থমাস এডওয়ার্ড লরেন্সঃ লরেন্স অব অ্যারাবিয়া

থমাস এডওয়ার্ড লরেন্সঃ লরেন্স অব অ্যারাবিয়া

“আমি তাকে আমাদের সময়ের একজন শ্রেষ্ঠ মানুষ বলে মনে করি। আমরা তার মতো কাউকে আর কোনোদিন খুঁজে পাবো না। তার নাম ইতিহাসে জ্বলজ্বল করবে, প্রতিটি যুদ্ধে স্মরণ করা হবে, আরব আখ্যানের সাথে মিশে যাবে চিরতরে।”

উপরের কথাগুলো বেশ পরিচিত লাগছে কী? লাগারই কথা, যদি আপনি চোখ কান খোলা রেখে থাকেন। ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের এরকমই একটি উক্তি সাম্প্রতিককালে ঘন ঘন দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এবং মোটিভেশনাল স্পিচেও শোনা যায় অনেক। তবে, এরকমই একটি উক্তি আব্দুল কালামের অনেক আগেই করে গেছেন এক বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ, দুঃসাহসী যোদ্ধা, থমাস এডওয়ার্ড লরেন্স।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় শক্তিশালী অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে তেঁতে ওঠা আরব বিদ্রোহে অংশ নিয়ে, একজন ঠান্ডা মাথার অকুতোভয় সামরিক নেতা হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছিলেন তিনি। মোটর বাইক দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারানোর পূর্বেই ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’ হিসেবে ইতিহাসে ভাস্বর হয়েছেন তিনি। তার জীবনী নিয়ে হলিউডে তৈরি হয়েছে বিখ্যাত সিনেমা ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’। তবে, তার জীবন সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানতে ছবিটির উপর নির্ভর না করাই ভালো। সেখানে নাটকীয়তার পরিমাণটা একটু বেশিই ছিল কিছু অংশে। যা-ই হোক, তার সংক্ষিপ্ত জীবনের গল্পই আজ শোনা যাক চলুন।
থমাস এডওয়ার্ড লরেন্স (Thomas Edward Lawrence) ছিলেন  একজন ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ, মিলিটারি অফিসার, এবং কূটনীতিক। তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিতি ছিলেন সিনাই এবং ফিলিস্তিনি অভিযান ও তুরস্কের অটোম্যান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে আরব বিদ্রোহে তার ভূমিকার জন্য। তার কাজের প্রসার ও বৈচিত্রতা এবং সেগুলো স্পষ্ট লেখনিতে বর্ণনা করার সক্ষমতা লরেন্স অব অ্যারাবিয়া নামে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। ১৯৬২ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রের শিরোনাম ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’ (যা মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তার ভূমিকার ওপর নির্মিত) যা পরবর্তীকালে তাকে এই নামেই পরিচিত করে তোলে।  
আমেরিকার সাংবাদিক লওয়েল থমাসের আরব বিদ্রোহের ওপর করা একটি সংবেদনশীল প্রতিবেদন তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দেয়। এরপর ১৯২২ সালে তার আত্মজীবনী সেভেন পিলার’স অফ উইজডম তাকে খ্যাতির শিখরে নিয়ে যায়।
শৈশব
লরেন্স জন্মে ছিলেন ১৮৮৮ সালের ১৬ অগাস্ট যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের ট্রেমাডগে। তার বাবার নাম স্যার থমাস শ্যাপমেন। থমাস তার বাড়ির আয়া সারাহ জুনার সাথে প্রেমের সম্পর্কের কারণে প্রথম স্ত্রী এডিথকে ছেড়ে দেন। থমাস ও সারাহ এর সন্তান হচ্ছেন টি ই লরেন্স। তারা কখন বিয়ে করেননি। তাদের সন্তান ছিল পাঁচটি এবং লরেন্স ছিলেন তাদের দ্বিতীয় সন্তান। ১৮৯৪-১৮৯৬ সময়ে ওয়েলস থেকে তাদের পরিবার স্কটল্যান্ডের গ্যালওয়ের কিরকুডব্রাইটে, তারপর ব্রিটানির  ডাইনারডে হয়ে তারা জার্সিতে চলে যায়। সেখানে ছোটো লরেন্স তার বন্ধুদের সাথে লুকিয়ে নৌকা বাইচ দেখতে যেতেন। ১৮৯৬ সালে পরিবারটি অক্সফোর্ডের পলস্টিড রোডে চলে যায় এবং ১৯২১ সাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। লরেন্স সিটি অফ অক্সফোর্ড হাই স্কুলে লেখাপড়া করতেন।

