নিষিদ্ধ নগরী হলো তিব্বত। কথাটা আধা ভুল তো আধা ঠিক। আসলে নিষিদ্ধ নগরী ছিল তিব্বতের রাজধানী লাসা নগরী। কিন্তু কেন লাসা নিষিদ্ধ ছিল?
তিব্বতের অবস্থান; Source: Wikimedia Commons
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের দক্ষিণ পশ্চিমের এক স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হলো তিব্বত (Tibet)। এ অঞ্চলটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে। এখন যে তিব্বত আমরা দেখি তার সীমারেখা সেই অষ্টাদশ শতকেই নির্ধারিত হয়। ক্ষেত্রফল সুবিশাল- ১২,২৮,৪০০ বর্গ কিলোমিটার। চীনের জিংজিয়াং অঞ্চল বাদ দিলে এটাই সবচেয়ে বড় প্রাদেশিক অঞ্চল। তবে এর জনসংখ্যা ঘনত্ব সবচেয়ে কম, কারণ এলাকাটা খুবই পাহাড়ি, দুর্গম, উঁচু ও বৈরী আবহাওয়ার। একই কারণে এ অঞ্চলের অর্থনীতিও খারাপ। ৭৫ লাখ তিব্বতীর মাঝে ৩০ লাখই বাস করে তিব্বতের বাইরে। গবাদি পশু চড়ানো বাদে কম দক্ষতাই আছে তিব্বতবাসীদের। টুরিজম ব্যবসা ছাড়া অন্য তেমন কিছু থেকে আয় হয় না এখানে। শিক্ষার হারও বেশ কম। অনেক তিব্বতবাসী স্বাধীন হতে চাইলেও তিব্বত এখনও চীনেরই অংশ। তাছাড়া দালাই লামা সংক্রান্ত খবর আর বেইজিং সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহজনিত সংবাদের কারণে প্রায়ই বিশ্বসংবাদের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তিব্বত।
অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলেন একজন প্রখ্যাত পণ্ডিত যিনি পাল সাম্রজ্যের আমলে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং বৌদ্ধধর্মপ্রচারক ছিলেন।অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান (৯৮০-১০৫৩) বৌদ্ধ পন্ডিত, ধর্মগুরু ও দার্শনিক। দশম-একাদশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি পন্ডিত দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী গ্রামে এক রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা কল্যাণশ্রী এবং মাতা প্রভাবতী দেবী।
অতীশ দীপঙ্করের এই স্বাতন্ত্র্য্যসূচক প্রতিকৃতি তিব্বতের কদম্পা আশ্রম থেকে উম্ভূত যা ক্রনস সংগ্রহশালা ১৯৩৩ সালে নিউ ইয়র্কের মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম আর্ট কে উপহার দেয়। এই গ্রাফিক চিত্রণে দেখা যাচ্ছে অতীশ দীপঙ্কর তার বাম হাতে তাল পাতার একটি দীর্ঘ, পাতলা পাণ্ডুলিপি যা সম্ভবত অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ তিনি লিখেছেন এবং তিনি তার ডান হাত দিয়ে শিক্ষণ এর অঙ্গভঙ্গি করছেন তা প্রতীকায়িত করে
