দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ যা কোরীয় উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশটি নিয়ে গঠিত।


দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ যা কোরীয় উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশটি নিয়ে গঠিত। এর সরকারি নাম কোরীয় প্রজাতন্ত্র । দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তরে উত্তর কোরিয়া, পূর্বে জাপান সাগর, দক্ষিণে ও দক্ষিণ-পূর্বে কোরিয়া প্রণালী, যা জাপান থেকে দেশটিকে পৃথক করেছে, এবং পশ্চিমে পীত সাগর। সওউল হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে কোরীয় উপদ্বীপের উত্তর অংশটি সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনারা এবং দক্ষিণ অংশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা দখলে রেখেছিল। ১৯৪৮ সালে এ থেকে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া রাষ্ট্রদ্বয়ের আবির্ভাব হয়। ১৯৫০-১৯৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধের পরে ধ্বংসপ্রায় দক্ষিণ কোরিয়া ১৯৯০ সালে এসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতিগুলির একটিতে পরিণত হয় এবং সেই সঙ্গে এশিয়ান চার ড্রাগনয়ে পরিণত হয়।

শহর

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী শহর সউল। ইনছন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘেঁষেই এই অত্যাধুনিক শহর মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও পর্যটন শহর হিসেবে নাম কুড়িয়েছে বুসান, ইয়োসু, জেজু দ্বীপ, দেজনের মতো শহরগুলো। বুসানে প্রতি বছর বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করা হয়। যা সমগ্র বিশ্বের খ্যাতি কুড়িয়েছে।

পর্যটন

বৈশিষ্ট্য

ভূগোল]

দক্ষিণ কোরিয়া পূর্ব এশিয়ার কোরীয় উপদ্বীপের দক্ষিণ অর্ধাংশ নিয়ে গঠিত। এর উত্তরে উত্তর কোরিয়া, পশ্চিমে পীত সাগর, পূর্বে জাপান সাগর এবং দক্ষিণে পূর্ব চীন সাগর। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ৩০% এলাকা নিম্নভূমি এবং বাকী অংশ উচ্চভূমি বা পর্বতমালা। নিম্নভূমির অধিকাংশই সমুদ্র উপকূলে, বিশেষত পশ্চিম উপকূলে প্রধান প্রধান নদীর অববাহিকাতে অবস্থিত। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণগুলি হল সৌল শহরের চারপাশের হান নদী অববাহিকা, সৌলের দক্ষিণে বিয়েওংতায়েক উপকূলীয় সমভূমি, গেউম নদীর অববাহিকা, নাকদং নদীর অববাহিকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের ইয়েওংসান এবং হোনাম সমভূমিগুলি। দক্ষিণ কোরিয়ার পূর্ব উপকূল ধরে একটি সরু সমভূমি বিস্তৃত।

ইতিহাস

অবিভক্ত কোরিয়া মূলত জাপানিদের দখলে ছিল। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেরে যাবার সময় জাপানিরা সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তার ফলে অবিভক্ত কোরিয়া ২ ভাগে ভাগ হয়ে যায়| তখন উত্তর কোরিয়া ১৯৫০ সালে সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের মতাদশে সমাজতান্রিক ব্লকে চলে যায়, অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া পুঁজিবাদি আমেরিকার মতাদশে এর পুঁজিবাদি ব্লকে যোগ দান করে। তখন থেকে কোরিয়া ২টি ভিন্ন নাম যথা উত্তর ও দক্ষিণ তথা ২টি ভিন্ন অথনৈতিক ব্যবস্থাতে চলতে শুরু করে। দক্ষিণ কোরিয়াতে আমেরিকার পুঁজিবাদ আর উত্তর কোরিয়াতে সোভিয়েত ইউনিউনের মত সমাজতন্ত্রবাদ চালু হয়। এটিই ১৯৪৮ সালে পথ দেখিয়েছে অবিভক্ত কোরিয়াকে বিভক্তিকরণ। উত্তর কোরিয়ার সরকারি নাম রাখা হয় গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া আর দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি নাম রাখা হয় প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া। উত্তর কোরিয়া এর রাজধানীর হয় পিয়ং ইয়াং আর দক্ষিণ কোরিয়া এর রাজধানীর হয় সিওল।

