যান্ত্রিক বিমানের ক্রমবিকাশ ও সর্বাধুনিক বিমান

আদম এলেন এ ধরাতে আলোর রথে

চিত্র : আকাশ ভরা গ্রহ তারা আদম ও হাওয়া এই পৃথিবীর প্রথম সভ্য মানব মানবী। নৃবিজ্ঞানীরা বলেন লাখো বৎসরের বিবর্তনের ফলে এই ধারাতেই কোন এক শুভু লগ্নে চোখ মেলেছিলেন তারা। আসলেই কি তাই? এই পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের ধর্ম বিশ্বাস। স্রষ্টা আদম ও হাওয়াকে এই ধূলির ধরায় নয় বরং বেহেশত নামক দূরের কোন এক গ্রহে সৃষ্টি করেছেন। অতপর এই গ্রহে পাঠিয়েছেন এটাকে আবাদ করার জন্য, তার খেলাফত প্রতিষ্ঠা করে তারই গুণগান করার জন্য। কিন্তু কেমন করে তাদের পাঠালেন? 

কোথাও বলা হয় নাই। মানুষ অবগত হল, আদমকে অবতরণ করানো হয়েছে সিংহলের পর্বতমালার কোন এক স্থানে আর হাওয়াকে অবতরণ করানো হয়েছে জেদ্দার মরু প্রান্তরে। সুতরাং তারা আকাশ ফুরে কোন দ্রুতগতি সম্পন্নমানে এই ভূমিতে অবতরণ করেছেন। স্রস্টাই তার কোন অতি দ্রুতগতি সম্পন্ন বাহনে সম্ভবত: তাদের পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। বাহনগুলি আলোর হওয়াই স্বাভাবিক। কেননা তার সকল ফেরেশতা বা দূতগণ আলোর দ্বারাই সৃষ্ট এবং তিনি নিজেও আলোকময় এক মহাশক্তি। তাইত স্রষ্টা তার শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (স) কে বোরাক নামক বাহন দ্বারা মেরাজ ভ্রমণ করিয়েছিলেন। উহা ছিল আলোর তৈরী এবং খুবই দ্রুতগামি সম্পন্ন। মুহুর্তৈর মাঝে তিনি ঐ বাহন দ্বারা প্রথম আকাশ বা এই মহাবিশ্বের তারকাদের জাগত অতপর দ্বিতীয় আকাশ বা মহাশূন্যের দ্বিতীয় স্তর এইভাবে পর্যায়ক্রমে সপ্তম স্তর অতিক্রম করেছিলেন। অতপর রফরফ তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন এ বিশ্বের সীমান্তের প্রান্তসীমায়। সে বলেও ছিল আলোর তৈরী।উল্লেখ্য যে বর্তমান কম্পিউটারের যুগেও প্রথম স্তর বা তারকাদের জগতের ব্যপ্তি হিসাব করা সম্ভব হয় নাই। শুধু তাই নয় বোরাক নামের ঐ যানটি আরো বহু স্থানে মুহাম্মাদ (স) এর বাহন ছিল। ঐগুলির সর্বমোট দূরত্ব আাদের কল্পনারও অনেক দূরে। 

অবশেষে বোরাক হযরত মুহাম্মদ (স) কে নিয়ে এই পৃথিবীতে ফিরে। আশ্চার্যের বিষয় যাত্রা শুরু ও সমাপনের মাঝে সময়ের ব্যবধান ছিল খুবই কম। অর্থাৎ বাহনটি এতই দ্রুদগতি সম্পন্ন ছিল যে আমাদের হিসাব মতে কোটি কোটি আলোক বর্ষের দূরত্ব মাত্র কয়েক মুহূর্তের মাঝে শেষ করতে সমর্থ হয়েছিল ঐ বোরাক।শুধু মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদী ধর্মে বিশ্বাসী জনসাধাারণ আদম ও হাওয়ার কাহিনীতে বিশ্বাস করেন। হযরত মুহাম্মদ (স) এর মিরাজ ভ্রমণ ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের বিশ্বাস। ব্যবিলন, এসিরিয়া, মিশর, গ্রীস, চীন, বারত ইত্যাদি দেশের পৌরনিক কাহিনীতে তাদের দেবদেবীদের আকাশ পথে ভ্রমণের উল্লেখ আছে। তাদের কারো কারো পাখা ছিল। কেহ বা উড়ন্ত ঘোড়া, ছাগল, বাঘ, সিংহ, ড্রাগল অথবা ষাড়ের পিঠে চড়ে আকাশ ভ্রমণ করেছেন। তাদের কারো বাহন ছিল উড়ন্ত রথ বা নৌকা।

 গ্রীকরা বিশ্বাস করে তাদের দেবতা দেই দেলাস (উধবফধষঁং) ও তার পুত্র ইকারাস পাখির পালক মোমের আঠাদ্বারা লাগিয়ে আকাশে উড়েন। পিতা সিসিলি পর্যন্ত পৌঁছতে সমর্থ হন আর হতভাগ্য পুত্রের ঘটে সর্মান্তিক মৃত্যু। তিনি ডানা ঝাপটিয়ে সূর্যের নিকটে পৌঁছেন। সূর্যের তাপে মোম গলে যায় ফলে তিনি সমুদ্রে পতিত হন এবং সাগরের গভীর কাল কালের মাঝে হারিরেয় যান। খুনকু ছিলেন মিশরের একজন দেবতা। তিনি তার আপন পাখায় ভড় করে যথা ইচ্ছা তথা উড়ে বেড়াতেন। ভারতীয় হিন্দুদের অনেক দেবতা মেঘের আড়ালে থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করতেন। অস্ত্র নিক্ষেপ করতেন, রথে চড়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে উড়ে যেতেন। ভারতীয় হিন্দুদের শক্তিশালী দেবতা শিবের বাহন ছিল একটি গাভী। গরুর নামে দেবতা চড়ে তিনি স্বর্গ নামক অন্য এক গ্রহে গমন করতেন। আরবরা বিশ্বাস করে হিব্রু রাজা ও নবী হযরত সুলায়মান (আ) সিংহাসনে চড়ে তার রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতেন। পারশ্য রাজ কায়কডিসের ছিল উড়ন্ত সিংহাসন। জ্বীন ও শয়তানদের সম্বন্ধে বিশ্বের প্রায় সকল দেশের মানুষের বিশ্বাস যে তারাও আকাশচারী। আকাশ পথেই ওদের আনাগোনা।


পাখির ডানায় ওদের গুঞ্জন


মানুষের পূর্বেই নাকি পাখিদের এই পৃথিবীতে আগমন। মানব সদৃশ বানরেরা আদম ও হাওয়ার আগমনের পূর্বে এই ধরায় রাজত্ব করত। সম্ভবত: তখন থেকেই শুরু। ডানা মেলা পাখি দেখে সম্ভবত: ওরাও মহাকাশে ওদের কল্পনার ডানা মেলে দিত। একদনি ধরা প্রথম মানব মানবীর পদচারণায় মুখর হল। ক্রমে পৃথিবীর সকল স্থানে তাদের সন্তানেরা বসবাস শুরু করল। সব জায়গায়ই পাখি তাদের প্রতিবেশী। মানুষের মাথার উপর দিয়ে মহানন্দে উড়তে থাকে ওরা। মানুষ ও ভারত, যদি আমরা ওদের মত উড়তে পারতাম। গহীন আকাশের ঘন নীলে হারিয়ে যেতে পারতাম। শুরু হল প্রচেষ্টা। ভাবল বাহুতে পাখা লাগিয়ে হয়ত পাখির মত উড়া যাবে।


নিবেদিত প্রাণ অনেকেই হাতে পায়ে পাখা লাগিয়ে পাহাড়ের চূড়া থেকে লাফিয়ে হাত পা নেড়ে পাখির মত উড়তে চাইল। বাতাসের সমুদ্রে ঝাপ দিল এইভাবে আরো সাহসী মানুষ। কিন্তু হায় মৃত্যুই শুধু তাদের সকল প্রচেষ্টাকে অমর করে রাখল। মানুষের পাখা নেড়ে উড়ে বেড়ানোর প্রচেষ্টা ব্যার্থ হল। সর্বশেষে ১৫১৯ সালে সে যুগের একজন উচ্চাভিলাসী বিজ্ঞানী এই প্রচেষ্টায় মারা যাওয়ার পর এইভাবে আকাশ ভ্রমণের পরীক্ষা নীরিক্ষা বাতিল হয়ে গেল। উল্লেখ্য যে তিনি এমন একটি পাখা বানিয়েছিলেন যা নিচের দিকে এবং পেছনের দিকে নাড়ানো যেত। কিন্তু তিনি ভুলে গিয়েছিলেন মানুষের হাত ও পায়ের মাংসপেশী পাখির মাংসপেশীর মত ক্রমাগত নাড়াচারা করার উপযোগী নমনীয় নয়। তার উল্লেখিত ভুল থাকা সত্বেও তিনিই উড্ডয়নের ইতিহাসে প্রথম বিজ্ঞানী। 


তোমরা এই মহান ব্যক্তির নাম জান কি?তার নাম লিউনার্দো দ্যা ভিঞ্চি। তার মৃত্যুর প্রায় ২৭৮ বৎসর পর ১৯৯৭ সালে হঠাৎ করেই তার হারিয়ে যাওয়া ডাইরিটি আবি®কৃত হল। তাতে পাওয়া গেল তার কল্পিত বিভিন্ন উড়ন্ত যানের নকশা। কোনটি বর্তমান যুগের হেলিকপ্টারের ঘূর্ণায়মান রোটরের কথাই মনে করিয়ে দেয়। কোনটি গ্লাইভার, কোনটি বা প্যারাসূটে ফুলও মানুষের সাথে তুলনীয়। তার কল্পনা ঐ সময় অনেক বিজ্ঞানীর কল্পনা রাজ্যে ঝড় তুলেছিল। এমনকি প্রায় একশত বৎসর পর পর্যন্ত তা কল্পনার প্রভাব বজায় ছিল। জার্মানীর অটোলিলিয়ানথাল ও তারপর ভাই গোস্তাভ ঐ সময় পাখির মত পাখা মেলে। উড়তে চেষ্টা করেন এবং পরে প্লাইভারের সাহায্যে উড়তে সমর্থ হন।

চিত্র :লিউনার্দো ভিঞ্চির উড়ন্ত যানের নকশা

লিউনার্দো ভিঞ্চির মৃত্যুর প্রায় ৩৭৫ বৎসর পর অটোলিলিয়ানথাল গ্লাইডারের সাহায্যে আকাশে উড়ছেন।অবশ্য লিলিয়ানের বহুপূর্বেই ১৬৭৮ সালে ফরাসী তালা নির্মাতা বেসনিয়ার বিশেষ ধরনের পাখার সাহায্যে উড়তে সমর্থ হয়েছেন বলে দাবী করেছেন। অবশ্য বর্তমান বিজ্ঞানীরা এর সত্যতায় সন্দিহান।এইবার আমি তোমাদিগকে কয়েকজন ডিজাইনারের নাম বলব। ওদের নামও উড্ডয়নের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ১৬৭০ সালে ফ্রান্সিসকোডি লানা নৌকার মত একটি উড়োজাহাজের নকশা একেছিলেন। তিনি ছিলেন ইটালি দেশের একজন পাদরী। তার উড়োজাহাজের নকশায় নৌকার উপরে ছিল একটি পাল আর বায়ু শূন্য তাম্র নির্মিত চারটি পাতলা গোলক

