বেকারত্বের অসহ্য যন্ত্রণায় তারা জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে।


দেশে বেকারত্ব সম্পর্কে বলা যায়, চাহিদা অনুসারে দেশে হু হু করে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। এর চেয়ে অনেক বেশি হারে বাড়ছে অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা। কিন্তু সম্পদের সীমাবদ্ধতা, অবকাঠামো সমস্যা, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট আর উদ্যোক্তাদের আস্থাহীনতায় বাড়ছে না বিনিয়োগ। সৃষ্টি হচ্ছে না আশাতীত হারে নতুন কর্মক্ষেত্র। ফলে কর্মসংস্থান হচ্ছে না প্রয়োজন অনুসারে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, বিশ্বে বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় ১২তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশে গত এক দশকে বেকারত্ব বেড়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ।

যুব মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে দেশে বর্তমানে ১৮ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত যুব পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি। আগামী বছর এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় পাঁচ কোটিতে। ইউএনডিপি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে এদের মধ্যে বেকারের সংখ্যা সাড়ে তিন কোটি। তার মধ্যে শিক্ষিত বেকার হচ্ছে ২ কোটি ২০ লাখ। অন্যদিকে দেশে পরিবারের সংখ্যা সোয়া পাঁচ কোটি। প্রত্যেক পরিবার থেকে একজনকে চাকরি দিতে হলে সোয়া পাঁচ কোটি লোককে চাকরি দিতে হয়, যেটা বাংলাদেশের বাস্তবতায় খুবই কঠিন।

দেশে এমনিতেই ৪ কোটি ৬৬ লাখ মানুষ বেকার, তার ওপর এ সমস্যা আরও প্রকট হবে বলে জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। কাজেই সরকারের শীর্ষমহল ও শ্রম-শিল্প-কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি নিয়ে যে আরও গভীরভাবে ভাবতে হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশে বর্তমানে বিনিয়োগ পরিস্থিতি মন্দা হওয়ার কারণে নতুন শিল্প-কারখানা তৈরি হচ্ছে না। আর বেসরকারি উদ্যোগে শিল্প-কারখানা গড়ে না উঠলে কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান তৈরি হবে না এবং বেকারের বোঝা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। কারণ মোট কর্মসংস্থানের ৮০ শতাংশেরই জোগানদাতা বেসরকারি খাত হলেও বিনিয়োগ না থাকায় এ খাতে বর্তমানে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না বললেই চলে।

তাই শীর্ষস্থানীয় ৮০ জন ব্যবসায়ীর মতামতের ওপর ভিত্তি করে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনের এ সংক্রান্ত তথ্যকে হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে বেকারত্ব হ্রাস ও কাক্সিক্ষত কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে এখনই পদক্ষেপ নেয়া দরকার। জানা যায়, বর্তমানে দেশে কর্মক্ষম ৪ কোটি ৬৬ লাখের বেশি মানুষ বেকার হলেও সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিসংখ্যান ব্যুরো বিশ্ব শ্রম সংস্থার (আইএলও) একটি সংজ্ঞা ব্যবহার করে মাত্র ২৬ লাখ বেকার দেখিয়েছে। অথচ ওই সংজ্ঞা অনুযায়ীই দেশে সাড়ে ৪ কোটি মানুষ কর্মে যুক্ত নয়। কর্মক্ষম হয়েও যারা কর্মে যুক্ত নয়, তাদের বেকার না দেখানো কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না।

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেকারত্ব একটি চলমান সমস্যা। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। এখানে শিক্ষিত বেকারের হারই সবচেয়ে বেশি। এ অবস্থায় বেকারত্ব কমিয়ে আনতে হলে সুষ্ঠু বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি শিল্প-কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে সব সেবা এক ছাদের নিচে পাওয়ার যে দাবি ব্যবসায়ীদের, তা এখনও পূরণ হয়নি। দ্রুত এটি পূরণের উদ্যোগ নিতে হবে। দূর করতে হবে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো সংকট। শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান দীর্ঘসূত্রতা-জটিলতা দূর করতে হবে। স্বল্প সুদে দ্রুত ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি উদ্যোক্তারা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রেখে সরকারের অংশীদার হিসেবে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তারা যেন কোনো ধরনের হয়রানির মুখে না পড়েন, সেটাও নিশ্চিত করা দরকার।


মনে রাখতে হবে, বেকারত্ব কমানো দরকার দেশের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থেই। মানুষ বেকার থাকলে পরিসংখ্যানে সেটা কম দেখালে লাভের বদলে ক্ষতি হওয়ারই আশংকা থাকে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বশেষ দেড় বছরে ১৪ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, এমনকি তাদের হিসাবে মোট বেকারের ৩৫ শতাংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। অথচ তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর একটি চাকরির বিজ্ঞাপনের বিপরীতে যে হারে উচ্চশিক্ষিতরাও আবেদন করেন, তাতে এ দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সরকারের শীর্ষ মহলের উচিত এসব বিষয় খতিয়ে দেখা। কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়ার পেছনের কারণগুলো দূর করা সম্ভব হলে কম বেকারত্ব দেখানোর জন্য আইএলও’র সংজ্ঞার কাছে যেতে হবে না, সবাই খালি চোখেই পরিস্থিতি বিচার করতে পারবে। সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের উচিত দ্রুত বিষয়টি উপলব্ধি করা।


কোনো দেশের জনশক্তির তুলনায় কর্মসংস্থানের স্বল্পতার ফলে সৃষ্ট সমস্যাই বেকার সমস্যা। বর্তমান বাংলাদেশে এই সমস্যা জটিল ও প্রকট আকার ধারণ করেছে। যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। কর্মহীন এই বিশাল উদ্বৃত্ত জনশক্তি না পারছে দেশের অর্থনীতিতে কোনো অবদান রাখতে, না পারছে নিজের সুন্দর-সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নির্মাণ করতে। বেকারত্বের অসহ্য যন্ত্রণায় তারা জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। ফলে রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্র দেখা দিচ্ছে বিশৃংখলা। ক্রমবর্ধমান এই সমস্যা সমাধানে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে অর্থনৈতিক অবকাঠামো যেকোনো সময় ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়বে।

Image result for বেকার সমস্যা

বেকার সমস্যা কী: 

বেকারত্ব বলতে মূলত বোঝায় কর্মক্ষম শ্রমশক্তির পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব। আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, "Unemployment (or joblessness) occurs when people are without work and actively seeking work." The Bureau of Labour Statistics (BLS) বেকারত্বের সংজ্ঞায় বলেছে- ‘বেকারত্ব হচ্ছে এমন কিছু মানুষের কর্মহীন অবস্থা; যাদের কোনো কর্ম নেই, গত চার সপ্তাহ যাবত সক্রিয়ভাবে কাজের সন্ধান করছে এবং তারা কাজের জন্য প্রস্তুত।’ বাংলাদেশের শ্রমশক্তি সম্পর্কিত জরিপে (এলএফএস) বেকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে এমন ব্যক্তিকে যার বয়স ১০ বছর কিংবা তার বেশি; কাজের জন্য প্রস্তুত থেকে সক্রিয়ভাবে কাজের অনুসন্ধান করেও যে কাজের সুযোগ পায়নি বা কাজ করতে পারেনি।


বেকারত্বের ধরণ ও প্রকারভেদ: 

দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, সামাজিক অবকাঠামো, বেকারত্বের সংজ্ঞা, কারণ ও বৈশিষ্ট্যের বিচারে বেকারত্ব বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত দুর্বলতার ফলে সৃষ্টি হয় অবকাঠামোগত বেকারত্ব। হঠাৎ কোনো মিল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংবা স্থানান্তরের ফলে আকস্মিক বেকারত্বের সৃষ্টি হয়। কারিগরি বা প্রযুক্তিগত অপর্যাপ্ততার দরুণ বেকার সমস্যা তৈরি হয়। তৈরি পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য মৌসুমি ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেখা দেয় মৌসুমি বেকারত্ব। আবার কাজের ধরণের সঙ্গে শ্রমশক্তির দক্ষতার অসঙ্গতির ফলে সৃষ্টি হয় এক ধরণের বেকারত্ব। তবে বাংলাদেশে কাঠামোগত বেকারত্বের হারই বেশি।



বেকার সমস্যা ও বাংলাদেশ:

 বর্তমান বাংলাদেশে বেকার সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, কমনওয়েলথসহ একাধিক সংস্থার সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী গত এক দশকে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার বেড়েছে ১.৬ শতাংশ, যেখানে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির হার ২ শতাংশ। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ২০১৫ সালে মোট বেকারের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬ কোটিতে। আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার (আইএলও) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ বেকার। এই বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষিত বেকারের হারই বেশি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সূত্র মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি।

বেকারত্বের কারণ:  বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট: 


বাংলাদেশে বেকার সমস্যা সৃষ্টির পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানাবিধ কারণ রয়েছে। কিছু কারণ নিচে তুলে ধরা হলো-ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাব: ২০০ বছর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক এবং ২৪ বছর পাকিস্তানি শাসনের সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন চরমভাবে অবহেলিত হয়েছে। উপরন্তু তারা শোষণ করে নিয়ে গেছে এদেশের মূল্যবান সম্পদ। ফলে ক্রমেই ভেঙে পড়েছে অর্থনৈতিক অবকাঠামো আর বেড়েছে বেকারত্বের চাপ।


শিল্পবিপ্লবের প্রভাব:

 শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে অধিক উৎপাদনমুখী যন্ত্রের আবিষ্কার হয়েছে। ফলে আধুনিক কৃষিব্যবস্থা জনশক্তির পরিবর্তে কৃষিযন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। শ্রমিকের প্রয়োজন যন্ত্রে পূরণ করায় সৃষ্টি হচ্ছে বেকার সমস্যা।

মুক্তিযুদ্ধোত্তর চাপ:

 ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো চরমভাবে ভেঙে পড়ে। যুদ্ধোত্তর স্বাধীন দেশে শিল্পায়নে গতিহীনতা, সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে অদক্ষতার দরুন বিশাল একটি জনগোষ্ঠী বেকার হয়ে পড়ে। যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বাংলাদেশকে এখনও তাড়িয়ে ফিরছে।

অধিক জনসংখ্যা: 

বাংলাদেশে বেকার সমস্যার বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জনসংখ্যার সীমাহীন চাপই মূলত এর জন্য প্রধানত দায়ী। যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, সেই অনুপাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে না।

শিক্ষা ব্যবস্থায় অসঙ্গতি:

 বাংলাদেশের শিক্ষার হার কম। তদুপরি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এতে নেই বৃত্তিমূলক, কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ। বছর বছর সনদধারী শিক্ষিত জনশক্তি তৈরি হলেও তৈরি হচ্ছে না যোগ্য ও দক্ষ জনশক্তি।

অপরিকল্পিত উৎপাদন ব্যবস্থা:

 কৃষকের অসচেতনতা ও অপরিকল্পিত ভূমি ব্যবহার বেকার সমস্যার অন্যতম কারণ। জমির উর্বরতা হ্রাস, কোনো কোনো ক্ষেত্রে জমি উৎপাদন শক্তিহীন হয়ে যাওয়ায় নষ্ট হয় কাজের সুযোগ।

রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোগত দুর্বলতা: 

সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উদ্যোগহীনতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি, সীমাহীন দুর্নীতি প্রভৃতি কারণে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যার ফলে বাড়ছে বেকারত্বের চাপ।

কায়িক শ্রমে অনীহা:

কায়িক শ্রমের প্রতি অনীহা বেকার সমস্যার একটি অন্যতম প্রধান কারণ। অভাব অনটন সত্ত্বেও এদেশের মানুষ কায়িক পরিশ্রম করতে আগ্রহী নয়। প্রাতিষ্ঠানিক চাকরি না পেয়ে বেকার হয়ে বসে থাকে, কিন্তু নিজেই আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ভাগ্যোন্নয়নে উদ্যোগী হয় না।

বেকারত্বের নেতিবাচক প্রভাব:

 বেকারত্ব একটি অভিশাপ। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সর্বত্র এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বেকারত্বের ভয়াল থাবায় দুর্বল হয়ে পড়ে রাষ্ট্রকাঠামো। বেকারত্বের কারণে কোনো কাজ না পেয়ে মানুষ নানা অবৈধ ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। সমাজে খুন-গুম, রাহাজানি, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। স্থবির হয়ে যায় অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা। দেখা দেয় শাসনতান্ত্রিক বিশৃংখলা। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে প্রভাবশালী দেশগুলো। ফলে দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।


বেকারত্ব দূরীকরণের উপায়: 

