চালকবিহীন গাড়ি তৈরির প্রতিযোগিতা চলছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এক্ষেত্রে চীন ও জাপান এখন শক্ত প্রতিপক্ষ।বাংলাদেশ ও কাজ করে যাচ্ছে
চালকবিহীন গাড়ি তৈরির প্রতিযোগিতা চলছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এক্ষেত্রে চীন ও জাপান এখন শক্ত প্রতিপক্ষ।বাংলাদেশ ও কাজ করে যাচ্ছে
প্রফেসর ডক্টর রাউল রখাস বলেন, ‘ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত লাগে বৈকি, গাড়িতে বসে আছি অথচ কেউ গাড়ি চালাচ্ছে না! সেজন্য আগে থেকে মানসিক প্রস্তুতি লাগে। বিশেষ করে গাড়ি যখন ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে মোটরওয়ে ধরে চলেছে আর আপনি দেখছেন, স্টিয়ারিং আপনি থেকে ঘুরছে! সে এক অদ্ভুত অনুভূতি।’
চালকবিহীন গাড়ি নিয়ে এখন সারা বিশ্বে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে। স্বয়ংচালিত গাড়ির সুবিধা হলো, সাধারণ পরিস্থিতিতে তার জুড়ি নেই। কিন্তু পরিস্থিতি হঠাৎ বিগড়োলে সামাল দিতে পারবে তো এই গাড়ি। গাড়ির মাথায় ঘুরছে তার চোখ। বিজ্ঞানীরা গাড়িটার নাম রেখেছেন ‘মেড ইন জার্মানি। এই গাড়িটিকে কিছু ‘মানবিক’ বৈশিষ্ট্য দেবার জন্য, সেই সংক্রান্ত গবেষণা ও গাড়ি তৈরিতে পনেরো লাখ ইউরোর বেশি খরচ হয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল গাড়ি তার অব্যবহিত পারিপার্শ্বিককে চিনবে কী করে। আইটি-বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডক্টর রাউল রখাসের কথায়, ‘স্বয়ংক্রিয় গাড়ি চালনার সবচেয়ে মুশকিল ব্যাপার রাস্তা চেনা বা নেভিগেশন নয়, সে তো আজকালকার সাধারণ গাড়িগুলোও পারে। মুশকিল হলো ট্রাফিক লাইট, ট্রাফিক সাইন আর পথচারীদের চেনা, বিশেষ করে রাস্তায় মানুষজন কোথায় দাঁড়িয়ে, গাড়িকে সেটা জানতে হবে, তার খেয়াল রাখতে হবে।’ ইউরোপের সবচেয়ে বড় ড্রাইভিং সিমিউলেটর এই জার্মানিতেই। এখানেই পরীক্ষা করে দেখা হয়, গাড়ি চালানোর সময় মানুষের কি ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় তা সে সাধারণ পরিস্থিতিতেই হোক, আর বিপজ্জনক পরিস্থিতিতেই হোক।
কম্পিউটারে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেন, মানুষের তথাকথিত সপ্তম ইন্দ্রীয় কিভাবে কাজ করে। প্রযুক্তিবিদদের স্বপ্ন হলো এমন একটি বুদ্ধিমান গাড়ি, যা সাধারণ গাড়ি চালকদের চেয়ে বেশি যুক্তভাবে কাজ করবে। যেসব বিশেষজ্ঞরা সেই গাড়ির নক্সা করেছেন, তাদের একজন হলেনÑ প্রফেসর লেমার। তিনি জানান, ‘স্বয়ংচালিত গাড়ির রহস্য হলো, গাড়িটা ঠিক একজন মানুষের মতো তার পারিপার্শ্বিকের খোঁজখবর রাখতে পারবে। সেজন্য দরকার এমন সব সেন্সর, যেগুলো বিভিন্ন ধরনের আলো, বিভিন্ন ধরনের আবহাওয়ায় কাজ করবে। তাছাড়া ওই গাড়ির একজন গাড়িচালকের মতো অভিজ্ঞতা থাকা চাই- সামনে হয়ত কেউ সিগনাল না দিয়েই মোড় নিচ্ছে।