ফ্রান্সিসকো ডি লানার নৌকার মত একটি উড়োজাহাজের নকশা।অবশ্য সেটি কখনো আকাশে পাল তুলে নাই। কেননা চারটি পাতলা বায়ূশুন্য তাম্র গোলক নৌকাটিকে কখনো আকাশে নিয়ে যেতে সমর্থ ছিল না। কেননা বায়ুশুন্যতার ফলে গোলকগুলি বাইরের বায়ুর চাপে ধ্বংস হতে বাধ্য হত। সুতরাং পালের ধারণাও অবাস্তব। লরেনবেগ ডি কোথাও চিনে একজন পূর্তগীজ ফিলসভার। ১৭০৯ সালে তিনি আকাশযানের একটি নকশা আঁকেন। সম্ভবত: বাস্তবে সেটা কখনো তৈরী হয় নাই বিধায় আকাশেও উড়ে নাই।এইবার তোমরা ফ্রান্সের এনোনে শহরের দুই ভাইয়ের গল্প শোন। ওরা জোশেফ এবং এতিনে মুরগলফার। ১৭৮২ সালের কাহিনী। ওরা শুধু মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকেন, আর ভাবেন কি মজা হওত যদি না মেঘের উপর বেসে বেড়ানো যেত। কিন্তু এটা কেমন করে সম্ভব? মেঘত বায়ুর চেয়ে কিছুটা হালকা জলীয় বাষ্প ছাড়া আর কিছু নয়। এলোমেলো ভাবনা তাদের মগজে ঢেউ খেলত। ভাবতেন মেঘ যদি কোন একটি থলের ভেতর ডুকানো যায় তবে তা তাদের আকাশে নিয়ে যেতে পারবে। আসলে শেঘের কোন প্রয়োজন ছিলনা। অবশ্য বায়ু থেকে হালকা কোন পদার্থও তাদের জানা ছিলনা।


 এক শীতের রাতের ঘটনা। ওরা রান্নাঘড়ের চুল্লির পাশে বসে শীত তাড়াচ্ছেন। লক্ষ করছেন কিছু ছাই আগুনের ধোয়ার উপর ভাসছে। ভাবলেন আকাশে উড়ার সঠিক বস্তুটি পাওয়া গেছে। আর মেঘের প্রয়োজন নাই। তারা একটি ছোট্ট রেশমের থলে খুজে বের করলেন। কিছুক্ষণ আগুণের উপর ধরে রাখলেন। ধোয়ায় ওটা পূর্ণ হয়ে গেল। এক সময় ছেড়ে দিলে সেটা ক্রমে উপরে উঠল।চলল তাদের সাধনা। প্রথমে ছোট থলে, অতঃপর বড় থলে দ্বারা চালালেন অনেকগুলি পরীক্ষা। তারা ৩৮ ফুট পরিধীর বড় একটি লিলেনের থলে বানিয়ে ফেললেন। একটি মাঠের মাঝে উড্ডয়ন পরীক্ষা করতে চাইলেন। ৫ই জুন ১৭৮৩ সাল। একটি খড়ের অগ্নি কু- প্রস্তুত করা হল। দুই ভাই, আরো অনেকে থলেটি আগুনের উপর খুলে ধরলেন। উত্তপ্ত ধোয়ায় থলেটি পূর্ণ হয়ে গেল। ক্রমে সেটা ৬০০০ ফুট উর্ধ্বে আরোহণ করল। অতঃপর বায়ুর গতিপথে ১০ মিনিট কাল ভ্রমণ করে দেড় মাইল দূরে ভূমিতে নেমে এল। এরূপে আবিষ্কৃত হল প্রাথমিক আকাশযান। হাজার বছর পূর্বে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা পাখির ডানায় শুনেছিলেন ভবিষ্যত আকাশযানের যে মৃদ্যু চিকন বেলুন ও গ্লাইডার আবিষ্কার মানুষকে নিয়ে গেল সে স্বপ্নেরখুবই কাছে।


 

চিত্র: বেলুনের দৃশ্য।

 এর থলে সাধারণত রেশম অথবা লিনেন দ্বারা প্রস্তুত করা হত। থলেটি জালের ভিতর আটকানো থাকত। নিচে ঝুলানো হত যাত্রীবহনযোগ্য ঝুড়ি।বেলুন থেকে এয়ারশীপশনৈ: শনৈ: বেলুন উন্নত হয়েছে। উত্তপ্ত বায়ুর বদলে ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের হালকা গ্যাস। বেলুনের আকাশে উড্ডয়নের কারণ কি জান? উত্তপ্ত বায়ু আবহাওয়া ম-লের সাধারণ বায়ু হতে হালকা। সুতরাং উত্তপ্ত বায়ুশূন্য বেলুন উপরে উঠতে সমর্থ হয় এবং ঠা-া না হওয়া পর্যন্ত শূন্যে অবস্থান করতে পারে। হালকা গ্যাস পূর্ণ বেলুনও বায়ু হতে হালকা বিধায় উর্ধ্বে আরোহণে সমর্থ।উল্লেখিত নীতি মনে রেখে সে যুগের বিজ্ঞানীগণ ব্যবহার যোগ্য বেলুন আবিষ্কারে সচেষ্ট হলেন। প্যারিসের পিলাটর দ্য রোজিয়ার ও মার্কুয়িস দ্য আরল্যা-য় এক বিশাল আকৃতির বেলুন প্রস্তুত করলেন। ১৭৮৩ সালের নভেম্বর মাসের ২১ তারিখ। তাদের বেলুন বাতাস ভেদ করে আকাশে আরোহণ করতে থাকল। নিচে ঝুলন্ত জ্বলন্ত ধাতব চুল্লি। ওটা ২৫ মিনিট আকাশে ছিল। অতঃপর সারে পাঁচ মাইল দূরে সফলভাবে ভূমিতে অবতরণ করল।বেলুনে সর্বপ্রথম হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করেন ফ্রান্সেরই বিজ্ঞানী প্রফেসর জে এ সি চার্লস। অবশ্য এই গ্যাস ১৭৬৬ সালে হেনরী ক্যাভেনডিস আবিষ্কার করেন। ১৭৮৩ সালের ১লা ডিসেম্বর চার্লসের রেশমী কাপড়ের বেলুনখানা আকাশে উড়ে। সেটা ছিল বরারে আবৃত। চার্লস নিজেই বেলুনটির একজন যাত্রী ছিলেন। বেলুনের অপর যাত্রী ছিলেন রবার ব্যবহারের উদ্ভাবক রবার্ট প্রনৃদ্বয়ের বড় জন। ঐ যাত্রায় তারা ৭৬ মাইল ভ্রমণ করে নিরাপদে অবতরণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
১৭৮৫ সাল বেলুনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ঐ বৎসর ফ্রান্সের জ্য পিয়ারে ব্লানচার্ড ও আমেরিকা ড. জন জেফরীন যৌথ ভবে হাইড্রোজেন বেলুনে সর্বপ্রথম ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন। ঐ বৎসরই নতুন ধরনের বেলুনে ভ্রমণ প্রচেষ্টায় দুইজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী মৃত্যু বরণ করেন। ঐ দুইজনের নাম পিলাটর দ্য রোজিয়ার এবং তার উড্ডয়ন সঙ্গি পি. এ দ্য রোমেইন। তারা বৃহৎ হাইড্রোজেন বেলুনের নিচে ক্ষুদ্রতর চুল্লি ব্যবহার করেছিলেন। হাইড্রজেন দাহ্য পদাথ। ফলে উড্ডয়নের মাত্র ২০ মিনিট পর চুল্লি থেকে হাইড্রোজেন পূর্ণ বেলুনে আগুন লেগে গেল। বেলুনে বিস্ফোরণ ঘটল। ঐ সময় বেলুনটি ৩০০০ ফুট উর্ধ্বে বাাতাসে ভেসে উড়ে বেড়াচ্ছিল। তারা ছিলেন নতুন কোন কল্পনায় বিভোর। তাদের নিয়ে জ্বলন্ত বেলুন ৩০০০ ফুট নিচে ভূমিতে পতিত হল। তারা জীবন দিয়ে ইতিহাসে নাম রেখে গেলেন।জ্য পিয়ারে ব্লানজার্ড এবং ড. কান জেফরীন এই বেলুনে ১৭৮৫ সালের জানুয়ারী মাসে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন। তাতে ছিল বিমানের মত রাডার এবং বায়ু কাটার জন্য কয়েকটি দাঁড়।আমেরিকাতেও ব্লানচার্ড ১৭৯৩ সালে বেলুনের সাহায্যে আকাশে উড্ডয়ন করে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন। তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন। ফিলাডেলফিয়ায় ব্লানচার্ডের বেলুনে উড্ডয়ন দেখার জন্য তিনিও জনতার মাঝে উপস্থিত ছিলেন।
এরপর মানুষকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিশেষ বিশেষ কাঠামোর উপর বেলুনের কাপড় অথবা রবারের আবরণ দেয়া হল। আবি®কৃত হল ডিরিগেবল অথবা এয়ারশীপ।হেনরী জিফার্ডের ডিরিগেবল।হেনরী জিফার্ড ছিলেন ফ্রান্সের একজন প্রকৌশলী। তিনি উল্লেখিত ধরনের বিমানের প্রথম সফল স্রষ্টা। তিনি ১৮৫২ সালে ১৪৩ ফুট লম্বা গিসারের মত একটি ডিরিগেবল নির্মাণ করেন।ক্রমে এয়ারশীপে হাইড্রোজেন গ্যাসের বদলে বয়লার গ্যাস ব্যবহার আরম্ভ হল। অতঃপর শক্তিশালী অন্তর্দহন ইঞ্জিন সংযোজন করা হল। ১৮৯৮ সালে ব্রাজিলের আলবার্তো সান্টোস ডুমন্ট একটি এয়ারশীপ নির্মাণ করেন। তিনি উহাতে সাড়ে তিন হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন সংযোজন করেন। তিনি সর্বমোট চৌদ্দটি বিভিন্ন ধরনের এয়ারশীপ নির্মাণ করেছিলেন। সেগুলির তিনি দক্ষ পরিচালকও ছিলেন। তরুণ ডুমন্টের ডামস্থান ব্লাজিল হলে কি হবে মুক্ত পাখির মত ্ড়ার জন্য তিনি ফ্রান্সের আকাশকে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি যেন ছিলেন প্যারিসের আকাশের মুক্ত বিহঙ্গ। ছাদ সমান উচ্চতায় প্যারিসের রাস্তার উপর দিয়ে উড়ে তিনি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। ১৯০১ সালে একবার তিনি তার এয়ারশীপ নিয়ে সেন্ট ক্লাউড থেকে আকাশে উড়লেন। উদ্দেশ্য আইফেল টাওয়ার পর্যন্ত পৌছে ফিরে আসা। তার এরয়ারশীপ নিরাপদে আইফেল টাওয়ার পর্যন্ত পৌঁছান। ওটার চারদিকে বৃত্তাকারে পাক খেয়ে নিরাপদে সেন্ট ক্লাউডে ফিরে গেল। তিনি দক্ষতার সাথে সেখানে অবতরণ করে বিশ্ববাসিকে তাক লাগিয়ে দেন।আলবার্তো সান্টোস ডুমন্ট একটি এয়ারশীপে আইফেল টাওয়ার পরিভ্রমণ।এয়ারশীপ নির্মাণে জার্মানরা বিশেষ দক্ষতার ছাপ রাখে। সেই দেশের কাউন্ট ফার্ডিনান্ড ভন কোপেলিন একিিট অনমনীয় কাঠামোর বেলুন নির্মাণ করেন। এলোমুনিয়ামের কাঠামোর এয়ারশীপটি ছিল ৪২০ ফুট লম্বা। কাঠামোর নিচে ঝুলন্ত ছিল যাত্রী ও চালক কেবিন। তার এয়ারশীপটির নাম তারই নাম অনুসারে দেওয়া হয় জেপেলিন। তিনি ছিলেন জার্মান সেনা বাহিনীর একজন অবসর প্রাপ্ত অফিসার। যানটির উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য তিনি সান্টোস ডুমন্টের পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন। এর জন্য তিনি এয়ারশীপটির বিশেষস্থানে একটি ওজন স্থাপন করেছিলেন। সেটির উপর নিচে উঠানো নামানো যেত। প্রয়োজনে সামনে নেওয়া যেত এবং পেছনে টানা যেত। উজনটি পেছনে টানলে এয়ারশীপটির সম্মুখভাগ উপরের দিকে উঠত। ফলে এটাও উড্ডয়ন করতে থাকত। উজনটিকে সামনের দিকে ঠেলে দিলে সম্মুখভাগের উজন বৃদ্ধি পেত ফলে সেটি নিচের দিকে যেত এবং আস্তে আস্তে অবতরণ করত।