বাংলাদেশের বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে হবে। যথা-

  • - যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। অধিক জনসংখ্যাকে দেশের বোঝা নয়, সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
  • - বৃত্তিমূলক, কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি করতে হবে। নারী শিক্ষার সম্প্রসারণে যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
  • - ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
  • - কোনো কাজকেই তুচ্ছ না ভেবে কায়িক পরিশ্রমের মর্যাদা দিতে হবে।
  • - পরিকল্পিত শিল্পকারখানা গড়ে তুলে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
  • - আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ শ্রমশক্তি গড়তে তুলতে হবে।
  • - ভাষাগত দুর্বলতা দেশি-বিদেশি শ্রমবাজারে কর্মসংস্থ্না প্রাপ্তিতে একটি বড় সমস্যা। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রমিকদের ভাষাগত দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে হবে।
  • - কর্মক্ষম শ্রমিকদের বিদেশে কাজের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • - শিক্ষিত যুবসমাজকে গ্রামমুখী করতে হবে।
  • - তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেটে আউটসোর্সিং হতে পারে বেকারত্ব হ্রাসের আরেকটি উপায় আমাদের তরুণ সমাজের বেশিরভাগেরই স্বপ্ন থাকে বিদেশে গিয়ে সুন্দর  সফল এক জীবন গড়ে তোলার এজন্য জমিজমা বিক্রি করতেও অনেকে পিছপা হয় না আর কিছু সুযোগসন্ধানী আছে যারা তারুণ্যের এই স্বপ্নকে পূঁজি করে গড়ে তুলেছে টাকা কামানোর বড় বড় প্রতিষ্ঠানএদের কেউ বা বিদেশের শ্রমবাজারে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা করছেআর কেউ ছাত্র হিসাবে বিদেশে পাঠানোর মুলো ঝুলিয়ে ভাল কামাই করে নিচ্ছে ছাত্রদের কাছ থেকেএদের খপ্পরে পরে বিদেশে যাওয়ার আগেই অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ছে

অনেকের স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে বিদেশে যাওয়ার পরেমাঝে মধ্যেই সংবাদপত্রে খবর পাই যে দালালের খপ্পরে পড়ে মধ্যপ্রাচ্য বা মালয়েশিয়ায় গিয়ে অবৈধভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে অনেক বাংলাদেশীবিদেশে ছাত্র পাঠানোর এজন্টগুলোর বেশিরভাগও এমন এমন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পাঠায় যেগুলো তৈরিই হয়েছে এসব ব্যবসা করার জন্যএসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগেরই কোন বৈধ অনুমোদন নেই এবং এদের দেয়া ডিগ্রীও অচল টাকার মতোই অকেজোবেশিরভাগ তরুণই এসব সুযোগসন্ধানীর পাল্লায় গিয়ে পড়ছে মূলতঃ বাস্তব চিত্র সম্পর্কে ধারণা না থাকায়,তাদের এই অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিদেশের জীবনকে যেভাবে মনে চায় নিজের মতো করে আরও স্বপ্নীল  আকর্ষনীয় করে তাদের সামনে তুলে ধরছে এইসব দালালেরা তাদের কথা শুনলে মনে হবে কোথাও কোন সমস্যা নেই একবার কোনমতে বিদেশে গিয়ে পৌছাতে পারলেই সব মুশকিল আসান বিদেশের জীবনের তুলনায় দালালকে দেয়া টাকা তখন বেশ কমই মনে হয়

 অতএব যা হাতে আছে, এবং যা নেই তা ম্যানেজ করে হলেও দালালের হাতে খুশিমনে তুলে দেই বিদেশে যাবার জন্য অথচ বিদেশে চাকরী বা পড়ালেখার ভাল দিকগুলোর পাশাপাশি সমস্যাগুলো সম্পর্কেও যদি আগে থেকে ধারণা থাকতো, এবং ঠিক কি কি বিষয়ে প্রশ্ন করে বিস্তারিত তথ্য নিতে   হবে তা জানা থাকতো, তখন ভুয়া দালালেরা আর সহজে ফাঁদে ফেলতে পারতো না এদের।

পসংহার:
 বেকারত্বের ভয়াবহ অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে সমগ্র জাতিকেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলীয়করণের মনোবৃত্তি পরিহার করে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মে নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর গুণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে বেকারত্ব থেকে উত্তরণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ দুর্ঘটনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।

বাংলাদেশের সকল রাজবাড়ী ও জমিদার বাড়ীগুলির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্হা কি (ভিডও সহ )