বিমানের একটি অপরিহার্য যন্ত্রাংশ “ব্ল্যাক বক্স” কি আসলেই কালো?

বিমানের একটি অপরিহার্য যন্ত্রাংশ “ব্ল্যাক বক্স” কি আসলেই কালো?

চিত্র ফলাফলের জন্য ব্ল্যাক বক্স

কালো বাক্স। সবার মনেই একটি প্রশ্ন জাগে ব্ল্যাক বক্স দেখতে কেমন? আসলে ব্ল্যাক বক্স দেখতে গাঢ় কমলা রঙের। কিন্তু এর এমন বিদঘুটে নামের কারন মনোযোগী পাঠক মাত্রই ধরতে পেরেছেন লেখার শিরোনাম থেকে। হ্যা, অজানা তথ্য (এক অর্থে ব্ল্যাক) সংরক্ষিত হয় যে বাক্সে এবং অজানা তথ্য জানা যায় যার মাধমে। তাই নামকরনের সার্থকতা আছে বৈকি। 


দূর্ঘটনার সময় কি ভুল হয়েছিল এবং এই ভুলের পিছনের কারন কি ছিল তা অনুসন্ধান করতেই ব্ল্যাক বক্স এর আবির্ভাব। ব্ল্যাক বক্স বানিজ্যিক বিমানের একটি অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্র। এর যান্ত্রিক নাম ফ্লাইট রেকর্ডার। ফ্লাইট রেকর্ডার বলতে দুইটি আলাদা যন্ত্রেকে বুঝানো হয়। একটি হল ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) অন্যটি ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার (এফডিআর)। দুইটির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সিভিআর।
 

‘ব্ল্যাক বক্স’ শব্দের অর্থ সাধারণত ‘কালো বাক্স’ হওয়ার কথা। কিন্তু আসলেই কি তা কালো? বিশেষ করে বিমানের ব্ল্যাক বক্স কি কালো রঙের? উত্তর হ্যাঁ কিংবা না যা-ই হোক, তবু জেনে নিন ব্ল্যাক বক্স সম্পর্কে কিছু তথ্য-
ব্ল্যাক বক্স আসলে এমন একটি যন্ত্রের নাম, যা বিমানের পেছনের দিকে অবস্থান করে। এতে ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার অংশে বিমানের টেকনিক্যাল বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষিত হতে থাকে। আর ককপিট ভয়েস রেকর্ডার অংশে বিমান চালকের কক্ষের সব অডিও বা কথাবার্তা রেকর্ড হয়।
jagonews24
তবে এটি নামে ‘ব্ল্যাক বক্স’ হলেও বিমানের ব্ল্যাক বক্স আসলে কমলা রঙের হয়ে থাকে। কমলা রং অপেক্ষাকৃত সহজে দৃশ্যমান হওয়ার কারণেই এ ব্যবস্থা। ব্ল্যাক বক্স আসলে কোনো বক্স বা বাক্সের মতো দেখতে নয়। ব্ল্যাক বক্সের কাঠামোতে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয় একটি সিলিন্ডার, যেটি একটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। সিলিন্ডারের পাশে বক্স আকারের কাঠামোর মধ্যে এর ব্যাটারি থাকে। আর সিলিন্ডারে থাকে মেমোরি ইউনিট।
jagonews24
বিমান বিশেষজ্ঞরা এটিকে ব্ল্যাক বক্স বলে না ডেকে ‘ইলেকট্রনিক ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার’ বলে অভিহিত করেন। ব্ল্যাক বক্স অত্যন্ত মজবুতভাবে তৈরি। এর কাঠামো লিথিয়াম অথবা স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি। একটি কংক্রিটের দেয়ালে যদি ৭৫০ কিলোমিটার বা ঘণ্টা গতিতে ব্ল্যাক বক্সকে আছড়ে ফেলা হয়, তাতেও এটি টিকে থাকবে।
এটি স্থির অবস্থায় ২.২৫ টন ওজন নিয়ে কমপক্ষে ৫ মিনিট অক্ষত থাকতে পারে। সর্বোচ্চ ১১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় একঘণ্টা পর্যন্ত কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই টিকে থাকে। ৬ হাজার মিটার গভীরে পানির নিচের চাপেও এটি অক্ষত থাকতে পারে।
jagonews24
ব্ল্যাক বক্সের বিশেষ সেন্সর যখন পানির সংস্পর্শে আসে; তখন এটি প্রতি সেকেন্ডে একটি করে সিগন্যাল পাঠায়, যা থেকে উদ্ধারকারী দল এর অবস্থান বুঝে ডিভাইসটি তুলে আনতে পারে। তবে ব্ল্যাক বক্সের ব্যাটারি যতদিন কাজ করবে ততদিন এটি এই সিগন্যাল পাঠাতে পারবে। সাধারণত সর্বোচ্চ ত্রিশ দিন পর্যন্ত সিগন্যাল পাঠাতে পারে। আর পানির নিচ থেকে সর্বোচ্চ ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত এই সংকেত আসতে পারে।