জেপেলিন নামের অনেক এয়ারশীপ জার্মানরা নির্মাণ করেছিল। প্রথম মহাযুদ্ধে ঐগুলি ছিল পরাক্রমশালী আকাশযোদ্ধা। মহা বিক্রমে ল-ন শহরের উপর বোমা বর্ষণে পিছপা হয় নাই। জেপেলিন স্কোয়াড্রন। অবশ্য যুদ্ধের পর কোপেলিন পরিবহন বিমান হিসাবে মানব কল্যাণে আত্মনিয়োগ কর্ েসাগর পার হয়ে অনেক দেশে সেগুলি সেবার স্বাক্ষর রাখতে ব্রতি হয়। ১৯২৯ সালে ২০ নি ৪ ঘণ্টায় গ্রাফ জেপেলিন ২১,৭০০ মাইল অতিক্রম করতে সমর্থ হয়। উড্ডয়ন ছিল একটি বিশ্ব রেকর্ড।তখন বৃটেন, ফ্রান্স, ইটালি এবং আমেরিকা তাদের নিজ নিজ প্রয়োজনে এয়ারশীপের অনেক উন্নতি করে। ক্রমে ঐগুলির দৈর্ঘ্য এবং গতি উভয়ই বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেসবের কোনটির দৈর্ঘ্য ছিল ৮০০ ফুট আর কোন কোনটি ঘণ্টায় ৮০ মাইল ভ্রমণ করতে সমর্থ ছিল। এক সময় এয়ারশীপের প্রলয় ঘণ্টা শোনা গেল। দুর্ঘটনা যেন তাদের নিত্য সাথী হয়ে দাড়াল। একটি দুঃখজনক ঘটনা এয়ারশীপ নির্মাণের উৎসাহ স্তিমিত করে ফেলল। ৬ই মে, ১৯৩৭ সাল। জার্মান কোপেলিন হিনডেনবার্গে বিষ্ফোরণ ঘটে। অগ্নি সেটিকে গ্রাস করে ফেলে। ঐ ঘটনায় ছয় ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করেন। এরপর আর উল্লেখযোগ্য এয়ারশীপ নির্মাণ করা হয় নাই।


অবশ্য ব্লিস্প দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেও প্রথম মহাযুদ্ধের মত অংশগ্রহণ করে। এই ধরনের ক্ষুদ্র নমনীয় এয়ারশীপগুলো যুদ্ধের সময় আকাশে টহল দিয়ে বেড়াত, সমুদ্রে সাবমেরিন খুজত। লম্বা তারে বাবা ব্লিস্পগুলি শত্রু বিমানের নিু উচ্চতায় বোমা বর্ষণ ও গুলি বর্ষণ হতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান রক্ষণ করত। ক্রমে জার্মান ও বৃটেনসহ সকলদেশ থেকে এয়ারশীপ বিদায় নেয়া।এক পাশ থেকে দেখা রাইট ব্রাদ্রার্সের সর্বপ্রথম ইঞ্জিন চালিত বিমান। এটি ১৯০৩ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ১২ সেকেন্ডে ১২০ ফিট, ১১ সেকেন্ডে ১৯৫ ফিট, ১৫ সেকেন্ডে ২০০ ফিট এবং ৫৯ সেকেন্ডে ৮৫২ ফিট উড্ডয়ন করে।


যান্ত্রিক বিমানের ক্রমবিকাশ ও সর্বাধুনিক বিমানবহুদিন পূর্ব থেকে মানুষ ধাতবযানে আকাশ ভ্রমণের প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছিল। ১৮০৪ সালে লন্ডন শহরের যুবক জর্জ কেলে একটি গ্লাইডার বানিয়ে ফেলেন। তার গ্লাইডারটির এক দিকের দ-ে ছিল একটি লেজ। ওটা যানটিকে উপরে, নিচে এবং ডানে, বায়ে নিয়ন্ত্রণ করে পারত।

 তার গ্লাইডারের একমাত্র যাত্রী ছিল ১০ বৎসরের একজন বালক। উড্ডয়নের চিন্তা ধারায় তিনি ছিলেন তার যুগের চেয়ে অনেকটা অগ্রগামী। তখনো ইঞ্জিন আবি®কৃত হয় নাই। কিন্তু তিনি পেট্রোল নির্মিত কোন ইঞ্জিন ব্যবহারের সম্বাবনা চিন্তা করতেন। তিনি আকাশযানের হরেক রকমের নকশা আকেন। ১৮৪৩ সালে অংকিত নকশাটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য এবং তার উন্নত চিন্তাধারার পরিচায়ক। ওটা ছিল একটি হেলিকপ্টার ও বিমানের মিলিতরূপ। তিনি সেটাতে হিম ইঞ্জিন ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।জন স্ট্রিং ফেলোর এ্যারিয়াল ষ্টিম ক্যারেজের নকশা


রাইট ব্রাদার্সের বহুপূর্বেই কেলের মত অনেকেই আকাশ যান নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেন। ১৮৪২ সালে উইলিয়াম হ্যানসন এবং জন স্ট্রিং ফেলো এ্যারিয়াল ষ্টিম ক্যারেজের নকশা আকেন। কাঠামোর ডিজাইন করেছিলেন হ্যানসন এবং ষ্টিম ইঞ্জিনের কান ষ্ট্রিং ফেলো। তাদের পরিকল্পিত বিমানটির পাখার দৈর্ঘ্য ছিল ১৫০ ফ্রিট এবং ইঞ্জিনটি ২৫ থেকে ৩০ অশ্বশক্তিসম্পন্ন। পরে তারা ২০ ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট পাখাসম্পন্ন আরো একটি ছোট বিমানের নকশা করেন। বিভিন্ন কারণে বাস্তবে উভয় বিমানই আকাশে পাখা মেলতে ব্যর্থ হয়।


অবশ্য সেকালে তাদের ডিজাইন বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছিল তাদের এ্যারিয়াল ষ্টিম ক্যারেজের ছবি। তাদের পথে আরো অনেকে গবেষণা করেন। অংকন করেন উন্নত নকশা। ফ্রান্সের আলফনসো পেনডিড ১৮৭১ সালে বিমানের একটি মডেল আবিষ্কার করেন। তা চালনার জন্য রাবার ব্যান্নড ব্যবহার করা হয়। ১১ সেকেন্ডে সেটি ১৩১ ফিট উড্ডয়ন করেছিল। এ চার বৎসর পর ইংল্যান্ডের টমাস মুই আকাশ যানের একটি বিরাট মডেল তেরী করেন। ওটার নাম দেওয়া হয় এ্যারিয়াল ষ্টিমার। তাতে স্টিম ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছিল। অবশ্য সেটি ভূমি থেকে মাত্র কয়েক ইঞ্চি মডেলটিকে উঠাতে সমর্থ হয়েছিল। আসলে ভারী স্টিম ইঞ্জিনের সাথে হালকা অথবা অধিক উড়ানের রকান মডেলই আকাশে উঠানো সম্ভব ছিল না। ১৮৭৬ সালে অন্তরদহন ইঞ্জিন আবিষ্কৃত হয় এবং দ্রুত উন্নতি লাভ করতে থাকে। অবশ্য এই ধরনের ইঞ্জিন বিমানে সংযোজনের পূর্বে ষ্টিম ইঞ্জিন ব্যবহারের আরো প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল এবং আকাশযানের আরো উন্নত কাঠামোর ডিজাইন করা হয়েছিল।


উড্ডয়নের ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়ার লরেন্স হারগ্রের াবদানও খাট করে দেখলে চলবে না। তিনি এমন একটি বাক্স ঘুড়ি আবিষ্কার করলেন যাতে গ্লাইডার এবং উড়োজাহাজে ব্যবহারযোগ্য বিশেষ ধরনের পাখা সংযুক্ত করা সম্ভব। ইংল্যা-ের হুরাশিও ফিলিপস তার গবেষণা দ্বারা বিমানের পাখার উন্নতি করতে চেয়েছিলেন। তার বানানো একটি আকাশযানের উড্ডয়ন পরীক্ষা ১৮৯৩ সালে বংরা হয়েছিল। তাতে ছিল ভেিেনশয়ান ব্লাইডের মত ৫০টি পাখা। সেটাতে সংযুক্ত করা হয়েছিল ষ্টিম ইঞ্জিন। যানটির শুধু পেছনের চাকা ভূমি হতে উপরে অল্প উঠেছিল। স্যার হিরাম ম্যাক্সিম ১৮৯৪ সালে চারটন ওজনের এক আশ্চর্য আকাশযান তৈরী করেন। তিনি ছিলেন লন্ডনে বসবাসরত একজন আমেরিকান। তিনি সেনটকে রেললাইনের উপর থেকে উড্ডয়ন করাতে চেয়েছিলেন। নির্দিষ্ট দিন সেটি ১৮০ হর্স পাওয়ারের দু’টি স্টিশ ইঞ্জিনের সাহায্যে রেলপথের উপর দিয়ে ছুটে গেল। চাকা পথ থেকে সামান্য উপরে উঠল অতঃপর ভূমিতে লটিয়ে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হল। ১৮৯৭ সালে ফ্রান্স দেশের ক্লিমেন্ট আড়ের এভিয়ন থ্রী নামে একটি আকাশযান তৈরী করেছিলেন। তিনি দাবী করেছিলেন, ষ্টিম ইঞ্জিনচালিত এই যানটি আকাশে উড্ডয়ন করতে সমর্থ হয়েছিল।


ইতোপূর্বে আমি তোমাদিগকে অটোলিলিয়ানথালের আবিষ্কার সম্বন্ধে অল্প ধারণা দিয়েছিলাম। তিনি অনেক গ্লাইডার তৈরী করেছিলেন। দুই হাজার বারের অধিকবার তিনি সেগুলোর সাহায্যে উড্ডয়ন করেছিলেন। ১৮৯৬ সালে তিনি তার তৈরী একটি গ্লাইডারে আড়াই অশ্বশক্তিসম্পন্ন একটি মোটর সংযোজন করেন। সেটার জ্বালানী ছিল ঘনিভূত কার্বনিক এসিড গ্যাস। ৯ই আগস্ট তার যান্ত্রিক যানে তিনি সওয়াব হলেন। দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হলেন। তার শেষ উচ্চারণ ছিল অবশ্যই আত্মত্যাগ করতে হবে ১৯৯ সালে জার্মান অটোলিলিয়ানথালের একজন ইংরেজ ছাত্র পার্সি পিলচার একই উদ্দেশ্যে ইঞ্জিনচালীত গ্লাইডার চালাতে গিয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হন। তার অপর একজন ছাত্র ছিল অকটেভ চেনুট। তিনি একপাখা এবং দুই পাখাবিশিষ্ট বহু গ্লাইডার নির্মাণ করেন। ঐগুলিতে তিনি ও তার ছাত্র এ এম হেরিং প্রায় ৭০০ বার উড্ডয়ন করেন। এই উড্ডয়ন পাগল লোকটির জন্মস্থান ফ্রান্স। বাল্য বয়সে তিনি আমেরিকা গমন করেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। তিনিও যান্ত্রিক আকাশযানের স্বপ্ন দেখতেন।