গুজ রাজ্যের দ্বিতীয় রাজা ব্যাং-ছুব-য়ে-শেস'-ওদ নাগ-ত্শো-লো-ত্সা-বা-ত্শুল-খ্রিম্স-র্গ্যাল-বা সহ কয়েক জন ভিক্ষুর হাতে প্রচুর স্বর্ণ উপঢৌকন দিয়ে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানকে তিব্বত ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানালে দীপঙ্কর সবিনয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন। এতে নিরাশ না হয়ে ব্যাং-ছুব-য়ে-শেস'-ওদ সীমান্ত অঞ্চলে সোনা সংগ্রহের জন্য গেলে কারাখানী খানাতের শাসক তাঁকে বন্দী করেন ও প্রচুর সোনা মুক্তিপণ হিসেবে দাবী করেন। ব্যাং-ছুব-য়ে-শেস'-ওদ তাঁর পুত্র ল্হা-লামা-ব্যাং-ছুব-ওদকে মুক্তিপণ দিতে বারণ করেন এবং ঐ অর্থ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানকে তিব্বতে আনানোর জন্য ব্যয় করতে বলেন। ল্হা-লামা-ব্যাং-ছুব-ওদ গুজ রাজ্যের রাজা হয়ে গুং-থং-পা নামে এক বৌদ্ধ উপাসককে ও আরো কয়েক জন অনুগামীকে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানকে তিব্বতে আনানোর দায়িত্ব দেন। এরা নেপালের পথে বিক্রমশীলা বিহারে উপস্থিত হন এবং দীপঙ্করের সাথে সাক্ষাৎ করে সমস্ত সোনা নিবেদন করে ভূতপূর্ব রাজা ব্যাং-ছুব-য়ে-শেস'-ওদের বন্দী হওয়ার কাহিনী ও তাঁর শেষ ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করলে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান অভিভূত হন। আঠারো মাস পরে ১০৪০ খ্রিষ্টাব্দে বিহারের সমস্ত দায়িত্বভার লাঘব করে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান তিব্বত যাত্রার জন্য প্রস্তুত হন। তিনি বারো জন সহযাত্রী নিয়ে প্রথমে বুদ্ধগয়া হয়ে নেপালের রাজধানীতে উপস্থিত হন এবং নেপালরাজের আগ্রহে এক বছর সেখানে কাটান। এরপর নেপাল অতিক্রম করে থুঙ বিহারে এলে তাঁর সঙ্গী র্গ্যা-লো-ত্সা-বা-ব্র্ত্সোন-'গ্রুস-সেং-গে (ওয়াইলি: rgya lo tsA ba brtson 'grus seng ge) অসুস্থ হয়ে মারা যান। ১০৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতে র পশ্চিম প্রান্তের ডংরী প্রদেশে পৌছন। সেখানে পৌছলে ল্হা-লামা-ব্যাং-ছুব-ওদ এক রাজকীয় সংবর্ধনার আয়োজন করে তাঁকে থোলিং বিহারে নিয়ে যান। এখানে দীপঙ্কর তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ বোধিপথপ্রদীপ রচনা করেন। ১০৪৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পুরঙে, ১০৪৭ খ্রিষ্টাব্দে সম-য়ে বৌদ্ধ বিহার ও ১০৫০ খ্রিষ্টাব্দে বে-এ-বাতে উপস্থিত হন।
দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান দুই শতাধিক গ্রন্থ রচনা, অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন। তিব্বতের ধর্ম, রাজনীতি, জীবনী, স্তোত্রনামাসহ তাঞ্জুর নামে বিশাল এক শাস্ত্রগ্রন্থ সংকলন করেন। বৌদ্ধ শাস্ত্র, চিকিৎসা বিদ্যা এবং কারিগরি বিদ্যা বিষয়ে তিব্বতী ভাষায় অনেক গ্রন্থ রচনা করেন বলে তিব্বতীরা তাকে অতীশ উপাধীতে ভূষিত করে। অতীশ দীপঙ্কর অনেক সংস্কৃত এবং পালি বই তিব্বতী ভাষায় অনুবাদ করেন। দীপঙ্করের রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে বোধিপথপ্রদীপ, চর্যাসংগ্রহপ্রদীপ, সত্যদ্বয়াবতার, মধ্যমোপদেশ, সংগ্রহগর্ভ, হৃদয়নিশ্চিন্ত, বোধিসত্ত্বমণ্যাবলি, বোধিসত্ত্বকর্মাদিমার্গাবতার, শরণাগতাদেশ, মহযানপথসাধনবর্ণসংগ্রহ, শুভার্থসমুচ্চয়োপদেশ, দশকুশলকর্মোপদেশ, কর্মবিভঙ্গ, সমাধিসম্ভবপরিবর্ত, লোকোত্তরসপ্তকবিধি, গুহ্যক্রিয়াকর্ম, চিত্তোৎপাদসম্বরবিধিকর্ম, শিক্ষাসমুচ্চয় অভিসময় ও বিমলরত্নলেখনা উল্লেখযোগ্য।