১৩ ই জানুয়ারী, ১৯৮২ ওয়াশিংটন জাতীয় বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করল এয়ার ফ্লোরিডা ফ্লাইট নং ৯০ বিমানটি। উড্ডয়নের কিছুক্ষনর মধ্যেই বিমানটি আছড়ে পড়ল বরফ ঢাকা পটোম্যাক নদীর একটি ব্রিজের উপর। তদন্ত কারী দল হিসাবে মাঠে নামল এনটিএসবি (ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড)। শুরু হল দুর্ঘটনার একমাত্র জীবন্ত স্বাক্ষী ব্ল্যাক বক্স উদ্ধারের কাজ। অবশেষে মিলল সেই কাঙ্খিত ব্ল্যাক বক্স এবং এর সূত্র ধরেই উদঘাটিত হল দূর্ঘটনার কারণ। কি ছিল সেই দূর্ঘটনার কারণ? তা জানার আগে ব্ল্যাক বক্স সম্পর্কে কিছু সাধারন কথা জেনে নিই। 


প্রথমে আমরা ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) সম্পর্কে জানব।

ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর)ঃ 
নাম থেকেই বুঝা যায় যে, এতে ভয়েস রেকর্ড করা হয়। চারটি চ্যানেলে রেকর্ড সম্পন্ন হয়। প্রথম চ্যানেলে ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের/প্যাসেঞ্জার এড্রেস, দ্বিতীয় চ্যানেলে ফার্স্ট অফিসার, তৃতীয় চ্যানেলে ক্যাপ্টেন-এর কথোপকথন রেকর্ড করা হয়। চতুর্থ চ্যানেলে ইঞ্জিনের শব্দ, বায়ু প্রবাহের শব্দসহ সমস্ত ককপিটের মধ্যকার শব্দ রেকর্ড করা হয়। এই রেকর্ডিংয়ের সময়কাল মডেল ভেদে শেষ ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘন্টা। । বিশেষ পদ্ধতির এই রেকডিংকে বলা হয় প্রান্তহীন চক্র নীতি (এ্যান্ডলেস লুপ প্রিন্সিপাল)। রেকর্ডকৃত তথ্যগুলো জমা হয় একটি ম্যাগনেটিক টেপ অথবা মাইক্রোচিপে।সিভিআরের মধ্যে দুর্ঘটনাকবলিত বিমানের মধ্যকার সমস্ত তথ্য (ধারনকৃত শব্দ) কিন্তু রয়ে যায় অক্ষত। কারণ সিভিআর-এর মধ্যে রয়েছে দুর্ঘটনা কালীন অগ্নিকান্ডের কারনে সৃষ্ট উচ্চ তাপমাত্রা, বিস্ফোরণ জনিত আঘাত এবং পানি রোধক বিশেষ ব্যবস্থা। এটি ১১০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ৬০ মিনিট, ২৬০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্র্রা ১০ ঘন্টা পর্যন্ত টিকে থাকতে সক্ষম। এটি ছয়দিক থেকে ৫০০০ পাউন্ড চাপ সহ্য করতেও সক্ষম। এটি ৩৪০০ জি (মাধ্যাকর্ষন শক্তির ৩৪০০ গুন) ধাক্কা সহ্য করতে সক্ষম। কমলা রঙটি ব্যবহার করা হয়েছে যাতে দূর থেকে সহজেই বাক্সটিকে সনাক্ত করা যায়।
দূর্ঘটনার পর যদি সিভিআর পানিতে অর্থাৎ নদী বা সমুদ্রের তলদেশে চলে যায় তখন তাকে সনাক্ত করার জন্য রয়েছে একটি আন্ডার ওয়াটর লোকেটর বিকন(ইউএলবি)। এই বিকনটি পানির সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে নির্দিষ্ট সিগনাল (এ্যাকুয়েস্টিক সিগনাল) প্রেরণ করতে থাকে । এটি একটানা ত্রিশ দিন পর্যন্ত সিগনাল প্রেরণ করতে সক্ষম। এই বিকন ২০,০০০ফুট গভীরতায় এবং দুই থেকে তিন কিঃমিঃ দূরত্বে সিগনাল প্রেরণ করতে সক্ষম। উদ্ধারকারী দল একটি রিসিভারের সাহায্যে এই সিগনাল অনুসন্ধান করে সিভিআর-এর অবস্থান নির্ণয় করে। সিভিআর/এফডিআর থাকে বিমানে লেজের কাছে যেখানে দূর্ঘটনার সময় তুলনামূলক কম আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে, বিমান তার নিজস্ব শক্তিতে চলাকালীন সময়ে এর তথ্য পাইলট যাতে কোন ভাবে মুছে ফেলতে না পারেন সে সুরক্ষা ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডারঃ এই যন্ত্রটি দেখতে প্রায় সিভিআরের মতোই। শুধু পার্থক্য হল যে, এতে বিমানের আকার ও বয়স অনুযায়ী ভয়েস ডাটার পরিবর্তে টেকনিক্যাল ডাটা অর্থাৎ বিমান চলাকালীন যান্ত্রিক অবস্থার বিভিন্ন প্যারামিটার গুলো সংরক্ষিত থাকে। এর সাথেও একটি ইউএলবি সংযুক্ত থাকে এবং দূর্ঘটনার কারনে যাতে এর সংরক্ষিত তথ্য অক্ষত থাকে তার ব্যবস্থাও সিভিআরের মত। প্রথম প্রজন্মের এফডিআরে প্রয়োজনীয় কিছু প্যারামিটার সংক্ষেন ব্যবস্থা ছিল। যেমন উচ্চতা অনুসারে বায়ুর চাপ (প্রেসার অল্টিচিউড), বায়ুর চাপ (ইন্ডকেটেড এয়ার স্পীড), চৌম্বকীয় দিক (ম্যাগনেটিক হেডিং), নরমাল এক্সিলারেশন, মাইক্রোফোন কিয়িং, ইঞ্জিন প্যারামিটার, ফ্লাইট কন্ট্রোল প্যারামিটার সমূহ, ফ্ল্যাপের অবস্থান ইত্যাদি। পরবর্তিতে কিছু দূর্ঘটনার পর্যালোচনা থেকে আরও কিছু তথ্য সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন বিমানের আকারের উপর নির্ভর করে তাতে ১১টি থেকে ৮৮টি প্যারামিটার সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়। 
তৃতীয় প্রজন্মের ডিজিটাল এফডিআর-এর মধ্যে সাত শতাধিক প্যারামিটার সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাইক্রোফোন অন হলেই (রেডিও ট্রান্সমিশনের সময়) সিভিআর ও এফডিআর এর মধ্যে তথ্য সংরক্ষিত হতে থাকে। এর মধ্যে শেষ ২৫ঘন্টা বিমান চলাকালীন ডাটা রেকর্ড থাকে এবং সিভিআর এরম ত প্রান্তহীন চক্র (এন্ডলেস লুপ প্রিন্সিপাল) পদ্ধতিতে রেকর্ডিং করা হয়। এফডিআর এর ডাটা বিশ্লেষণ করে তদন্তকারী বুঝতে পারে যে, একটি বিমান কিভাবে ধাপে ধাপে দূর্ঘটনার দিকে অগ্রসর হয়েছিল।