প্রফেসর ডক্টর রাউল রখাস বলেন, ‘ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত লাগে বৈকি, গাড়িতে বসে আছি অথচ কেউ গাড়ি চালাচ্ছে না! সেজন্য আগে থেকে মানসিক প্রস্তুতি লাগে। বিশেষ করে গাড়ি যখন ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে মোটরওয়ে ধরে চলেছে আর আপনি দেখছেন, স্টিয়ারিং আপনি থেকে ঘুরছে! সে এক অদ্ভুত অনুভূতি।’
এই তথ্যটিকে প্রযুক্তিগতভাবে সংগ্রহ করে সেই অনুযায়ী কাজ করা, যাতে কোন বিপদ না ঘটে, এটাই হলো স্বয়ংক্রিয় গাড়ি চালানোর একটা কেন্দ্র্র্রীয় প্রশ্ন।’ বার্লিনের মুখ্য রেলওয়ে স্টেশনের কাছে প্রতিদিন প্রায় পনেরো লাখ গাড়ি চলে তার মধ্যে একটি ভুতুড়ে গাড়ি, কেননা সে গাড়িতে ব্রেক, এ্যাক্সিলারেটর কিংবা স্টিয়ারিং, সবই কম্পিউটার চালিত। ভুতুড়ে গাড়ির চারপাশে যেসব গাড়ি চলছে বা পথচারীরা চলাফেরা করছেন, লেজার স্ক্যানার, রাডার ও ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে তাদের খোঁজ রাখা হয়। বিশেষ একটি সফটওয়্যার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাফিক পরিস্থিতি ধরতে পারে ও গাড়িকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়। সেফটির জন্য একজন ড্রাইভার সিটে বসে থাকলেও, গুরুতর বিপদ ছাড়া তিনি স্টিয়ারিং-এ হাত লাগান না।
চীন
চীনের ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বাইদু চালকবিহীন মিনিবাস তৈরি করেছে সম্প্রতি। এসব মিনিবাসে কোনো চালকের আসন নেই, স্টিয়ারিং হুইল, এক্সিলেরেটর ও ব্রেক নেই। আট সিট বিশিষ্ট এই মিনিবাসগুলোর নাম অ্যাপোলং। এগুলো সাধারণ মিনিবাসের চেয়ে বেশ ছোট আকারের। এতে আরো ৬ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে পারবে।

এই মিনিবাস প্রস্তুত করতে বাইদুকে সহযোগিতা করছে চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান কিং লং। এই গাড়িতে অ্যাপোলোর চালকবিহীন অপারেটিং সিস্টেম অ্যাপোলা থ্রি পয়েন্ট জিরো ব্যবহার করা হয়েছে। চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের জিয়ামেন এলাকাল কারখানায় এই চালকবিহীন গাড়িগুলো নির্মিত হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে চীনের ব্যস্ত সিটি বেইজিং, গুয়াংজু, শেনজেন ও দেশটির নতুন মেগাসিটি জিয়োগানের বিভিন্ন পর্যটন স্পট, এয়ারপোর্ট ও সে ধরনের এলাকায় এই চালকবিহীন মিনিবাসগুলো যাতায়াত করবে। ইলেকট্রিক এই গাড়ি দুই ঘণ্টা চার্জ করার পর ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে। চীনের ব্যস্ত সিটিগুলো ছাড়াও জাপানের চালকবিহীন গাড়িগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে সে দেশেও শিগগিরই এই মিনিবাস দেখা যাবে।
চালকবিহীন গাড়ি চলে কীভাবে?
