মোট ৯.৩ বিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করেও মাদকের নির্মূলে কার্যত কোনও ফল পায়নি কলম্বিয়া।




মাদক নিয়ে কেবল বাংলাদেশ নয়, ভুগছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই। মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানও চলেছে বহু দেশে। বছরের পর বছর চলছে ‘যুদ্ধ’। কিন্তু সাফল্য কম।
মাদকের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ব্যর্থতার ‘বিজ্ঞাপন’ হয়ে আছে কলম্বিয়া, মেক্সিকো। দুই দেশে নিরাপত্তা বাহিনী কয়েক লাখ লোককে হত্যা করেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি মাদকের কারবার।
সম্প্রতি মাদকের বিস্তার ঘটার পর বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে সাঁড়াশি অভিযান। আর এতে এরই মধ্যে নিহত হয়েছে শতাধিক মানুষ, যাদের সবাইকে মাদকের কারবারি বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদের সবার বিরুদ্ধে বহু মামলা আছে। কিন্তু বিচার করা যাচ্ছে না।
মাদকের ব্যাপক বিস্তার ঘটলেও মাদক উৎপাদনকারী দেশ নয় বাংলাদেশ। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ মাদকের পাচার রোধ। তবে আফগানিস্তান, মেক্সিকো, কলম্বিয়ার মতো দেশ মাদকের উৎপাদক। আর গোটা বিশ্বেই মাদকের বিস্তার নিয়ে উদ্বেগে খোদ জাতিসংঘ।
মাদকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী অভিযান হয়েছে ল্যাটিন আমেরিকার উত্তর-পশ্চিমের কলম্বিয়ায়। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আড়াই দশকে দেশটিতে মাদক বিরোধী যুদ্ধে নিহত হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ লোক। আর কলোম্বিয়ার এই যুদ্ধে সর্বাত্মক মদদ দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
কোকেন উৎপাদনে শীর্ষ দেশ কলম্বিয়া। এটা দেখে মনে হতে পারে ওই দেশে মনে হয় কোকেন চাষ বৈধ। আসলে সেরকম কিছুই নয়। সরকারের মাদক নির্মূল অভিযানের মধ্যেই দেশটিতে অবৈধভাবে কোকেন চাষ করে যাচ্ছে মাদক কারবারিরা।
এক হেক্টর কোকেন ক্ষেত ধ্বংসের জন্য তিন হেক্টর বন ধ্বংস করেছে সরকারি বাহিনী। এতে করে ব্যাপক আকারে বনাঞ্চল উজাড় হয়েছে দেশটিতে। আর আশির দশক থেকে এখন পর্যন্ত মাদক বিরোধী অভিযানের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি মানুষ।
যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে কলম্বিয়া যুদ্ধ নেমেছে, সেই মাদক নির্মূলে কিন্তু এই অভিযান কোনও ফল বয়ে আনেনি। বরং দেশটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার ব্যাপক ক্ষতি করেছে।
কলম্বিয়ার এত ব্যাপক বিধ্বংসী অভিযানের পরও ২০১৪ সালে দেশটিতে কোকেন উৎপাদন বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। যা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারণা করা হয় সরকারের এত ব্যাপক অভিযানের পরও দেশটির মাদক কারবারিদের অধীনে কোকেন চাষের জন্য রয়েছে পাঁচ মিলিয়ন হেক্টর ভূমি।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহযোগিতা নিয়ে এবং মোট ৯.৩ বিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করেও মাদকের নির্মূলে কার্যত কোনও ফল পায়নি কলম্বিয়া।
মাদকের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আলোচিত যুদ্ধে আরেকটি উল্লেখযোগ্য দেশ হলো মেক্সিকো। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
মেক্সিকান বুটলেগাররা যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাংস্টারদের অ্যালকোহল সরবরাহ করত যখন যুক্তরাষ্ট্রে এলকোহল বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর ১৯৩৩ এর দিকে মাদকের কারবার শুরু হয়। ১৯৬০ এর শেষের দিকে এটা বিরাট আকার ধারণ করে।
মেক্সিকো অনেকদিন যাবত হেরোইন এবং গাঁজার বড় উৎস ছিল এবং মেক্সিকোর মাদক পাচারকারীরা ইতিমধ্যেই একটি অবকাঠামো তৈরি করে ফেলেছিল যেটা কলম্বিয়া ভিত্তিক পাচারকারীদের সাহায্য করত।
১৯৮০ এর মধ্যভাগে মেক্সিকোর চক্রগুলো সুপ্রতিষ্ঠিত এবং কলম্বিয়ার কোকেন পাচার করার জন্য নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে। প্রথমদিকে মেক্সিকান চক্রগুলোকে তাদের পরিবহন সুবিধার জন্য নগদ অর্থ প্রদান করা হতো। কিন্তু ১৯৮০ এর শেষের দিকে মেক্সিকান এবং কলম্বিয়ান উভয় চক্র পরিবহনকৃত মাদকের একটি অংশ পারিশ্রমিক হিসেবে দিতে সম্মত হয়। মেক্সিকোর পরিবহনকারীরা প্রতিটি কোকেন চালানের জন্য এর ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে পেতেন।
মাদক অপ্রতিরোধ্য আকার নেয়ার পর ২০০৬ সালে মাদকবিরোধী অভিযানে নামায় মেক্সিকো। সেসময় দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে মাদক নির্মূলের দায়িত্ব দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফিলিপ চালডেরন। দেশটির মধ্যপশ্চিমের রাজ্য মিচোয়াকানে সাড়ে ছয় হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়।
২০০৬ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ফিলিপের সময়কালে ৬০ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ফিলিপের পর মেক্সিকোর বর্তমান প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনা নেইতো ক্ষমতায় আসার পর পূর্বসূরির মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
২০১৩ সালে নিহতের সংখ্যা ১ লক্ষ ২০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ২০১৭ সালে ২৫ হাজার মাদক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিহত হয়েছে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়। তবে সরকাবিভাবে জানানো এসব বিবৃতিতে তথ্য গোপন করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। খুন এবং গুমের সংখ্যা আরও অনেক বলে মনে করেন দেশটির বিশ্লেষকরা।
দীর্ঘ দিন ধরে দেশটিতে যুদ্ধ চলে আসার পরও মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়নি মেক্সিকো। তবুও দেশটির মাদক নির্মূলে অভিযান অব্যাহত রেখেছে দেশটির সরকার। সূত্র: বিবিসি, গার্ডিয়ান, আল জাজিরা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ দুর্ঘটনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।

বাংলাদেশের সকল রাজবাড়ী ও জমিদার বাড়ীগুলির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্হা কি (ভিডও সহ )