 অক্সফোর্ডে পড়াকালীন এর আশেপাশের প্রায় সকল চার্চে তিনি পদচিহ্ন রেখেছেন, সংগ্রহ করেছেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি এবং পুরাকীর্তি। এ সময় তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু বেসনকে নিয়ে এক সপ্তাহের জন্য বেরিয়ে পড়েছিলেন সাইকেলে চেপে। গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নাইট টেম্পলগুলোতে দুই বন্ধু গিয়ে সংগ্রহ করতেন মূল্যবান ধ্বংসাবশেষ এবং তথ্য-উপাত্ত। ১৯০৯ সালের গ্রীষ্মে, তৎকালীন অটোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্গত সিরিয়ার ক্রুসেডার দুর্গগুলোতে ভ্রমণের নিমিত্তে পায়ে হেঁটে একাকী ভ্রমণ করেছিলেন ১ হাজার মাইলের বেশি পথ! প্রত্নতত্ত্বের জন্য তার আকর্ষণ ছিল এতটাই প্রবল।প্রচণ্ড অধ্যবসায় আর আকর্ষণের জোরে, ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে স্নাতক পাশ করেন লরেন্স। মধ্যযুগীয় সাহিত্য পড়তে ভর্তি হন মাগদালিন কলেজে। কিন্তু তার মতো দুঃসাহসী মানুষের স্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশান্ত পরিবেশে নয়। সর্বদা দুঃসাহসী সব অভিযানের পরিকল্পনা ঘুরতো তার মাথায়। অপেক্ষা ছিল কেবল একটি সুযোগের। সে সুযোগ আসে ১৯১০ সালের ডিসেম্বর মাসে। দ্বিতীয়বার ভাববার আর অবকাশ পাননি। সাথে সাথেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটিয়ে বৈরুতের উদ্দেশে রওনা দেন।
প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক গবেষণায় প্রয়োজন হয় বলে শিখেছিলেন একাধিক ভাষা। অনর্গল বলে যেতে পারতেন ফরাসি, জার্মান, তুর্কি, গ্রিক আর ল্যাটিন ভাষা। বৈরুতে গিয়ে আরবি ভাষাটাও শিখে ফেলেন। এ সময়টা ছিল তার উত্থানের প্রস্তুতিকালের মতো। ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি তিনি আরবদের শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে বিস্তর গবেষণা এবং পড়ালেখা করতে লাগলেন। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই তৈরি হলো তার অসংখ্য বন্ধু। স্থানীয়দের সাথে সম্পূর্ণরূপে মিশে যেতে শুধু যে ভাষাই শিখেছিলেন তা নয়, নিজের পোশাক পরিচ্ছদেও এনেছিলেন আমূল পরিবর্তন। আরবদের ঢঙে লম্বা জুব্বা আর মাথায় সুদৃশ্য উষ্ণীষে একেবারে আরবদের মতোই দেখাতো তাকে।
১৫ বছর বয়সে তিনি ও তার বন্ধু সিরিল বেসন সাইকেলে করে বার্কশায়ার, বাকিংহ্যামশায়ার ও অক্সফোর্ডশায়ারের প্রতিটি গ্রামের চার্চ পরিদর্শন করেন এবং সেগুলোর বিভিন্ন স্থাপনা ও পুরাতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেন। তারা তাদের তথ্যগুলো এশমলিয়ান জাদুঘরে উপস্থাপন করেন। এরপর দুই বন্ধু মিলে সাইকেলে করে ফ্রান্স ভ্রমণ করেন। লরেন্স ১৯০৭-১৯১০ পর্যন্ত জেসাস কলেজে ইতিহাস অধ্যয়ন করেন। ১৯০৯ সালের গ্রীষ্মে তিনি একাই তিন মাসের একটি পদযাত্রায় সিরিয়ার অটোম্যানের উদ্দেশ্যে বের হন। এ সময় তিনি পায়ে হেটে ১৬০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করেন। এরই মধ্যে তিনি প্রথম শ্রেণিতে অনার্স পাস করেন। ১৯১০ সালের দিকে তিনি অক্সফোর্ডের ম্যাগডালেন কলেজে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শুরু করেন। কিন্তু মাঝ পথে তিনি পোস্ট  গ্র্যাজুয়েশন ছেড়ে দিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা অনুশীলন করা শুরু করেন। সেই বছর ডিসেম্বরে তিনি বৈরুতের জিবাইলে যান এবং আরবি অধ্যয়ন করেন। তারপর তিনি উত্তর সিরিয়ার জেরাব্লুসের নিকটে কারখেমিসে খনন কাজে যান। সেখানে তিনি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের আর ক্যাম্বেল থমসন ও হগারথের অধীনে কাজ করেন। পরবর্তীতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন তিনি যা কিছু অর্জন করেছেন তার জন্য তিনি হগারথের নিকট ঋণী। ১৯১৪ সালে তিনি তার সহকর্মী উলি সাথে ব্রিটিশ মিলিটারি দ্বারা  নেগেভ মরুভূমিতে একটি সামরিক জরিপের জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত হন। এখানে তাদের বাইবেলে উল্লেখিত “ওয়াইল্ডারনেস অফ জিন” নামক একটি জায়গা খুঁজে বের করার জন্য প্যালেস্টাইন এক্সপ্লোরেশান ফান্ড থেকে অর্থ সরবরাহ করা হয়েছিল। সে সময় নেগেভ ডেসার্ট ভৌগলিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ অটোম্যান আর্মি যদি মিশর আক্রমণ করে তাহলে তাদেরকে সে মরুভূমি অতিক্রম করে যেতে হবে। উলি ও লরেন্স প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানের প্রতিবেদনে এ এলাকার একটি হালনাগাদ মানচিত্র তৈরি করেন যা সামরিক প্রাসঙ্গিকতার দিক থেকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি ১৯১৪ সালে অক্টোবর মাসে জেনারেল তালিকায় কমিশন প্রাপ্ত হন এবং বছর শেষ হওয়ার পূ

র্বেই কায়রোতে ইন্টেলিজেন্স স্টাফ পদে স্থলাভিষিক্ত হন।

“সবাই স্বপ্ন দেখে, কিন্তু সবার স্বপ্ন সমান নয়। যারা রাতে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে, তারা দিনের বেলা কর্মক্ষেত্রে গিয়ে নিজের স্বপ্নকে অসার জ্ঞান করে। কিন্তু যারা দিনের বেলা স্বপ্ন দেখে, তারা ভয়ানক প্রকৃতির মানুষ! তারা চোখ খোলা রেখে স্বপ্ন দেখে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে চলে, সফল হয়। যেমনটা আমি করেছি!”- টি. ই. লরেন্স, সেভেন পিলারস অব উইজডম



আরব বিদ্রোহ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্বালে লরেন্স ছিলেন একজন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট গবেষক যিনি অটোম্যান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশ ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করেছেন যার ফলে তিনি অটোম্যান সাম্রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পরিচিত ছিলেন এবং তাদের জার্মান প্রযুক্তি ও পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত রেলপথ সম্পর্কে অভিজ্ঞ ছিলেন। এদিকে ব্রিটেন ফরেইন অফিসের আরব ব্যুরো অটোম্যান সাম্রাজ্যের মধ্যপ্রাচ্যে আভ্যন্তরীণ

১৯১৪ সালে শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ততদিনে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের জীবন-জীবিকা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি আর দিগন্তজোড়া ধু-ধু মরুভূমির প্রেমে পড়ে গেছেন লরেন্স। প্রত্নতাত্ত্বিক কাজের খাতিরে পায়ে হেঁটে, ঘোড়া কিংবা উটের পিঠে চড়ে, মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ মরুভূমিই চষে বেড়ানো হয়ে গেছে তার। এসব কাজ করতে গিয়ে তৈরি করেন একটি চমৎকার ম্যাপ, যা ঘটনাক্রমে একজন ব্রিটিশ জেনারেলের নজরে আসে। জেনারেল ভদ্রলোক দেখলেন যে, তাদের হাতে থাকা ম্যাপের চেয়ে লরেন্সের ম্যাপ বহুগুণে নির্ভুল। তাছাড়া, লরেন্সের ম্যাপে যুদ্ধের জন্য কিছু কৌশলগত স্থান, যেমন নেগেভ মরুভূমি চিহ্নিত করা ছিল সুস্পষ্টভাবে, যেগুলো কিনা অটোমান সাম্রাজ্যের ব্যবহারের সম্ভাবনা ছিল। ফলে, লরেন্সের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে। কায়রোতে তাকে নিয়োগ দেয়া হয় গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহের জন্য।
মরুভূমিতে যুদ্ধ করে ঠিক সুবিধা করতে পারছিল না ব্রিটিশ বাহিনী। কিন্তু, তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে ১৯১৬ সালে আরব বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটে। আর সে বিদ্রোহে, বিদ্রোহীদের স্বাদরে গ্রহণ করে ব্রিটিশরা। ব্রিটিশ বাহিনীর ‘আরব ব্যুরো অব ফরেন অফিসার’ থেকে লরেন্সকেই ঠিক করা হয় বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য, কারণ লরেন্সের চেয়ে ভালোভাবে আরবদের সাথে মিশতে পারেনি কোনো ব্রিটিশ নাগরিকই। অন্যদিকে, অটোমান সাম্রাজ্যের অত্যাচারী শাসনে অতিষ্ঠ আরবদের প্রতি লরেন্সের মনেও সহানুভূতি কাজ করতো। তিনি তাই নির্দ্বিধায় মেনে নিলেন সে প্রস্তাব।
আমির ফয়সাল এবং লরেন্স এক ফ্রেমে; source: ar.wikipedia.org
আরব বিদ্রোহে বিদ্রোহীদের প্রধান নেতা ছিলেন মক্কার আমির ফয়সাল। লরেন্সের প্রথম কাজটি তাই ছিল আমির ফয়সালের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা। তিনি বেশ কিছু যাযাবর উপজাতি গোষ্ঠীকে নিজের দলে ভেড়াতে সক্ষম হন। তাদের নিয়ে পৌঁছে যান আমির ফয়সালের কাছে। আমিরের অনুমতি নিয়েই শুরু হয় লরেন্সের সফল গেরিলা যুদ্ধ। তিনি ভালো করেই জানতেন যে, তার অনুন্নত অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অপ্রশিক্ষিত বাহিনী, আধুনিক কামান গোলায় সজ্জিত অটোমান বাহিনীর সামনে দাঁড়াতেই পারবে না। তাই তিনি বেছে নিলেন গেরিলা আক্রমণের পথ। মদিনার মরুভূমির বুক চিরে চলে যাওয়া হেজাজ রেলওয়ের একটি ট্রেন লুট করেই তিনি অটোমান সাম্রাজ্যে প্রথম আঘাত হানেন। এই রেলওয়েই ছিল অটোমানদের অস্ত্র এবং খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের প্রধান ব্যবস্থা।
আকাবায় যাবার পথে লরেন্স, লরেন্স অব অ্যারাবিয়া ছবির একটি দৃশ্য; source: historyhit.com
যুদ্ধে আকাবা বন্দর ছিল একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ স্থান। অটোমানরা যেকোনো ধরনের নৌ আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য শক্ত সামরিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। কিন্তু তারা যা ভাবতেও পারেনি, লরেন্স করলেন ঠিক তা-ই। আকাবার পেছনের দিকে ছিল বিস্তীর্ণ এক মরুভূমি, যা পেরিয়ে আসতে পথিমধ্যেই মারা পড়ে অধিকাংশ মানুষ। অটোমানরা নিশ্চিত ছিল যে এদিক দিয়ে কেউ আকাবা আক্রমণ করতে আসবে না। আর অটোমানদের এই নির্ভাবনার সুযোগটিই কাজে লাগালেন লরেন্স। নিজের পাগলাটে স্বভাবের উপজাতি বাহিনী নিয়ে তড়িৎ গতিতে আচমকা আক্রমণে দিশেহারা করে দিলেন অটোমান বাহিনীকে, দখল করে নিলেন আকাবা।
“আমার চেনা জানা আর কোনো মানুষের পক্ষে এই সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়, যা লরেন্স করে দেখিয়েছেন!”- কমান্ডার জেনারেল স্যার এডমান্ড অ্যালেনবি
জেনারেল অ্যালেনবির সাথে লরেন্স, লরেন্স অব অ্যারাবিয়া ছবির একটি দৃশ্য; source: gettyimages.co.uk
আকাবা দখলের পূর্বে, ব্রিটিশ বাহিনীর উর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাকে নিজের পরিকল্পনার কথা জানাননি লরেন্স। তথাপি, তাকে এর জন্য কোনো জবাদিহিতা করতে হয়নি। কারণ, অ্যালেনবি তাকে সে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। আকাবা দখলের খবর দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নিজে এসে অ্যালেনবির কাছে পৌঁছেছিলেন লরেন্স। তার এই সাফল্যে, প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন সকলে। আমির ফয়সালের নিকট তার গ্রহণযোগ্যতা আরো বেড়ে যায়। এ সময়ে অসংখ্য আক্রমণে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং নেতৃত্ব দেন তিনি। অটোমানরা তাকে ধরার জন্য এতটাই হন্যে হয়ে ওঠে যে, তারা লরেন্সকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ২১ হাজার পাউন্ড পুরস্কার ঘোষণা করে। কম মনে হচ্ছে? মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় আজকের দিনে তার মূল্য ২.১ মিলিয়ন ডলার! তার যুদ্ধে অংশগ্রহণের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা যাক।
  • অটোমানদের মূল সরবারহ লাইন হেজাজ রেলওয়ে আক্রমণ।
  • আবা এল নামক রেলওয়ে আক্রমণ এবং সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা।
  • আকাবার একটি আউটপোস্ট আক্রমণ। এখানে পরাজিত হয়েছিলেন লরেন্স।
  • লেবাননের রাস বালবেক শহরের একটি ব্রিজ উড়িয়ে দেয়া।
  • মুদাওয়ারা শহরে আরো একটি রেলওয়ে আক্রমণ এবং একটি ট্রেন ধ্বংস করে দেয়া।
  • মৃত সাগরের দক্ষিণপূর্বে তাহফিলের যুদ্ধ, যেখানে একজন সাধারণ সৈনিক হিসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
  • আকাবা আক্রমণ এবং দখল, যা তার সবচেয়ে বড় সফলতা বলে গণ্য করা হয়।
  • আম্মান এবং ডেরার সংযোগ রেলওয়ে ধ্বংস করা।
১৯১৮ সালে, বিদ্রোহীরা এবং ব্রিটিশ বাহিনী সিরিয়ার দামেস্ক দখল করে নেয়। লরেন্স এই আক্রমণে বিদ্রোহীদের নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি আমির ফয়সালকে প্রভিশনাল আরব সরকারের রাজা হতে সহায়তা করেন। কিন্তু ফয়সালের রাজত্বের মেয়াদ ছিল মাত্র ২ বছর। ১৯২০ সালে ফরাসি বাহিনী আরবে ফয়সালের রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে, আরব অঞ্চলকে সাময়িকভাবে দু’ভাগে ভাগ করে। এর ফলশ্রুতিতেই পরবর্তীকালে ইরাক এবং সিরিয়া নামক দুটি ভিন্ন রাষ্ট্রের জন্ম। এই ঘটনা লরেন্সকে প্রচণ্ড আশাহত করে। তিনি একে আরবদের সাথে ব্রিটিশদের বিশ্বাসঘাতকতা বলে আখ্যায়িত করেন।
source: manhattanrarebooks.com
ব্রিটিশদের এহেন কর্মকাণ্ডে ব্যথিত হয়ে নিজের সামরিক পদ থেকে অব্যহতি দেন লরেন্স। ১৯২২ সালের দিকে তিনি ছদ্মনামে ‘রয়্যাল এয়ার ফোর্স’ এ যোগ দিলেও শীঘ্রই তার পরিচিতি প্রকাশ পেয়ে যায় এবং তিনি এয়ার ফোর্স থেকে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু ক্ষণকাল পরেই, অন্য একটি ছদ্মনামে ব্রিটিশদের এয়ার ফোর্সে যোগ দিয়ে চলে যান ভারতীয় উপমহাদেশের একটি বিমানঘাঁটিতে। ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত তিনি ব্রিটিশ এয়ারফোর্সের জন্য কাজ করেছিলেন। তার সকল কৃতিত্ব এবং বীরত্ব পৃথিবীকে জানানোর কাজটি যিনি করেছেন, তিনি সাংবাদিক লাউয়েল থমাস। থমাস যদি লরেন্সের জীবনের গল্প মিডিয়াতে প্রচার না করতেন তাহলে হয়তো তার দুঃসাহসিক কৃতিত্বগুলো আমরা কোনোদিন জানতে পারতাম না। কেননা লরেন্স ছিলেন প্রচণ্ড রকমের একজন প্রচারবিমুখ মানুষ, যিনি নিজের ব্যাপারে কখনোই কারো কাছে গল্প করতেন না।
পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে প্রত্নতত্ত্ব আর সামরিক বাহিনীর সাথে লেগে থাকা লরেন্স একজন উর্বর লেখকও ছিলেন। তার কলমে রচিত হয়েছে ‘সেভেন পিলারস অব কিংডম’ নামক অসাধারণ একটি গেরিলা যুদ্ধ সংক্রান্ত বই। এই বইটি আজও ইরাক, আফগানিস্তানের গেরিলা যোদ্ধারা সামরিক কৌশল রপ্ত করতে পড়ে। আরব বিদ্রোহ নিয়ে তার লেখা ‘দ্য রিভোল্ট ইন দ্য ডেজার্ট’ একাধিকবার বেস্ট সেলার হয়। ১৯৩৫ সালে তিনি এয়ার ফোর্সের চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিভৃত জীবন বেছে নেন।

 বিদ্রোহের সম্ভাবনা আঁচ করতে পারে । ব্রিটেন ফরেইন অফিস বুঝতে পারে যে মধ্য প্রাচ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি ও আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলোকে সাহায্য করলে অটোম্যান সাম্রাজ্যকে অনেকটা দুর্বল করা যাবে।
সিরিয়া, লিভান্ত ও মেসোপটেমিয়া সম্পর্কে ভাল ধারনা থাকায় কায়রোতে ইন্টেলিজেন্স স্টাফের জি ও সি তাকে হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। যুদ্ধে লরেন্স আরব সেনাবাহিনীর কমান্ডার আমির ফায়সালের অধীনে লড়াই করেন। এ সময় তিনি আরব নেতৃত্বকে বোঝাতে সক্ষম হন যে তাদের কর্মকাণ্ড ব্রিটিশ কৌশলের সাথে সমন্বয় করা প্রয়োজন। তিনি তাদেরকে বোঝান তারা যেন অটোম্যান সাম্রাজ্যের শক্তিশালী দুর্গ মদিনায় সম্মুখ আক্রমণ না করে যাতে করে তুর্কী সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে আটকান যায়। এরপর আরবরা তুর্কী দুর্বল জায়গা হিজাজ রেলপথ যেটি তুর্কিদের সৈন্য সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেটি আক্রমণ করতে মনোনিবেশ করতে পারে। এতে করে আরও তুর্কী সেনাবাহিনী সদস্যদের আটকাতে সমর্থ হন। ১৯১৭ সালে ৩ জানুয়ারি লরেন্স প্রথমবার ৩৫ জন সশস্ত্র সেনা নিয়ে রাতের আধারে এক অভিযান পরিচালনা করেন এবং সফল হন। মার্চের শেষের দিকে তিনি তুর্কী রেলস্টেশন আবু আল নাম-এ অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি সতর্কতার সাথে রেলপথ পর্যবেক্ষণ করেন এবং তার নিচে বোমা পুতে দেন এরপর যাওয়ার সময় টেলিগ্রাফের তার কেটে ফেলেন। পর দিন সকালে কিছু বেদুইন রেলস্টেশনে আগুন লাগিয়ে দেয়। রেলটি যেই স্টেশন থেকে বের হচ্ছিল লরেন্স বোমা মেরে রেলের প্রথম অংশটি উড়িয়ে দেন।

আকাবা জয়
১৯১৭ সালে লরেন্স আরব উপজাতি ওউদা আবু তায়ি সহ অন্যান্য শক্তিগুলোর সাথে যৌথভাবে আকাবা শহরে অভিযান পরিচালনা করেন। ৬ জুলাই লরেন্স ও আরব শক্তিগুলো এক আকস্মিক স্থল অভিযানে আকাবা শহর পতন ঘটান। এই বিজয়ের পর লরেন্সকে মেজর হিসেবে পদন্নোতি দেয়া হয়।
তাফিলাহ যুদ্ধ
১৯১৮ সালের জানুয়ারি জাফার পাশা আল আস্কারি এর অধীনে লরেন্স আরবদের সঙ্গে নিয়ে তাফিলাহ যুদ্ধে লড়াই করেন। প্রথমদিকে যুদ্ধটি ছিল আত্মরক্ষামুলক কিন্তু পরবর্তীতে এটি আক্রমণাত্মক রূপ নেয়। এই যুদ্ধে অবিস্মরণীয় নেতৃত্বের জন্য লরেন্সকে ডিস্টিংগুইশড সার্ভিস অর্ডার-এ পুরস্কৃত করা হয় এর সাথে তাকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়।
১৯১৮ সালের গ্রীষ্মে তুর্কী সরকার লরেন্সকে গ্রেফতারের জন্য ১৫০০০ পাউন্ড পুরস্কার ঘোষণা করে যদিও কেউ তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি।
দামেস্ক পতন
যুদ্ধের শেষ কয়েক সপ্তাহে লরেন্স দামেস্ক পতন পরিকল্পনার জড়িত হয়ে পড়েন। তিনি আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি কারণ তার পৌছার পূর্বেই দামেস্কের পতন ঘটে। তিনি সদ্য স্বাধীন হওয়া দামেস্কে বাদশা ফায়সালের অধীনে একটি প্রাদেশিক সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধের শেষ বছরে ব্রিটিশ সরকারের ঊর্ধ্বতনদের বোঝাতে সক্ষম হন যে আরব স্বাধীনতা মূলত ব্রিটিশ স্বার্থের পক্ষে এবং এটি একটি মিশ্র সফলতা।
যুদ্ধ পরবর্তী লরেন্স
যুদ্ধের পর লরেন্স পূর্ণ কর্নেল হিসেবে ফিরে আসেন। ১৯১৯ সালে ১৭ মে তাকে বহনকারী মিশর-গামী একটি ফ্লাইট ভূপাতিত হয়। প্লেনের পাইলট নিহত হলেও লরেন্স বেচে যান। ১৯১৯ সালে লওয়েল থমাস নামে এক সাংবাদিক ফটো শো এর আয়োজন করেন। বেদুইনের পোশাকে লরেন্সের ছবি দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সারা ফেলে। এরপর লন্ডনে থমাস আবার আরব পোশাকে লরেন্সের কিছু ছবি তোলেন। এতে লরেন্স লন্ডনের প্রতিটা ঘরে পরিচিত হয়ে উঠেন। ১৯২২ সালে লরেন্স রয়্যাল এয়ার ফোর্সে জন হিউম রস নামে তালিকাভুক্ত হন। কিন্তু ছদ্ম নামের কারণে প্রত্যাখ্যাত হন। লরেন্স নিজেও পরে স্বীকার করেন তিনি ছদ্ম নাম ব্যবহার করেছেন। পরবর্তীতে তিনি   রয়্যাল এয়ার ফোর্সে একটি লিখিত আদেশের বলে যোগদান করেন। কিছুদিন পর রয়্যাল ট্যাঙ্ক কর্পসে যোগ দান করেন। ১৯২৮ সালে তাকে ব্রিটিশ ইন্ডিয়াতে পাঠান হয়। কিন্তু গুপ্তচর বৃত্তির গুজবে তাকে ব্রিটেনে ফেরত পাঠান হয়।
লরেন্স মোটর সাইকেল চালাতে পছন্দ করতেন। বিভিন্ন সময়ে তার আঁটটি ব্রাফ সুপিরিয়র মোটর সাইকেল ছিল।
মৃত্যু
মিলিটারি সার্ভিস ছাড়ার দুই মাস পর লরেন্স তার  ব্রাফ সুপিরিয়র এস এস ১০০ চালানোর সময় ওয়্যারহ্যামের নিকট ক্লাউডস হিলের ডোরসেটে দুর্ঘটনায় পতিত হন এবং মারাত্মক আহত হন। দুর্ঘটনার ছয়দিন পর ১৯ মে ১৯৩৫ সালে মারা যান। দুর্ঘটনা স্থলে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে।  লরেন্সের মা ও তাদের আত্মীয় ফ্রেমটন পরিবার মিলে লরেন্সের অন্ত্যস্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান আয়োজন করেন এবং তাদের পারিবারিক কবরে দাফন করেন।   