বাংলাদেশ
ঢাকাসহ দেশব্যাপী যখন সড়ক দুর্ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে, অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ঠিক তখই কুয়াকাটার এক তরুণ বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছেন জ্বালানি সাশ্রয়ী চালকবিহীন পরিবেশবান্ধব গাড়ি।

সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে কার্যকর এবং চালক ভুলভাবে চালাতে চাইলেও গাড়িটি সয়ংক্রিয়ভাবে নিজে থেকে দুর্ঘটনা এড়িয়ে এবং অন্যকে সতর্ক করে সড়কে চলতে পারবে বলে দাবি গাড়িটির আবিষ্কারক তরুণ বিজ্ঞানী মাহবুবুর রহমান শাওনের। গাড়িটি আট মিটার দূর থেকেই অন্য যানবাহন ও প্রাণিকে ফলো করে দুর্ঘটনা এড়াতে সক্ষম হবে।
গত বছর শাওন সী-প্লেন তৈরি করে পরীক্ষামূলক সামান্য আকাশে উড়িয়ে নদীতে ভাসিয়েছিলেন। কিন্তু এ পর্যন্ত পরিবারের আর্থিক সহযোগিতা ও বন্ধুদের উৎসাহ ছাড়া তার পাশে কেউ দাঁড়ায়নি।
ঢাকাসহ দেশব্যাপী যখন সড়ক দুর্ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে, অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ঠিক তখই কুয়াকাটার এক তরুণ বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছেন জ্বালানি সাশ্রয়ী চালকবিহীন পরিবেশবান্ধব গাড়ি।

সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে কার্যকর এবং চালক ভুলভাবে চালাতে চাইলেও গাড়িটি সয়ংক্রিয়ভাবে নিজে থেকে দুর্ঘটনা এড়িয়ে এবং অন্যকে সতর্ক করে সড়কে চলতে পারবে বলে দাবি গাড়িটির আবিষ্কারক তরুণ বিজ্ঞানী মাহবুবুর রহমান শাওনের। গাড়িটি আট মিটার দূর থেকেই অন্য যানবাহন ও প্রাণিকে ফলো করে দুর্ঘটনা এড়াতে সক্ষম হবে।
গত বছর শাওন সী-প্লেন তৈরি করে পরীক্ষামূলক সামান্য আকাশে উড়িয়ে নদীতে ভাসিয়েছিলেন। কিন্তু এ পর্যন্ত পরিবারের আর্থিক সহযোগিতা ও বন্ধুদের উৎসাহ ছাড়া তার পাশে কেউ দাঁড়ায়নি।
বাংলাদেশ প্ল্যানেটর কলেজের রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র শাওন প্রায় ১ মাস ধরে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব সোলার সিস্টেম ব্যবহৃত এই গাড়ি তৈরি করেন। গাড়িটি পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছে কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কে।
মহিপুর থানা সদরে অবস্থিত মহিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে শাওন তার আবিষ্কৃত প্রযুক্তির প্রদর্শন করেন। এ সময় তার আবিষ্কৃত চালকবিহীন গাড়িটি কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কে চালিয়ে সবাইকে চমকে দেন।
ক্ষুদে বিজ্ঞানী মাহবুবুর রহমান শাওন জানান, ছোটবেলা থেকেই তার বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি খেলাধুলা হিসেবে বেছে নেন ইলেক্ট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি। সেই খেলাধুলা থেকেই তার আবিষ্কারের প্রতি ছিল বিশেষ আগ্রহ। তবে তার বাবা-মা সব সময় তাকে নানাভাবে সহযোগিতা এবং উৎসাহ যোগিয়ে এসেছেন।
শাওন বলেন, সরকারের সহযোগিতা তিনি আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা পেলে তার আবিষ্কৃত গাড়ি ও ইলেক্ট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করে আধুনিক বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে পারেন। তার প্রযুক্তি বাজারজাত করা গেলে দেশও লাভবান হবে।শাওনের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানার মোয়াজ্জেমপুর গ্রামে।
