ময়মনসিংহে ১১টি আসনে শাসক দল আওয়ামী লীগে মোট ৭৩ জন প্রার্থী

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫১ আসনে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। সরকারি-বেসরকারি একাধিক জরিপের মাধ্যমে নামগুলো বাছাই করা হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য এ ১৫১ প্রার্থী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চূড়ান্ত তালিকায় যারা রয়েছেন তাদের অনেককেই ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে মনোনয়নের বিষয়টি জানিয়ে নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র খবরটি নিশ্চিত করেছে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে আসনভিত্তিক একাধিক জরিপ করা হয়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা, দলীয় বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে জরিপগুলো চালানো হয়েছে। সব জরিপের ফল একসঙ্গে বিশ্লেষণ করে কিছু আসনের প্রার্থী প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। যেসব আসনে মনোনয়ন পরিবর্তন হতে পারে এখন ওই আসনগুলো নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।

ময়মনসিংহে ১১টি আসনে শাসক দল আওয়ামী লীগে মোট ৭৩ জন প্রার্থী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ১৯ সালের সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এসব প্রার্থীরা এরই মাঝে এলাকায় প্রচার প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন।

স্ব স্ব এলাকায় শোভা পাচ্ছে এসব প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, ফ্যাস্টুন। প্রার্থীরা তুলে ধরছেন বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের চিত্র। দলীয় নেতাকর্মীদের পক্ষে নিয়ে নিজের পাল্লা ভারী করতে চালাচ্ছেন নানা কর্মকান্ড। মনোনয়ন বাগাতে এসব প্রার্থীরা মাঠের পাশাপাশি নানাভাবে কেন্দ্রের লবিংও জোরদার করে চলছেন। অনুসন্ধানে আসন অনুযায়ী প্রার্থীদের তালিকা ও কর্মকান্ড নিয়ে তৈরী করা হয়েছে এ প্রতিবেদন। নির্বাচন এগিয়ে আসার সাথে সাথে প্রার্থীর তালিকা আরো লম্বা হতে পারে বলে স্থানীয় নেতাদের ধারণা।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরের বিরোধী দল বিএনপি আগামী সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জিং মনে করে মাঠে নেমেছে যোগ্য প্রার্থীর সন্ধানে। কেবল যোগ্যপ্রার্থী নির্বাচনই নয়, তাদের নির্বাচনী বৈতরণী পার করার ওপর নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি’র ক্ষমতার পালাবদলের গতিপ্রকৃতি।আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুবাদে এনএসআই-জিডিএফআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। পাশাপাশি দলীয় বিশস্ত নেতাকর্মী দিয়েও জরিপ করছে আওয়ামী লীগ। পক্ষান্তরে বিএনপিও তাদের জরিপ দলের মাধ্যমে খোঁজ নিচ্ছে কে এলাকায় জনপ্রিয়। অতীত ও বর্তমানে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে যারা রাজপথে ছিল এবং দলের প্রতি যারা অনুগত, তাদের বিষয়গুলো প্রাধান্য দিচ্ছে বিএনপি। ব্যক্তি ইমেজ, স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, এলাকায় জনপ্রিয়তা, মাঠে কর্মকান্ড, জনসম্পৃক্ততা নানা দিক বিবেচনায় রাখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ।

দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো ময়মনসিংহেও চলছে নির্বাচনী প্রস্তুতিমূলক নানা কর্মকান্ড। কেন্দ্রের পাশাপাশি মাঠের নেতারাও সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় নিজেদের সম্পৃক্ত রেখে মনোনয়ন দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন।ময়মনসিংহের ১১টি সংসদীয় আসনে খোঁজ খবর নিয়ে এসব আসনে আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা পেয়েছে ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, দলের হাই কমান্ড ও স্থানীয় পর্যায়ে অনুসন্ধান চালিয়ে বের করা হয়েছে এ তালিকা। তথ্যানুযায়ী ময়মনসিংহে ১১টি আসনে শাসক দল আওয়ামী লীগের মোট ৬৬ জন সম্ভাব্য প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন।সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এসব প্রার্থীরা এরই মাঝে এলাকায় প্রচার প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। স্ব স্ব এলাকায় নানা উপলক্ষে পোষ্টার ব্যানার ফ্যাষ্টুন দেয়াসহ নানা কর্মকান্ড চালাচ্ছেন এসকল প্রার্থীরা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রার্থীরা তুলে ধরছেন বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের চিত্র।
ময়মনসিংহ-০১








(হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া): সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া এ দুই উপজেলা নিয়ে ময়মনসিংহ-০১ আসন। এ আসনে বর্তমান এমপি উপজাতি সম্প্রাদায়ের নেতা হালুয়াঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য জুয়েল আরেং, হালুয়াঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ খান, হালুয়াঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কবিরুল ইসলাম বেগ, ধোবাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মজনু মৃধা, ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আব্দুল মান্নান আকন্দ, ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট পীযুষ কান্তি সরকার।
ময়মনসিংহ-০২ (ফুলপুর-তারাকান্দা):

 ফুলপুর ও তারাকান্দা এ দুই উপজেলা নিয়ে ময়মনসিংহ-০২ আসন গঠিত। এ আসনে বর্তমান এমপি ফুলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ আসনে পাঁচ বারের এমপি ভাষা সৈনিক মরহুম শামসুল হকের ছেলে শরিফ আহমেদ, তারাকান্দা আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট ফজলুল হক, সাবেক ছাত্রনেতা ফুলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক শাহ কুতুব চৌধুরী এবং সেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিষ্টার আবুল কালাম আজাদ মাঠে তৎপর রয়েছেন।
ময়মনসিংহ-০৩ (গৌরীপুর):


 গৌরীপুর উপজেলা নিয়ে ময়মনসিংহ-০৩ আসন। এ আসনে বর্তমান এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যান সম্পাদক ড. সামিউল আলম লিটন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শরীফ হাসান অনু, বাকসু’র সাবেক ভিপি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রফিক, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারন সম্পাদক নাজনীন আলম, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা: মতিউর রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ খান সেলভী, পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম, জেলা কৃষক লীগের সাধারন সম্পাদক গোলাম মোস্তফা (ভিপি বাবুল), ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা মোর্শেদুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা আবু কাউসার চৌধুরী রন্টি।
ময়মনসিংহ-০৪ (সদর):

 সদর উপজেলা ও পৌর এলাকা নিয়ে জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ময়মনসিংহ-০৪ আসন। এখানে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, এফবিসিসিআই এর পরিচালক বিশিষ্ট শিল্পপতি আমিনুল হক শামীম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক ডা: এমএ আজিজ প্রার্থী হিসাবে আতœপ্রকাশ করেছেন।
ময়মনসিংহ-০৫ (মুক্তাগাছা):








মুক্তাগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে সাবেক এমপি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কেএম খালিদ বাবু, বাংলাদেশের প্রথম এটর্নী জেনারেল ফকির শাহাব উদ্দিনের মেয়ে মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব তাহমিনা জাকারিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সাবেক যুবলীগ নেতা বিল্লাহ হোসেন সরকার, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু’র স্ত্রী সেলিমা সোবহান খসরু, সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল হাই আকন্দ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট বদর উদ্দিন আহমেদ, সাবেক এমপি এডভোকেট শামসুল হকের ছেলে উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক শাতিল মাহমুদ তারেক, এবং কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম।
ময়মনসিংহ-০৬ (ফুলবাড়ীয়া): 

ফুলবাড়ীয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে বর্তমান এমপি পাঁচবার নির্বাচিত এমপি সাবেক গণপরিষদ সদস্য সংবিধান প্রণেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট মোসলেম উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল মালেক সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক এমএ কুদ্দুস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা এডভোকেট মফিজ উদ্দিন এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক শেখ গোলাম মোস্তফা তপন।
ময়মনসিংহ-০৭ (ত্রিশাল): ত্রিশাল উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে সাবেক এমপি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় জাতীয় পরিষদের সদস্য হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন মাদানী, সাবেক এমপি আব্দুল মতিন সরকার, সাবেক এমপি রেজা আলী, পৌর মেয়র সাবেক যুবলীগ নেতা এবিএম আনিসুজ্জামান আনিস, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-আহবায়ক এএনএম শোভা মিয়া আকন্দ।

ময়মনসিংহ-০(ঈশ্বরগঞ্জ):


ময়মনসিংহ-০৮ (ঈশ্বরগঞ্জ): 

ঈশ্বরগজ্ঞ উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-০৮ আসনে সাবেক এমপি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সাত্তার এবং তার ভাতিজা ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমন মনোনয়ন লড়াইয়ে অবতীর্ন হয়েছেন। এছাড়াও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট সৌমেন্দ্র কিশোর চৌধুরী এবং সাবেক ছাত্রনেতা তরিকুল ইসলাম তারেক প্রার্থী হিসাবে আতœপ্রকাশ করেছেন।