কখনো কখনো মাঝে মাঝে হাজার হাজার ফুট উপরে ওড়া এসব বিমানের চালকরা হয়ে পড়ে অসহায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঘটে যেতে পারে বিরাট কোন দুর্ঘটনা। হতে পারে হাজার মানুষের প্রাণহানি। আবার কখনো বা সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে বিমান। এসব তথ্যই ধরে রাখে বিমানের মাঝে থাকা ব্ল্যাকবক্স নামে একটি ডিভাইস। পুরো বিমান ধ্বংস হয়ে গেলেও এটার কিছুই হয় না। বিরাট সব দুর্ঘটনার স্বাক্ষী হিসেবে থেকে যায় এই ব্ল্যাক বক্সগুলো। কিভাবে তৈরি হয় এই কমলা রঙের 'ব্ল্যাক' বক্স গুলো?
মানব সভ্যতার একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হল উড়োজাহাজ। উড়োজাহাজ আবিষ্কারের পর থেকে মানুষ খুব দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করতে পারছে। ফলে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দূরত্ব কমে গেছে অনেকখানি। বেঁচে যাচ্ছে মূল্যবান কর্ম ঘণ্টা। তবে মাঝে মাঝে হাজার হাজার ফুট উপরে ওড়া এসব বিমানের চালকরা হয়ে পড়েন অসহায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঘটে যেতে পারে বিরাট কোন দুর্ঘটনা। হতে পারে হাজার মানুষের প্রাণহানি। পরিসংখ্যান মতে গড়ে প্রতি বছর প্রায় ১২০০ জন মানুষ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়।