শাওনের বাবা মাদ্রাসা শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, শাওন ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার চেয়ে নানা যন্ত্রপাতি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করতো। তার খেলাধুলার অংশই ছিল আবিষ্কার। ছেলের এমন আগ্রহ দেখে তাকে বাধা না দিয়ে যখন যা চেয়েছে কিনে দিয়েছি। এখনও দিচ্ছি। তার এই কাজে সরকার এগিয়ে আসলে অনেক কিছু আবিষ্কার করতে পারবে শাওন।
এ ছাড়াও আবিষ্কার করেছেন সিকিউরিটি অ্যালার্ম, মোবাইলের ব্যাটারির মাধ্যমে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ফ্রিজ, সেন্সর লাইট, স্মার্ট সুইস, মোবাইল সুইস, ড্রোন বিমান, মোবাইলের মাধ্যমে সুইস অন অফ করার যন্ত্র।
প্রযুক্তি মূল ধারায় চলে আসবে। প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতা এ্যাপলও চালকবিহীন গাড়ি নির্মাণে যুক্ত হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন
শুধু বার্লিনের জমাট ট্রফিকেই নয়, মোটরওয়েতে, যেখানে অনেক জায়গায় স্পিড লিমিট আছে সেখানেও মেড ইন জার্মানি গাড়ি ঠিকই তার চ্যানেল ধরে চলে। এই গাড়িতে ব্রেন হলো তার কম্পিউটার, সেই কম্পিউটারই নিজে থেকে গাড়ির চলাফেরা ঠিক করে দেয়। গাড়ির বুটে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি, যা বিশেষ করে বিপদ এড়াতে সাহায্য করে। যানচলাচল বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডক্টর কার্স্টেন লেমারের কথায়, ‘ভবিষ্যতের পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় গাড়ির উপকারিতার একটা দৃষ্টান্ত হতে পারে এই যে, চালকের হার্ট এ্যাটাকের মতো সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতিতে গাড়ি নিজেই সেটা বুঝে রাস্তার ধারে পার্ক করবে।’ এটাও এক ধরনের বিপ্লব।
যুক্তরাজ্যের চারটি এলাকায় চালু হলো চালকবিহীন গাড়ি।
যুক্তরাজ্যের চারটি এলাকায় চালু হলো চালকবিহীন গাড়ি। দেশটির পরিবহন চলাচলের আইনে একটি প্রস্তাবের কারণেই জনগণ আজ থেকে এই পরীক্ষামূলক চালকবিহীন গাড়ির যাত্রী হতে পারবেন। লন্ডনের গ্রিনিচে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা উপস্থিত থেকে পরীক্ষামূলক চালকবিহীন গাড়ি চলাচলের উদ্বোধন করার কথা। একই সঙ্গে চালকবিহীন গাড়ি চালু হবে বাকিংহ্যামশায়ার, মিল্টন কেইনেস ও কভেন্ট্রিতে। এর আগে যুক্তরাজ্যে চালকবিহীন গাড়ি চলার এলাকাগুলোর বাস্তব অবস্থা ধারণের ব্যবস্থা নেয়া হয়। ২২টি ক্যামেরা ও সেন্সর ব্যবহার করে এলাকাগুলোর রাস্তা ও চারপাশের ছবি তোলা হয়।
যুক্তরাজ্যের যোগাযোগমন্ত্রী ক্লেয়ার পেরি বলেন, যানবাহন ব্যবস্থার ভবিষ্যত হলো চালকবিহীন গাড়ি। নতুন প্রযুক্তির উন্নয়নে তিনি যুক্তরাজ্যকে এগিয়ে রাখতে চান। এতে অর্থ বিনিয়োগেরও একটি নতুন খাতের সৃষ্টি হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, চালকবিহীন গাড়ি পূর্ণতা পেতে সময় নেবে, তবে আজকের পদক্ষেপও গুরুত্বপূর্ণ। আশা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যেই চালকবিহীন গাড়ি প্রযুক্তি পূর্ণতা লাভ করবে। দেড় দশকের মধ্যেই এই প্রযুক্তি নিরাপত্তাও বাড়বে। তখন ইন্টারনেট-ভিত্তিক এসব চালকবিহীন গাড়ি যাত্রীদের নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে কথা