লরেন্স অব অ্যারাবিয়ার ভাঙ্গা বাড়ি

লরেন্স অব অ্যারাবিয়ার ভাঙ্গা বাড়ি

আজ থেকে এক শ' বছর আগে এই বাড়িতে  বাস করতেন লরেন্স অব অ্যারাবিয়া। এই অবহেলিত বাড়িটি নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে। ইতিহাসবেত্তারা বাড়িটি সংস্কার করে দর্শকদের জন্য খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। সউদি কমিশন ফর ট্যুরিজম অ্যান্ড ন্যাশনাল হেরিটেজ-এর প্রেসিডেন্ট প্রিন্স সুলতান বিন সালমানেরও বাড়িটি পরিদর্শনে আসার কথা ছিল। কিন্তু তারপরও এই বাড়ির অস্তিত্ব আজ বিপন্ন।
১৯১৫ ও ১৯১৬ সালে সউদি আরবের ইয়ানবুর ওল্ড টাউনের এই বাড়িতে থাকতেন ব্রিটিশ গোয়েন্দা অফিসার টমাস এডওয়ার্ড লরেন্স, যিনি লরেন্স অব অ্যারাবিয়া নামে পরিচিত।

পর্যটকদের দেখা যায় বাড়িটি দেখতে গেছে, সেখানে ছবি তুলছে। এই পর্যটকরা সবাই যে বিদেশী তাও নয়। সউদি অনেকেও আছে, এই বাড়ি ও এর ইতিহাসের প্রতি যাদের আকর্ষণ রয়েছে।
সউদি আরবে অনেকে বিশ্বাস করেন, লরেন্স এখানে এসেছিলেন আরব বিশ্বকে সাহায্য করার জন্য। কিন্তু বিপ্লবী আরব বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে যে ঐতিহাসিক মিশনে তিনি নেমেছিলেন, নিজ সরকারের সমর্থনের অভাবে সেটি তিনি সম্পন্ন করে যেতে পারেননি।
ইয়ানবুর প্রবীণরা জানান, লরেন্স যাওয়ার পর ওই বাড়িতে আর কেউ থাকেননি। এমনকী এক রাতের জন্যও থাকার সাহস করেনি কেউ। কারণ, জনশ্রুতি ছিল যে, ওই বাড়িতে জ্বিন-ভূত থাকে।
১৯১৬-১৮ সালের আরব মহাবিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ ও আরব বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী লরেন্স অব অ্যারাবিয়া এই বাড়িতেই থাকতেন। বাড়িটি দোতলা এবং সমুদ্রের দিকে মুখ করা। নিচ তলায় আছে একটি বেডরুম ও একটি লিভিংরুম। গত কয়েক দশকে এটি বেশ অবহেলার শিকার হয়। এর গেটটি ভেঙ্গে যায়, ছাদটি ঝুরঝুরে হয়ে পড়ে।
বাড়িটির ইতিহাস জেনে এর মূল্য সম্বন্ধে সচেতন হয় স্থানীয় লোকজন। মদিনার ইতিহাসবিদ আদনান বিন ইসা আল-ওমরী বলেন, এই ভবন আরব ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি সংস্কার ও সংরক্ষণ করা উচিত।
কমিশন ফর ট্যুরিজম অ্যান্ড ন্যাশনাল হেরিটেজ-এর ইয়ানবু শাখার পরিচালক সামের আল-আনিনাও একই মত প্রকাশ করেন। 
টমাস এডওয়ার্ড লরেন্স ১৯৩৫ সালের ১৯শে মে মারা যান, এক মোটর সাইকেল দূর্ঘটনার পর।
ছবির কপিরাইটALAMY
Image captionমোটর সাইকেল ছিল টি ই লরেন্সের প্রিয় বাহন
ইংল্যান্ডের শান্ত এক অঞ্চলের রাস্তায় তাঁর প্রিয় এই বাহনে চড়ার সময় তিনি এই দূর্ঘটনার শিকার হন, আর মারা যান ছয়দিন পরে ডরসেটের উল সামরিক হাসপাতালে।

 লরেন্সের মোটরবাইকের শখ ছিল আকাশ ছোঁয়া। ব্রাফ সুপেরিয়র কোম্পানির ৭টি উন্নতএবং তখনকার সাপেক্ষে অত্যাধুনিক মোটরবাইক ছিল তার। এই মোটরবাইকই তার জীবন কেড়ে নেয়। ১৯৩৫ সালের ১৩ মে ইংল্যান্ডের নটিংহ্যামের ডোরসেট নামক গ্রামে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন লরেন্স। ছয়দিন হাসপাতালে থাকার পর ১৯ মে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল মাত্র ৪৬ বছর। ডোরসেটের মোরিটন চার্চে সমাহিত করা হয় তাকে। তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উইনস্টন চার্চিলও, যার সঙ্গে লরেন্স বেশ কিছুকাল একই অফিসে কাজ করতেন।
জীবিতাবস্থায় যিনি মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন, মৃত্যুর পরও তার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়েছে! তার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত হয়ে নিউরোসার্জন হিউ ক্রেইনস মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কারণগুলো নিয়ে গবেষণা করেন এবং ক্র্যাশ হেলমেট তৈরি করেন, যা শত শত বাইকারের জীবন রক্ষা করছে। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

The national flag Cambodia

world map

Schengen Visa Types & Validity- Visa Fees --Travel Insurance-statistics