উজবেকিস্তান মধ্য এশিয়ার একটি প্রজাতন্ত্র।

উজবেকিস্তান মধ্য এশিয়ার একটি প্রজাতন্ত্র। এর পশ্চিম ও উত্তরে কাজাকিস্তান, পূর্বে কিরগিজস্তান, দক্ষিণ-পূর্বে তাজিকিস্তান, এবং দক্ষিণে আফগানিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান। উজবেকিস্তানের পশ্চিম অংশে দেশটির প্রায় ৩৭% এলাকা নিয়ে স্বায়ত্বশাসিত কোরাকালপোগ প্রজাতন্ত্র অবস্থিত। উজবেকিস্তানের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত তাশখন্দ দেশটির রাজধানী শহর এবং শিল্প ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। উজবেকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ উজবেক জাতির লোক।হাজার বছরের ইতিহাস আর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসমৃদ্ধ উজবেকিস্তান পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় দেশ। ইতিহাসখ্যাত যোদ্ধা ও শাসক তৈমুর লং, হজরত ইমাম বুখারি, হজরত বাহাউদ্দিন নকশাবন্দীসহ অনেক জ্ঞানী ও গুণিজনের মাজার রয়েছে দেশটিতে। অসংখ্য প্রচীন মসজিদ, মাদ্রাসা, দুর্গ ও বৌদ্ধ ধর্মের নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে দেশজুড়ে। পুরো দেশ ঘুরে বেড়ানোর পর মনে হবে এ যেন এক ঐশ্বর্যমণ্ডিত ঐতিহ্যের দেশ। উদাহরণ টানলেই ব্যাপারটি পরিষ্কার হবে। তাজমহলের কথাই ধরুন। আপনি যদি আগ্রার তাজমহল দেখে থাকেন তবে উজবেকিস্তানের হাজার বছরের পুরনো মিনার, প্রাসাদ ও মসজিদের সঙ্গে এর নির্মাণশৈলীর মিল খুঁজে পাবেন। চোখ জুড়িয়ে যাবে উজবেকিস্তানের হাজার বছরের ইতিহাস আর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দেখে।

শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর অধীনে থেকে অবশেষে ১৯৯১ সালে স্বধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে উজবেকিস্তান। এরপর কর্তৃপক্ষ মনোযোগী হন দেশগড়ার কাজে। পর্যটন খাতকে দেয়া হয় অগ্রাধিকার। ধীরে ধীরে সেজে ওঠে পুরো দেশ। উজবেকিস্তানের উষ্ণ মরুভূমির তপ্ত বালির ছোঁয়া আর বরাফাচ্ছাদিত পর্বতের চূড়ায় আরোহণের যেমন সুযোগ রয়েছে, তেমনি এখানে রয়েছে বিশ্বমানের পাঁচতারা হোটেল ও অসংখ্য রিসোর্ট। কয়েক বছর ধরে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার লাখ লাখ পর্যটক ভিড় করছেন উজবেকিস্তানে। চলুন জেনে নেই সেখানের কয়েকটি বিখ্যাত শহর ও নিদর্শনের কথা।

শহর

  • তাশখন্দ

পর্যটন

বৈশিষ্ট্য

ভূগোল

উজবেকিস্তানের ৮০% এলাকা সমতল মরুভূমি। দেশের পূর্বভাগে রয়েছে সুউচ্চ পর্বতমালা যেগুলি ৪,৫০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত উঠে গেছে। উজবেকিস্তানের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্ত তিয়ান শান পর্বতমালার পশ্চিম পাদদেশ নিয়ে গঠিত। উজবেকিস্তানের উত্তরের নিম্নভূমি কিজিল কুম নামের এক বিশাল মরুভূমি, যা দক্ষিণ কাজাকিস্তানেও প্রসারিত হয়েছে। ফের্গানা উপত্যকা উজবেকিস্তানের সবচেয়ে উর্বর অঞ্চল; এটি কিজিল কুম মরুভূমির ঠিক পূর্বে অবস্থিত এবং উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে পর্বতমালা দ্বারা বেষ্টিত। সির দরিয়া নদী এই অঞ্চলটিকে কিজিল কুম মরুভূমি থেকে পৃথক করেছে। আমু দরিয়া অপর গুরুত্বপূর্ণ নদী। উজবেকিস্তানে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। ১৯৬৬ সালে এমনই এক ভূমিকম্পে রাজধানী তাশখন্দের বেশির ভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