ময়মনসিংহ-০৯ (নান্দাইল): 


নান্দাইল উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে বর্তমান এমপি জেলা কৃষক লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন, সাবেক এমপি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব:) আব্দুস সালাম, বিশিষ্ট শিল্পপতি এডিএম সালাউদ্দিন হুমায়ুন, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা শাহজাহান কবীর সুমন, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান।


ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও):

রাজনীতির রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা।উপজেলার বুক চিরে বয়ে চলা ব্রক্ষপুত্র নদের এপর-ওপার নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও)।কৃষি প্রধান এ উপজেলাটি এখনো অবহেলিত। ফলে বিশ্বায়নের যুগের এ উপজেলার সঙ্গে বাইরের যোগাযোগে ব্যাবস্থা বেশ নাজুক। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

তাদের ভাষ্যমতে, ক্ষমতার পালাবদলে এ অঞ্চলের নেতাদের ভাগ্য বদল হলেও এ জনপদের মানুষের ভাগ্যের তেমন কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। কারণ জেলা সদরের সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগে রেলপথই একমাত্র ভরসা। ফলে রেলপথের ঘড়ির কাঁটায় পথ চলতে হয় তাদের। তবে সড়ক পথে যোগাযোগের আলাদা ব্যবস্থা থাকলেও সড়কটির অবস্থা এতই খারাপ যে, এ পথে চলতে গিয়ে রোগী হয়ে ঘরে ফিরতে হয় যাত্রীদের। এমন দাবি একাধিক বাসিন্দার।

সূত্রমতে, মোট ১৫টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও দুটি থানা নিয়ে এ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৭ হাজার ৬৩৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৬ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৬১ হাজার 

অপর একটি সূত্রমতে, বর্তমানে এ উপজেলায় নতুন বা তরুণ ভোটারের সংখ্যা অনেক। আগামী নির্বাচনে ভোটের মাঠে এ তরুণ ভোটাররা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবেন। ফলে বিদ্যমান পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ।


গফরগাও উপজেলা ও পাগলা থানা নিয়ে এ আসনে উল্লেখ যোগ্য সংখ্যক প্রার্থী রয়েছে। এ আসনে মাত্র একবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি দলীয় প্রার্থী প্রয়াত ফজলুর রহমান সুলতান। অপরদিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে জাতীয় পার্টির এমপি নির্বাচিত হয় দু’বার। 
ফলে বাকি ৭টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই এ আসনে জয় পায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে তিনবার এমপি হন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। এর আগে দু’বার আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হন আবুল হাশেম। সর্বশেষ ২০০৮ সালে নৌকার মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াস উদ্দিন। এরপর বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়নে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন প্রয়াত আলতাফ হোসেন গোলন্দাজের পুত্র তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল। ফলে ভোটের হিসাব-নিকাশে এ আসনটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উর্বর ঘাঁটি হিসেবেই চিহ্নিত।এ আসনে সাবেক এমপি মরহুম আলতাফ হোসেন গোলন্দাজের ঐতিহ্য ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল বর্তমান এমপি রয়েছেন।

সূত্রমতে, বিগত সময়ে এ আসনের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একাধিক পক্ষ বা গ্রুপ থাকলেও বর্তমান এমপি ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলের শাসনে কোণঠাসা দলীয় বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীরা। কারণ বাবেল গোলন্দাজের একক শাসনে নিয়ন্ত্রিত এ উপজেলার সব কিছু। ফলে এ জুনিয়র গোলন্দাজের বাইরে প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস রাখেন না দলীয় প্রতিপক্ষরাও। তবে ক্ষমতার বলয়ে পাওয়া না পাওয়ার হিসেবে দলের একটি অংশের নেতাকর্মীরা নাখোশ থাকলেও তারুণ্য নির্ভর বিশাল কর্মী বাহিনী নিয়ে মাঠে এমপি বাবেল গোলন্দাজের নেতৃত্বে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে আগামী নির্বাচনে এ আসনটি বাবেল গোলন্দাজের নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগের ঘরে উঠবে বলে দাবি করেন তার সমর্থকরা।