ভাষা

কোরীয় ভাষা দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি ভাষা। এখানকার প্রায় সব লোক কোরীয় ভাষাতে কথা বলেন। আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়।

যোগাযোগব্যবস্থা

দেশের অভ্যন্তরে যেকোন শহরে স্থলপথে যোগাযগের জন্য বাস ও ট্রেন উভয়ই জনপ্রিয়। দেশের গুরুত্বপূর্ন মেট্রো শহরের সাথে অত্যাধুনিক দ্রুতগতি সম্পন্ন ট্রেন লাইন রয়েছে। এই লাইনের টিকেটের দাম স্বাভাবিকভাবেই তুলনামূলকভাবে দামী। সাধারণ গতির ট্রেনের লাইন বিস্তৃত এবং ছোট বড় প্রায় সব শহরগামী। ট্রেনের মত, বাসেরও রয়েছে রকমফের। রাজধানীর সাথে অন্যান্য শহরের যাতায়াতের ক্ষেত্রে সাধারণ, ইকোনমি এবং প্রিমিয়াম তিন ধরনের বাস সার্ভিস উপলব্ধ। এক্ষেত্রে সেবার ভিন্নতা যাতায়াত সময়ের ক্ষেত্রে খুব একটি ভিন্নতা আনে না।
বড় শহরের ভিতরে যাতায়াতের জন্য সাবওয়ে সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয় সেবা। শহর জুড়ে বাস সেবা থাকলেও সাবওয়ে অপেক্ষাকৃত দ্রুততর এবং বিস্তৃত। অপেক্ষাকৃত ছোট শহরে বাস সেবা অধিক প্রচলিত।
ইলেক্ট্রিক কার্ড বা টি-মানির মাধ্যমে বাস এবং সাবওয়ে উভয়তেই ভাড়া পরিশোধ করা যায়। বাসের ভাড়া নগদ ক্যাশে পরিশোধ করা সম্ভব হলেও সাবওয়ের টিকেট প্রতি স্টেশনে থাকা ভেন্ডিং মেশিন থেকে কিনতে হয়। টি-মানি বা ইলেক্ট্রিক কার্ডে ভাড়া পরিশোধে বিশেষ ছাড়ের সুবিধা আছে। মধ্যরাতে রাত্রীকালীন বাস ছাড়া সকল জনপরিবহন সেবা বন্ধ থাকে। এছাড়াও এই শহরে ট্যাক্সি সহজলভ্য। স্থানীয় জনগনের মধ্যে মোবাইল এপ "কাকাওট্যাক্সি" ব্যবহার করে ট্যাক্সি ভাড়া নেয়ার প্রবণতা বেশি। টাক্সি ভাড়া শুরু হয় ২৮০০ ওন (প্রায় ২.৫ ডলার) থেকে, যা মধ্যরাতে কিছুটা বৃদ্ধি পায়। ট্যাক্সি ভাড়াও টি-মানি বা নগদে পরিশোধ যোগ্য।
শহরের মধ্যে স্বল্প দূরত্বের যাতায়াতের জন্য বাইসাইকেল ভাড়া করা যায়। গুরুত্বপূর্ন বাসস্টপের পাশেই থাকা সারিবদ্ধ বাইসাইকেল থেকে ইলেক্ট্রিক কার্ড (যা আঞ্চলিকভাবে টি-মানি কার্ড নামে পরিচিত) দিয়ে বাইসাইকেল ভাড়া করা যায়। সড়কের পাশে ফুটপাথ সংলগ্ন বাইসাইকেল চলার জন্য আলাদা রাস্তা নকশা করা আছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ দুর্ঘটনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।

বাংলাদেশের সকল রাজবাড়ী ও জমিদার বাড়ীগুলির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্হা কি (ভিডও সহ )