ইতিহাস

রুশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে বর্তমান উজবেকিস্তান বুখারা আমিরাত, খিভা খানাত এবং কোকান্দ খানাতের মধ্যে বিভক্ত ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে উজবেকিস্তান রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হয়। এসময় প্রচুরসংখ্যক রুশ এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। ১৯১২ সালের হিসাব অণুযায়ী, জারশাসিত উজবেকিস্তানে বসবাসকারী রুশদের সংখ্যা ছিল ২,১০,৩০৬ জন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে রুশ কর্তৃপক্ষ উজবেকিস্তানসহ কেন্দ্রীয় এশিয়া থেকে সৈন্য সংগ্রহ করার প্রচেষ্টা চালালে এ অঞ্চলব্যাপী বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের ফলে রাশিয়ায় জারতন্ত্রের পতন ঘটে এবং রাশিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এমতাবস্থায় রুশ সরকার উজবেকিস্তানের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
১৯২০ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় এশিয়ায় রুশ কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়, এবং কিছু প্রতিরোধ সত্ত্বেও উজবেকিস্তানসহ সমগ্র মধ্য এশিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯২৪ সালের ২৭ অক্টোবর উজবেক সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে হিটলারের নেতৃত্বাধীন জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করলে ১৪,৩৩,২৩০ জন উজবেক সৈন্য সোভিয়েত রেড আর্মির পক্ষে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয়। ২,৬৩,০০৫ জন উজবেক সৈন্য যুদ্ধ চলাকালে নিহত হন এবং ৩২,৬৭০ জন নিখোঁজ হন।
১৯৯১ সালের ৩১ আগস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকালে উজবেকিস্তান স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১ সেপ্টেম্বরকে উজবেকিস্তানের জাতীয় স্বাধীনতা দিবস ঘোষণা করা হয়।

ভাষা

উজবেকিস্তানের প্রধান ভাষা হল উজবেক ভাষা (উত্তর উপভাষাটি)। এতে উজবেকিস্তানের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ লোক কথা বলেন। প্রায় ১৪% লোক রুশ ভাষায় এবং প্রায় ৪% লোক তাজিকি ভাষায় কথা বলেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে থেকে আগত অনেকগুলি ভাষা, যেমন তুর্কমেন, কাজাক ওকিরঘিজ ভাষা এখানে প্রচলিত। উজবেক ভাষা বিংশ শতাব্দীর শুরুতে আরবি লিপিতে লেখা হত। সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হবার পর লেনিনের অধীনে এটি লাতিন লিপিতে লেখা শুরু হয়। কিন্তু স্তালিন ক্ষমতা দখলের পর ১৯৪০-এর দশক থেকে এটি সিরিলীয় লিপিতে লেখা হতে থাকে। ১৯৯১ সালে উজবেকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করলে প্রাক্তন সোভিয়েত দেশগুলির থেকে রাষ্ট্রীয় স্বাতন্ত্র্য্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উজবেক সরকার ১৯৯৩ সালে উজবেক ভাষা সরকারিভাবে আবার লাতিন লিপিতে লেখার আদেশ জারি করে। উজবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ধাপে ধাপে এই লিপি সংস্কার বাস্তবায়ন করা হয় এবং ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি এই সংস্কার সম্পূর্ণ হবে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু এই লিপি সংস্কার সিরিলীয় লিপিতে অভ্যস্ত বয়স্ক ও প্রবাসী উজবেকদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাছাড়া এতে দেশটির নবীন প্রজন্মের সিরিলীয় লিপিতে লেখা ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে।