বলা ও বিনোদন প্রদানেও সক্ষম হবে। যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তির উন্নয়নে এগিয়ে রাখতে সরকারের উদ্যোগে গুগলসহ বিশ্বের নামকরা সব প্রযুক্তি ও যানবাহন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে সিবিএস মেলায় বিএমডবিউ চালকবিহীন গাড়ি প্রদর্শনকালে এর সংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রযুক্তিও প্রদর্শন করে। অডি কোম্পানির তৈরি চালকবিহীন গড়ি সান ফ্রানসিসকো থেকে নেভাদা পর্যন্ত টানা চলেছে।
মার্সিডিজ ও অন্যন্য গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। কয়েক বছর ধরেই ক্যালিফোর্নিয়ার পাহাড়ী অঞ্চলে নিজেদের প্রধান কার্যালয়ের কাছে চালকবিহীন গাড়ির পরীক্ষা চালাচ্ছে গুগল। তাদের দাবি ২০২০ সালের মধ্যেই এই প্রযুক্তি মূল ধারায় চলে আসবে। প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতা এ্যাপলও চালকবিহীন গাড়ি নির্মাণে যুক্ত হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। এ্যাপলের পক্ষ থেকে গাড়ি নিবন্ধিত করা হয়েছে। কয়েকটি ক্যামেরা নিয়ে গাড়ির পরীক্ষাও চালানো হচ্ছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে নিজের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাজ্য। এরই মধ্যে চালকবিহীন গাড়ি উৎপাদন বাড়াতে সরকার এক কোটি ৯০ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগ করেছে। ট্রাফিক লাইট মেনে চলা, রাস্তায় কোন যানবাহন বা ব্যক্তির অবস্থান বোঝায় চালকবিহীন গাড়ি সাফল্য পেয়েছে। তবে এখনও কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে।
খারাপ আবহাওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও অস্থায়ী ট্রাফিক লাইটে চালকবিহীন গাড়ি কিছুটা সমস্যায় পড়ে। একই সঙ্গে কোন ব্যক্তি ও পুলিশ বুঝতেও এই প্রযুক্তির সমস্যা রয়ে গেছে। তাই বর্তমানে চালকবিহীন গাড়ির চলাচলের এক প্রস্তাবে জরুরী প্রয়োজনে গাড়িতে একজন প্রশিক্ষিত চালক রাখার কথাও বলা হয়েছে। এরই মধ্যে ব্রিটেনের অনেক এলাকায় চালকবিহীন গাড়ি চলার ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা চলছে।
পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে ট্রাফিক জ্যাম ও সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে এই প্রযুক্তি কতটা ভূমিকা রাখতে পারে। চালকবিহীন গাড়ির যাত্রীদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা নিয়েও গবেষণা হচ্ছে। একই সঙ্গে চালকবিহীন গাড়ি চলাচলে কী কী আইনী জটিলতা হতে পারে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা প্রতিবছর গড়ে ২৩৫ ঘণ্টা গাড়ি চালান। যা ৬ সপ্তাহের কর্মঘণ্টার সমান।
ওয়েমো নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট। প্রতিষ্ঠানটি যে গবেষণা পর্ব পার করে বাণিজ্যিকীকরণের পর্যায়ে পৌঁছেছে, বেশ কিছু সূত্রের খবর থেকে তা বোঝা যায়।
ধীরগতির জন্য থামানো হলো গুগলের চালকবিহীন গাড়ি
অতিরিক্ত ধীরগতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের মাউন্টেন ভিউতে চালকবিহীন গুগল গাড়ি থামিয়ে দিয়েছে পুলিশ। তবে চালকবিহীন গাড়ির ধীরগতির জন্য কোন পদক্ষেপ না নেওয়া হলেও প্রশ্ন উঠেছে গাড়িগুলো কি তাদের সঠিক অবস্থায় নেই, নাকি তারা একটু বেশিই সাবধানী।

ছবি সংগৃহীত