ব্যর্থতা সফলতার ভিত্ত্ িইে প্রবাটির সর্বজন পরিচিত। আলোচিত কোন প্রচেষ্টা সফল হয় নাই সত্য, ঐগুলি ব্যার্থও হয় নাই। কেননা ব্যার্থ প্রচেষ্টার পথ ধরেই উইলবার রাইট এবং অরভিল রাইট নামে দুই ভাই ১৯০৩ সালের ১৭ই ডিসেম্বর সফলভাবে সর্ব প্রথম আকাশে উড্ডয়ন করতে সমর্থ্য হন। তারা আমেরিকার কিটিহক সমুদ্র উপকুলকে উড্ডয়নের জন্য উপযুক্ত স্থান হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। তারা তাদের দুই পাখা বিশিষ্ট চার সিলেন্ডারের পেট্রোল ইঞ্জিনে বিমানে সেদিন সফলভাবে চারবার আকাশে উড্ডয়ন করতে সমর্থ হন। প্রথমবারতারা ১২ সেকেন্ডে ১২০ ফিট উড্ডয়ন করেছিলেন। দ্বিতীয়বার উড্ডয়ন করতে সমর্থ হন ১১ সেকেন্ডে ১৯৫ ফিট। অতপর তৃতীয়বার উড়েন ১৫ সেকেন্ডে ২০০ ফিট এবং শেষবার উড্ডয়ন করেন ৫৯ সেকেন্ডে ৮৫২ ফিট। অনেক গবেষণার পর ১৯০৪ সালে তারা তাদের দ্বিতীয় বিমান নির্মাণ করেন। সে বিমান টেনের একটি গোচারণভূমির উপর ৬৮ একর পরিমাণ স্থান অতিক্রম করে। তারা ১৯০৫ সালে আরো উন্নত একটি বিমান নির্মাণ করেন। সেই ২৪.২ মাইল উড্ডয়ন করতে সমর্থ হয়েছিল। মজার ব্যাপার যে ঐ সময় তার আবিষ্কারকে অনেকেই অবিশ্বাস করে। এমনকি আমেরিকা সরকারও তাদের আবিষ্কারকে গুরুত্ব দেয় নাই। ঐ সময় রাইট ব্রাদার্স মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য একখানা বিমান নির্মাণ করে দেওয়ার ইচ্ছায় তিনবার আবেদন করেছিলেন। উল্লেখিত কারণে তাদের ইচ্ছা ব্যর্থ হয়।চিত্র : প্রাথমিক দিনের কয়েকটি বিমান।বিদ্যুত গতিতে ভ্রাতৃদ্বয়ের বিমান আবিষ্কারের খবর সমুদ্রের অপর দিকে ইউরোপে পৌঁছে যায়। ঐ মহাদেশের ফ্রান্স প্রথম বিমান নির্মাতা দেশ হিসাবে আত্ম প্রকাশ করে। ঐ দেশের দুই ভাই গাব্রাইল এবং চার্লস ভোশীন বিমানের প্রথম নির্মাতা। ১৯০৬ সালে আলবাটো মান্টোস ডুমন্ট ভোশেন ভ্রাতৃদ্বয়ের একটি বিমান পরিচালনা করেন। সে বিমান সম্মুখে না উড়ে পেছনের দিকে উড্ডয়ন করত। ১৯০৭ সালে তাদের তৈরী একটি বিমান লুইডিনা প্রেন্স নামে এক ব্যক্তি পরিচালনা করেছিলেন। এটি ছিল দুই পাখাবিশিষ্ট উড়োজাহাজ ফ্রান্সে বসবাসরত একজন ইংরেজ তাদের অপর একটি বিমানে উড্ডয়ন করেছিলেন একই সালে। ঐ বৎসরই লুই ব্লিয়য়েট নামে এক ব্যক্তির একটি একপাখা বিশিষ্ট বিমান নির্মাণ করেন।বিমান উন্নত ইঞ্জিন ও কাঠামোর মিলনে আরো উন্নত হতে থাকে। সেই সময় লিউ লেভাভাশিয়ার নির্মিত এস্তোনিতি বিমান খুবই ফ্রাগযোগী ছিল। ১৩ই জানুয়ারী ১৯০৮ সাল।ঐ দিন হেনরি ফারমেন একটি বিমান নিয়ে আকাশে উড়েন। চক্রাকারে একমাইল পরিভ্রমণ করেন। ঐ বৎসরই তিনি ‘এন্তোনিতি’ বিমানে ১৬ মাইল অতিক্রম করেন।ইংল্যান্ডে স্যার এলিয়ট ভারভন রো ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর জন্য ‘এভ্রো’ নামে বিমান নির্মাণ করেন। প্রায় একই সময় আমেরিকার গ্লেন কারটিস বিমান চালনা করে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন।ক্রমে মার্কিন সরকারও তার সেনাবাহিনীর জন্য রাইট ব্রাদার্সের বিমানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। তারা সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কোরের জন্য একটি বিমানের আদেশ দিতে সিদ্ধান্ত নেয়। অপর দিকে ইউরোপের ফ্রান্সে রাইট ব্রাদার্সের বিমান তৈরীর জন্য একটি কোম্পানী প্রতিষ্ঠিত হয়।অরভীল তাদের বিমানের কার্যকারীতা সেনাবাহিনীর নিকট প্রমাণের জন্য একটি বিমান নিয়ে ওয়াশিংটনের নিকট ফোর্ট মেয়ারে গমণ করেন এবং উইলবার অপর একটি বিমান নিয়ে ফ্রান্সের লি ম্যানস এ গমন করেন। ফ্রান্সে উইলবারে বিমান ১৯০৮ সালের ৮ আগস্ট আকাশে ডানা মেলে। অবশেষে সফলভাবে আবতরণ করে। প্রমাণিত হয় তার বিমানটিই সে যুগের উত্তম বিমান।অরভীল ফোর্ট মেয়ারে ৩রা সেপ্টেম্বর উড্ডয়ন করেন ও সফল ভাবে অবতরণ করেন। দর্শকেরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। তিনি একই মাসে আরো অনেকবার উড্ডয়ন করেন। ১৭ই সেপ্টেম্বর তিনি লেফটেন্যান্ট থমাস সেলফরীজ নামে সিগন্যাল কোরের একজন অফিসারকে নিয়ে আকাশে উড়েন। ২৫ ফুট উর্ধ্বে আরোহণের পর প্রপেলারের ত্রুটির কারণে বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হয়। থমাস সেলফরীজ মারা যান। তিনি বিমান দুর্ঘটনায় প্রথম শহীদ।বলা যেতে পারে অনেক প্রাণের বিনিময়ে বিমান আবিষ্কৃত হয়েছে। আজকে আমরা যেসব সর্বাধুনিক বিমানের সাথে পরিচিত সেগুলি উল্লেখিত বিমানগুলিরই উন্নত সংস্করন। বিবর্তনের ধারায় অনেক গবেষণা এবং জীবন বিসর্জনের পর ওরা আজকের পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।একালুন ফ্রটো কনকর্ড বর্তমাান কালের সর্বাধুনিক যাত্রীবাহী বিমান। এটা বৃটেনে ও ফ্রান্সের মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। এই বিমান ১৪৪ জন যাত্রী বহনে সমর্থ। এটা একটি সুপারসনিক ধরনের বিমান। শব্দের দ্বগুণ বেগে এই বিমান উড্ডয়নে সমর্থ। ভূমি থেকে ৬০,০০০ ফুট উচ্চতায় কনকর্ড উক্ত যেতে পারে। রুনা বিমানটি ইউ ১৪৪ যাত্রীবাহী উভয় বিমানই যখন আকাশে উড়ছে যাত্রীবহনের সুপারনিক ঝুকিপূর্ণ।


চিত্রঃ কনকর্ড বিমান (সৌজন্যেঃwikipedia)

আধুনিক যুদ্ধ বিমানের জন্য আমেরিকার ফেনটস, ইংল্যা-ের হ্যারিয়ার, এনগলু ফ্যান্স জাগুয়ার, ফ্রান্সের মিরেজ, রাশিয়ার মিগ ২৯ ধরনের বিমান বিখ্যাত। আমেরিকার ডিজাইনকৃত সর্বাধুনিক বোমারু বিমান নর্থইপ বি-২।
চিত্রঃ নর্থকুপ বি- বিমান (সৌজন্যেঃwikipedia)

বর্তমান বিমানযুদ্ধে যুদ্ধ বিমানের চেয়ে সামরিক পরিবহন বিমানের গুরুত্ব মাটেও কম নয়। যুদ্ধেও শান্তিতে সৈন্য পরিবহন, খাদ্য ও অস্ত্র সরবরাহ এই বিমান করে থাকে। যুদ্ধের ময়দানে প্যারাসুট থেকে সৈন্য অবতরণ এই বিমান থেকেই করানো হয়। বন্যা, ভূমিকম্প এবং অন্য যে কোন ধরনের দুর্যোগে প্যারাসূটের সাহায্যে উদ্ধারকারী দল অথবা খাদ্য নামানোর প্রয়োজন হলে এই বিমানের সাহায্য নেওয়া হয়। যে কোন ধরনের যাত্রাবাহী বিমান এমনকি জাম্বু জেটও এই কাজে ব্যবহার করা যায়। অবশ্য সামরিক বাহিনী এই কাজের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত পছন্দ মাফিক ধরনের বিমান ব্যবহার করে থাকে। এই ধরনের বিমানে যাত্রাবাহী বিমানের মত আরাম আয়েশের ব্যবস্থা থাকে না। তবে রসদ উঠানো নামানোর জন্য লেজের নিচে একটি বিশেষ দরজা (ব্যাক ডোর) থাকে। ভারী বস্তু উঠানোর জন্য থাকে বিশেষ ধরনের লিফটের ব্যবস্থা। আধুনিক সামরিক বাহিনীর জন্য আমেরিকারসি-১৩০ বিমান খুবই উপযোগী। জার্মান ডরনিয়ার এবং রাশিয়ার তৈরী এন্তোনভ বিমানগুলিও বিখ্যাত।
চিত্রঃ ডরনিয়ার পরিবহন বিমান।

বর্তমান যুগে হেলিকপ্টারের ব্যবহারও খুবই ব্যাপক। সামরিক বাহিনী এবং বেসমারিক সংস্থা বিভিন্ন প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে থাকে। সিকোরস্কি, চিনুক, বেল, পোমা, এলিউট এবং রাশিয়ার এম আই সিরিজের হেলিকপ্টারগুলি বিশ্ববিখ্যাত।
সিকরঙ্কি এস-৮০ এম-১ হেলিকপ্টার (সৌজন্যে :wikimedia )

বিভিন্ন ধরনের বিমান এবং ওদের উড্ডয়ন রহস্য
বিভিন্ন ধরনের বিমানের শব্দে বর্তমান বিশ্বের আকাশ মুখরিত। বেলুন আবিষ্কারের পর থেকে আকাশযানের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল আজো তা বজায় আছে। তোমরা এ পর্যন্ত যে সল বিমানের সাথে পরিচিত হয়েছে ওদের সকলই মাত্র দুই ধরনের বিমানের অন্তর্ভুক্ত। যেমন এ্যারোষ্ট্যান্ট বা বেগহীন বায়ুচালীত বিমান এবং এ্যারোডাইন বা বেগময় বায়ুচালীত বিমান।


