লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন একই আসনের জাপা দলীয় সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খান।



লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন একই আসনের জাপা দলীয় সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খান।
লিটন হত্যায় গ্রেফতার সাবেক এমপি কাদের খানের সুন্দরগঞ্জের বাড়ির পুকুরে বুধবার দিনভর তল্লাশি চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকার দলীয় এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যার নেপথ্যের যেসব তথ্য বেরিয়ে আসছে তা সিনেমার যে কোনো গল্পকেও হার মানায়! ঠাণ্ডা মাথায় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন একই আসনের জাপা দলীয় সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খান। এ লক্ষ্যে কাদের তার সুন্দরগঞ্জের ছাপরহাটি ইউনিয়নের খানপাড়া গ্রামে নিজ বাসায় তিনজনকে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণও দেন। তবে শেষ পর্যন্ত তারা কাদেরের কথা অমান্য করে হত্যা মিশনে অংশ নেয়নি। প্রথমবারের
পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার পর ২০১৬ সালের শুরুতে আবার নতুন ছক কষেন কাদের। এরপর তিনি স্থানীয় জাপা নেতা সোহেল রানা, শাহীন মিয়া ও মেহেদীকে মোটা অঙ্কের টাকার প্রস্তাব দিয়ে লিটনকে হত্যা করতে রাজি করান। তাদেরও অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কাদেরের বাসায়। ঘটনার দিন 'গুরু' কাদেরের কাছ থেকে 'দোয়া' নিয়ে তারই কিনে দেওয়া রানার ব্র্যান্ডের একটি মোটরসাইকেলে লিটনের বাসায় গিয়ে 'মিশন' সফল করে তিন খুনি। এরপর তারা আবারও ফিরে যায় কাদেরের বাসায়। সেখানে খুনিদের মিষ্টিমুখ করান কাদের, দেন নগদ ১৫ হাজার টাকা। আবার খুনিদের নিয়ে কাদের তার গাড়িতেই গাইবান্ধা থেকে বগুড়া ফিরে যান। এমপি লিটন হত্যায় জড়িত সন্দেহে শাহীন ও মেহেদীকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। গোয়েন্দা সূত্রে সমকাল জানতে পেরেছে তার বিস্তারিত। এ ছাড়া গাইবান্ধায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুকও এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, কাদের খানের অর্থ ও পরিকল্পনায় এমপি লিটন খুন হয়েছেন। গ্রেফতার কাদের খানকে গতকাল বুধবার আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। জানা যায়, শুধু এমপি লিটন নন, কাদের গাইবান্ধায় ছয়জনকে হত্যার জন্য নামের তালিকা করেন। এমপি লিটন ছিলেন তার এক নম্বর টার্গেট। দুই নম্বর ছিলেন স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারী। টার্গেট লিস্টের বাকি চারজনও স্থানীয় জাপা নেতা। 'সিরিয়াল' এই কিলিং মিশন সফল করতে একটি আলাদা মোবাইল ফোন সেট ও সিম নম্বর নেন কাদের। ওই নম্বর থেকে তিনি ভাড়াটে খুনিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রটি আরও জানায়, এমপি লিটনের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে কাদের বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও স্থানীয় সাংবাদিক চন্দন কুমার সরকারকে ভাড়া করেন। হত্যার আগে এমপি লিটনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কাদেরকে অবগত করেন চন্দন। চন্দন ও রানাকে এখন গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে গ্রেফতার জাপার সাবেক এমপি কাদের পুলিশকে জানিয়েছেন, চন্দনের ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পুলিশ বলছে, রাজনীতির পথ মসৃণ করতেই এমপি লিটনসহ ছয়জনকে হত্যার ছক কষেন কাদের। এরই মধ্যে কিলিং মিশনের দুই সদস্য গ্রেফতার হওয়ায় টার্গেট করা অন্য পাঁচজন প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। ২০০৮ সালে মহাজোট থেকে নির্বাচন করে এমপি হয়েছিলেন কাদের খান। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন লিটন।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কাদের খানের ভাড়াটে প্রশিক্ষিত খুনিরা একাধিক দফায় এমপি লিটনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করলেও ব্যর্থ হয়েছিল। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরও তিন ভাড়াটে খুনি শাহীন, মেহেদী ও রানা মোটরসাইকেলে লিটনের সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর শাহবাজ গ্রামে যায়। তবে ওই দিন চন্দন ফোনে কাদেরকে জানান, 'ওই পরিস্থিতিতে অপারেশন চালানো ঠিক হবে না। লিটনের বাসায় পুলিশ রয়েছে।' এরপর কাদের তিন খুনিকে ফেরত আসতে নির্দেশ দেন। পরদিন ৩১ ডিসেম্বর চন্দন আবার ফোনে কাদেরকে জানান, 'হামলা করার জন্য ওই দিন উপযুক্ত সময়।' এমন গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে আগে থেকে কেনা মোটরসাইকেল নিয়ে তিন খুনি শাহবাজ গ্রামে যায়। গাইবান্ধায় খানপাড়ার কাদেরের বাসা থেকে বের হওয়ার আগে মোটরসাইকেলটির 'ব্র্যান্ড পরিচিতি' লাল স্কচটেপ দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়। যাওয়ার আগে কাদের তিন ভাড়াটে খুনিকে বলেন, 'এবার যেন মিশন সম্পন্ন করে বাসায় ঠিকভাবে ফেরা হয়।'