অতিরিক্ত ধীরগতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের মাউন্টেন ভিউতে চালকবিহীন গুগল গাড়ি থামিয়ে দিয়েছে পুলিশ। তবে চালকবিহীন গাড়ির ধীরগতির জন্য কোন পদক্ষেপ না নেওয়া হলেও প্রশ্ন উঠেছে গাড়িগুলো কি তাদের সঠিক অবস্থায় নেই, নাকি তারা একটু বেশিই সাবধানী।
গুগল প্লাসে দেওয়া এক পোস্টে গুগল মজা করে বলেছে, ‘বাজি ধরতে পারি, এই একই কারণে মানুষকে কিন্তু এভাবে থামানো হয় না।’
ক্যালিফোর্নিয়ার মোটরগাড়ি বিভাগ সম্প্রতি এক দূর্ঘটনা প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, গুগলের অটোমেটেড গাড়িগুলো অনেক বেশি সাবধানী।
এই ঘটনায় মাউন্টেন ভিউ পুলিশ বিভাগ এক ব্লগ পোস্টে জানায়, এক পুলিশ অফিসার ইস্টবাউন্ড লেনে ধীরগতির গাড়িটিকে দেখতে পায়। ধীরগতিতে চলার কারণে পেছনের গাড়িগুলোও ধীর গতিতে তার চলছিল। পুলিশ অফিসার গাড়িটিকে থামায় এবং এর অপারেটরদের সাথে যোগাযোগ করে। কিভাবে এটি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে স্পিড নির্বাচন করে তা জানতে এবং এটি যে ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি করছে তা জানাতে এর অপারেটরদের সাথে যোগাযোগ করা হয়।
গাড়িটি প্রতি ঘন্টায় ৩৫ মাইল চালানো অঞ্চলে প্রতি ঘন্টায় ২৪ মাইল বেগে চলছিল। ঘটনাটির প্রতিক্রিয়ায় গুগল তাদের নিজস্ব এক পোস্টে লেখে, ‘নিরাপত্তার খাতিরে আমরা আমাদের প্রোটোটাইপ গাড়ির স্পিড কমিয়ে রেখেছি। রাস্তায় তাড়াহুড়ো করে চলার থেকে আমরা তাদেরকে বন্ধুসুলভ এবং সহজগম্য করতে চাই।’
গুগলের চালকবিহীন গাড়িগুলো অনেক বেশি ধীর এই অভিযোগের কথা আমলে এনে সেপ্টেম্বরে গুগল গাড়িগুলোকে আরও বাস্তবিক করতে কাজ করছে বলে জানায়।
ইনটেল
মোবাইলআই ও বিএমডব্লিউর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ২০২১ সালের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ইনটেল। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি এমন প্রযুক্তি তৈরি করবে যা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে পারবে।
অ্যাপল
টাইটান ছদ্মনামে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির প্রকল্প শুরু করেছিল অ্যাপল। তবে সেটি বেশি দূর এগোয়নি। এখন গাড়িনির্মাতা ম্যাকলারেন ও লিট মোটরসের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে নতুন করে শুরুর জন্য।
ন্যুটোনোমি
এমআইটির সাবেক দুই বিজ্ঞানী সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গে উবারের পরীক্ষামূলক স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্সি সেবা চালুর দিন কয়েক আগেই ন্যুটোনোমি কাজ শুরু করে।
অন্যান্য
ভলভোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এয়ারব্যাগ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অটোলিভ যেমন স্বয়ংক্রিয় গাড়ি তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি নিয়ে প্রস্তাবিত নীতিমালা প্রকাশ করেছে মার্কিন পরিবহন বিভাগ। এমসিটি নামের ৩২ একরের স্বয়ংক্রিয় গাড়ি পরীক্ষা করার কারখানা স্থাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান। নতুন এই প্রযুক্তি মানুষের হাতের নাগালে আনতে একইভাবে কাজ করছে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এদের মধ্যে টেসলা, জেনারেল মোটরস, ফোর্ড, ফিয়াট ক্রাইসলার, হোন্ডা ও ভলভো উল্লেখযোগ্য।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন