ভারতের কাছে বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট এর ওয়াদা আর লোভ করবো না।

দিল্লিকে কথা দিয়েছেন, আর লোভে পড়বেন না এরশাদ

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি সাউথ ব্লক অর্থ্যাৎ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

এই বৈঠকে এরশাদ কথা দিয়েছেন যে ২০১৪ এর মতো পাগলামি আর করবেন না তিনি। অর্থ্যাৎ ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে সরে আসার যে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন ২০১৮ সালে তার পুনরাবৃত্তি আর ঘটবে না।
সাউথ ব্লকের সঙ্গে বৈঠকেই এরশাদ প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছেন, ২০১৪ তে বিএনপির সঙ্গে তাঁর একটি সমঝোতা হয়েছিল আর বিএনপি তাকে রাষ্ট্রপতি করার জন্য একটি টোপ দিয়েছিল। টোপটি ছিল, এরশাদের জাতীয় পার্টি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তবে নির্বাচন হয়তো বানচাল হয়ে যাবে। আর নির্বাচন না হলে সরকারের পতন হবে। তখন যদি বিএনপি কখনো ক্ষমতায় আসে তাহলে এরশাদকে রাষ্ট্রপতি করা হবে। তাই সমঝোতার ভিত্তিতে এরশাদ শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। একই কারণে তাঁর দলের অধিকাংশ সদস্যও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।
সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং এরশাদকে অনুরোধ করেছিল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য। কিন্তু এরশাদ এতেও কর্ণপাত করেননি। এবার ভারতে গিয়ে এরশাদ ওই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং কথা দিয়েছেন, ২০১৪ সালের ভুল ২০১৮ তে আর তিনি করবেন না।
এরশাদ মনে করেন, জাতীয় পার্টির অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভালো। তিনি জানান, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে একভাবে এবং অংশ না নিলে আরেকভাবে নির্বাচনের ব্যাপারে চিন্তা করবে জাতীয় পার্টি। যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তবে জাতীয় পার্টি মহাজোটের আকারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আর যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি অংশগ্রহণ না করে সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ভারত নিশ্চিত করেছে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে এরশাদের অবস্থান সুস্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছে তাঁরা। তখন এরশাদ বলেছেন, সর্বনিম্ন ৭০ আসন পেলে তিনি মহাজোটের সঙ্গে থাকবেন। নাহলে আলাদা হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। তবে এ ব্যাপারে ভারতের প্রতিক্রিয়া কী তা জানা যায়নি।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের একটি দল হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই মহাজোট থেকে বেরিয়ে এসে নির্বাচন বর্জনেরও ঘোষণা দেন এরশাদ। তবে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একাংশ নির্বাচনে যায়।
এক পর্যায়ে নিজেকে অসুস্থ দাবি করে এরশাদ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালেও ভর্তি হন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন। এমনকি এরশাদ তিনটি আসন থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন কিন্তু সময় মতো আবেদন না করায় লালমনিরহাট ও রংপুরের দুটি আসনে তাঁর প্রার্থিতা রয়ে যায়। সেবার রংপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হন তিনি।
শপথ গ্রহণ নিয়েও যথেষ্ট নাটক করেন এরশাদ। প্রথমে শপথ নেবেন না বলে জানালেও ভোটের ছয় দিন পর ১১ জানুয়ারি শপথ নেন তিনি।
বর্তমানে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিযুক্ত আছেন। বিশেষ দূত হিসেবে বেতন-ভাতাসহ সরকারি সুবিধাও পাচ্ছেন তিনি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ দুর্ঘটনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।

বাংলাদেশের সকল রাজবাড়ী ও জমিদার বাড়ীগুলির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্হা কি (ভিডও সহ )