সূত্র জানায়, মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিল মেহেদী, মাঝে ছিল রানা ও পেছনে বসা ছিল শাহীন। যুবলীগ কর্মী পরিচয়ে এমপি লিটনের বাসায় ঢোকার পর তারা একটি ক্লাব তৈরি করতে এমপির সাহায্য চায়। এমন কথোপকথনের মধ্যেই লিটনকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে শাহীন ও মেহেদী। পরে গুলি চালায় রানাও। লিটন হাত দিয়ে গুলি ঠেকানোর চেষ্টা করেন। হত্যা মিশনে তিনটি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। একটি কাদেরের লাইসেন্স করা অস্ত্র; অন্য দুটি পুরনো অস্ত্র। হত্যা মিশন সম্পন্ন করে মোটরসাইকেলে গাইবান্ধায় কাদের খানের বাসায় ফিরে যায় তিন খুনি। বাসায় যাওয়ার পরপরই তারা মিশন সফল হওয়ার খবর দেয়। তিনটি অস্ত্র কাদের খানের কাছে ফেরত দেয় তারা। সেখান থেকে বগুড়া হয়ে আগমনী পরিবহনের একটি বাসে ঢাকায় আসে এবং পরে কাদেরের নির্দেশে তিন খুনি নারায়ণগঞ্জে চলে যায়।
গতকাল গাইবান্ধায় সংবাদ সম্মেলনে রংপুর রেঞ্জের অ্যাডিশনাল ডিআইজি বশির আহমেদ, গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম, অ্যাডিশনাল এসপি ('এ' সার্কেল) রবিউল ইসলাম, অ্যাডিশনাল এসপি (হেডকোয়ার্টার) খায়রুল আলম, সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মুহাম্মদ আতিয়ার রহমান, গাইবান্ধা থানার ওসি একেএম মেহেদী হাসান ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) আবু হায়দার মো. আশরাফুল ইসলামসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া হত্যা মামলার বাদী লিটনের বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী, লিটনের স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি এবং পরিবারের অন্য লোকজন, গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির মিলনসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এমপি লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি ও লিটনের ছোট বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী সাংবাদিকদের বলেন, লিটন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীকে শনাক্ত করতে পারায় তাদের পরিবার পুলিশ ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে হত্যা পরিকল্পনায় আরও কেউ জড়িত কি-না তা খতিয়ে দেখার আবেদন জানান তারা।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, পুলিশ ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে ঘটনার পর এক মাস ২০ দিনের তদন্ত শেষে ২১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার চাঞ্চল্যকর এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। এমপি লিটনকে সরিয়ে দিয়ে ফের ওই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার উচ্চাভিলাষ ও ক্ষমতার মোহেই সাবেক এমপি কাদের খান এক বছর আগে থেকেই এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনা করেন।
খুনিরা শনাক্ত হয় যেভাবে :এমপি লিটনের কিলাররা গত ৩০ ডিসেম্বর গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কের ধোপাডাঙ্গায় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ওই পিস্তলটি ব্যবহার করে ভয় দেখিয়ে ফাহিম নামে এক যুবকের কাছ থেকে তার মোবাইল ও টাকা-পয়সা ছিনতাই করে। ছিনতাই শেষে তাড়াহুড়া করে পালাতে গিয়ে পিস্তলের ৬ রাউন্ড বুলেটের ম্যাগাজিনটি তাদের অগোচরে রাস্তায় পড়ে যায়, যা স্থানীয় জনগণের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ উদ্ধার করে। ওই পিস্তলের বুলেট পরীক্ষা করে দেখা যায়, এমপি লিটনের শরীর থেকে অপারেশন করে বের করা এবং তার বাড়িতে হত্যার পর পাওয়া বুলেটের খোসার সঙ্গে ওই ম্যাগাজিনের বুলেটের মিল রয়েছে। পরে ওই সূত্র ধরে খুনিদের আটক করা হয় এবং পিস্তলটি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
খুনিদের স্বীকারোক্তি :গ্রেফতার তিন খুনি মঙ্গলবার গাইবান্ধায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে খুনের ঘটনা স্বীকার করে এবং ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী, অর্থ জোগানদাতা ও প্রশিক্ষণদাতা হিসেবেও আবদুল কাদের খানের নাম উল্লেখ করে। এদিকে খুনিরা কাদের খানের পিস্তলটি ব্যবহার করেছিল বলেই বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তবে ঢাকা থেকে অস্ত্র পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর তারা চূড়ান্ত নিশ্চিত হবেন বলে ধারণা করছেন। এদিকে সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মুহাম্মদ আতিয়ার রহমান খুনিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কাদের খানের পিস্তল এবং বুলেট জব্দ করেন। জানা যায়, ৪০ রাউন্ড বুলেট ক্রয় করলেও কাদের খান পুলিশকে মাত্র ১০ রাউন্ড বুলেট জমা দিতে সক্ষম হয়েছেন। বাকি ৩০ রাউন্ড বুলেটের হিসাব তিনি দিতে পারেননি।
মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে :জেলা জজ আদালতের আইনজীবী সরকার পক্ষের পিপি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম শফি জানান, চাঞ্চল্যকর এমপি লিটন খুনের মামলাটি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দ্রুত বিচারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সে কারণেই এই মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
অস্ত্রের খোঁজে পুকুরে তল্লাশি :গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ছাপরহাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপরহাটি গ্রামের খানপাড়ায় এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা কর্নেল (অব.) আবদুল কাদের খানের বাড়ি সংলগ্ন পুকুরে অস্ত্রের খোঁজে পানি সেচে তল্লাশি শুরু করা হয়েছে। দুপুর দেড়টা থেকে শুরু হওয়া এই তল্লাশি অভিযানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছাড়াও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো ধরনের অস্ত্র পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, পুকুরের পানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেচ ও অনুসন্ধান কাজ অব্যাহত থাকবে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত রয়েছেন। সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মুহাম্মদ আতিয়ার রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খান গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি। তিনি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপরহাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপরহাটি (খানপাড়া) গ্রামের মৃত নয়ান খানের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে বগুড়া জেলা শহরের গরীব শাহ ক্লিনিকের চারতলা ভবনের ওপর তলায় বসবাস করতেন।
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মনজুরুল ইসলাম লিটনের লাশ ২ জানুয়ারি বাদ আসর তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ৫ একর আয়তনের বাড়ির সামনের মাঠে তৃতীয় জানাজা শেষে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় লিটনের বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ৪-৫ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।
এদিকে সুন্দরগঞ্জ সংবাদদাতা এ মান্নান আকন্দ জানান, আবদুল কাদের খানের ঘনিষ্ঠ সহচর রজ্জব আলী জানিয়েছেন, কাদের খান এমপি থাকাকালীন এমপি লিটনের ভয়ে গাড়ি নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করতে পারেননি। এ থেকে লিটনের প্রতি কাদের খানের বৈরী মনোভাব সৃষ্টি হয়। সে সময় কাদের খান তার অর্থায়নে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ দেখভালের জন্য হেলমেট পরে মোটরসাইকেলে বিভিন্ন এলাকায় যাওয়া-আসা করতেন। তিনি আরও বলেন, এটি অনেক দিন আগের কথা। আমার মনে হয় এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কারও যোগসাজশ আছে কি-না সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা দরকার।
মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দিনব্যাপী সাবেক এমপি আবদুল কাদের খানের গ্রামের বাড়ি উপজেলার ছাপরহাটি ইউনিয়নের খানপাড়ায় তল্লাশি অব্যাহত রাখে পুলিশ। এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ অবৈধ অস্ত্রের সন্ধানে কাদের খানের বাড়ির ২টি পুকুরে তল্লাশি চালাচ্ছে গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের একটি ডুবুরি ইউনিট। বিকেল ৪টা নাগাদ একটি পুকুরের পানি শ্যালো মেশিন দিয়ে সেঁচে ফেলে কাদার নিচে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু ওই পুকুরে কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে আর একটি পুকুরের পানি শ্যালো মেশিন দিয়ে সেঁচে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া তার বাড়ির উঠান, বাড়ির পেছন, আঙিনার মাটি খুঁড়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সুন্দরগঞ্জ থানার এসআই ইজার আলী জানান, ফায়ার সার্ভিসের কমপক্ষে ২০ জন সদস্য তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করছেন। এ ছাড়া স্থানীয় বেশ কিছু সংখ্যক সাধারণ মানুষকে এ কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ২টি শ্যালো মেশিন দ্বারা পুকুরের পানি সেঁচে ফেলা হচ্ছে।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ দুর্ঘটনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।

বাংলাদেশের সকল রাজবাড়ী ও জমিদার বাড়ীগুলির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্হা কি (ভিডও সহ )