বিখ্যাত পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এবং ইতালির বিখ্যাত গবেষক গ্যুসেপ তুচ্চি দীপঙ্করের অনেকগুলো বই আবিষ্কার করেন।দীপঙ্কর তিব্বতের বিভিন্ন অংশে ভ্রমণ করেন এবং বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন। তিনি তিব্বতী বৌদ্ধধর্মে প্রবিষ্ট তান্ত্রিক পন্থার অপসারণের চেষ্টা করে বিশুদ্ধ মহাযানমতবাদের প্রচার করেন। বোধিপথপ্রদীপ রচনাকে ভিত্তি করে তিব্বতে ব্কা'-গ্দাম্স নামে এক ধর্ম সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয়।
এই তিব্বতের প্রশাসনিক রাজধানী হলো লাসা (Lhasa-ལྷ་ས་)। আর লাসার শহুরে এলাকা বলতে বোঝায় মূলত জেলা। তিব্বতী মালভূমির দ্বিতীয় জনবহুল অঞ্চল হলো লাসা, প্রথমটা হলো একইসাথে লাসা পৃথিবীর উচ্চতম শহরগুলোর একটি, সমুদ্র তল থেকে প্রায় ১১,৪৫০ ফুট (৩,৪৯০ মিটার) উঁচুতে। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি থেকেই লাসা ছিল তিব্বতের রাজধানী। তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র অনেকগুলো স্থান এখানে অবস্থিত যার মাঝে আছে পোটালা প্রাসাদ, জোখাং মন্দির, নরবুলিংকা প্রাসাদসমূহ ইত্যাদি।
দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান দুই শতাধিক গ্রন্থ রচনা, অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন। তিব্বতের ধর্ম, রাজনীতি, জীবনী, স্তোত্রনামাসহ তাঞ্জুর নামে বিশাল এক শাস্ত্রগ্রন্থ সংকলন করেন। বৌদ্ধ শাস্ত্র, চিকিৎসা বিদ্যা এবং কারিগরি বিদ্যা বিষয়ে তিব্বতী ভাষায় অনেক গ্রন্থ রচনা করেন বলে তিব্বতীরা তাকে অতীশ উপাধীতে ভূষিত করে। অতীশ দীপঙ্কর অনেক সংস্কৃত এবং পালি বই তিব্বতী ভাষায় অনুবাদ করেন। দীপঙ্করের রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে বোধিপথপ্রদীপ, চর্যাসংগ্রহপ্রদীপ, সত্যদ্বয়াবতার, মধ্যমোপদেশ, সংগ্রহগর্ভ, হৃদয়নিশ্চিন্ত, বোধিসত্ত্বমণ্যাবলি, বোধিসত্ত্বকর্মাদিমার্গাবতার, শরণাগতাদেশ, মহযানপথসাধনবর্ণসংগ্রহ, শুভার্থসমুচ্চয়োপদেশ, দশকুশলকর্মোপদেশ, কর্মবিভঙ্গ, সমাধিসম্ভবপরিবর্ত, লোকোত্তরসপ্তকবিধি, গুহ্যক্রিয়াকর্ম, চিত্তোৎপাদসম্বরবিধিকর্ম, শিক্ষাসমুচ্চয় অভিসময় ও বিমলরত্নলেখনা উল্লেখযোগ্য।[৭] বিখ্যাত পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এবং ইতালির বিখ্যাত গবেষক গ্যুসেপ তুচ্চি দীপঙ্করের অনেকগুলো বই আবিষ্কার করেন।
তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মে সংস্কারের মতো শ্রমসাধ্য কাজ করতে করতে দীপঙ্করের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে ১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ৭৩ বছর বয়সে তিব্বতের লাসা নগরের কাছে চে-থঙের দ্রোলমা লাখাং তারা মন্দিরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
হলুদ অংশটি লাসা; Source: Wikimedia Commons
তিব্বতের বৌদ্ধদের জীবন্ত ঈশ্বরনামে খ্যাত আগের দালাই লামার নগরী লাসার নামের অর্থ ‘দেবতাদের ভূমি‘ (Land of the Gods)। তিব্বতের প্রাচীন পাণ্ডুলিপি অনুযায়ী, আগে এ জায়গার নাম ছিল ‘রাসা’ যার মানে কিনা ‘ছাগলদের ভূমি’। তবে হতে পারে শব্দটা এসেছে রাও-সা থেকে যার মানে ‘দেয়াল আবিষ্ট এলাকা’। হতে পারে, মারপরি টিলার রাজকীয় পরিবারের শিকার করবার সংরক্ষিত এলাকা হবার কারণে এরকম নাম ছিল। ৮২২ সালে চীন ও তিব্বতের মাঝে হয়ে যাওয়া চুক্তিতে প্রথমবারের মতো ‘লাসা’ নামখানা উল্লেখিত দেখা যায়। প্রসংগত উল্লেখ্য, রাজা সংস্তান গ্যাম্পোকে বলা হয় তিব্বতী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা, যার হাত ধরে এখানে বৌদ্ধ ধর্মের আবির্ভাব হয়।
রাজা সংস্তান গ্যাম্পো; Source: Wikimedia Commons
লাসা কেন নিষিদ্ধ নগরী নাম পেল? কারণ, বিদেশিদের জন্য এ নগরে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। আধুনিক যুগে এসেও সাংবাদিকরা পর্যন্ত ঢুকতে পারতেন না লাসা নগরীতে ছবি তুলবার জন্য। যেহেতু আলাদা থাকাটাই তিব্বতীদের বেশি পছন্দ ছিল, তাই আধুনিকতার সাথে পরিচয় খুবই দেরিতে হয়েছে তিব্বতের। কেউ কখনো লাসাতে উড়ে যেতে পারত না, এমনকি গাড়িতে যাওয়াও যেত না; যেতে চাইলে একদম হেঁটেই যেতে হবে। এখানের প্রথম যে থিয়েটার চালু হয় সেটা বর্তমান চতুর্দশ দালাই লামার কারণেই হয়েছে। দালাই লামাকে নিয়ে জানতে পড়ুন আমাদের এ লেখাটি- কে এই দালাই লামা?
বর্তমান দালাই লামা; Source: Wikimedia Commons
অতীতে, সপ্তদশ শতকে স্থানীয় তিব্বতীগণ ছাড়াও ভারতবর্ষ থেকে আগত বণিক ও চীন থেকে আগতরা আবাস গাড়ে লাসা-তে। তাই সেখানে এমনকি হিন্দু ও মুসলিমও ছিল। ১৯৫০ সালের পর রেড আর্মি তিব্বতের দখল নিয়ে নেয় ও কড়া নজরে রাখে দশকের পর দশক। আজকে অবশ্য ৫ জনের কোনো দল চাইনিজ দূতাবাস থেকে ভিসা নিয়ে তিব্বতে হাজির হয়ে পরতে পারে। কিন্তু এখানে চলাফেরা করতেও বিশেষ অনুমতি লাগে চীন সরকারের, কাগজে কলমে লেখা থাকবে কবে কোথায় আপনি যাচ্ছেন। ছাদে ছাদে চৈনিক সেনা থাকে। আপনি হান চাইনিজ না হলে, লাসা-কে এখনো আপনার জন্য পুরো মুক্ত বুঝি বলা যাচ্ছে না। স্বাধীনতাকামীদের আন্দোলনের পর থেকে নিষেধাজ্ঞা কড়াকড়ি হয়েছিল। ২০০৮ সালেও হয়েছিল দাঙ্গা। তবে, অন্তত তিব্বতী রেলওয়ে দেখবার জন্য হলেও সেখানে ভ্রমণ উচিত।
চলছে ট্রেন তিব্বতে; Source: Wikimedia Commons
কী কী দেখার আছে নিষিদ্ধ নগরী লাসাতে?
শুরুতেই বলা যায় পোটালা প্রাসাদের কথা। এটা মূলত দালাই লামার শীতকালীন আবাস। ১৬৪৫ সালে পঞ্চম দালাই লামা নির্মাণ করেন পোটালা প্রাসাদ। পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় একটি জায়গা হলো এই প্রাসাদ যেখানে রয়েছে ১৩টি তলা, প্রায় ১,০০০ কক্ষ, ১০,০০০ মঠ এবং ২ লাখ মূর্তি। মার্পো রি বা রেড হিলের চূড়ায় ৩৮৪ ফুট উঁচু এ প্রাসাদ উপত্যকা ভূমি থেকে প্রায় ১,০০০ ফুট উঁচু।
এই সেই পোটালা প্রাসাদ; Source: Wikimedia Commons
এরপর আছে জোখাং মন্দির (Jokhang Temple)। রাজা সংস্তান গ্যাম্পো সপ্তম শতকে এটি নির্মাণ করেন। এখানে রয়েছে শাক্যমুনি বুদ্ধের মূর্তি, যেটি কিনা রাজকুমারী ওয়েন চেং ১,৩০০ বছর আগে নিয়ে আসেন, তিব্বতের সবচেয়ে পূজনীয় বস্তু এটিই। চার তলা উঁচু সোনায় মোড়া ছাদওয়ালা মন্দিরটি দক্ষিণমুখী ও দেখতে চমৎকার। পুরনো লাসার মাঝখানে অবস্থিত বার্খোর স্কোয়ারে রয়েছে এ মন্দিরটি।
জোখাং মন্দিরের সোনায় মোড়ানো ছাদ; Source: Wikimedia Commons
আরেকটি দেখার জায়গা হলো
নরবুলিংখা প্রাসাদ। এটি দালাই লামার গ্রীষ্মকালীন আবাস। ১৭৫৫ সালে সপ্তম দালাই লামা এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই পুরনো প্রাসাদখানাতে আছে ছোট একটি চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং একটি ম্যানশন। পোটালা থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নরবুলিংক্ষা পর্যটনের বড় একটি কেন্দ্র।
এরপর আসা যাক বার্খোর স্ট্রিট মার্কেটের কথায়। সপ্তদশ শতকের মাঝে তিব্বতের বিদেশী পণ্য কেনাবেচার শ্রেষ্ঠ স্থান হয়ে দাঁড়ায় জমজমাট বার্খোর। এ এলাকায় থাকতেন বণিক ও দেশান্তরীগণ। আজ জায়গাটা মুখর থাকে পর্যটকদের বুলিতে। তিব্বতী নানা হাতের কারুকাজ এখানে কিনতে পাওয়া যায়।
যারা ভ্রমণের জন্য তিব্বতের লাসা যাবেন ভাবছেন, তাদের জন্য কিছু বিষয়ে জানা জরুরি। কখনোই জোখাং, পোটালা কিংবা কোনো তীর্থস্থানে মাথায় হ্যাট বা টুপি পরা যাবে না। এমনকি কোনো হাফ প্যান্টও না। যদি কোনো মঠে যাওয়া পরে, তবে সেখানে অল্প হলেও কোনো অনুদান দিয়ে আসা উচিত। কোনো পবিত্র বস্তুকে প্রদক্ষিণ করবার একটি প্রথা প্রচলিত আছে, সেটা করতে হলে ঘড়ির কাটার দিকেই করতে হবে। কোনো পবিত্র বস্তু বা মূর্তি আরোহণ করা যাবে না। তিব্বতীরা মন্দিরে রসুনের গন্ধ অপছন্দ করে, তাই সেখানে যাবার আগে রসুন খাওয়া বারণ। পোটালা প্রাসাদে গেলে আপনি ছবি তুলতে পারবেন না আদৌ, যদিও জোখাং মন্দিরে ইচ্ছে মতো মনের আশ মিটিয়ে ছবি তোলা যাবে। কোনো কোন মঠে টাকা অনুদান দিলে ছবি তুলবার অনুমতি পাওয়া যায়। ছবি তোলার আগে তাই জিজ্ঞেস করে নেয়াই ভালো।
১৯৯৯ সালের ৫ অক্টোবর তিব্বত মিউজিয়ামের যাত্রা শুরু হয়। এটি তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় যাদুঘর। এখানে প্রায় ১,০০০ এর মতো মূল্যবান বস্তু রয়েছে। পোটালা প্রাসাদের পশ্চিমে নরবুলিংখা রোডের কোণায় একটি L-আকৃতির ভবনে এ মিউজিয়াম রয়েছে। লাসা ভ্রমণে গেলে ইতিহাস জানবার জন্য এ যাদুঘরের বিকল্প নেই।
লাসাতে গেলে বর্ষাকালে যাওয়া উচিত। কারণ, এটাই নাকি লাসার শ্রেষ্ঠ সময়। তখন রাত্রেই কেবল বৃষ্টি প্রে, বাকি সময়টা দিনের বেলায় থাকে রৌদ্রোজ্জ্বল। তবে, অন্য সময় গেলে যে লাসাকে খারাপ লাগবে তা কিন্তু নয়!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন