আদম এলেন এ ধরাতে আলোর রথে

আদম এলেন এ ধরাতে আলোর রথে
আদম ও হাওয়া এই পৃথিবীর প্রথম সভ্য মানব মানবী। নৃবিজ্ঞানীরা বলেন লাখো বৎসরের বিবর্তনের ফলে এই ধারাতেই কোন এক শুভু লগ্নে চোখ মেলেছিলেন তারা। আসলেই কি তাই? এই পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের ধর্ম বিশ্বাস। স্রষ্টা আদম ও হাওয়াকে এই ধূলির ধরায় নয় বরং বেহেশত নামক দূরের কোন এক গ্রহে সৃষ্টি করেছেন। 

অতপর এই গ্রহে পাঠিয়েছেন এটাকে আবাদ করার জন্য, তার খেলাফত প্রতিষ্ঠা করে তারই গুণগান করার জন্য। কিন্তু কেমন করে তাদের পাঠালেন? কোথাও বলা হয় নাই। মানুষ অবগত হল, আদমকে অবতরণ করানো হয়েছে সিংহলের পর্বতমালার কোন এক স্থানে আর হাওয়াকে অবতরণ করানো হয়েছে জেদ্দার মরু প্রান্তরে। সুতরাং তারা আকাশ ফুরে কোন দ্রুতগতি সম্পন্নমানে এই ভূমিতে অবতরণ করেছেন। স্রস্টাই তার কোন অতি দ্রুতগতি সম্পন্ন বাহনে সম্ভবত: তাদের পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। বাহনগুলি আলোর হওয়াই স্বাভাবিক। কেননা তার সকল ফেরেশতা বা দূতগণ আলোর দ্বারাই সৃষ্ট এবং তিনি নিজেও আলোকময় এক মহাশক্তি। তাইত স্রষ্টা তার শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (স) কে বোরাক নামক বাহন দ্বারা মেরাজ ভ্রমণ করিয়েছিলেন। উহা ছিল আলোর তৈরী এবং খুবই দ্রুতগামি সম্পন্ন। মুহুর্তৈর মাঝে তিনি ঐ বাহন দ্বারা প্রথম আকাশ বা এই মহাবিশ্বের তারকাদের জাগত অতপর দ্বিতীয় আকাশ বা মহাশূন্যের দ্বিতীয় স্তর এইভাবে পর্যায়ক্রমে সপ্তম স্তর অতিক্রম করেছিলেন। অতপর রফরফ তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন এ বিশ্বের সীমান্তের প্রান্তসীমায়। সে বলেও ছিল আলোর তৈরী।
উল্লেখ্য যে বর্তমান কম্পিউটারের যুগেও প্রথম স্তর বা তারকাদের জগতের ব্যপ্তি হিসাব করা সম্ভব হয় নাই। শুধু তাই নয় বোরাক নামের ঐ যানটি আরো বহু স্থানে মুহাম্মাদ (স) এর বাহন ছিল। ঐগুলির সর্বমোট দূরত্ব আাদের কল্পনারও অনেক দূরে। অবশেষে বোরাক হযরত মুহাম্মদ (স) কে নিয়ে এই পৃথিবীতে ফিরে। আশ্চার্যের বিষয় যাত্রা শুরু ও সমাপনের মাঝে সময়ের ব্যবধান ছিল খুবই কম। অর্থাৎ বাহনটি এতই দ্রুদগতি সম্পন্ন ছিল যে আমাদের হিসাব মতে কোটি কোটি আলোক বর্ষের দূরত্ব মাত্র কয়েক মুহূর্তের মাঝে শেষ করতে সমর্থ হয়েছিল ঐ বোরাক।

চিত্র : আকাশ ভরা গ্রহ তারা
 শুধু মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদী ধর্মে বিশ্বাসী জনসাধাারণ আদম ও হাওয়ার কাহিনীতে বিশ্বাস করেন। হযরত মুহাম্মদ (স) এর মিরাজ ভ্রমণ ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের বিশ্বাস। ব্যবিলন, এসিরিয়া, মিশর, গ্রীস, চীন, বারত ইত্যাদি দেশের পৌরনিক কাহিনীতে তাদের দেবদেবীদের আকাশ পথে ভ্রমণের উল্লেখ আছে। তাদের কারো কারো পাখা ছিল। কেহ বা উড়ন্ত ঘোড়া, ছাগল, বাঘ, সিংহ, ড্রাগল অথবা ষাড়ের পিঠে চড়ে আকাশ ভ্রমণ করেছেন। তাদের কারো বাহন ছিল উড়ন্ত রথ বা নৌকা। গ্রীকরা বিশ্বাস করে তাদের দেবতা দেই দেলাস (উধবফধষঁং) ও তার পুত্র ইকারাস পাখির পালক মোমের আঠাদ্বারা লাগিয়ে আকাশে উড়েন। পিতা সিসিলি পর্যন্ত পৌঁছতে সমর্থ হন আর হতভাগ্য পুত্রের ঘটে সর্মান্তিক মৃত্যু। তিনি ডানা ঝাপটিয়ে সূর্যের নিকটে পৌঁছেন। সূর্যের তাপে মোম গলে যায় ফলে তিনি সমুদ্রে পতিত হন এবং সাগরের গভীর কাল কালের মাঝে হারিরেয় যান। খুনকু ছিলেন মিশরের একজন দেবতা। তিনি তার আপন পাখায় ভড় করে যথা ইচ্ছা তথা উড়ে বেড়াতেন। ভারতীয় হিন্দুদের অনেক দেবতা মেঘের আড়ালে থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করতেন। অস্ত্র নিক্ষেপ করতেন, রথে চড়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে উড়ে যেতেন। ভারতীয় হিন্দুদের শক্তিশালী দেবতা শিবের বাহন ছিল একটি গাভী। গরুর নামে দেবতা চড়ে তিনি স্বর্গ নামক অন্য এক গ্রহে গমন করতেন। আরবরা বিশ্বাস করে হিব্রু রাজা ও নবী হযরত সুলায়মান (আ) সিংহাসনে চড়ে তার রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতেন। পারশ্য রাজ কায়কডিসের ছিল উড়ন্ত সিংহাসন। জ্বীন ও শয়তানদের সম্বন্ধে বিশ্বের প্রায় সকল দেশের মানুষের বিশ্বাস যে তারাও আকাশচারী। আকাশ পথেই ওদের আনাগোনা।

আকাশ জয়ের গল্প অনেকেরই জানা। দুই রাইট ভাইয়ের হাত ধরে আধুনিক উড়োজাহাজের দেখা পেয়েছে পৃথিবীবাসী। তারপর প্রযুক্তির উৎকর্ষে বহু আধুনিকায়ন হয়েছে আকাশ যোগাযোগে। গতি, নিরাপত্তা ও নকশায় এসেছে পরিবর্তন। এ পথে হাঁটতে গিয়ে বহু চ্যালেঞ্জ এসেছে নকশাবিদদের সামনে। বিজ্ঞানী ও গবেষকদের যৌথ প্রচেষ্টায় সমস্যার সমাধান মিলেছে। এখন আকাশপথে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন বেড়েছে। উড়োজাহাজের বিবর্তনের দিকে তাকালে বিস্মিত হতে হয়। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নকে কীভাবে বাস্তবে নামিয়ে এনেছে মানুষ তাতে বিস্ময় জাগাটাই স্বাভাবিক। তবে এখানেই থামা নয়। ভবিষ্যতের বিমান নিয়ে বিজ্ঞানী দল নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। উড়োজাহাজের বিবর্তন ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে আজকের রকমারি—


৩০০ ফুট দীর্ঘ বিমান—
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান তৈরির চ্যালেঞ্জ নিয়ে যাত্রা শুরু করে হাইব্রিড এয়ার ভেহিক্যালস লিমিটেড (এইচএভি)। এয়ারবাস এ-৩৮০ কে পেছনে ফেলে যাত্রীবাহী বিমানের রাজত্ব নিজের করে নিতেই এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া। বিমানটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি তার জ্বালানি ট্যাংক একবার ফুল বা পরিপূর্ণ করার পরে একটানা তিন সপ্তাহ ধরে আকাশে উড়তে সক্ষম। আর ঠিক এই কারণে সবাই বেশ উৎসাহিত কারণ এখনো এমন অনেক বিমান আছে যেগুলোর শুধু ফুয়েল ট্যাংক লোড দেওয়ার জন্য যাত্রাবিরতি দিতে হতো। এ বিমানটি তৈরি করতে খরচ হবে প্রায় ৬০০ কোটি পাউন্ড। শুরুর দিকে পরিকল্পনা রয়েছে এটি মূলত মার্কিন সামরিক বাহিনী ব্যবহার করবে। উড়োজাহাজটি তুলনামূলক কম কার্বন নিঃসরণ করবে, একবার জ্বালানি নিয়েই কয়েক দিন উড়তে পারবে এবং সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, এটি বিমানবন্দর ছাড়াই যেখানে প্রয়োজন সেখানেই হেলিকপ্টারের মতো অবতরণ করতে পারবে। এটি আকাশে সেরা প্রযুক্তির উদাহরণ হতে পারে।

অ্যান্টোনভ নিজেই এক বিস্ময়—
ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানটির নাম অ্যান্টোনভ এএন-২২৫।
১৯৮৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অ্যান্টোনভ এএন-২২৫ বিমানটি যাত্রা শুরু করে। এ বিমানটির ডানার দৈর্ঘ্য ৮৮ মিটার বা ২৯০ ফুট। এ ছাড়া এর প্রস্থ ৮৪ মিটার বা ২৭৫ ফুট। বিমানটি ওড়ানোর জন্য কমপক্ষে ছয় ক্রু প্রয়োজন হয়। শুরুর দিকে বিমানটি নির্মিত হয়েছিল বুরান স্পেস শাটল ও তার রকেট বুস্টার পরিবহনের জন্য। পরবর্তীতে অ্যান্টোনভ এয়ারলাইন্স এটি বিশেষ মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহার করছে। অ্যান্টোনভ এএন-২২৫ বিমানটিতে রয়েছে ৩২টি চাকা। এ চাকাগুলো টেক অফের সময় সর্বোচ্চ ৬৪০ টন ওজন নিতে পারে। তবে বিমানটিতে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ওজন নেওয়া হয়েছে ১৯০ টন। যা একটি বিশ্বরেকর্ডও বটে। বিমানটি স্পেস শাটল পরিবহনের কাজেও ব্যবহৃত হয়েছে।

কাচের বিমান—
এবার প্রথম এমন একটি বিমান আকাশে উড়তে চলেছে যার কোনো জানালা নেই। সেখানে রয়েছে বিশাল বিশাল পর্দা। সহজ ভাষায় বললে, এই বিমানের জানালাগুলোর জায়গায় যাত্রীদের চোখে পড়বে টিভি পর্দায় ভেসে ওঠা প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি। আর তাতে যাত্রীদের মনে হবে বিমানের জানালা দিয়ে বাইরের নীল আকাশ, মেঘ দেখা যাচ্ছে। এখানে কিন্তু একটু ফাঁকি রয়েছে। এই মেঘ ও আকাশ বাস্তবের নয়। পুরোটাই জানালার পরিবর্তে বিমানের পর্দায় ফুটে ওঠা আগে থেকে রেকর্ড করা ভিডিও ও ছবি। বিমানটি কোন জায়গার উপর দিয়ে উড়ছে সেই তথ্যও ফুটে উঠবে ওই স্ক্রিনেই। যাত্রীরা চাইলে আঙুল দিয়ে স্পর্শ করতে পারবে সে পর্দা। তবে এই ফাঁকি সহজেই চোখে ধরা দেবে না। মনে হবে এটি কাচের বিমান।

কেমন হবে ভবিষ্যতের উড়োজাহাজ
১৯০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর। আমেরিকার বাসিন্দা তারা দুই ভাই। অরভিল রাইট ও উইলবার রাইট। বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়েছিলেন তারা দুজন। মানুষের সফলভাবে আকাশে উড়ার যাত্রা শুরু। এরপর বছরের পর বছর ধরে উড়োজাহাজের আধুনিকীকরণ চলেছে। আধুনিক উড়োজাহাজগুলো অনেক গতিশীল ও নিরাপদ। এখন গতি ছাড়াও জ্বালানি সাশ্রয় ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি নিয়ে বিজ্ঞানীরা বেশি কাজ করছেন। দ্রুত এবং নিরাপদ ভ্রমণের জন্য ভবিষ্যতের বিমান তৈরির কাজ করে থাকে নাসা। এ বিষয়টা মাথায় রেখেই নাসা ভবিষ্যতের জন্য দারুণ কিছু উড়োজাহাজ তৈরি করতে যাচ্ছে। এগুলো আকাশে ডানা মেলতে শুরু করবে ২০২৫ সালের দিকে। শব্দের চেয়ে দ্রুতগতির বিমানে চড়ার আগ্রহী যাত্রী আছেন অনেক। সেই চাহিদা মেটাতে নাসা এবার এমন বিমান তৈরি করতে চায় যেটা দ্রুতগতিতে যাওয়ার পাশাপাশি শব্দ করবে কনকর্ডের চেয়ে অনেক কম। বিমানটি দেখতে কেমন হবে, শিল্পীর চোখ দিয়ে তার একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছে নাসা। তবে আসল বিমানের নকশা কে করবে তা ঠিক করতে নির্মাতাদের কাছ থেকে নকশা চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে লকহিড মার্টিনকে বেছে নিয়েছে নাসা। কোয়াইট সুপারসনিক টেকনোলজি বা কিউএসএসটি বিমানের নকশা তৈরির জন্য আগামী ১৭ মাসে নাসার কাছ থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার পাবে লকহিড। নাসা আশা করছে, প্রয়োজনীয় অর্থ পেলে ২০২০ সালের মধ্যে এই বিমান পরীক্ষামূলকভাবে আকাশে উড়তে পারে।এই বিমানের নাম ‘সুপারসনিক গ্রিন মেশিন’। ওড়ার সময় যেন শব্দ (সনিক বুম) কম হয় সেই জন্য প্লেনের পেছনের পাখায় ‘উলটো ভি’এর মতো যে জিনিসটি দেখা যাচ্ছে সেখানে সুপার সনিক জেট ইঞ্জিন বসিয়েছে লকহিড। নাসার কমিটির সামনে ২০১০ সালে এই নকশা পেশ করেছিল লকহিড। সে সময় তারা জানিয়েছিলেন, ২০৩০-৩৫ সালের দিকে বিমানটি আকাশে উড়তে পারে। আগামী দিনের আকাশে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সাশ্রয়ী বিমানের রাজত্ব তৈরি করতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। সোলার চালিত বিমানের উন্নয়ন নিয়ে কাজ চলছে বছরের পর বছর ধরে। সেই ধারাবাহিকতায় সবচেয়ে বড় সাফল্যের দেখা মিলল। প্র্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিল সৌরচালিত বিমান। বিশ্বের প্রথম সৌরচালিত বিমান সোলার ইমপালস হাওয়াই থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় যাওয়ার অংশ হিসেবে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেয়। তিন দিনের ফ্লাইট শেষ করে বিমানটি ক্যালিফোর্নিয়ায় অবতরণ করে। জাপান থেকে একটি ফ্লাইট শুরুর পর বিমানের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায়। পরে আট মাস ধরে সংস্কার কাজের জন্য উড্ডয়ন বিরতির পর বিমানটি হাওয়াই থেকে উড্ডয়ন করে। ক্যালিফোর্নিয়ায় অবতরণের জন্য বিমানটি স্যান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেইট ব্রিজের উপর দিয়ে উড়ে যায়। বিশ্ব ভ্রমণের অংশ হিসেবে এটি বিমানটির নবম ফ্লাইট।

যেভাবে আকাশ জয়
আমেরিকান অরভিল রাইট এবং উইলবার রাইট। দুই ভাই। বহু আগে থেকে মানুষ আকাশ জয়ের কথা ভাবলেও রাইট ভ্রাতৃদ্বয়কে উড়োজাহাজের আবিষ্কারক হিসেবে গণ্য করা হয়। বাস্তবমুখী সাফল্য তাদের হাতেই ধরা দিয়েছে। উড়োজাহাজ তৈরির চিন্তাভাবনা শুরু হয় ১৮৯৬ সাল থেকে। একজন র্জামান ইঞ্জিনিয়ার অটো লিলিয়েনথাল কয়েক বছর ধরে উড়ন্ত যান নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। ১৮৯৬ সালে লিলিয়েনথালের আকস্মিক মৃত্যুর পর রাইট ভাইয়েরা লিলিয়েনথালের তৈরি উড়ন্ত যানের নকশা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এর ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করেন।  শুরুর দিকে শুধু ব্যর্থতাই মিলেছে তাদের। শেষ পর্যন্ত দুই ভাই দীর্ঘ এক বছরের সাধনায় তৈরি হলো এক বিশাল গ্লাইডার বা উড়ন্ত যান। এই গ্লাইডার বাতাসে ভারসাম্য রেখে সহজেই উড়তে সক্ষম হয়। গ্লাইডারের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে দুই ভাই তৈরি করলেন দুই পাখাবিশিষ্ট ছোট বিমান। এ বিমানের সামনে ও পেছনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটা ছোট যন্ত্র সংযোজন করা হলো। পরবর্তীতে তাদের উদ্ভাবিত বিমানের কলাকৌশলে কিছু পরিবর্তন করা প্রয়োজন হয়। কয়েক মাসের চেষ্টায় তৈরি হয় বিমানে ব্যবহারের উপযুক্ত ইঞ্জিন। ১৭ ডিসেম্বর, ১৯০৩ সালের এক শীতের সকালে উড়ল তাদের বিমান। প্রথম বিমান উড়ল বাতাসে।

দ্বিতল বিমান
এয়ারবাস এ-৩৮০। এটি একটি দ্বিতল বিমান। দোতলা বিমান এক সময় মানুষকে চমকে দেওয়া বিমানের প্রতিচ্ছবি ছিল। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করে।
২০০৪ সালের দিকে এটি মানুষের নজর কাড়তে সক্ষম হয় তার অতিকায় রূপ নিয়ে। যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের উদ্দেশে ব্যবহৃত এই বিমান আকাশে মানুষের রাজত্বের নতুন মাত্রা যোগ করে। ১০ বছরের ব্যবধানে আকাশে আরও বড়, দানবাকৃতির উড়োজাহাজ জায়গা করে নিলেও এই এয়ারবাসের গুরুত্ব একেবারেই ভিন্নমাত্রায় রয়েছে। ৩০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ করে তৈরি এই বিমানটিতে রয়েছে চারটি ইঞ্জিন। ইঞ্জিন তৈরির দিক দিয়েও এই এয়ারবাসটি অনন্য। যে সময় এটি আকাশে পাখা মেলবে বলে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল তখন এর ইঞ্জিন নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনার কথা বলা হয়। এই অতিকায় যাত্রীবাহী বিমানটির নির্মাতা ইউরোপীয় ইএডিএসের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এয়ারবাস। এটি বিশ্বের বৃহত্তম যাত্রীবাহী বিমান। আকাশে মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থায় সর্বাধুনিক সংযোজনের পাশাপাশি অল্প সময়ে, অধিক সংখ্যক যাত্রী পরিবহনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিমানটির নকশা প্রণয়ন করা হয়েছিল। বিমানটি বাস্তবে রূপ নিতে ব্যবসায়িকভাবেও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল অন্যতম জনপ্রিয় যাত্রীবাহী বিমান বোয়িংকে। বোয়িংয়ের ওপর আকাশে যাত্রীর আস্থা বাড়াতে বিমান দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা ও আরামের ব্যবস্থা আরও আধুনিকায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়।
এয়ারবাস এ-৩৮০ সেটাই করে দেখিয়েছে। এ-৩৮০ প্রথমবারের মতো আকাশে ওড়ে ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল এবং সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের মাধ্যমে ২০০৭ সালে প্রথম বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। এ-৩৮০ এর ওপরতলা বিমানের মূল কাঠামোর সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য বরাবর বিস্তৃত। প্রস্থেও একটি বড় বিমানের সমান। এর ফলে একটি এ-৩৮০-৮০০ বিমানের কেবিনের মেঝের আয়তন ৪৭৮ বর্গমিটার। একটি এ-৩৮০ বিমানে তিন শ্রেণির আসন ব্যবস্থায় ৫২৫ জনের বসার ব্যবস্থা করা যায়। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৯০০ কিলোমিটার।


পাখির ডানায় ওদের গুঞ্জন

মানুষের পূর্বেই নাকি পাখিদের এই পৃথিবীতে আগমন। মানব সদৃশ বানরেরা আদম ও হাওয়ার আগমনের পূর্বে এই ধরায় রাজত্ব করত। সম্ভবত: তখন থেকেই শুরু। ডানা মেলা পাখি দেখে সম্ভবত: ওরাও মহাকাশে ওদের কল্পনার ডানা মেলে দিত। একদনি ধরা প্রথম মানব মানবীর পদচারণায় মুখর হল। ক্রমে পৃথিবীর সকল স্থানে তাদের সন্তানেরা বসবাস শুরু করল। সব জায়গায়ই পাখি তাদের প্রতিবেশী। মানুষের মাথার উপর দিয়ে মহানন্দে উড়তে থাকে ওরা। মানুষ ও ভারত, যদি আমরা ওদের মত উড়তে পারতাম। গহীন আকাশের ঘন নীলে হারিয়ে যেতে পারতাম। শুরু হল প্রচেষ্টা। ভাবল বাহুতে পাখা লাগিয়ে হয়ত পাখির মত উড়া যাবে।
চিত্র :লিউনার্দো ভিঞ্চির উড়ন্ত যানের নকশা
নিবেদিত প্রাণ অনেকেই হাতে পায়ে পাখা লাগিয়ে পাহাড়ের চূড়া থেকে লাফিয়ে হাত পা নেড়ে পাখির মত উড়তে চাইল। বাতাসের সমুদ্রে ঝাপ দিল এইভাবে আরো সাহসী মানুষ। কিন্তু হায় মৃত্যুই শুধু তাদের সকল প্রচেষ্টাকে অমর করে রাখল। মানুষের পাখা নেড়ে উড়ে বেড়ানোর প্রচেষ্টা ব্যার্থ হল। সর্বশেষে ১৫১৯ সালে সে যুগের একজন উচ্চাভিলাসী বিজ্ঞানী এই প্রচেষ্টায় মারা যাওয়ার পর এইভাবে আকাশ ভ্রমণের পরীক্ষা নীরিক্ষা বাতিল হয়ে গেল। উল্লেখ্য যে তিনি এমন একটি পাখা বানিয়েছিলেন যা নিচের দিকে এবং পেছনের দিকে নাড়ানো যেত। কিন্তু তিনি ভুলে গিয়েছিলেন মানুষের হাত ও পায়ের মাংসপেশী পাখির মাংসপেশীর মত ক্রমাগত নাড়াচারা করার উপযোগী নমনীয় নয়। তার উল্লেখিত ভুল থাকা সত্বেও তিনিই উড্ডয়নের ইতিহাসে প্রথম বিজ্ঞানী। তোমরা এই মহান ব্যক্তির নাম জান কি?

তার নাম লিউনার্দো দ্যা ভিঞ্চি। তার মৃত্যুর প্রায় ২৭৮ বৎসর পর ১৯৯৭ সালে হঠাৎ করেই তার হারিয়ে যাওয়া ডাইরিটি আবি®কৃত হল। তাতে পাওয়া গেল তার কল্পিত বিভিন্ন উড়ন্ত যানের নকশা। কোনটি বর্তমান যুগের হেলিকপ্টারের ঘূর্ণায়মান রোটরের কথাই মনে করিয়ে দেয়। কোনটি গ্লাইভার, কোনটি বা প্যারাসূটে ফুলও মানুষের সাথে তুলনীয়। তার কল্পনা ঐ সময় অনেক বিজ্ঞানীর কল্পনা রাজ্যে ঝড় তুলেছিল। এমনকি প্রায় একশত বৎসর পর পর্যন্ত তা কল্পনার প্রভাব বজায় ছিল। জার্মানীর অটোলিলিয়ানথাল ও তারপর ভাই গোস্তাভ ঐ সময় পাখির মত পাখা মেলে। উড়তে চেষ্টা করেন এবং পরে প্লাইভারের সাহায্যে উড়তে সমর্থ হন।
চিত্র :লিউনার্দো ভিঞ্চির মৃত্যুর প্রায় ৩৭৫ বৎসর পর
অটোলিলিয়ানথাল গ্লাইডারের সাহায্যে আকাশে উড়ছেন।
অবশ্য লিলিয়ানের বহুপূর্বেই ১৬৭৮ সালে ফরাসী তালা নির্মাতা বেসনিয়ার বিশেষ ধরনের পাখার সাহায্যে উড়তে সমর্থ হয়েছেন বলে দাবী করেছেন। অবশ্য বর্তমান বিজ্ঞানীরা এর সত্যতায় সন্দিহান।
এইবার আমি তোমাদিগকে কয়েকজন ডিজাইনারের নাম বলব। ওদের নামও উড্ডয়নের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ১৬৭০ সালে ফ্রান্সিসকোডি লানা নৌকার মত একটি উড়োজাহাজের নকশা একেছিলেন। তিনি ছিলেন ইটালি দেশের একজন পাদরী। তার উড়োজাহাজের নকশায় নৌকার উপরে ছিল একটি পাল আর বায়ু শূন্য তাম্র নির্মিত চারটি পাতলা গোলক।

ফ্রান্সিসকো ডি লানার নৌকার মত একটি উড়োজাহাজের নকশা।
অবশ্য সেটি কখনো আকাশে পাল তুলে নাই। কেননা চারটি পাতলা বায়ূশুন্য তাম্র গোলক নৌকাটিকে কখনো আকাশে নিয়ে যেতে সমর্থ ছিল না। কেননা বায়ুশুন্যতার ফলে গোলকগুলি বাইরের বায়ুর চাপে ধ্বংস হতে বাধ্য হত। সুতরাং পালের ধারণাও অবাস্তব। লরেনবেগ ডি কোথাও চিনে একজন পূর্তগীজ ফিলসভার। ১৭০৯ সালে তিনি আকাশযানের একটি নকশা আঁকেন। সম্ভবত: বাস্তবে সেটা কখনো তৈরী হয় নাই বিধায় আকাশেও উড়ে নাই।

এইবার তোমরা ফ্রান্সের এনোনে শহরের দুই ভাইয়ের গল্প শোন। ওরা জোশেফ এবং এতিনে মুরগলফার। ১৭৮২ সালের কাহিনী। ওরা শুধু মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকেন, আর ভাবেন কি মজা হওত যদি না মেঘের উপর বেসে বেড়ানো যেত। কিন্তু এটা কেমন করে সম্ভব? মেঘত বায়ুর চেয়ে কিছুটা হালকা জলীয় বাষ্প ছাড়া আর কিছু নয়। এলোমেলো ভাবনা তাদের মগজে ঢেউ খেলত। ভাবতেন মেঘ যদি কোন একটি থলের ভেতর ডুকানো যায় তবে তা তাদের আকাশে নিয়ে যেতে পারবে। আসলে শেঘের কোন প্রয়োজন ছিলনা। অবশ্য বায়ু থেকে হালকা কোন পদার্থও তাদের জানা ছিলনা। এক শীতের রাতের ঘটনা। ওরা রান্নাঘড়ের চুল্লির পাশে বসে শীত তাড়াচ্ছেন। লক্ষ করছেন কিছু ছাই আগুনের ধোয়ার উপর ভাসছে। ভাবলেন আকাশে উড়ার সঠিক বস্তুটি পাওয়া গেছে। আর মেঘের প্রয়োজন নাই। তারা একটি ছোট্ট রেশমের থলে খুজে বের করলেন। কিছুক্ষণ আগুণের উপর ধরে রাখলেন। ধোয়ায় ওটা পূর্ণ হয়ে গেল। এক সময় ছেড়ে দিলে সেটা ক্রমে উপরে উঠল।


চলল তাদের সাধনা। প্রথমে ছোট থলে, অতঃপর বড় থলে দ্বারা চালালেন অনেকগুলি পরীক্ষা। তারা ৩৮ ফুট পরিধীর বড় একটি লিলেনের থলে বানিয়ে ফেললেন। একটি মাঠের মাঝে উড্ডয়ন পরীক্ষা করতে চাইলেন। ৫ই জুন ১৭৮৩ সাল। একটি খড়ের অগ্নি কু- প্রস্তুত করা হল। দুই ভাই, আরো অনেকে থলেটি আগুনের উপর খুলে ধরলেন। উত্তপ্ত ধোয়ায় থলেটি পূর্ণ হয়ে গেল। ক্রমে সেটা ৬০০০ ফুট উর্ধ্বে আরোহণ করল। অতঃপর বায়ুর গতিপথে ১০ মিনিট কাল ভ্রমণ করে দেড় মাইল দূরে ভূমিতে নেমে এল। এরূপে আবিষ্কৃত হল প্রাথমিক আকাশযান। হাজার বছর পূর্বে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা পাখির ডানায় শুনেছিলেন ভবিষ্যত আকাশযানের যে মৃদ্যু চিকন বেলুন ও গ্লাইডার আবিষ্কার মানুষকে নিয়ে গেল সে স্বপ্নের খুবই কাছে।
চিত্র: বেলুনের দৃশ্য। এর থলে সাধারণত রেশম অথবা লিনেন দ্বারা প্রস্তুত করা হত। থলেটি জালের ভিতর আটকানো থাকত। নিচে ঝুলানো হত যাত্রীবহনযোগ্য ঝুড়ি।
বেলুন থেকে এয়ারশীপ
শনৈ: শনৈ: বেলুন উন্নত হয়েছে। উত্তপ্ত বায়ুর বদলে ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের হালকা গ্যাস। বেলুনের আকাশে উড্ডয়নের কারণ কি জান? উত্তপ্ত বায়ু আবহাওয়া ম-লের সাধারণ বায়ু হতে হালকা। সুতরাং উত্তপ্ত বায়ুশূন্য বেলুন উপরে উঠতে সমর্থ হয় এবং ঠা-া না হওয়া পর্যন্ত শূন্যে অবস্থান করতে পারে। হালকা গ্যাস পূর্ণ বেলুনও বায়ু হতে হালকা বিধায় উর্ধ্বে আরোহণে সমর্থ।

উল্লেখিত নীতি মনে রেখে সে যুগের বিজ্ঞানীগণ ব্যবহার যোগ্য বেলুন আবিষ্কারে সচেষ্ট হলেন। প্যারিসের পিলাটর দ্য রোজিয়ার ও মার্কুয়িস দ্য আরল্যা-য় এক বিশাল আকৃতির বেলুন প্রস্তুত করলেন। ১৭৮৩ সালের নভেম্বর মাসের ২১ তারিখ। তাদের বেলুন বাতাস ভেদ করে আকাশে আরোহণ করতে থাকল। নিচে ঝুলন্ত জ্বলন্ত ধাতব চুল্লি। ওটা ২৫ মিনিট আকাশে ছিল। অতঃপর সারে পাঁচ মাইল দূরে সফলভাবে ভূমিতে অবতরণ করল।

বেলুনে সর্বপ্রথম হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করেন ফ্রান্সেরই বিজ্ঞানী প্রফেসর জে এ সি চার্লস। অবশ্য এই গ্যাস ১৭৬৬ সালে হেনরী ক্যাভেনডিস আবিষ্কার করেন। ১৭৮৩ সালের ১লা ডিসেম্বর চার্লসের রেশমী কাপড়ের বেলুনখানা আকাশে উড়ে। সেটা ছিল বরারে আবৃত। চার্লস নিজেই বেলুনটির একজন যাত্রী ছিলেন। বেলুনের অপর যাত্রী ছিলেন রবার ব্যবহারের উদ্ভাবক রবার্ট প্রনৃদ্বয়ের বড় জন। ঐ যাত্রায় তারা ৭৬ মাইল ভ্রমণ করে নিরাপদে অবতরণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।

১৭৮৫ সাল বেলুনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ঐ বৎসর ফ্রান্সের জ্য পিয়ারে ব্লানচার্ড ও আমেরিকা ড. জন জেফরীন যৌথ ভবে হাইড্রোজেন বেলুনে সর্বপ্রথম ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন। ঐ বৎসরই নতুন ধরনের বেলুনে ভ্রমণ প্রচেষ্টায় দুইজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী মৃত্যু বরণ করেন। ঐ দুইজনের নাম পিলাটর দ্য রোজিয়ার এবং তার উড্ডয়ন সঙ্গি পি. এ দ্য রোমেইন। তারা বৃহৎ হাইড্রোজেন বেলুনের নিচে ক্ষুদ্রতর চুল্লি ব্যবহার করেছিলেন। হাইড্রজেন দাহ্য পদাথ। ফলে উড্ডয়নের মাত্র ২০ মিনিট পর চুল্লি থেকে হাইড্রোজেন পূর্ণ বেলুনে আগুন লেগে গেল। বেলুনে বিস্ফোরণ ঘটল। ঐ সময় বেলুনটি ৩০০০ ফুট উর্ধ্বে বাাতাসে ভেসে উড়ে বেড়াচ্ছিল। তারা ছিলেন নতুন কোন কল্পনায় বিভোর। তাদের নিয়ে জ্বলন্ত বেলুন ৩০০০ ফুট নিচে ভূমিতে পতিত হল। তারা জীবন দিয়ে ইতিহাসে নাম রেখে গেলেন।

জ্য পিয়ারে ব্লানজার্ড এবং ড. কান জেফরীন এই বেলুনে ১৭৮৫ সালের জানুয়ারী মাসে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন। তাতে ছিল বিমানের মত রাডার এবং বায়ু কাটার জন্য কয়েকটি দাঁড়।

আমেরিকাতেও ব্লানচার্ড ১৭৯৩ সালে বেলুনের সাহায্যে আকাশে উড্ডয়ন করে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন। তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন। ফিলাডেলফিয়ায় ব্লানচার্ডের বেলুনে উড্ডয়ন দেখার জন্য তিনিও জনতার মাঝে উপস্থিত ছিলেন।

এরপর মানুষকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিশেষ বিশেষ কাঠামোর উপর বেলুনের কাপড় অথবা রবারের আবরণ দেয়া হল। আবি®কৃত হল ডিরিগেবল অথবা এয়ারশীপ।

হেনরী জিফার্ডের ডিরিগেবল।
হেনরী জিফার্ড ছিলেন ফ্রান্সের একজন প্রকৌশলী। তিনি উল্লেখিত ধরনের বিমানের প্রথম সফল স্রষ্টা। তিনি ১৮৫২ সালে ১৪৩ ফুট লম্বা গিসারের মত একটি ডিরিগেবল নির্মাণ করেন।
ক্রমে এয়ারশীপে হাইড্রোজেন গ্যাসের বদলে বয়লার গ্যাস ব্যবহার আরম্ভ হল। অতঃপর শক্তিশালী অন্তর্দহন ইঞ্জিন সংযোজন করা হল। ১৮৯৮ সালে ব্রাজিলের আলবার্তো সান্টোস ডুমন্ট একটি এয়ারশীপ নির্মাণ করেন। তিনি উহাতে সাড়ে তিন হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন সংযোজন করেন। তিনি সর্বমোট চৌদ্দটি বিভিন্ন ধরনের এয়ারশীপ নির্মাণ করেছিলেন। সেগুলির তিনি দক্ষ পরিচালকও ছিলেন। তরুণ ডুমন্টের ডামস্থান ব্লাজিল হলে কি হবে মুক্ত পাখির মত ্ড়ার জন্য তিনি ফ্রান্সের আকাশকে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি যেন ছিলেন প্যারিসের আকাশের মুক্ত বিহঙ্গ। ছাদ সমান উচ্চতায় প্যারিসের রাস্তার উপর দিয়ে উড়ে তিনি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। ১৯০১ সালে একবার তিনি তার এয়ারশীপ নিয়ে সেন্ট ক্লাউড থেকে আকাশে উড়লেন। উদ্দেশ্য আইফেল টাওয়ার পর্যন্ত পৌছে ফিরে আসা। তার এরয়ারশীপ নিরাপদে আইফেল টাওয়ার পর্যন্ত পৌঁছান। ওটার চারদিকে বৃত্তাকারে পাক খেয়ে নিরাপদে সেন্ট ক্লাউডে ফিরে গেল। তিনি দক্ষতার সাথে সেখানে অবতরণ করে বিশ্ববাসিকে তাক লাগিয়ে দেন।
আলবার্তো সান্টোস ডুমন্ট একটি এয়ারশীপে আইফেল টাওয়ার পরিভ্রমণ।
এয়ারশীপ নির্মাণে জার্মানরা বিশেষ দক্ষতার ছাপ রাখে। সেই দেশের কাউন্ট ফার্ডিনান্ড ভন কোপেলিন একিিট অনমনীয় কাঠামোর বেলুন নির্মাণ করেন। এলোমুনিয়ামের কাঠামোর এয়ারশীপটি ছিল ৪২০ ফুট লম্বা। কাঠামোর নিচে ঝুলন্ত ছিল যাত্রী ও চালক কেবিন। তার এয়ারশীপটির নাম তারই নাম অনুসারে দেওয়া হয় জেপেলিন। তিনি ছিলেন জার্মান সেনা বাহিনীর একজন অবসর প্রাপ্ত অফিসার। যানটির উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য তিনি সান্টোস ডুমন্টের পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন। এর জন্য তিনি এয়ারশীপটির বিশেষস্থানে একটি ওজন স্থাপন করেছিলেন। সেটির উপর নিচে উঠানো নামানো যেত। প্রয়োজনে সামনে নেওয়া যেত এবং পেছনে টানা যেত। উজনটি পেছনে টানলে এয়ারশীপটির সম্মুখভাগ উপরের দিকে উঠত। ফলে এটাও উড্ডয়ন করতে থাকত। উজনটিকে সামনের দিকে ঠেলে দিলে সম্মুখভাগের উজন বৃদ্ধি পেত ফলে সেটি নিচের দিকে যেত এবং আস্তে আস্তে অবতরণ করত।
জেপেলিন নামের অনেক এয়ারশীপ জার্মানরা নির্মাণ করেছিল। প্রথম মহাযুদ্ধে ঐগুলি ছিল পরাক্রমশালী আকাশযোদ্ধা। মহা বিক্রমে ল-ন শহরের উপর বোমা বর্ষণে পিছপা হয় নাই। জেপেলিন স্কোয়াড্রন। অবশ্য যুদ্ধের পর কোপেলিন পরিবহন বিমান হিসাবে মানব কল্যাণে আত্মনিয়োগ কর্ েসাগর পার হয়ে অনেক দেশে সেগুলি সেবার স্বাক্ষর রাখতে ব্রতি হয়। ১৯২৯ সালে ২০ নি ৪ ঘণ্টায় গ্রাফ জেপেলিন ২১,৭০০ মাইল অতিক্রম করতে সমর্থ হয়। উড্ডয়ন ছিল একটি বিশ্ব রেকর্ড।
তখন বৃটেন, ফ্রান্স, ইটালি এবং আমেরিকা তাদের নিজ নিজ প্রয়োজনে এয়ারশীপের অনেক উন্নতি করে। ক্রমে ঐগুলির দৈর্ঘ্য এবং গতি উভয়ই বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেসবের কোনটির দৈর্ঘ্য ছিল ৮০০ ফুট আর কোন কোনটি ঘণ্টায় ৮০ মাইল ভ্রমণ করতে সমর্থ ছিল। এক সময় এয়ারশীপের প্রলয় ঘণ্টা শোনা গেল। দুর্ঘটনা যেন তাদের নিত্য সাথী হয়ে দাড়াল। একটি দুঃখজনক ঘটনা এয়ারশীপ নির্মাণের উৎসাহ স্তিমিত করে ফেলল। ৬ই মে, ১৯৩৭ সাল। জার্মান কোপেলিন হিনডেনবার্গে বিষ্ফোরণ ঘটে। অগ্নি সেটিকে গ্রাস করে ফেলে। ঐ ঘটনায় ছয় ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করেন। এরপর আর উল্লেখযোগ্য এয়ারশীপ নির্মাণ করা হয় নাই।
অবশ্য ব্লিস্প দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেও প্রথম মহাযুদ্ধের মত অংশগ্রহণ করে। এই ধরনের ক্ষুদ্র নমনীয় এয়ারশীপগুলো যুদ্ধের সময় আকাশে টহল দিয়ে বেড়াত, সমুদ্রে সাবমেরিন খুজত। লম্বা তারে বাবা ব্লিস্পগুলি শত্রু বিমানের নিু উচ্চতায় বোমা বর্ষণ ও গুলি বর্ষণ হতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান রক্ষণ করত। ক্রমে জার্মান ও বৃটেনসহ সকলদেশ থেকে এয়ারশীপ বিদায় নেয়া।
এক পাশ থেকে দেখা রাইট ব্রাদ্রার্সের সর্বপ্রথম ইঞ্জিন চালিত বিমান। এটি ১৯০৩ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ১২ সেকেন্ডে ১২০ ফিট, ১১ সেকেন্ডে ১৯৫ ফিট, ১৫ সেকেন্ডে ২০০ ফিট এবং ৫৯ সেকেন্ডে ৮৫২ ফিট উড্ডয়ন করে।
যান্ত্রিক বিমানের ক্রমবিকাশ ও সর্বাধুনিক বিমান

বহুদিন পূর্ব থেকে মানুষ ধাতবযানে আকাশ ভ্রমণের প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছিল। ১৮০৪ সালে লন্ডন শহরের যুবক জর্জ কেলে একটি গ্লাইডার বানিয়ে ফেলেন। তার গ্লাইডারটির এক দিকের দ-ে ছিল একটি লেজ। ওটা যানটিকে উপরে, নিচে এবং ডানে, বায়ে নিয়ন্ত্রণ করে পারত। তার গ্লাইডারের একমাত্র যাত্রী ছিল ১০ বৎসরের একজন বালক। উড্ডয়নের চিন্তা ধারায় তিনি ছিলেন তার যুগের চেয়ে অনেকটা অগ্রগামী। তখনো ইঞ্জিন আবি®কৃত হয় নাই। কিন্তু তিনি পেট্রোল নির্মিত কোন ইঞ্জিন ব্যবহারের সম্বাবনা চিন্তা করতেন। তিনি আকাশযানের হরেক রকমের নকশা আকেন। ১৮৪৩ সালে অংকিত নকশাটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য এবং তার উন্নত চিন্তাধারার পরিচায়ক। ওটা ছিল একটি হেলিকপ্টার ও বিমানের মিলিতরূপ। তিনি সেটাতে হিম ইঞ্জিন ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।

জন স্ট্রিং ফেলোর এ্যারিয়াল ষ্টিম ক্যারেজের নকশা
রাইট ব্রাদার্সের বহুপূর্বেই কেলের মত অনেকেই আকাশ যান নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেন। ১৮৪২ সালে উইলিয়াম হ্যানসন এবং জন স্ট্রিং ফেলো এ্যারিয়াল ষ্টিম ক্যারেজের নকশা আকেন। কাঠামোর ডিজাইন করেছিলেন হ্যানসন এবং ষ্টিম ইঞ্জিনের কান ষ্ট্রিং ফেলো। তাদের পরিকল্পিত বিমানটির পাখার দৈর্ঘ্য ছিল ১৫০ ফ্রিট এবং ইঞ্জিনটি ২৫ থেকে ৩০ অশ্বশক্তিসম্পন্ন। পরে তারা ২০ ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট পাখাসম্পন্ন আরো একটি ছোট বিমানের নকশা করেন। বিভিন্ন কারণে বাস্তবে উভয় বিমানই আকাশে পাখা মেলতে ব্যর্থ হয়।
অবশ্য সেকালে তাদের ডিজাইন বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছিল তাদের এ্যারিয়াল ষ্টিম ক্যারেজের ছবি। তাদের পথে আরো অনেকে গবেষণা করেন। অংকন করেন উন্নত নকশা। ফ্রান্সের আলফনসো পেনডিড ১৮৭১ সালে বিমানের একটি মডেল আবিষ্কার করেন। তা চালনার জন্য রাবার ব্যান্নড ব্যবহার করা হয়। ১১ সেকেন্ডে সেটি ১৩১ ফিট উড্ডয়ন করেছিল। এ চার বৎসর পর ইংল্যান্ডের টমাস মুই আকাশ যানের একটি বিরাট মডেল তেরী করেন। ওটার নাম দেওয়া হয় এ্যারিয়াল ষ্টিমার। তাতে স্টিম ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছিল। অবশ্য সেটি ভূমি থেকে মাত্র কয়েক ইঞ্চি মডেলটিকে উঠাতে সমর্থ হয়েছিল। আসলে ভারী স্টিম ইঞ্জিনের সাথে হালকা অথবা অধিক উড়ানের রকান মডেলই আকাশে উঠানো সম্ভব ছিল না। ১৮৭৬ সালে অন্তরদহন ইঞ্জিন আবিষ্কৃত হয় এবং দ্রুত উন্নতি লাভ করতে থাকে। অবশ্য এই ধরনের ইঞ্জিন বিমানে সংযোজনের পূর্বে ষ্টিম ইঞ্জিন ব্যবহারের আরো প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল এবং আকাশযানের আরো উন্নত কাঠামোর ডিজাইন করা হয়েছিল।

উড্ডয়নের ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়ার লরেন্স হারগ্রের াবদানও খাট করে দেখলে চলবে না। তিনি এমন একটি বাক্স ঘুড়ি আবিষ্কার করলেন যাতে গ্লাইডার এবং উড়োজাহাজে ব্যবহারযোগ্য বিশেষ ধরনের পাখা সংযুক্ত করা সম্ভব। ইংল্যা-ের হুরাশিও ফিলিপস তার গবেষণা দ্বারা বিমানের পাখার উন্নতি করতে চেয়েছিলেন। তার বানানো একটি আকাশযানের উড্ডয়ন পরীক্ষা ১৮৯৩ সালে বংরা হয়েছিল। তাতে ছিল ভেিেনশয়ান ব্লাইডের মত ৫০টি পাখা। সেটাতে সংযুক্ত করা হয়েছিল ষ্টিম ইঞ্জিন। যানটির শুধু পেছনের চাকা ভূমি হতে উপরে অল্প উঠেছিল। স্যার হিরাম ম্যাক্সিম ১৮৯৪ সালে চারটন ওজনের এক আশ্চর্য আকাশযান তৈরী করেন। তিনি ছিলেন লন্ডনে বসবাসরত একজন আমেরিকান। তিনি সেনটকে রেললাইনের উপর থেকে উড্ডয়ন করাতে চেয়েছিলেন। নির্দিষ্ট দিন সেটি ১৮০ হর্স পাওয়ারের দু’টি স্টিশ ইঞ্জিনের সাহায্যে রেলপথের উপর দিয়ে ছুটে গেল। চাকা পথ থেকে সামান্য উপরে উঠল অতঃপর ভূমিতে লটিয়ে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হল। ১৮৯৭ সালে ফ্রান্স দেশের ক্লিমেন্ট আড়ের এভিয়ন থ্রী নামে একটি আকাশযান তৈরী করেছিলেন। তিনি দাবী করেছিলেন, ষ্টিম ইঞ্জিনচালিত এই যানটি আকাশে উড্ডয়ন করতে সমর্থ হয়েছিল।

ইতোপূর্বে আমি তোমাদিগকে অটোলিলিয়ানথালের আবিষ্কার সম্বন্ধে অল্প ধারণা দিয়েছিলাম। তিনি অনেক গ্লাইডার তৈরী করেছিলেন। দুই হাজার বারের অধিকবার তিনি সেগুলোর সাহায্যে উড্ডয়ন করেছিলেন। ১৮৯৬ সালে তিনি তার তৈরী একটি গ্লাইডারে আড়াই অশ্বশক্তিসম্পন্ন একটি মোটর সংযোজন করেন। সেটার জ্বালানী ছিল ঘনিভূত কার্বনিক এসিড গ্যাস। ৯ই আগস্ট তার যান্ত্রিক যানে তিনি সওয়াব হলেন। দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হলেন। তার শেষ উচ্চারণ ছিল অবশ্যই আত্মত্যাগ করতে হবে ১৯৯ সালে জার্মান অটোলিলিয়ানথালের একজন ইংরেজ ছাত্র পার্সি পিলচার একই উদ্দেশ্যে ইঞ্জিনচালীত গ্লাইডার চালাতে গিয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হন। তার অপর একজন ছাত্র ছিল অকটেভ চেনুট। তিনি একপাখা এবং দুই পাখাবিশিষ্ট বহু গ্লাইডার নির্মাণ করেন। ঐগুলিতে তিনি ও তার ছাত্র এ এম হেরিং প্রায় ৭০০ বার উড্ডয়ন করেন। এই উড্ডয়ন পাগল লোকটির জন্মস্থান ফ্রান্স। বাল্য বয়সে তিনি আমেরিকা গমন করেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। তিনিও যান্ত্রিক আকাশযানের স্বপ্ন দেখতেন।

ব্যর্থতা সফলতার ভিত্ত্ িইে প্রবাটির সর্বজন পরিচিত। আলোচিত কোন প্রচেষ্টা সফল হয় নাই সত্য, ঐগুলি ব্যার্থও হয় নাই। কেননা ব্যার্থ প্রচেষ্টার পথ ধরেই উইলবার রাইট এবং অরভিল রাইট নামে দুই ভাই ১৯০৩ সালের ১৭ই ডিসেম্বর সফলভাবে সর্ব প্রথম আকাশে উড্ডয়ন করতে সমর্থ্য হন। তারা আমেরিকার কিটিহক সমুদ্র উপকুলকে উড্ডয়নের জন্য উপযুক্ত স্থান হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। তারা তাদের দুই পাখা বিশিষ্ট চার সিলেন্ডারের পেট্রোল ইঞ্জিনে বিমানে সেদিন সফলভাবে চারবার আকাশে উড্ডয়ন করতে সমর্থ হন। প্রথমবারতারা ১২ সেকেন্ডে ১২০ ফিট উড্ডয়ন করেছিলেন। দ্বিতীয়বার উড্ডয়ন করতে সমর্থ হন ১১ সেকেন্ডে ১৯৫ ফিট। অতপর তৃতীয়বার উড়েন ১৫ সেকেন্ডে ২০০ ফিট এবং শেষবার উড্ডয়ন করেন ৫৯ সেকেন্ডে ৮৫২ ফিট। অনেক গবেষণার পর ১৯০৪ সালে তারা তাদের দ্বিতীয় বিমান নির্মাণ করেন। সে বিমান টেনের একটি গোচারণভূমির উপর ৬৮ একর পরিমাণ স্থান অতিক্রম করে। তারা ১৯০৫ সালে আরো উন্নত একটি বিমান নির্মাণ করেন। সেই ২৪.২ মাইল উড্ডয়ন করতে সমর্থ হয়েছিল। মজার ব্যাপার যে ঐ সময় তার আবিষ্কারকে অনেকেই অবিশ্বাস করে। এমনকি আমেরিকা সরকারও তাদের আবিষ্কারকে গুরুত্ব দেয় নাই। ঐ সময় রাইট ব্রাদার্স মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য একখানা বিমান নির্মাণ করে দেওয়ার ইচ্ছায় তিনবার আবেদন করেছিলেন। উল্লেখিত কারণে তাদের ইচ্ছা ব্যর্থ হয়।

চিত্র : প্রাথমিক দিনের কয়েকটি বিমান।
বিদ্যুত গতিতে ভ্রাতৃদ্বয়ের বিমান আবিষ্কারের খবর সমুদ্রের অপর দিকে ইউরোপে পৌঁছে যায়। ঐ মহাদেশের ফ্রান্স প্রথম বিমান নির্মাতা দেশ হিসাবে আত্ম প্রকাশ করে। ঐ দেশের দুই ভাই গাব্রাইল এবং চার্লস ভোশীন বিমানের প্রথম নির্মাতা। ১৯০৬ সালে আলবাটো মান্টোস ডুমন্ট ভোশেন ভ্রাতৃদ্বয়ের একটি বিমান পরিচালনা করেন। সে বিমান সম্মুখে না উড়ে পেছনের দিকে উড্ডয়ন করত। ১৯০৭ সালে তাদের তৈরী একটি বিমান লুইডিনা প্রেন্স নামে এক ব্যক্তি পরিচালনা করেছিলেন। এটি ছিল দুই পাখাবিশিষ্ট উড়োজাহাজ ফ্রান্সে বসবাসরত একজন ইংরেজ তাদের অপর একটি বিমানে উড্ডয়ন করেছিলেন একই সালে। ঐ বৎসরই লুই ব্লিয়য়েট নামে এক ব্যক্তির একটি একপাখা বিশিষ্ট বিমান নির্মাণ করেন।
বিমান উন্নত ইঞ্জিন ও কাঠামোর মিলনে আরো উন্নত হতে থাকে। সেই সময় লিউ লেভাভাশিয়ার নির্মিত এস্তোনিতি বিমান খুবই ফ্রাগযোগী ছিল। ১৩ই জানুয়ারী ১৯০৮ সাল।
ঐ দিন হেনরি ফারমেন একটি বিমান নিয়ে আকাশে উড়েন। চক্রাকারে একমাইল পরিভ্রমণ করেন। ঐ বৎসরই তিনি ‘এন্তোনিতি’ বিমানে ১৬ মাইল অতিক্রম করেন।
ইংল্যান্ডে স্যার এলিয়ট ভারভন রো ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর জন্য ‘এভ্রো’ নামে বিমান নির্মাণ করেন। প্রায় একই সময় আমেরিকার গ্লেন কারটিস বিমান চালনা করে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন।
ক্রমে মার্কিন সরকারও তার সেনাবাহিনীর জন্য রাইট ব্রাদার্সের বিমানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। তারা সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কোরের জন্য একটি বিমানের আদেশ দিতে সিদ্ধান্ত নেয়। অপর দিকে ইউরোপের ফ্রান্সে রাইট ব্রাদার্সের বিমান তৈরীর জন্য একটি কোম্পানী প্রতিষ্ঠিত হয়।
অরভীল তাদের বিমানের কার্যকারীতা সেনাবাহিনীর নিকট প্রমাণের জন্য একটি বিমান নিয়ে ওয়াশিংটনের নিকট ফোর্ট মেয়ারে গমণ করেন এবং উইলবার অপর একটি বিমান নিয়ে ফ্রান্সের লি ম্যানস এ গমন করেন। ফ্রান্সে উইলবারে বিমান ১৯০৮ সালের ৮ আগস্ট আকাশে ডানা মেলে। অবশেষে সফলভাবে আবতরণ করে। প্রমাণিত হয় তার বিমানটিই সে যুগের উত্তম বিমান।
অরভীল ফোর্ট মেয়ারে ৩রা সেপ্টেম্বর উড্ডয়ন করেন ও সফল ভাবে অবতরণ করেন। দর্শকেরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। তিনি একই মাসে আরো অনেকবার উড্ডয়ন করেন। ১৭ই সেপ্টেম্বর তিনি লেফটেন্যান্ট থমাস সেলফরীজ নামে সিগন্যাল কোরের একজন অফিসারকে নিয়ে আকাশে উড়েন। ২৫ ফুট উর্ধ্বে আরোহণের পর প্রপেলারের ত্রুটির কারণে বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হয়। থমাস সেলফরীজ মারা যান। তিনি বিমান দুর্ঘটনায় প্রথম শহীদ।
বলা যেতে পারে অনেক প্রাণের বিনিময়ে বিমান আবিষ্কৃত হয়েছে। আজকে আমরা যেসব সর্বাধুনিক বিমানের সাথে পরিচিত সেগুলি উল্লেখিত বিমানগুলিরই উন্নত সংস্করন। বিবর্তনের ধারায় অনেক গবেষণা এবং জীবন বিসর্জনের পর ওরা আজকের পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।
একালুন ফ্রটো কনকর্ড বর্তমাান কালের সর্বাধুনিক যাত্রীবাহী বিমান। এটা বৃটেনে ও ফ্রান্সের মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। এই বিমান ১৪৪ জন যাত্রী বহনে সমর্থ। এটা একটি সুপারসনিক ধরনের বিমান। শব্দের দ্বগুণ বেগে এই বিমান উড্ডয়নে সমর্থ। ভূমি থেকে ৬০,০০০ ফুট উচ্চতায় কনকর্ড উক্ত যেতে পারে। রুনা বিমানটি ইউ ১৪৪ যাত্রীবাহী উভয় বিমানই যখন আকাশে উড়ছে যাত্রীবহনের সুপারনিক ঝুকিপূর্ণ।

উড়োজাহাজের বিবর্তন
আধুনিক যুদ্ধ বিমানের জন্য আমেরিকার ফেনটস, ইংল্যা-ের হ্যারিয়ার, এনগলু ফ্যান্স জাগুয়ার, ফ্রান্সের মিরেজ, রাশিয়ার মিগ ২৯ ধরনের বিমান বিখ্যাত। আমেরিকার ডিজাইনকৃত সর্বাধুনিক বোমারু বিমান নর্থইপ বি-২।

বর্তমান বিমানযুদ্ধে যুদ্ধ বিমানের চেয়ে সামরিক পরিবহন বিমানের গুরুত্ব মাটেও কম নয়। যুদ্ধেও শান্তিতে সৈন্য পরিবহন, খাদ্য ও অস্ত্র সরবরাহ এই বিমান করে থাকে। যুদ্ধের ময়দানে প্যারাসুট থেকে সৈন্য অবতরণ এই বিমান থেকেই করানো হয়। বন্যা, ভূমিকম্প এবং অন্য যে কোন ধরনের দুর্যোগে প্যারাসূটের সাহায্যে উদ্ধারকারী দল অথবা খাদ্য নামানোর প্রয়োজন হলে এই বিমানের সাহায্য নেওয়া হয়। যে কোন ধরনের যাত্রাবাহী বিমান এমনকি জাম্বু জেটও এই কাজে ব্যবহার করা যায়। অবশ্য সামরিক বাহিনী এই কাজের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত পছন্দ মাফিক ধরনের বিমান ব্যবহার করে থাকে। এই ধরনের বিমানে যাত্রাবাহী বিমানের মত আরাম আয়েশের ব্যবস্থা থাকে না। তবে রসদ উঠানো নামানোর জন্য লেজের নিচে একটি বিশেষ দরজা (ব্যাক ডোর) থাকে। ভারী বস্তু উঠানোর জন্য থাকে বিশেষ ধরনের লিফটের ব্যবস্থা। আধুনিক সামরিক বাহিনীর জন্য আমেরিকারসি-১৩০ বিমান খুবই উপযোগী। জার্মান ডরনিয়ার এবং রাশিয়ার তৈরী এন্তোনভ বিমানগুলিও বিখ্যাত।

চিত্রঃ ডরনিয়ার পরিবহন বিমান।
বর্তমান যুগে হেলিকপ্টারের ব্যবহারও খুবই ব্যাপক। সামরিক বাহিনী এবং বেসমারিক সংস্থা বিভিন্ন প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে থাকে। সিকোরস্কি, চিনুক, বেল, পোমা, এলিউট এবং রাশিয়ার এম আই সিরিজের হেলিকপ্টারগুলি বিশ্ববিখ্যাত।

সিকরঙ্কি এস-৮০ এম-১ হেলিকপ্টার
বিভিন্ন ধরনের বিমান এবং ওদের উড্ডয়ন রহস্য
বিভিন্ন ধরনের বিমানের শব্দে বর্তমান বিশ্বের আকাশ মুখরিত। বেলুন আবিষ্কারের পর থেকে আকাশযানের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল আজো তা বজায় আছে। তোমরা এ পর্যন্ত যে সল বিমানের সাথে পরিচিত হয়েছে ওদের সকলই মাত্র দুই ধরনের বিমানের অন্তর্ভুক্ত। যেমন এ্যারোষ্ট্যান্ট বা বেগহীন বায়ুচালীত বিমান এবং এ্যারোডাইন বা বেগময় বায়ুচালীত বিমান।
এ্যারোষ্ট্যাট বায়ু থেকে হালকা বায়বীয় পদার্থ অথবা উত্তপ্ত বায়ু দ্বারা পরিচালিত বিমান। এই জাতীয় বিমানের জন্য প্রয়োজন ছিদ্রহীন রাবার অথবা লিলেনের থলে। হালকা গ্যাস দ্বারা পূর্ণ করে অথবা সাধারণ বায়ু ক্রমাগত উত্তপ্ত করার ব্যবস্থা করে আকাশে উড্ডয়ন করতে হয়। উল্লেখ্য যে উত্তপ্ত বায়ু সাধারণ বায়ু থেকে হালকা। এই জাতীয় বিমান ভূমি থেকে উড্ডয়ন করে এবং বায়ুতে ভাসতে থাকে কারণ বিমানটি বায়ুর সমপরিমাণ অথবা তা থেকে অধিক স্থান জুড়ে থাকে। তা ব্যতীত যানটির উজানও ঐ পরিমাণ বায়ুর সমান অথবা বায়ু থেকে কম। বেলুন এবং এয়ারশীপ এই জাতীয় বিমান।
বেলুন যুগে চালক ও যাত্রী পরিবহনের জন্য বেলুনের নিচে একটি ঝুড়ি ঝুলানো থাকত। বায়ুর গতিপথ ছিল বেলুনের গতিপথ। বায়ুর উল্টা দিকে বেলুন চলতে পারত না। পরে অবশ্য ইঞ্জিন, রাডার ইত্যাদি স্থাপন করে তা সকল দিকেই চলতে সমর্থ হয়েছিল। এয়ারশীপ আকৃতি পরিবর্তীত যান্ত্রিক বেলুন। আকাশে যে কোন দিকে এয়ারশীপ চালানো যেত। সে বাহনে পরিচালক ও যাত্রীদের জন্য উপযুক্ত কেবিন সংযুক্ত থাকত।
এ্যারোডাইন বায়ু থেকে ভারী জাতীয় বিমান। এর চারিদিকের গতিময় বায়ুর প্রতিক্রিয়া কাজে লাগিয়ে এটি আকাশে উড্ডয়ন করে, একস্থান থেকে অপর স্থানে উড়ে বেড়ায় এবং ভূমিতে অবতরণ করে। গ্লাইডার, মেইলপ্লেন, এ্যারোপ্লেন, সিপ্লেন, হেলিকপ্টার ইত্যাদি এই ধরনের বিমান।
উল্লেখিত সকল বিমান বায়ু থেকে ভারী হলেও সেসবের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। প্রত্যেকের ধরন এবং কর্মদক্ষতা ও ভিন্ন। নিুে আলাদাভাবে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।