সূত্রমতে, আগামী নির্বাচনে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে অনেকে আওয়াজ দিলেও তৃণমূলে প্রকাশ্যে তাদের প্রচার-প্রচারণা ও বিচরণ খুবই নগণ্য। তবুও বর্তমান এমপি ফাহমি গোলন্দা বাবেলেও বাইরে এ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- 

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট জহিরুল হক খোকা, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আমোকসু’র সাবেক ভিপি সাবেক তুখোড় ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল,, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ন-আহবায়ক বিশিষ্ট শিল্পপতি ওবায়দুল্লাহ আনোয়ার বুলবুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক বিশিষ্ট শিল্পপতি ওবায়দুল্লাহ আনোয়ার বুলবুল, আনন্দ মোহন কলেজের সাবেক ভিপি জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এর ব্যক্তিগত সহকারী একেএম সাজ্জাত হোসেন শাহীন, জেলা আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা শেখ শাহাবুদ্দিন, পাগলা থানার জমিদাতা শাহ মোরাদ আহম্মেদ আকন্দ মনি, ঢাকা মহানগর (উত্তর) যুবলীগের সহ সভাপতি আশিকুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ড আবুল হোসেন দীপু।প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও গফরগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলাল আহমেদ, গফরগাঁওয়ের সাবেক মেয়র ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুব লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ অ্যাডভোকেট কায়সার আহামদ,

এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার এমপি ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তার সমর্থকরা জানায়, এ আসনটি আওয়ামী লীগ ধরে রাখতে চাইলে বাবেল গোলন্দাজের কোনো বিকল্প নেই। কারণ তার নেতৃত্বেই দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ।

অপরদিকে রাজনীতির মাঠে প্রতিপক্ষ প্রতিরোধে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মারমুখী আচরণ এবং দলীয় বিভক্তির কারণে ভালো নেই বিএনপি। বিগত দশটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি মাত্র একবার বিজয় পেলেও দুই সহোদরের অনৈক্যের কারণে ঘর গোছাতে পারেনি দলটি। সেই থেকে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পথ চললেও দুঃসময়ে এসেও বিএনপি ঐক্যে ফিরতে পারেনি। ফলে ভোটের মাঠে প্রবল সম্ভাবনা সত্ত্বেও সাংগঠনিক দুর্বলতায় বিগত উপজেলা নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজিত হন বিএনপি দলীয় প্রার্থী। এনিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। আর আগের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি কোনো প্রার্থীই দিতে পারেনি। ফলে বর্তমান এমপি বাবেল তখন ব্যাপক ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী বাবেলের নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবেও ভোটের মাঠে কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর এ সবই হয়েছে স্থানীয় বিএনপির নেতেৃত্বের অযোগ্যতার কারণে। এমন দাবি দলীয় নেতাকর্মীদের।

একাধিক নেতাকর্মী জানান, দলের দুঃসময়ে দলীয় কর্মসূচি পালন ও মামলা-হামলায় নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে থেকে দলের জন্য কাজ করছেন আখতারুজ্জামান বাচ্চু। ফলে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থক মহলে তার গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও নতুন প্রার্থী হিসেবে অ্যাড. ফাহাত খানও এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় ইতোমধ্যে নিজেকে আগামী নির্বাচনে শক্ত মনোনয়ন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেও জানান দিচ্ছেন।
অ্যাডভোকেট ফাতাহ খান বলেন, দলের মনোনয়নে আমি আশাবাদী। দলের জন্য কাজ করছি। আশা করি দল মূল্যায়ন করবে।মনোনয়ন প্রশ্নে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা বাচ্চু বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন ও নির্বাচনী লক্ষ্য নিয়ে নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে আছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আসনটি পুনরুদ্ধারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ড. মীর মিজানুর রহমান বলেন, দলের জন্য কাজ করছি। অতীতে ছাত্র রাজনীতি করেছি। এখন দলের দুঃসময়ে আইনজীবী হিসেবে আদালতে দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য বিনা খরচে মামলা পরিচালনা করছি। আশা করছি আগামী নির্বাচনে দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।

সব বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আবুল কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তার অনুসারীরা জানান, রাজনীতির মাঠে স্বচ্ছ ইমেজের ব্যক্তি অধ্যক্ষ আবুল কাশেম। সুসংগঠিত দল পরিচালনায় তিনি অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও ত্যাগী নেতা। আগামী নির্বাচনে বিএনপি এ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চাইলে দলীয় মনোনয়নে তার কোনো বিকল্প নেই বলেও দাবি তাদের।


বিএনপি থেকে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মিন্টু কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবুল কাশেম আরজু, উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবি সিদ্দিকুর রহমান, ডা আব্দুল কুদ্দুস, সাবেক এমপি ফজলুর রহমান সুলতানের ছেলে বিএনপি নেতা মুশফিকুর রহমান, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, বিএনপির উপজেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান চন্দন, লন্ডন প্রবাসী সাবেক ছাত্রদল নেতা মো মানিক, জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা জহির আলী, সাবেক ওয়াসা সিবিএ নেতা ইব্রাহীম খলিল, আরিফুর রহমান কা ন, আখতার হোসেন বাবুল, হাতেম আলী দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।

সূত্রমতে, বর্তমান মহাজোট সরকারের শাসনামলে গফরগাঁওয়ে খুন হয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের চার নেতাকর্মী। এর মধ্যে ছাত্রদল নেতা ইবনে আজাদ কমল, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহেল মীর্জা ও যুবদল নেতা শাকিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় খুন হন। এ ছাড়াও লাশ উদ্ধার হয় বিএনপি কর্মী শিপন মিয়ার। সেই সঙ্গে বর্তমান শাসনামলে মামলা-হামলায় আসামি হয়ে ও পঙ্গুত্ব বরণ করে এলাকা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দলটির অসংখ্য নেতাকর্মী। এর ফলে রাজনীতির মাঠেও ভয় আতঙ্কে বেশ কোণঠাসা এ উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা। তবুও আগামী নির্বাচনে এ আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা।

তবে দলীয় সূত্রমতে, অতীতে দুই ভাইয়ের মধ্যে নেতৃত্ব দ্বন্দ্ব প্রবল থাকলেও সাবেক এমপি প্রয়াত ফজলুল রহমান সুলতান মারা যাওয়ার পর চাচা বর্তমান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবি সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে ভাতিজা প্রয়াত ফজলুর রহমান সুলতানের পুত্র মুশফিকুর রহমানের দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রেও আগামীর নেতৃত্বই মূল ফ্যাক্টর।তবে ভিন্নমত রয়েছে দলটির অপর একটি অংশের নেতাকর্মীদের মাঝে। তাদের ভাষ্য মতে, একক আধিপত্য কায়েম করে দল সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা যায় না। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এবং দল সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে প্রার্থী দিতে ভুল করতে আগামী নির্বাচনে এ আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হতে পারে।

সূত্রমতে, এ আসনটিতে জাতীয় ওলামা পার্টির সভাপতি খ্যাতি সম্পন্ন কারি হাবিবুল্লাহ বেলালী, মাসিক মদিনার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের (রাহ.) ছেলে আহমদ বদরুদ্দীন খান জোট-মহাজোট বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে আসতে পারেন বলেও সমর্থক মহলে গুঞ্জন রয়েছে।

ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা): 

শিল্পাঞ্চাল ভালুকা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে বর্তমান এমপি ডা: আমান উল্লাহ, , বিশিষ্ট শিল্পপতি মো: আব্দুল ওয়াহেদ, তিনি বর্তমানে পাপুয়া নিউগিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রস্তাবিত ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ কমিটির শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক। তবে এলাকায় এরই মাঝে ব্যাপক জনমত তৈরী করে ফেলেছেন শিল্পাঞ্চল ভালুকার এ প্রার্থী। এ আসনে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রার্থী তিনি বলে নেতাকর্মীদের অভিমত), ইঞ্জিনিয়ার মহিউদ্দিন আহমেদ, উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, সাবেক এমপি ভাষা সৈনিক মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা এম এ মতিনের কন্যা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মনিরা সুলতানা মনি, আওয়ামী লীগ নেতা হাজি রফিকুল ইসলাম, । বর্তমান এমপি বাদে সকলেই সম্বাবনাময় প্রার্থী। সম্ভাবনাময় ২ জন প্রার্থী :  বিশিষ্ট শিল্পপতি মো: আব্দুল ওয়াহেদ, এবং কাজিম উদ্দিন আহাম্মেদ ধনু।মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তী আফসার বাহিনীর প্রধান মেজর আফসারের ছেলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রনেতা কাজিম উদ্দিন আহাম্মেদ ধনু,


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ দুর্ঘটনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।

বাংলাদেশের সকল রাজবাড়ী ও জমিদার বাড়ীগুলির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্হা কি (ভিডও সহ )