খাদ্য


প্লোভ
উজবেকিস্তানে প্রচুর পরিমাণে শস্যের চাষ হয়। তাই রুটি এবং নুডলস গুরুত্বপূর্ণ এবং উজবেক রন্ধনশৈলীকে "নুডলসে সমৃদ্ধ" হিসাবে উল্লেখ করা হয। দেশে প্রচুর পরিমাণে ভেড়া থাকায় মাটন খুব জনপ্রিয় মাংস এবং এটি বিভিন্ন উজবেক খাবারের একটি অংশ।
উজবেকিস্তান এর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পদ হল পালোভ (প্লোভ বা ওশ বা "পিলাফ"), একটি প্রধান খাবার যা চাল, টুকরা মাংস, কোঁচানো গাজর এবং পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি সাধারণত একটি কাজান (বা দেঘি) তে খোলা আগুনে তৈরি করা হয়। বৈচিত্র্যের জন্য বিভিন্ন ফল যোগ করা হয়। অতিথি ও পরিবারের জন্য ঘরে এটা প্রায়ই প্রস্তুত করা হয়। তবে পালভ বিশেষ অনুষ্ঠানগুলিতে ওশফাজ বা ওশ মাস্টার শেফ দ্বারা তৈরি করা হয়। ওশ পাচক খোলা আগুনে এই জাতীয় খাবারটি রান্না করেন। ছুটির দিনে কিংবা অনুষ্ঠান যেমন বিবাহ অনুষ্ঠানে এক পাত্র বা হাঁড়িতে প্রায় ১০০০ জনের জন্য একত্রে রান্না করা হয়। ওশি নাহর বা সকালের প্লভ খুব সকালে (৬ টা থেকে ৯ টার মধ্যে) পরিবেশন করা হয় যা একটি চলমান বিবাহের অংশ।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে: শরপা (শুরভা বা শোরভা), চর্বিযুক্ত মাংস (সাধারণত মাটন দিয়ে তৈরী) এবং তাজা শাকসব্জি দিয়ে তৈরী স্যুপ, নরেন এবং ল্যাগম্যান, নুডল-ভিত্তিক খাবার যা একটি স্যুপ বা একটি প্রধান কোর্স হিসাবে পরিবেশিত হয়; ম্যান্টি (কাস্কোনি নামেও পরিচিত), চুচভাড়া এবং সোমসা, হজমীকারক হিসেবে মূল খাবারের সঙ্গে পরিবেশিত; ডিমলামা (একটি মাংস এবং উদ্ভিজ্জ স্ট্যু) এবং বিভিন্ন কাবাব, সাধারণত যা প্রধান কোর্স হিসেবে পরিবেশিত হয়।




তাসখন্দ : উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দ। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আল বেরুনি এবং মকসুদ কাসগরির মতে, সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে তাসখন্দ হয়ে উঠেছিল  পৃথিবীর অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। আধুনিক মেট্রোপলিটন শহর তাসখন্দ। প্রাচীন ঐতিহ্য আর আধুনিকতা এবং পূর্ব-পশ্চিমের সেতুবন্ধ হিসেবে তাসখন্দ গুরুত্বপূর্ণ শহর। প্রাচীন সভ্যতার নির্দশন হিসেবে এখানে রয়েছে অসংখ্য মাজার, মসজিদ আর সমাধি। এখানে রয়েছে পৃথিবীর প্রথম দিকের চারটি হাতে লেখা কোরান শরিফের একটি। যা দেখে অবশ্যই আপনি অভিভূত হনে। নগরীজুড়ে রয়েছে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট, যেখানে মিলবে এতিহ্যবাহী উজবেক রুটি আর জিভে পানি আনা বিভিন্ন স্বাদের কাবাব। দিনের ভ্রমণ শেষে বসে পড়ুন যে কোনো একটি সরাইখানায়, উপভোগ করুন উজবেক খাবার আর সেইসঙ্গে ঐতিহ্যবাহী ব্যালে নৃত্য।

বিশ্ব চলচ্চিত্রেও পিছিয়ে ছিল না উজবেকিস্তান। নব্বই দশক পর্যন্ত তাসখন্দ চলচ্চিত্র উৎসব ছিল মর্যাদাপূর্ণ একটি অনুষ্ঠান।



সমরখন্দ : এটি উজবেকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী। ঐতিহাসিকদের মতে সমরখন্দ রোম, এথেন্স আর ব্যাবিলনের মতোই দুই থেকে আড়াই হাজার বছরের পুরনো সমৃদ্ধ জনপদ। এ নগরীর ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত আছে দার্শনিক, কবি, বিজ্ঞানী আর যোদ্ধার নাম। নগরীর সৌন্দর্য আর ঐতিহাসিক নিদর্শন পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে। আলেকজেন্ডার দ্য গ্রেট সমরখন্দে এসে বলেছিলেন, ‘এ নগরী সম্পর্কে আগে যা শুনেছিলাম বাস্তবে এ নগরী তার চেয়েও সুন্দর ও রাজকীয়’।

ইবনে সিনা, আবু রায়হান, ওমর খৈয়াম, আল বেরুনি, আলজামিদের মতো জ্ঞানীগুণি ব্যক্তি এক সময় সমরখন্দকে সমৃদ্ধ করেছে। দুই হাজার বছর আগে বিজ্ঞান, প্রকৌশলী আর নির্মাণশৈলীর যে উন্নতি সমরখন্দে হয়েছিল একুশ শতকের পর্যটকরা এখনও তা অনুধাবনে বিস্মিত হন। এ নগরীর ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শাহী জিন্দা মাজার, সম্রাট তৈমুর লং নির্মিত সমাধি এবং ইমাম বোখারির মাজার।

বুখারা : খ্রিস্টপূর্ব ৪ শতকে বুখারার সবচেয়ে প্রাচীন প্রাসাদ ‘গ্রান্ড প্যালেন অফ আর্ক’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা এখনও পর্যটকদের বিস্মিত করে। বিশাল আর উঁচু প্রাচীরগুলো ঘিরে রয়েছে ১১টি গেট। ইতিহাসখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ইমাম আল বুখারি এই নগরীতেই জন্মলাভ করেছিলেন। ইতিহাস, মুসলিম আইন, আইনের অনুশাসন নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন গবেষণা পরিচালনা করেন। তিনি রচনা করেন ‘বুখারি শরিফ’। ইমাম বুখারির মাজারের ওপর নির্মিত হয়েছে বিশাল এক কমপ্লেক্স যা পর্যটকের কাছে এখনও এক দর্শনীয় স্থান। এখানকার সুস্বাদু রুটি ও ফল পর্যটকদের রসনা মেটায়।

মসজিদ নির্মাণে উজবেকিস্তানের প্রশংসনীয় উদ্যোগ

হাইওয়ে কিংবা জনবহুল ব্যবহৃত রাস্তার পাশে নির্দিষ্ট দূরত্বে মসজিদ বা উপাসনালয় নির্মাণ প্রশংসনীয় উদ্যোগ। মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানের সরকার দেশটির স্থানীয় নাগরিক ও পর্যটকদের কথা চিন্তা করে রাস্তার পাশে মসজিদ নির্মাণের এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
৩ কোটি মুসলিম নাগরিক সমৃদ্ধ দেশ উজবেকিস্তান। ১৯২৪ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত উজবেক সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র নামে পরিচিত ছিল। ১৯৯১ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। দেশটির সরকার সে দেশের ৩ কোটি মুসলিম নাগরিক ও পর্যটকদের জন্য রাস্তার পাশে ছোট ছোট মসজিদ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাস্তার পাশের এ মসজিদগুলোতে স্থানীয় মুসলমান ছাড়াও সে দেশে ভ্রমণরত পর্যটকদের জন্যেও উপকারে আসবে।
উজবেকিস্তানের সরকারী কর্মকর্তাদের বরাতে জানা যায়, ‘অতি শীঘ্রই উজবেকিস্তানের রাজধানী তাশখন্দের বিভিন্ন রাস্তার পাশে ২২টি ছোট ছোট মসজিদ নির্মাণ করা হবে।
উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তানের আন্তঃসম্পর্ক
এশিয়ার কেন্দ্রীয় অঞ্চলটি আগে তুর্কিস্তান হিসেবে পরিচিত ছিল, যা সোভিয়েত শাসনের পতনের পর কঠিন সময় অতিক্রম করেছে। এমনকি অঞ্চলটির অস্তিত্ব একসময় ঝুঁকির মধ্যে ছিল, যাই হোক বর্তমানে ঘটনার পরম্পরায় সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এশিয়ার কেন্দ্রীয় অঞ্চলটির ভাগ্য নির্ধারণের সময় এসেছে। 
আমরা বিষয়টিকে সংক্ষেপে এভাবে দেখতে পারি, উজবেকিস্তানে নতুন নেতৃত্ব ক্ষমতায় এসেছে; অন্যদিকে কাজাখস্তানের শাসনভারও পরিবর্তন হওয়ার পথে। এতে বোঝা যায় এশিয়ার কেন্দ্রে অবস্থানরত প্রভাবশালী দেশ দুইটিতে গঠনমূলক পরিবর্তন এসেছে। যে দেশ দুইটি আয়তনে ৩০ লাখ বর্গকিলোমিটার ভূমি দিয়ে গঠিত ও প্রায় ৫ কোটি জনগণের আবাসস্থল হিসেবে গণ্য।
উজবেকিস্তানে কমিউনিস্ট ধারায় বিশ্বাসী সোভিয়েতপন্থী ইসলাম করিমভের মৃত্যুর পর তার অনুসারীদের কাছে কার্যত তার আদর্শের পতন হয়। এদিকে উজবেক প্রধানমন্ত্রী সেভকেত মিরজিয়ায়েভ গেল ৪ ডিসেম্বর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষিত হওয়ার সময় দাবি করেন, তার নেতৃত্ব জনগণকে জাতীয়তাবাদের রাজনীতির আদর্শের দিকে ধাবিত করবে। এর ফলে যারা আগে জোরপূর্বক ইসলাম করিমভের প্রশংসা করতে বাধ্য হতো, তারা এখন রাষ্ট্রে স্বাধীনভাবে তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে পারবে। এ দৃশ্যপটটি স্ট্যালিন-পরবর্তী সময়ে নিকিতা ক্রুসেভের ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। তখন সোভিয়েত শাসনের শিথিলতা চলে আসার সময়টিতে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সাইবেরিয়ার কয়েক লাখ জনগণকে স্ট্যালিন মুক্তি দিয়েছিল, যাদের সে আগে কারাবন্দি করে রেখেছিল।
উজবেকিস্তান করিমভের শাসনামলের পর থেকে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে, যা এশিয়ার কেন্দ্রীয় অঞ্চলের অস্তিত্বকে সংকটময় সময়ে টিকিয়ে রেখেছিল।
কেরিমভ শুধু বহির্বিশ্বের কাছেই নয়, বরং এশিয়ার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছেও শত্রু হিসেবে পরিচিত ছিলেন, যা একই ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও ইতিহাস ধারণকারী জাতি ও রাষ্ট্রগুলোর কাছে পারস্পরিক সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে গণ্য হয়েছে।
সেভকেত মিরজিয়ায়েভ ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম দিন অফিসে গিয়েই কিরগিজিস্তান ও তাজিকিস্তানের সীমান্তকে সহজ করে দিয়েছেন, যা কিনা করিমভের শাসনামলে উজবেকিস্তানের জন্য অনেক বড় একটি সমস্যা ছিল অন্য দেশগুলোর জনগণ ও সরকারের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ফের স্থাপনের ক্ষেত্রে। তার প্রথম দিনের সিদ্ধান্তের ফলে উজবেকিস্তানের সঙ্গে তাজিকিস্তানের বিমান পরিবহন দীর্ঘ ২৪ বছর পর ফের চালু হয়। 
এখনও সেভকেত মিরজিয়ায়েভ সরকারের নেয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের নেতৃত্বের অধীনে সামরিক ও ইউরেশিয়ান অর্থনৈতিক সমঝোতার সম্মেলনে অংশ না নেয়া, যা এশিয়ার কেন্দ্রীয় অঞ্চলের প্রতিবেশী ও ভ্রাতৃপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে উজবেকিস্তানের সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে বলে আশা করা যায়।
এই প্রেক্ষাপটে উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তানের গভীর সম্পর্ক এশিয়ার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলা যায়। এর প্রাথমিক ইতিবাচক ফলাফল অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে পাওয়া গেলেও, তা পরে উভয় দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্বের সমঝোতায় জোরালো ভূমিকা রাখবে এবং এ ক্ষেত্রে কারও মনেই কোনো সন্দেহ নেই যে, এমন সুসম্পর্ক অদূর ভবিষ্যতে এশিয়ার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে প্রভাবশালী ভূমিকা রাখবে।
সোভিয়েত শাসনামলে উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তান উভয় দেশই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভ্রাতৃপ্রতিম উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তানের উচিত সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্য উন্মুক্ত করা, যা একই ভাষা, ধর্ম ও গন্তব্যের পথে যাত্রা করা দেশ দুইটিকে আরও ঐক্যবদ্ধ করবে। 