এ্যারোষ্ট্যাট বায়ু থেকে হালকা বায়বীয় পদার্থ অথবা উত্তপ্ত বায়ু দ্বারা পরিচালিত বিমান। এই জাতীয় বিমানের জন্য প্রয়োজন ছিদ্রহীন রাবার অথবা লিলেনের থলে। হালকা গ্যাস দ্বারা পূর্ণ করে অথবা সাধারণ বায়ু ক্রমাগত উত্তপ্ত করার ব্যবস্থা করে আকাশে উড্ডয়ন করতে হয়। উল্লেখ্য যে উত্তপ্ত বায়ু সাধারণ বায়ু থেকে হালকা। এই জাতীয় বিমান ভূমি থেকে উড্ডয়ন করে এবং বায়ুতে ভাসতে থাকে কারণ বিমানটি বায়ুর সমপরিমাণ অথবা তা থেকে অধিক স্থান জুড়ে থাকে। তা ব্যতীত যানটির উজানও ঐ পরিমাণ বায়ুর সমান অথবা বায়ু থেকে কম। বেলুন এবং এয়ারশীপ এই জাতীয় বিমান।

বেলুন যুগে চালক ও যাত্রী পরিবহনের জন্য বেলুনের নিচে একটি ঝুড়ি ঝুলানো থাকত। বায়ুর গতিপথ ছিল বেলুনের গতিপথ। বায়ুর উল্টা দিকে বেলুন চলতে পারত না। পরে অবশ্য ইঞ্জিন, রাডার ইত্যাদি স্থাপন করে তা সকল দিকেই চলতে সমর্থ হয়েছিল। এয়ারশীপ আকৃতি পরিবর্তীত যান্ত্রিক বেলুন। আকাশে যে কোন দিকে এয়ারশীপ চালানো যেত। সে বাহনে পরিচালক ও যাত্রীদের জন্য উপযুক্ত কেবিন সংযুক্ত থাকত।
এ্যারোডাইন বায়ু থেকে ভারী জাতীয় বিমান। এর চারিদিকের গতিময় বায়ুর প্রতিক্রিয়া কাজে লাগিয়ে এটি আকাশে উড্ডয়ন করে, একস্থান থেকে অপর স্থানে উড়ে বেড়ায় এবং ভূমিতে অবতরণ করে। গ্লাইডার, মেইলপ্লেন, এ্যারোপ্লেন, সিপ্লেন, হেলিকপ্টার ইত্যাদি এই ধরনের বিমান।
উল্লেখিত সকল বিমান বায়ু থেকে ভারী হলেও সেসবের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। প্রত্যেকের ধরন এবং কর্মদক্ষতা ও ভিন্ন। নিুে আলাদাভাবে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।
গ্লাইডার এবং মেইলপ্লেন: এইগুলি ইঞ্জিন বিহীন বিমান। বিমানগুলির পাখঅ স্থির এবং হালকা। বহিরাকৃতি খুবই এ্যারোডাইনামিক অর্থাৎ বায়ু ভেদ করে যাওয়ার সময় খুব কম বাধার দৃষ্টি করে অগ্রসর হতে পারে। উভয় ধরনের বিমানেই চালকের জন্য ছোট্ট একটি ককপীট থাকে, যা থেকে চালক একটি মাত্র নিয়ন্ত্রণদত্ত এবং অল্প কয়েকটি ইনুষ্ট্রমেন্টের সাহায্যে বিমানগুলি পরিচালনা করে থাকেন। উভয়টিই বর্তমান কালে স্পোর্টস বিমান হিসাবে পরিচিত। কোথাও কোথাও খুবই প্রাথমিক উড্ডয়ন প্রশিক্ষণের জন্য এইগুলি ব্যবহৃত হয়। এক সময় এদেশে সামরিক ক্যাডেটগণকে গ্লাইডারে প্রাথমিক উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকত।


এ্যারোপ্লেন: স্থির পাখা বিশিষ্ট সকল বিমানই এ্যারোপ্লেন। পাখাগুলি ফিউডালেজের সাথে সংযুক্ত থাকে। ফিউজলেজ এ্যারোপ্লেনের প্রধান অংশ। কন্ট্রোল সারফেস, ইঞ্জিন, ল্যা-িং গিয়ার ইত্যাদি সকল কিছুই ফিউডলেজের সাথে সংযুক্ত থাকে। এতে আছে ককপীট রাফ্লাইট ডেক। এটি থেকেই চালক বিমানটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে তাতে স্থাপিত কণ্ট্রোল কলাম এবং অন্যান্য ইনুস্ট্রমেন্টের সাহায্যে। যাত্রী বিমানে ককপীটের পেছনে থাকে যাত্রী কেবিন। মাল বহনের জন্য থাকে নির্দিষ্ট স্থান।

আধুনিক বিমানে বিভিন্ন ধরনের শক্তিশালী ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। ফলে ঐগুলির উঠা নামার জন্য বড় রানওয়ের প্রয়োজন। পৃথিবীর সকল স্থানে বড় রানওয়ে পাওয়া সমস্যার ব্যাপার। ফলে নির্মাতাগণ খাড়াভাবে উড্ডয়ন এবং অবতরণক্ষম বিমান নির্মাণের প্রতি ঝুকে পড়েন। তাদের গবেষণার ফসল ভিটুওএল (ঠঞঙখ) বিমান। বা ভারটিক্যাল টেকঅফ এন্ড ল্যান্ডিং অর্থ খাড়াভাবে উড্ডয়ন এবং অবতরণ। নামেই বুঝা যায় এই ধরনের বিমান খাড়াভাবে উড্ডয়ন এবং অবতরণে সমর্থ। এইভাবে উড্ডয়ন এবং অবতরণের জন্য বিশেষ বিশেষ বিমান বিশেষ বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। কোন কোন বিমানের ইঞ্জিনের নির্গমন নল খাড়াভাবে উঠা নামার জন্য নিচের দিকে নামানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 ঐ সময় ইঞ্জিনের সম্মুখভাগ উপরের দিকে উঠে যায় এবং ইঞ্জিনের কম্প্রেসার সজোরে নির্গমন নল দিয়ে চাপপূর্ণ গ্যাস নিচের দিকে নিক্ষেপ করতে সমর্থ হয়। ফলে বিমানটি খাড়া উড্ডয়ন করে। একই পদ্ধতিতে অবতরনন্ত করে থাকে। বৃটিশ হকার সিডলি হেরিয়ার এবং এ্যাংলো ফ্রান্স জাগুয়ার এই ধরনের বিমান।


চিত্রঃ হকার সিডলি হেরিয়ার বিমান।

নবনির্মিত ‘¯িপ্রট অব আমেরিকা’ নামের একটি জেট কারকে নেভাদার ব্লার্ক রক মরুভূমির উপর দিয়া ঘন্টায় ৩৮১ মাইল বেগে ছুটিতে দেখা যাইতেছে। অনেক আগেই এই গাড়ীটির পরীক্ষামূলক ড্রাইভিং-এর কথা থাকলেও মরুভূমির আবহাওয়ার কারণে তারিখ পিছাইয়া দেওয়া হয় এবং গত শনিবার প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ীটি চালাইয়া দেখা হয়।-রয়টার
এই সমস্ত বিমানে লেভেল ফ্লাইটের সময় ইঞ্জিনকে যথাস্থানে অর্থাৎ সাধারণ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়য়। ফলে নির্গমন নলও নিচ থেকে পেছনের দিকে চলে যায় এবং কম্প্রেসার, গ্যাস নির্গমণ নল দিয়ে পেছনে নিক্ষেপ করতে থাকে। বিমানও সম্মুখে অগ্রসর হয়। জার্মানির ডরনিয়ার ভিও এর এই ধরনের বিমান। এটি একটি পরিবহন বিমান বিধায় খুবই বড় ধরনের বিমান। খাড়াভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য বিশেষ ধরনের বিমানটির উভয় ডানার প্রত্যেকটির নিচে বিশেষ ধরনের কূপের ভিতর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চারটি জেট ইঞ্জিন স্থাপন করা হয়েছে। উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য শুধুমাত্র সেগুলি ব্যবহার করা হয়। লেভেল ফ্লাইট কালে ডানার নিচের প্রধান ইঞ্জিনগুলি সচল করে সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

চিত্র: এলটিভি এক্স সি-১৪২ ট্রান্সপোর্ট বিমান

এল টি ভি এক্স সি-১৪২ ট্রান্সপোর্ট বিমান খাড়াভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য অন্য একটি বিশেষ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছে। এই বিমান এর পাখার অবস্থন পরিবর্তন করতে পারে। খাড়া উড্ডয়ন ও অবতরণের নিমিত্তে ডানার সম্মুখভাগ উপরের দিকে উঠানো হয়। ফলে ইঞ্জিনের সম্ম§ুখভাগও উপরের দিকে উঠে যায় এবং এর নির্গমন নলের খোলা অংশ নিচের দিকে নেমে যায়। ইঞ্জিনের কম্প্রেসার সজোরে উত্তপ্ত গ্যাস নিচের দিকে নিক্ষেপ করে বিমানটিকে খাড়া উড্ডয়নে সহায়তা করে। লেভেল ফ্লাইটের সময় ডানাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়। বিমানটির অবতরণকালেও ডানার অবস্থানের পরিবর্তন করতে হয়। এস টি ও এল () বা সর্ট টেকঅফ এন্ড লান্ডিং বিমানও এক ধরনের এ্যারোপ্লেন। নামেই বুঝায় যায় এই ধরনের বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য ক্ষুদ্র রানওয়ের প্রয়োজন হয়। আমেরিকা, রাশিয়া ও অন্যান্য বিমান নির্মাতা দেশ এই ধরনের অনেক বিমান নির্মাণ করেছে। জেনারেল ডাইনামিকস এফ ১১১ এই ধরনের বিমান।

চিত্র : জেনারেল ডাইনামিক এফ-১১১ বিমান

এটা একটি আশ্চর্য ধরনের বিমান। ক্ষুদ্র রানওয়েতে উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য এর ডানাগুলি সোজা করতে পারে এবং খুবই দ্রুতগতিতে ছুটে যাওয়ার জন্য ডানাগুলিকে পেছনের দিকে নিতে পারে। এই ধরনের গুণসম্পন্ন বিমানকে ভেরিয়েবল জিওমেট্রি বিমান বলে। নিুে উভয় অবস্থার দুটি ছবি দেওয়া হল।
চিত্র: উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় এফ-১১১ বিমানের পাখার অবস্থা সুপারসনিক বেগে উড্ডয়নরত এফ-১১১

সিপ্লেন: সিপ্লেন দেখতে সাধারণ বিমানের মত। তবে ডিজাইন পানি হতে উড্ডয়ন, তাতে অবতরণ এবং পানিতে ভেসে থাকার উপযোগি।
হেলিকপ্টার: হেলিকপ্টারও এ্যারোডাইন এবং ভিটুও হল ধরনের বিমান। অবশ্য এটা প্রপেলার অথবা জেট ইঞ্জিন দ্বারা সরাসরি পরিচালিত হয় না বরং বিমানটিতে উপরে স্থাপিত প্রায় প্রপেলারের মত দেখতে ঘূর্ণায়মান রোটরের প্রতিক্রিয়ার ফলে পরিচালিত হয়। পরে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

চিত্রঃ বেল-২২২ হেলিকপ্টারের রোটর।

বিমানের জামই হয়েছে মানুষের প্রয়োজনে আকাশে উড্ডয়ন করার জন্য। এরা ভূমির মায়া ত্যাগ করে আকাশে ডানা মেলে, নদ-নদী, বনবাদার, বিস্তর মরুভূমি, সমুদ্র মহাসমুদ্র অতিক্রম করে দেশ থেকে দেশান্তর গমন করে। অতঃপর স্বচ্ছন্দে ধূলির ধরায় অবতরণ কর। এটা কেমন করে সম্ভব? কি এর গোপন রহস্য?
এ্যারোপ্লেন, হেলিকপ্টার ইত্যাদি এই বায়ু ম-লের যান। বায়ু আছে বলেই এরা উড্ডয়ন করতে পারে এক স্থান থেকে অপর স্থানে যেতে পারে। বায়ুর অস্তিত্ব না থাকলে কোন ধরনের বিমানই আবিষ্কার করা সম্ভব হত না। অবশ্য রকেট বা মহাকাশ যান পরিচালনার জন্য কোন বায়ুম-লের প্রয়োজন হয় না। বায়ু ম-ল ভূপৃষ্ট থেকে উর্দ্ধদিকে প্রায় ৬০০ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। অবশ্য ভূপৃষ্ঠের বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ সর্বদাই অধিক। উর্ধ্বদিকে বায়ুর চাপ ও ঘনত্ব ক্রমে কমতে থাকে। এই বায়ুম-লের নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত বিমান চালনা করা সম্ভব।
বিমান ও হেলিকপ্টারের আকাশে উড়ার গোপন রহস্য বিমানের ডানা ও হেলিকপ্টারের রোটরের আকৃতির মধ্যে লুকিয়ে আছ্ েযখন বিমান বায়ুর মধ্য দিয়ে পরিচালনা করা হয় অথবা হেলিকপ্টারের রোটর গুরানো হয় তখন সেগুলোর বিশেষ আকৃতির কারণে ডানার অথবা রোটরের উপরের বায়ুর বেগ তাদের নিুস্থ বায়ুর বেগ হতো অধিক হয় ফলে উল্লেখিত স্থানের বায়ুর চাপ হয় কম। অপর পক্ষে যন্ত্রসবের নিুস্থ বায়ুর বেগ তুলনামূলক ভাবে কম সুতরাং চাপ উপরস্থ স্থান তেকে অদিক। মহাত্মা বর্ণালী এই সত্যটি বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন। ভেলচুরী টিউবের ভেতর দিয়ে তরল পদার্থ প্রবাহিত করে এটা প্রমাণ করা সম্ভব।
যেহেতু ডানা অথবা রোটরে চলন্ত অথবা ঘুরন্ত অবস্থায় উপরন্থ এলাকা নীচের স্থান থেকে নিুচাপে অঞ্চল স্বাভাবিক ভাবেই নীচের উচ্চচাপ ঐগুলিকে ঠেলে উর্দ্ধদিকে উঠিয়ে দেয়।

Paul Cornu’s helicopter of 1907.
চিত্র:হেলিকপ্টারের আগমন ও ক্রমবিকাশ

১৯৪০ সাল পর্যন্ত উড়োজাহাজ ডিজাইনারগণ প্রপেলারহীন জেট বিমান আবি®কৃত হয়েছে। অনেক আবিষ্কারকই কিন্তু একটু ভিন্ন ধরনের বিমানের জিডাইন নিয়ে চিন্তাভাবনা করছিলেন যা বিশেষ ধরনের কাজের জন্য ধীরগতিতে উড়তে পারবে। একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে। আজকের হেলিকপ্টার এই ধরনের একটি বিমান। এটি ধীরগতিতে উড়তে পারে, আকাশে একই স্থানে স্থিরভাবে উড়তে পারে, কোন কোনটি নিুে ভারী বস্তু ঝুলিয়ে ছুটে যেতে পারে।
আশ্চর্যের কথা ১৫০০ সালে লিউনার্দো দ্যা ভিনচি এই ধরনের একটি বিমানের ডিজাইন করেছিলেন। তিনি ¯িপ্রংচালিক ছোট্ট একটি মডেলও তৈরী করেছিলেন।
চীন দেশের লোকেরা বহু দিন পূর্ব থেকে এই ধরনের বিমানের চিন্তা ভাবনা করত। তাারা খেলনা হেলিকপ্টার বানাতে পারত। ১৭৮৪ সালে একটি সাধারণ খেলনা হেলিকপ্টার চীন দেশ থেকে ইউরোপে পৌঁছে। লনয় ও বিয়েনভেনো নামে দুইভাই কাজে লেগে গেলেন। একটি হেলিকপ্টার তৈরী করে ফেললেন। তারা সেটাতে লাগালেন পাখির পালকের রোটর। ঠিক যেন চীন দেশের ঐ হেলিকপ্টার।
ইংরেজ বিজ্ঞানী জর্জ কেলে খেলনাটি দেখে আকৃষ্ট হলেন। ওটার অনুকরণে তৈরী করলেন একটি হেলিকপ্টার। এতেই তিনি ক্ষতি হলেন না। আরো উন্নত ধরনের হেলিকপ্টার বানানোর নেশা তাকে উম্মাদ করে তুলল। তিনি ধাতু দিয়ে ঐ রকম একটি যন্ত্র তৈরী করলেন। প্রচেষ্টা চালালেন সেটাকে উর্ধ্বে প্রেরণ করতে। যন্ত্রটি ৯০ফুট পর্যন্ত উর্ধ্বারোহন করতে সমর্থ হয়েছিল। পরে তিনি আরো অনেকগুলি ডিজাইন করেছিলেন। সেসবের একটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ডিজাইনটি ছিল যেন একটি হেলিকপ্টার ও এ্যারোপ্লেনের মিশ্ররূপ।
গবেষণা ও ডিজাইন আপন গতিতে এগিয়ে চলল। ইতালিতে ভিতারিও সার্টি ১৮২৮ সালে একটি হেলিকপ্টারের ডিজাইন করেন। ফ্রান্সেও চলছিল গবেষণা। ১৮৬৩ সালে ঐ দেবের ভিকতে দ্য পনটন দ্য আমিকুর্ত হেলিকপ্টারের একটি নতুন ডিজাইন করলেন। পরবর্তী উল্লেখযোগ্য ডিজাইনটি ১৮৭৮ সালে করেছিলেন ইতালির ইনরিকোা ফরলানিলি। অবশ্য ঐ গুলি কখনো আকাশে উড়েনি।
১৯০৭ সালে ব্রিগয়েট ব্রাদার্স নামে পরিচিত দুইভাই লুই এবং জেকুইস একটি হেলিকপ্টার নির্মাণ করলেন। সেটার একটি দ-ে চারটি রোটর স্থাপন করা হয়েছিল। একটির নিচে অপরটি। হেলিকপ্টার লুইকে নিয়ে আকাশে উড়ল। তবে মুক্তভাবে নয়। চারজন লোক দ-টি ধরে রেখেছিল। এটিই ছিল হেলিকপ্টারে সর্বপ্রথম উড্ডয়ন। এই ধরনের ব্যোমযানে সর্বপ্রথম মুক্তবাবে আকাশে উড়েন অপর একজন ফরাসী আবিষ্কারক পল কর্নো, লুইয়ের উড্ডয়নের মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর। ১৯০৮ সালে লুই ব্রিনয়েট আর একটি হেলিকপ্টার নির্মাণ করেন। প্রাথমিক স্তরের এই যানটি কিছুটা উন্নত ছিল কিন্তু এগুলোর কোনটিকেই যথার্থ হেলিকপ্টার বলা চলে না।
একটি কার্যক্রম হেলিকপ্টার নির্মাণে বহু সমস্যা দেখা দেয়। আবিষ্কারকগণও সমস্যা সমাধানের উপায় নির্ধারণের জন্য আদাজল খেয়ে মাঠে নামেন। ১৯২৩ সাল স্পেনের জুয়ান দ্য লা সিয়েরভা বিমানের সাথে হেলিকপ্টারের ধারণার মিলন ঘটান। এটা ছিল যে সময়ের বিমানের মতই তবে উপরে লাগানো হয়েছিল একটি রোটর। তিনি ঐটির নাম দেন অটো জাইরো। তার অটোজাইরোকে হেলিকপ্টার বলা চলে না। কারণ উপরের বড় রোটরটি কোন ইঞ্জিন দ্বারা চালীত হনা। বিমানটির সম্মুখে ছিল প্রপেলার। ইঞ্জিন একে নিয়ন্ত্রণ করত। বিমানটি সম্মুখের দিকে চলতে থাকলে উপরের রোটর ঘুড়তে থাকত এবং সেই ঘূর্ণায়মান রোটর বিমানকে উড্ডয়নে সহায়তা করত মাত্র। তা সোজা খাড়া উঠানামা করতে পারত না কিন্তু অল্প স্থান উঠানমা করতে পারত ফলে হেলিকপ্টার আবিষ্কারের পরে অটোজাইরো আকাশ থেকে ক্রমে বিদায় নেয়।

অটো জাইরুর চিত্র।
১৯৩৮ সালের দিকে আকাশে উন্নত ধরনের হেলিকপ্টার দেখা যেত। ঐ সময় জামার্নতে ফকী এসজেলিস এসব ডব্লিউ-৬১ ধরনের হেলিকপ্টার নির্মিত হত। এটার সম্মুখে ছিল প্রপেলার এবং উপরে দুইদিকে ছিল দুইটি রোটর। এটা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৬ মাইল বেগে ১১০০০ ফুটের উর্ধ্ব দিয়ে ৮০ মিনিট পর্যন্ত আকাশে উড্ডয়ন করতে পারত।
ইগর সিকরঙ্কি একজন সফল হেলিকপ্টার নির্মাতা। তার জন্মস্থান রাশিয়া। পরে তিনি আমেরিকার নাগরিকত্ব লাভ করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি টর্কের অর্থাৎ রোটরের ঘূর্ণনের উল্টাদিকে লেজের ঘুড়ে যাওয়ার সমস্যা সমাধান করেন। তিনি লেজের নিকট কাঠামোর বাম দিকে ছোট্ট একটি রোটর স্থাপন করেন। এটা অর্থাৎ ডেইল রোটার হেলিকপ্টারের ভারসাম্যতা আনয়ন করে। একে লেভেল ফ্লাইট, হোভারিং ইত্যাদি সকল কিছুতে সহায়তা করে।

চিত্রঃ সিকরঙ্কি এস-৫৮

গবেষণা চলতে থাকে। অন্য আবিষ্কারকেরা এই সমস্যা সমাধানে ভিন্নপথ অবলম্বন করেন।
একজন নির্মাতা এক রোটরে উপর অপর রোটর স্থাপন করেন। রোটর দুইটি পরষ্পর বিপরীত দিকে গুরত। অপর নির্মাতা দুই পার্শ্বে দুইটি, কেউবা দুই প্রান্তে দুইটি রোটার স্থাপন করেন। উল্লেখ্য যে সকল ক্ষেত্রেই বিপরীত দিকে ঘূর্ণনের মাধ্যমে ভারসাম্যতা রক্ষা করা হত। আজও টর্ক সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে উল্লেখিত যে কোন একটি পদ্ধতি প্রত্যেক প্রকার হেলিকপ্টারে ব্যবহৃত হয়। অবশ্য আরো উন্নত পদ্ধতি উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান বিশ্বের বিমান নির্মাতা প্রায় সকল দেশ হেলিকপ্টারও নির্মাণ করে থাকে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, বৃটেন, ফ্রান্স ইত্যাদি। দেশের হেলিকপ্টার অধিক পরিচিত। সর্বাধিক বিখ্যাত হেলিকপ্টারগুলির মধ্যে সিকরকি, বেল, বোয়িং চিনুক, হিলার, এলিউট এবং রাশিয়ার এম আই ধরনের হেলিকপ্টারগুলি উল্লেখযোগ্য। ভারত, ইরান, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশী বিমান নির্মাণ শিল্পে ক্রমে উন্নতি করছে। ভারত ও ইরান নির্মিত ছোট্ট ধরনের হেলিকপ্টার তাদের সমারিক বাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। যথাযথ ভাবে যুদ্ধ, উদ্ধার, ত্রাণ সবরাহ ইত্যাদি কাজ করে যাচ্ছে।
ঐড়হম শড়হম: ঞযব ঐড়হম কড়হম লবভড়রষ ঋষড়ৎবং, ভড়ৎবমৎড়ঁহফ ংরঃব হবীঃ ঃড় ধ যঁমব ৎবপহব ংযরঢ় গধু ২ ধভঃবৎ রঃ যরঃ ধ ংঁনসবৎমবফ ড়নলবপঃ যিরষব যবধফরহম ভড়ৎ ঃযব হবধৎনু চড়ৎঃঁমঁবংব বহপষধাব ড়ভ গধপধঁ রহলঁৎরহম ১১৫ ঢ়বড়ঢ়ষব. অ যবষরপড়ঢ়ঃবৎ ধিং ঁংবফ ঃড় ধরৎষরভঃ ংড়সব ড়ভ ঃযব রহলঁৎবফ ঃড় যড়ংঢ়রঃধষং.
হেলিকপ্টার আবিষ্কারের ফলে উদার কার্য, অগ্নিনির্বাপন, অনুসন্ধান ইত্যাদি সহজ হয়েছে এর মাধ্যমে দ্রুত গতিতে আহতদের হাসপাতালে বহন করা যায়, বন্যাদূর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো যায়, যে সমস্ত এলাকায় বিমান যোগাযোগ সম্ভব নয় সে সমস্ত এলাকায় হ্যালিপ্যাড নির্মাণ করে যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করা সম্ভব। রাশিয়া, আমেরিকা, বৃটেন ইত্যাদি দেশে বড় বড় হেলিকপ্টার নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হয়। আধুনিক আকাশযুদ্ধে হেলিকপ্টার গণনশীপের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য শ্লথগতির কারণে শত্রুদেশের খুবই ভেতরে বোমাবর্ষণে এর ব্যবহার খুবই নগণ্য। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য, অস্ত্র, রসদ ইত্যাদি প্রেরণে হেলিকপ্টার তুলনাহীন। বড় হেলিকপ্টার যুদ্ধের ময়দানে প্রয়োজনে সেনা ও রসদ বহন করে নিয়ে যায়। এসব প্যারা ড্রপিং তথা ছত্রীসেনা নামানেতেও ব্যবহৃত হয়।

চিত্রঃ একটি টার্বোফ্যান ইঞ্জিন।

আকাশ শোনা যায় ইঞ্জিনের গর্জ্জন
পৃথিবীর মানুষ আজ গ্রহান্তরে ভ্রমণের প্রচেষ্টায় গবেষণারত। ইতোমধ্যে চাঁদে পড়েছে মানুষের পদচি‎হ্ন। আমাদেরই আকাশযান পাইয়ুনিয়ার ঘন্টায় ৪২ বাহজার ১৯৬ মাইল বেগে মহাকাশ ভেদ করে এগিয়ে চলেছে অজানার দিকে। হয়ত লক্ষ কোটি বছর এটি চলতেই থাকবে। মঙ্গল গ্রহের লাল রংয়ের রহস্য উদ্ঘাটন করতে কচ্চব গতিতে রোটযান সক্রিয়।
আমরা নির্মাণ করেছি কনকরড নামে যাত্রীবাহী সুপারিসনিক বিমান। এটা শব্দের দ্বিগুণেরও অধিক বেগে উড্ডয়নে সমর্থ। আমাদের যুদ্ধবিমানগুলি আরো ক্ষমতাধর। আরো দুর্দান্ত তেজে গর্জ্জন করে ছুটে যায় নীলাকাশ ভেদ করে। তবু মানুষ খুশি নয়। তারা আরো গতি চায়া চলছে হাইপারনিক গতি লাভের প্রচেষ্টা।
বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন আকাশে আকাশযানের সকল শক্তি ও বেগের উৎস। যদি ইঞ্জিন আবিষ্কার না হত তবে এত দুর্বার ও দুর্দান্ত গতি কখনো সম্ভব হত না।
বিবর্তনের পথ ধরেই ইঞ্জিন বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছতে সমর্থ হয়েছে। প্রথম কোন ব্যক্তি ইঞ্জিন আবিষ্কারের চিন্তা করেছিলেন তা আজ আমাদের জানান কোন উপায় নাই। তবে সম্ভবত: হেলিকপ্টারের মত ইঞ্জিনের ধারণাও চীন দেশ থেকে এসেছিল। ঐ দেশের এক ব্যক্তি বারুদ তৈরীর জন্য শোরা, গন্ধক এবং কাঠ কয়লা মিস্রিত করেছিলেন। তিনিই সম্ভবত: ইঞ্জিন আবিষ্কারের প্রচেষ্টা ও করেছিলেন। স্কটল্যান্ডের জেমস ওয়াট বাষ্প কাজে লগিয়ে ১৭৬৯ সালে একটি বাস্তব ইঞ্জিন উদ্ভাবন করেন। শুরু হল অগ্রযাত্রা। এক সময় জলযান এবং কলকারখানায় বাষ্পীয় ইঞ্জিনের ব্যবহার ছিল ব্যাপক।

একটি বাষ্পীয় ইঞ্জিনের চিত্র।

অনেক ডিজাইনার বাষ্পীয় ইঞ্জিন কাজে লাগিয়ে বিমান আবিষ্কারের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তারা তা দিয়ে একটি বাস্তব এবং উড্ডয়নক্ষম বিমান নির্মাণে ব্যার্থ হন। বিমানে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন ব্যবহারের প্রচেষ্টাও চালানো হয়েছিল। সে প্রচেষ্টাও শেষ পর্যন্ত পরিত্যাক্ত হয়। বর্তমান কালে বিমান চালনায় পেট্রোলের পিষ্টন ইঞ্জিন অথবা কেরোসিনের জেট ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। এয়ারশীপ নির্মাতারা তাদের বিমানে পেট্রোল ইঞ্জিন ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করতেন। রাইট ব্রাদার্সের প্রথম ধাতব বিমানে পেট্রোল ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়েছিল। বিমানে ব্যবহৃত প্রাথমিক ইঞ্জিনগুলির সিলেন্ডার একই সাড়িতে অথবা ইংরেজী (ঠ) আকৃতিতে স্থাপন করা হত। ঐ সময় অটোমোবাইল ইঞ্জিনের বিন্যাসও একইরকম ছিল এবং উল্লেখ্য উভয় প্রকার ইঞ্জিন শীতল করা হত পানির সাহায্যে।
বিমানে ব্যবহৃত পেট্রোল ইঞ্জিনের চিত্র।

পরে আরো উন্নত ধরনের পেট্রোল ইঞ্জিন আবিষ্কৃত ও বিমানে ব্যবহৃত হয়েছিল। সেগুলোর একটি রোটরী বা ঘূর্ণায়মান ইঞ্জিন। এটার এরূপ নাম ছিল কারণ একটি দন্ড বা ক্রাঙ্ক শেফটের চারদিকে ক্রাঙ্ককেইস এবং সিলিন্ডারগুলি নিজেরাই ঘুড়তে থাকত। অটোমোবাইলের ইঞ্জিনগুলির শুধু ক্রাঙ্ক শেপটই ঘুড়ে এবং তা চাকা ঘুড়িয়ে থাকে ও সকল ধরনের অটোমোবাইলকে সচল করে। বিমানে ব্যবহৃত অপর ধরনের ইঞ্জিনের নাম রেডিয়াল ইঞ্জিন। রোটরী ইঞ্জিনে সিলেন্ডারগুলি নিজেরাই ঘুড়তে থাকে কিন্তু রেডিয়াল ইঞ্জিনে সিলেন্ডারগুলি স্থির থাকে।
চিত্রঃ রোটরী ইঞ্জিন।
চিত্রঃ রেডিয়াল ইঞ্জিন।

পিষ্টনসমূহ দন্ড বা শেফটের কীলকে আবদ্ধ থাকে। শেফটের সাথে পিষ্টনও ঘুড়ে এবং সিলে-ারের দুই প্রান্তে উঠানামা করে ইঞ্জিনকে সচল ও বিমানকে চলমান রাখে। বায়ু এই ধরনের ইঞ্জিন শীতল করে থাকে। ঘূর্ণমান প্রপেলারের বেগে পেছনে প্রেরিত বায়ুই ইঞ্জিন শীতল করে অধিকসময় বিমানটিকে উড্ডয়নক্ষম রাখে। উল্লেখ্য যে বিমানের সকল ধরনের পিষ্টন ইঞ্জিনই অন্তরদহন ইঞ্জিন আর ইঞ্জিনের সম্মুখে স্থাপিত প্রপেলার ঘূণমান অবস্থায় সম্মুখের বায়ু সজোরে পিচনে নিক্ষেপ করে এবং এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বিমান সম্মুখে অগ্রসর হতে থাকে। পিষ্টন ইঞ্জিনের মত টার্বোপ্রপ ইঞ্জিনেও প্রপেলার ব্যবহৃত হয়।
চিত্রঃ একটি টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন।

ক্রমে বিমানের ইঞ্জিন থেকে প্রপেলার বিদায় নিচ্ছে। জেট ইঞ্জিনের আবিষ্কার ও বিমানে ঐগুলির কার্যকারীতা প্রমাণের পর আধুনিক বিমান নির্মাতারা শুধু জেট ইঞ্জিন সংযোগনের গবেষণায় অধিক সময় ও শ্রম ব্যায় করছেন। ফলে শক্তিশালী এবং নানাহ প্রকার জোট ইঞ্জিন আবি®কৃত হয়েছে ও উন্নতির ধারা এখনো অব্যবহৃত রয়েছে।
জেট ইঞ্জিন কিন্তু হঠাৎ করে এই বিংশ শতাব্দিতে এসে উদয় হয় নাই। আসলে এটা পুরাতন ধারণার আধুনিক রূপায়ন। মানুষ বহু পূর্বেই টাবাইন নামক একটি যন্ত্রের সাথে পরিচিত ছিল। টার্বাইন শব্দটি ল্যাটিন টার্বো থেকে উদ্ভূত। এটার অর্থ দ্রুত ঘূর্ণন অথবা ঘুর্ণিবায়ু। হাজার বছর পূর্বে কৃষি ক্ষেত্রে পানি সেচ করার জন্য যে ওয়াটার হুইস ব্যবহার হত এক ধরনের টার্বাইন। পরবর্তীকালে স্মোকজ্যাক (ধূম্রজ্যাক) ও এক ধরনের টার্বাইন ছিল। ধূম্র ব্যবহার করে এই যন্ত্রের সাহায্যে সাংস সেকার জন্য সেটি আুগনের উপর ঘুরানো হত। হাজার হাজার বছর পূর্বে নির্মিত মিশরের পিরামিডের ভিতরের পাথুরে দরজার সাথে লাগানো হয়েছিল কোন বস্তু যেটি জোট তত্বে পরিচালিত হতে বলে মনে করেন গবেষকগণ।
১৭৯১ সালে জন বার্বার নামে এক ব্যক্তি তখনকার যুগের গ্যাস টার্বাইনের একটি চিত্র আঁকেন। ঐ চিত্র থেকে বুঝা যায় যে সেটাতে একটি কম্প্রেসার ছিল। কম্প্রেসার থেকে বায়ু প্রবাহ অবিচ্ছিন্ন ভাবে দহন প্রকোষেট প্রবাহিত হতে থাকে। সেখানে দহন সম্পন্ন হওয়ার পর টার্বাইনের মাঝ দিয়ে উত্তপ্ত ও পোড়া গাস প্রবাহিত হতে থাাকাকালীন সময়ে টার্বাটনের ব্লেড ঘুরতে থাকত। ফলে টার্বাইনের সাথে কম্প্রেসার ও ঘুরতে থাকত। আধুনিক কালে বিমানে ব্যবহৃত ইঞ্জিনও একই নীতিতে কার্য সমাধা করে থাকে তবে এগুলি তখনকার গ্যাস টার্বাইন থেকে অনেক উন্নত।

