে উঠের মতন। রাসুল (সা) বলেছেন এরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমন নারীরাই এখন আন্তঃজাতিক সুপার মডেল ও তারকা। 


ফিতনাহ তাদের সামনে মাদুরের মতন দেখানো হবে  

ফিতনা কথাটি বলতে আমরা বিপদ আপদ বুঝে থাকি। আসলে আরবী এই কথাটির অর্থ হল – পরীক্ষা। আল্লাহ আমাদেরকে বিপদে ফেলে পরীক্ষা করেন দেখেই বিপদকে ফিতনা বলা হয়। বলা হয়েছে “ফিতনা মাদুরের মতন দেখানো হবে আর এভাবেই শয়তান আম্নুষের হৃদয় নস্ট করবে”। আমাদের এই ফিতনা দেখানো মাদুরটি আসলে স্ক্রিন , সিনেমা, টিভি ইত্যাদি। এর উপরে বিভিন্ন অপকর্ম সন্ত্রাস ইত্যাদি দেখিয়ে মানুষের অন্তরকে নস্ট করে ফেলা হচ্ছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে আমেরিকাতে শিশুরা টিভিতেই হাজার খানেক খুন দেখে ফেলে, আর মারামারি ভাংচুর চুরি ডাকাতি ইত্যাদি তো আছেই। এছাড়া এই মাদুরেই (স্ক্রিনে) অনেক রকমের গান বাজনা, সিনেমা, আশ্লীলতা দেখানো হয় যেগুলো ইসলামে নিষিদ্ধ। এভাবে আমাদেরকে পরীক্ষায় বা ফতনায় ফেলে হয় ওই মাদুরের (স্ক্রিন) উপরে ফিতনা দেখিয়ে। দেড় হাজার বছর আগে “মাদুরে ফিতনা দেখানো” জিনিসট আ হাস্যকর আর অবিশ্বাস্য ছিল আর এখন তা সবার ঘরে ঘরে। 


ইমানদার লোককে কুতসিত ছাগলের মতন অপদস্ত করা হবে, যেন কিছুই নয়

মুসলমানেরা বিশ্বের বিভিন্ন যায়গায় নির্যাতিত হচ্ছে। বার্মায় কোন কারন ছাড়াই রোহিঙ্গা মুসলমানদের পুড়িয়ে মাড়ছে, হত্যা করছে। শিশুরাও বাদ পড়ছে না। সিরিয়াতে যুদ্ধে মুসলমানেরা অনাহারে আর আতঙ্কে দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছে। ভারতে মুসলমানেরা সামান্য কারনে মার খাচ্ছে এমনকি নিহতো হচ্ছে। আর অপমানের তো সীমা নেই। তবে “ছাগলের ন্যায় অপদস্থ” কথাটা আসলে এসবের কোন ক্ষেত্রেই খাটে না। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশেই মুসলমানেরা “ছাগু” নাম পায়। দয়া করে ভুল বুঝবেন না। এখানে কোন পক্ষপাতিত্ব বা কোন রাজনীতির কথা বলা হচ্ছে না। যাদেরকে এই  “ছাগু” নামে ডাকা হয় তারা ধোয়া তুলসী পাতা নয়। কিন্তু তারা আল্লাহ বিশ্বাসী, নামাজ পড়ে ও ইসলামের প্রধান রীতিনীতি পালন করে। ছোট বড় পাপ তাদের আছে তবে তারা ইসলামের গোন্ডির ভেতরে থাকে। পক্ষান্তরে যারা এদেরকে “ছাগু” নামে ডাকে তারা ইসলামের ধারে কাছেই নেই। যে কারনেই হোক না কেন, ইমানদারেরা আজ কুতসিত ছাগলের মতন অপদস্থ হচ্ছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, এর উদাহরন হিসাবে আমাদের শতকরা ৯০% মুসলমানের দেশকেই দেখাতে হচ্ছে।      

ওই হাদিসে আরো যে ভবিষ্যতবানী করা হয়েছে

- শিশুরা থাকবে ক্রোধে ভরপুর
- জ্বলন্ত বা অম্ল (এসিড) বৃস্টি হবে
- মন্দ লোক চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে
- মানুষ বিশ্বাসঘাতককে বিশ্বস্ত মনে করবে আর বিশ্বস্তকে বিশ্বাসঘাতক মনে করবে
- যে মিথ্যা বলে তাকে সত্যবাদী বলা হবে আর যা সত্য বলে তাকে মিথ্যাবাদী বলা হবে
- মানুষ পারিবারিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে (মায়ের হাতেই এখন সন্তান খুন হচ্ছে। সম্পর্ক ছিন্নের আর কি বাকী আছে?)
- ভন্ড লোকেরা শাশক হবে আর সবচেয়ে খারাপ লোকেরা বাজার (অর্থনীতি) নিয়োন্ত্রন করবে।
- মসজিদ হবে অলঙ্কার খচিত কিন্তু মানুষের মন হবে কুতসিত। কাজেই মসজিদ সুন্দর হলেও মানুষের আত্মশুদ্ধি হবে না
- সমকামিতা ছড়িয়ে পড়বে  (উন্নত বিশ্বে তো আইন করে সমকামীতা সমর্থন করা হচ্ছে)
- অল্পবয়সী লোকেরা প্রচুর সম্পদশালী হবে। (বিশ্বে এখন শতাধিক মানুষ আছেন যারা ব্যাবসা করে ৩০ বছর বয়সের আগেই বিলিয়নিয়ার হয়েছেন। এক বিলিয়ন – ১০০ কোটি। মাত্র ৫০ বছর আগেও এমন লোক দুনিয়াতে ছিল না)
- মহিলাদের বিপথে নেওয়ার জন্য (সামাজিক) আন্দোলন হবে। (নারী অধীকার, পর্দা বাদ দিয়ে শরীর দেখানোর অধিকার ইত্যাদি সবই এমন আন্দোলন) 
- সভ্যতা ধ্বংস দেখতে পাবে (মানুষের মধ্যে আর সুসভ্য কোন মানবীয় গুন থাকবে না)
- মানুষ ঠাট্টা বিদ্রুপ আর কৌতুক করবে (টেলিভিশন দেখুন, বেশীরভাগ শো ই ঠাট্টা বিদ্রুপ করে)
- মানুষের বিবাহ বহির্ভুত সন্তান বেড়ে যাবে। (আমেরিকাতে এমন সংখ্যা ৫০%)   
- মদ বিভিন্ন নামে বিক্রি হবে (হালাল ওয়াইন, হালাল বিয়ার, ইত্যাদি সবই এখন পাওয়া যায়)  

শেষ জামানার মানুষের ব্যাপারে ভবিষ্যতবানীর সবকিছুই ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। আমরাই সেই শেষ জামানার মানুষ। আল্লাহ আমাদেরকে সকল প্রকারের ফিতনাহ থেকে রক্ষ করুন, দো্যখের আগুন থেকে রক্ষা করুন। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ দুর্ঘটনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।

বাংলাদেশের সকল রাজবাড়ী ও জমিদার বাড়ীগুলির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্হা কি (ভিডও সহ )