ujbekistan
উজবেকিস্তানের পর্যটন বোর্ডের পরিকল্পনা অনুযায়ী অধিক মুসলিম পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য দেশটির আবাসিক হোটেলের রুমগুলোয় পবিত্র কুরআনের পাণ্ডুলিপি, জায়নামাজ, এবং কেবলানামা (কম্পাস) রাখা হয়েছে।
উজবেকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইসলাম কারিমভের সময়ে অর্থাৎ ২০১৬ সালের আগে মুসলমানদের কার্যক্রম তাজিকিস্তানের জনগণ আঞ্জাম দিতো। তার পরিমাণও ছিল অনেক কম।
ইসলাম কারিমভের পরে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শওকত মীরাজায়য়েভ দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ক্ষমতায় আসার পর অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কার এবং জনগণের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা কমানোর চেষ্টা করছেন।
দেশের সমৃদ্ধি বৃদ্ধিতে এবং মুসলিম পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে রাস্তার পাশে মসজিদ নির্মাণের এ নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। নিঃসন্দেহে রাস্তার পাশে স্থানীয় মুসলিম পর্যটকদের জন্য মসজিদ নির্মাণের এ পরিকল্পনা প্রশংসার দাবি রাখে।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ দুর্ঘটনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।

বাংলাদেশের সকল রাজবাড়ী ও জমিদার বাড়ীগুলির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্হা কি (ভিডও সহ )