চিত্রঃ টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন।

বর্তমান যুগের জেট ইঞ্জিনগুলি চুরুটাকৃতির। কোনটি ছোট, কোনটি বড়। কোনটি কম প্রশস্ত। কোনটি অধিক প্রশস্ত। এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলতে হয়। জেট ইঞ্জিন চুরুটাকৃতির পরিচালন যন্ত্র যেটি আবহমন্ডল হতে বায়ু গ্রহণ করে সংকুচিত করে অতঃপর দহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উত্তপ্ত ও প্রসারিত করে পেছনের দিক দিয়ে সজোরে বাইরে নিক্ষেপ করার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ সম্মুখে চলতে থাকে।
জেট ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে বিমান চালনায় পিষ্টন ইঞ্জিনের মত জটিল ইঞ্জিন পরিহার করা সম্ভব হচ্ছে। এর কার্যপদ্ধতি পিষ্টন ইঞ্জিন থেকে অনেক সহজ এবং অনেক কম জটিল যন্ত্রাংশ দিয়ে নির্মিত। ফলে উজনও তুলনামূলকভাবে কম। এই ইঞ্জিন ব্যবহারের ফলে বিমান পিষ্টন ইঞ্জিনের গতির সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেয়েছে। ডিজাইনারগণ দুর্জয় গতিসম্পন্ন ইঞ্জিন উদ্ভাবনের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ইঞ্জিনদ্বারা খুবই বৃহদাকৃতির বিমান ডিজাইন করা সম্ভব হয়েছে। সর্বোপরি জেট ইঞ্জিনের বিমান খুবই অধিক উচ্চতায় উড্ডয়নে সমর্থ। সুপার চার্জার লাপিয়ে আরো অধিক উচ্চতায় উড়া সম্ভব হয়েছে।
সুপার চার্জারের চিত্র।

জেট ইঞ্জিনের জগতে টার্বোজেট, টার্বোফ্যান জেট, টার্রোগ্রপ জেট, র‌্যামজেট, পালস জেট, হাই বাইপাস টার্বোফ্যান জেট, আয়ন্ট ফ্যান জেট ইত্যাদি বিখ্যাত।
টার্বোজেট ইঞ্জিন: এ ইঞ্জিনও একধরনের অন্তর্দহন ইঞ্জিন। এই ধরনের ইঞ্জিনের টি প্রধান অংশ আছে।
১. প্রবেশ পথ (ইনটেক) ২. কম্প্রেসার ৩. দহন প্রকোষ্ট ৪. টার্বাইন ৫. নির্গমণ পথ (জেট নোজল বা এক্সসট)
প্রবেশ পথ দিয়ে বায়ু ইঞ্জিনে প্রবেশ করে সরাসরি কম্প্রেসারে চলে যায়। প্রবেশ পথের বায়ু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কম্প্রেসারের প্রয়োজানুসারে বায়ু সরবরাহ করে থাকে। পূর্বে কোন কোন জেট ইঞ্জিনে সেন্ট্রিফিউগাল কম্প্রেসার ব্যবহার করা হত। বর্তমানে জেট ইঞ্জিনে, এক্সিয়াল ফ্লো কষ্ট্রোসার ব্যবহার করা হয়, এই ধরনের ইঞ্জিনে স্থির এবং ঘূর্ণনযোগ্য ব্লেডের অনেকগুলি স্তর থাাকে যা পর্যায়ক্রমে স্থাপিত। ক্ষুদ্র ইঞ্জিনে ব্লেডের স্তর কম থাকে পক্ষান্তরে বৃহৎ ইঞ্জিনে অধিক স্তর স্থাপন করতে হয়। প্রত্যেক স্তরে থাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেকগুলি বেস ব্লেডের প্রত্যেকটির স্তর পরিক্ষিত চাপ বৃদ্ধি করে। কম্প্রেসার থেকে বায়ু দহন প্রকোষ্ঠে গমন করে। বায়ু সেখানে উত্তপ্ত হয়ে উচ্চ চাঁপযুক্ত গ্যাস সৃষ্টি করে। অতঃপর সেগুলি দুর্বার গতিতে নির্গমণের পথ খুজতে থাকেও টার্কাইনকে সচল করে নির্গমণ নল দিয়ে সজোরে নি®ক্লান্ত হয়ে যায়। টার্বাইনের প্রধান কাজ কম্প্রেসার ঘুরানো। এটা একটি ঘূর্ণন যোগ্য চাকতি। এর চারিদিকে কিনারায় ব্লেড অথবা বাকেট একের পর এক অনেকগুলি সজ্জিত থাকে। কম্প্রেসারের স্থির ব্লেডের ক্লিংয়ের মত টার্বাইনের নিশ্চল ব্লেডের রিং থাকে। ইঞ্জিনের সর্বশেষ স্তর নির্গমণ পথ। এখানে অবশিষ্ট গ্যাস শক্তিগতি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে উচ্চগতিতে বের হয়ে যায়। প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বিমান সম্মুখে চলতে থাকে। নির্গমন পথে শব্দ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এবং থ্রারসট রিভারসার সংযুক্ত থাকে। কম্প্রেসার, দহন প্রকোষ্ঠ এবং টাকা ইনকে একত্রে গ্রাস জেনারেটর বলে। নিগর্মন পথের জেট জলে ব্যবহারিত কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমে সুপার সার্জার কাজ করে।

ফ্যান জেট ইঞ্জিন : এই ধরনের জেট ইঞ্জিনে কম্প্রেসারের সম্মুখে প্রবেশ পথের একটু ভিতরে ফ্যান স্থাপন করা হয়। ফ্যানও এক ধরনের প্রপেলার তবে ঐগুলি ইঞ্জিনের বাইরে থাকে না এবং বাহির থেকে তেমন নজরেও আসে না। কোন কোন ধরনের ইঞ্জিনে সম্মুখের বদলে পেছনে ইঞ্জিন স্থাপন করা হয়। টার্বো জেট ইঞ্জিনের সকল বায়ু গ্যাস জেনারেটর অতিক্রম করে থাকে কিন্তু করে। অবশিষ্ট বায়ু ফ্যান অথবা নিুচাপযুক্ত কম্প্রেসার হয়ে অতিক্রম করে। এই পদ্ধতিকে বলে বাইপাস পদ্ধতি। বাইপাশ অর্থ পার্শ্বপথ। এই পদ্ধতি ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য অতিরিক্ত জ্বালানী ব্যবহার না করে গতি বৃদ্ধি করা।
টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন: পিষ্টন ইঞ্জিনের প্রপেলর এবং জেট ইঞ্জিনের প্রপেলার একই রকম। পার্থক্য শুধু একে জেট ইঞ্জিনের সম্মুখে স্থাপন করা হয়। ইঞ্জিনের অস্তস্থিত টার্বাইন একে চালনা করে বিধায় এটার নাম টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন। হেলিকপ্টারেও এই ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। হেলিকপ্টারে এইগুলির নাম টার্বোশ্যাফট ইঞ্জিন। এগুলোর নাম টাবোশ্যাফট দেওয়া হয়েছে কারণ সেগুলো ইঞ্জিনের শ্যাফট বা দত্ত যা রোটরের সংযোন স্থল পর্যন্ত বি¯তৃত ঐগুলিকে সরাসরি ঘুরিয়ে থাকে।



চিত্রঃ ফ্যান জেট ইঞ্জিন।

র‌্যাম জেট ইঞ্জিন: এগুলো সবচেয়ে সহজ ধরনের জেট ইঞ্জিন। অনেক বিশেষজ্ঞ এটাকে উড়ন্ত নল চুল্লি বলে থাকেন।
চিত্রঃ র‌্যাম জেট ইঞ্জিন।

ভিতর কোন ঘূর্ণনযোগ্য অংশ নাই। ভিতরের সম্পূর্ণ অংশটিই একটি দহন প্রকোষ্ট মেন। র‌্যাম জেট খুবই উচ্চগতিতে বিশেষ করে শব্দের গতির তিনগুণ অধিক অথবা আরো উর্ধ্বগতিতে বাল কাজ করে। এই ধরনের ইঞ্জিনের প্রধান অসুবিধা অন্য ইঞ্জিনের সাহায্য ব্যতীত এই ধরনের ইঞ্জিন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। অন্য ইঞ্জিন দ্বারা বিমানের প্রয়োজনীয় গতি লাভের পর র‌্যাম ইঞ্জিন চালু করা হয় এবং মূল ইঞ্জিনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন মুক্তবায়ু র‌্যাম ইঞ্জিনে ভিষণ বেসে ধাক্কা দিয়ে প্রবেশ করে এবং দহন প্রকোষ্ঠে জ্বালানীর সাথে মিশ্রিত হয়ে দগ্ধ হয়। অতঃপর উত্তপ্ত ও প্রসারিত বায়ু পেছনের নির্গমণ পথ দিয়ে সবেগে বের হয়ে যায় এবং প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বিমান আপন পথে চলতে থাকে।
উল্লেখিত ইঞ্জিনসমূহ ব্যতীত আফট বার্নারসহ টার্বোজেট এবং টার্বোর‌্যামজেট উল্লেখযোগ্য ধরনের বিমানে ব্যবহৃত হয়।
চিত্রঃ আফটারসহ বার্ণারসহ টার্বোজেট।

খুবই দ্রুতগতি সম্পন্ন বিমানে যুদ্ধকালীন জরুরী প্রয়োজনে আফটার বার্ণার চালু করে অতিরিক্ত দ্রুত গতি অর্জ্জন করা সম্ভব হয়। অবশ্য আফটার বার্ণারে খুবই অধিক জ্বালানীর প্রয়োজন। এই ধরনের ইঞ্জিনে টার্বোজেটের সাথে একটি অতিরিক্ত বার্ণার টার্বাইনের পেছনে সংযুক্ত করা হয়।
টার্বোজেটের গতির সীমাবদ্ধতা এবং র‌্যামজেটের অন্য ধরনের ইঞ্জিনের সাহায্যের প্রয়োজনীয়তার কারণে সৃষ্ট অসুবিধা দুরীকরণার্থে বহু চেষ্টার পর ডিজাইনারগণ এক নতুন ধরনের ইঞ্জিন উদ্ভাবন করেছেন। এর নাম টাবোর‌্যামজেট। এটা নির্মাণ করা হয়েছে টার্বোজেট এবং র‌্যামজেট ইঞ্জিনের সমন্বয়ে। এটার টার্বোজেট অংশ প্রথমে বিমানকে নির্ধারিত সুপারসনিক গতি পর্যন্ত পরিচালনা করে থাকে। অতঃপর গ্যাস জেনারেটরের পথ বন্ধ করে দেয়। তখন ফ্যানজেটের মত পার্শ্ব পথ দিয়ে বায়ু প্রবাহিত থাকে। ঐ বায়ু খুব লম্বা দহন প্রকোষ্ঠের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি মূল ইঞ্জিনটির পিছনে অবস্থিত। অবশ্য গ্যাস জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পুরো ইঞ্জিনটিই র‌্যাম জেটে পরিণত হয়। টার্বাইন ও কম্প্রেসারের ব্লেডগুলিকে প্রবাহিত বায়ু থেকে রক্ষা করার জন্য বায়ু বন্ধ করার কৌশলসহ বিভিন্ন পদ্ধতি কাজে লাগানো হয়।


পাল্স জেট ইঞ্জিনও র‌্যামজেট ইঞ্জিনের মত কাজ করে থাকে। তবে এর ব্যবহার খুবই সীমিত। মহাকাশযানে রকেট ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। সিরিজের পরবর্তী পুস্তকে রকেট ইঞ্জিন সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
বিভিন্ন ধরনের জেট ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে দেশে দেশে বিমান নির্মাণ কারখানা গড়ে উঠেছে। উন্নত ধরনের জেট বিমান সম্বন্ধে গবেষণা চলছে। আত্মপ্রকাশ করছে নতুন নতুন শক্তিশালী বিমান।
http://i.space.com/images/i/000/017/022/original/enterprise-manhattan-1000.jpg?1335806218
চিত্রঃ বিমানের পিঠে স্পেস সাঁটল সওয়ার।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ দুর্ঘটনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।

বাংলাদেশের সকল রাজবাড়ী ও জমিদার বাড়ীগুলির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্হা কি (ভিডও সহ )