বিমান দুর্ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধানের জন্য ব্ল্যাক বক্স নামে একটি যন্ত্র বিমানে বহুল ব্যবহৃত হয়। সাধারণত মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ব্ল্যাক বক্স আসলে কি? ব্ল্যাক বক্স হল এক ধরণের ডিভাইস যা বিমানের বিভিন্ন তথ্য ধারণ করে রাখে। ফলে বিমান দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে অনুসন্ধানী দলের সুবিধা হয়। এই ব্ল্যাক বক্সে একটি রেকর্ডার সিস্টেম চালু থাকে। যার ফলে উড্ডয়নের সময়ের বিভিন্ন তথ্য রেকর্ড হয়ে থাকে। সাধারণত ব্ল্যাক বক্স এমন ভাবে তৈরি করা হয় যেন তা উচ্চ তাপমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দুর্ঘটনায় বিমানটি পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও ব্ল্যাক বক্স থাকে অক্ষত। ব্ল্যাক বক্সে তথ্য ধারণ করার জন্য এক প্রকার ম্যাগনেটিক টেপ ব্যবহার করা হয়। এই ম্যাগনেটিক টেপ অনেকটা পুরনো দিনের ক্যাসেটের ফিতার মত। এর ফিতার দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০০০ ফুট। ব্ল্যাক বক্সের ভেতরে এই ফিতা প্যাঁচানো থাকে। ব্ল্যাক বক্সের বাহিরের আবরণ উচ্চ তাপ সহনশীল স্টিল দিয়ে তৈরি। তাই দুর্ঘটনার ফলে উৎপন্ন হাজার ডিগ্রী তাপমাত্রা এটির কোন ক্ষতি করতে পারেনা। ফলে তথ্য সুরক্ষিত থাকে। এক একটি ব্ল্যাক বক্স তৈরিতে খরচ হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার ডলার। সাধারণত একটি ব্ল্যাক বক্সের দুটি অংশ থাকে। একটি হচ্ছে Flight data recorder বা FDR। FDR বিমানের পেছনে রাখা থাকে। এটা বিমানের মধ্যেকার ও সংলগ্ন পরিবেশের বিভিন্ন রকমের শব্দ, চাপ বা তাপের পরিবর্তনের হিসাব এবং আরও অনেক রকমের উড়ান সংশ্লিষ্ট তথ্য রেকর্ড করে | এটা একটানা ২৫ ঘণ্টা উড্ডয়নের তথ্য রেকর্ড রাখতে পারে। অপরটি হল Cockpit voice recorder বা CVR। এটা রাখা হয় বিমানের পাইলটদের ঘরে। এটি ককপিটের মধ্যে যে কোন ধরণের শব্দ রেকর্ড করে রাখে। যেমন বিমানের পাইলটদের মধ্যে কথাবার্তা, ককপিটে যে কোন ধরণের বিস্ফোরণের শব্দ।
ব্ল্যাক বক্সের রঙ আসলে কাল নয়। এটা দেখতে কমলা রঙের। দুর্ঘটনার ফলে সৃষ্ট ধ্বংস স্তূপের মধ্যে থেকে যেন খুব সহজেরই ব্ল্যাক বক্স খুঁজে পাওয়া যায় তাই এটির রঙ কমালা করা হয়েছে। কমলা রঙের হয়েও এটার নাম কিভাবে ব্ল্যাক বক্স হয়েছে সেটা এখন অজানা। তবে ধারণা করা হয় যে দুর্ঘটনার পর আগুনে পুড়ে এটা কাল রং ধারণ করে বলে এটির নাম ব্ল্যাক বক্স রাখা হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন বিমান দুর্ঘটনা মানে অনেক মানুষের মৃত্যু। তাই এই অশুভ ঘটনা বা শোক প্রকাশের জন্য একে ব্ল্যাক বক্স নামকরণ করা হয়েছে। বিমান দুর্ঘটনার পর অনুসন্ধানী দল প্রথমে এই ব্ল্যাক বক্স খুঁজে বের করে। পরে এটা পাঠানো হয় বিশেষজ্ঞের কাছে। তারা ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিমান দুর্ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধান করেন। যদি বিমানের কোন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমান দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে সেই ত্রুটি পরবর্তিতে সংশোধন করা হয়। 


এবার আমরা আবার দূর্ঘটনা পরবর্তী তদন্তে ফিরে আসি।
 

উদ্ধারকৃত সিভিআর পাঠানো হল এনটিএসবি-এর পরীক্ষাগারে। সেখানে শব্দ বিশ্লেষণ করে দেখা গেল যে, উড্ডয়নের জন্য ইঞ্জিন যে পরিমান ধাক্কা (থ্রাস্ট) দেয়ার কথা ছিল সে পরিমান ধাক্কা (থ্রাস্ট) তৈরীতে ব্যর্থ হয়েছে।এর কারণ উদ্ধারে আরও পরীক্ষা চালায় উক্ত বিমান প্রস্তুতকারী সংস্থা বোয়িং নিজেই। পরীক্ষার ফল হিসাবে বেরিয়ে আসে যে, ইঞ্জিনের সেন্সরটি (ইঞ্জিন ইনলেট প্রোব) থ্রাস্টের মাত্রা নিরুপন করতে ব্যর্থ হয়েছিল আর এর পিছনের কারণ ছিল যে, সেন্সরটির উপর বরফ জমে গিয়েছিল। পরবর্তীতে বোয়িং এই সেন্সর বরফ থেতে রক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন করে।

এই ভাবে একটি যন্ত্র আমাদের বিমান যাত্রাকে নিরাপদ করার স্বার্থে অবদান রেখে চলেছে সুদীর্ঘ ৪০ বছর ধরে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

The national flag Cambodia

world map

Schengen Visa Types & Validity- Visa Fees --Travel Insurance-statistics