গ্লাইডার এবং মেইলপ্লেন: এইগুলি ইঞ্জিন বিহীন বিমান। বিমানগুলির পাখঅ স্থির এবং হালকা। বহিরাকৃতি খুবই এ্যারোডাইনামিক অর্থাৎ বায়ু ভেদ করে যাওয়ার সময় খুব কম বাধার দৃষ্টি করে অগ্রসর হতে পারে। উভয় ধরনের বিমানেই চালকের জন্য ছোট্ট একটি ককপীট থাকে, যা থেকে চালক একটি মাত্র নিয়ন্ত্রণদত্ত এবং অল্প কয়েকটি ইনুষ্ট্রমেন্টের সাহায্যে বিমানগুলি পরিচালনা করে থাকেন। উভয়টিই বর্তমান কালে স্পোর্টস বিমান হিসাবে পরিচিত। কোথাও কোথাও খুবই প্রাথমিক উড্ডয়ন প্রশিক্ষণের জন্য এইগুলি ব্যবহৃত হয়। এক সময় এদেশে সামরিক ক্যাডেটগণকে গ্লাইডারে প্রাথমিক উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকত।
এ্যারোপ্লেন: স্থির পাখা বিশিষ্ট সকল বিমানই এ্যারোপ্লেন। পাখাগুলি ফিউডালেজের সাথে সংযুক্ত থাকে। ফিউজলেজ এ্যারোপ্লেনের প্রধান অংশ। কন্ট্রোল সারফেস, ইঞ্জিন, ল্যা-িং গিয়ার ইত্যাদি সকল কিছুই ফিউডলেজের সাথে সংযুক্ত থাকে। এতে আছে ককপীট রাফ্লাইট ডেক। এটি থেকেই চালক বিমানটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে তাতে স্থাপিত কণ্ট্রোল কলাম এবং অন্যান্য ইনুস্ট্রমেন্টের সাহায্যে। যাত্রী বিমানে ককপীটের পেছনে থাকে যাত্রী কেবিন। মাল বহনের জন্য থাকে নির্দিষ্ট স্থান।
আধুনিক বিমানে বিভিন্ন ধরনের শক্তিশালী ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। ফলে ঐগুলির উঠা নামার জন্য বড় রানওয়ের প্রয়োজন। পৃথিবীর সকল স্থানে বড় রানওয়ে পাওয়া সমস্যার ব্যাপার। ফলে নির্মাতাগণ খাড়াভাবে উড্ডয়ন এবং অবতরণক্ষম বিমান নির্মাণের প্রতি ঝুকে পড়েন। তাদের গবেষণার ফসল ভিটুওএল (ঠঞঙখ) বিমান। বা ভারটিক্যাল টেকঅফ এন্ড ল্যান্ডিং অর্থ খাড়াভাবে উড্ডয়ন এবং অবতরণ। নামেই বুঝা যায় এই ধরনের বিমান খাড়াভাবে উড্ডয়ন এবং অবতরণে সমর্থ। এইভাবে উড্ডয়ন এবং অবতরণের জন্য বিশেষ বিশেষ বিমান বিশেষ বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। কোন কোন বিমানের ইঞ্জিনের নির্গমন নল খাড়াভাবে উঠা নামার জন্য নিচের দিকে নামানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঐ সময় ইঞ্জিনের সম্মুখভাগ উপরের দিকে উঠে যায় এবং ইঞ্জিনের কম্প্রেসার সজোরে নির্গমন নল দিয়ে চাপপূর্ণ গ্যাস নিচের দিকে নিক্ষেপ করতে সমর্থ হয়। ফলে বিমানটি খাড়া উড্ডয়ন করে। একই পদ্ধতিতে অবতরনন্ত করে থাকে। বৃটিশ হকার সিডলি হেরিয়ার এবং এ্যাংলো ফ্রান্স জাগুয়ার এই ধরনের বিমান।

চিত্রঃ হকার সিডলি হেরিয়ার বিমান।
নবনির্মিত ‘¯িপ্রট অব আমেরিকা’ নামের একটি জেট কারকে নেভাদার ব্লার্ক রক মরুভূমির উপর দিয়া ঘন্টায় ৩৮১ মাইল বেগে ছুটিতে দেখা যাইতেছে। অনেক আগেই এই গাড়ীটির পরীক্ষামূলক ড্রাইভিং-এর কথা থাকলেও মরুভূমির আবহাওয়ার কারণে তারিখ পিছাইয়া দেওয়া হয় এবং গত শনিবার প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ীটি চালাইয়া দেখা হয়।-রয়টার
এই সমস্ত বিমানে লেভেল ফ্লাইটের সময় ইঞ্জিনকে যথাস্থানে অর্থাৎ সাধারণ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়য়। ফলে নির্গমন নলও নিচ থেকে পেছনের দিকে চলে যায় এবং কম্প্রেসার, গ্যাস নির্গমণ নল দিয়ে পেছনে নিক্ষেপ করতে থাকে। বিমানও সম্মুখে অগ্রসর হয়। জার্মানির ডরনিয়ার ভিও এর এই ধরনের বিমান। এটি একটি পরিবহন বিমান বিধায় খুবই বড় ধরনের বিমান। খাড়াভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য বিশেষ ধরনের বিমানটির উভয় ডানার প্রত্যেকটির নিচে বিশেষ ধরনের কূপের ভিতর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চারটি জেট ইঞ্জিন স্থাপন করা হয়েছে। উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য শুধুমাত্র সেগুলি ব্যবহার করা হয়। লেভেল ফ্লাইট কালে ডানার নিচের প্রধান ইঞ্জিনগুলি সচল করে সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

চিত্র: এলটিভি এক্স সি-১৪২ ট্রান্সপোর্ট বিমান
এল টি ভি এক্স সি-১৪২ ট্রান্সপোর্ট বিমান খাড়াভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য অন্য একটি বিশেষ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছে। এই বিমান এর পাখার অবস্থন পরিবর্তন করতে পারে। খাড়া উড্ডয়ন ও অবতরণের নিমিত্তে ডানার সম্মুখভাগ উপরের দিকে উঠানো হয়। ফলে ইঞ্জিনের সম্ম§ুখভাগও উপরের দিকে উঠে যায় এবং এর নির্গমন নলের খোলা অংশ নিচের দিকে নেমে যায়। ইঞ্জিনের কম্প্রেসার সজোরে উত্তপ্ত গ্যাস নিচের দিকে নিক্ষেপ করে বিমানটিকে খাড়া উড্ডয়নে সহায়তা করে। লেভেল ফ্লাইটের সময় ডানাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়। বিমানটির অবতরণকালেও ডানার অবস্থানের পরিবর্তন করতে হয়। এস টি ও এল () বা সর্ট টেকঅফ এন্ড লান্ডিং বিমানও এক ধরনের এ্যারোপ্লেন। নামেই বুঝায় যায় এই ধরনের বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য ক্ষুদ্র রানওয়ের প্রয়োজন হয়। আমেরিকা, রাশিয়া ও অন্যান্য বিমান নির্মাতা দেশ এই ধরনের অনেক বিমান নির্মাণ করেছে। জেনারেল ডাইনামিকস এফ ১১১ এই ধরনের বিমান।

চিত্র : জেনারেল ডাইনামিক এফ-১১১ বিমান
এটা একটি আশ্চর্য ধরনের বিমান। ক্ষুদ্র রানওয়েতে উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য এর ডানাগুলি সোজা করতে পারে এবং খুবই দ্রুতগতিতে ছুটে যাওয়ার জন্য ডানাগুলিকে পেছনের দিকে নিতে পারে। এই ধরনের গুণসম্পন্ন বিমানকে ভেরিয়েবল জিওমেট্রি বিমান বলে। নিুে উভয় অবস্থার দুটি ছবি দেওয়া হল।

চিত্র: উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় এফ-১১১ বিমানের পাখার অবস্থা সুপারসনিক বেগে উড্ডয়নরত এফ-১১১
সিপ্লেন: সিপ্লেন দেখতে সাধারণ বিমানের মত। তবে ডিজাইন পানি হতে উড্ডয়ন, তাতে অবতরণ এবং পানিতে ভেসে থাকার উপযোগি।
হেলিকপ্টার: হেলিকপ্টারও এ্যারোডাইন এবং ভিটুও হল ধরনের বিমান। অবশ্য এটা প্রপেলার অথবা জেট ইঞ্জিন দ্বারা সরাসরি পরিচালিত হয় না বরং বিমানটিতে উপরে স্থাপিত প্রায় প্রপেলারের মত দেখতে ঘূর্ণায়মান রোটরের প্রতিক্রিয়ার ফলে পরিচালিত হয়। পরে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

চিত্রঃ বেল-২২২ হেলিকপ্টারের রোটর।
বিমানের জামই হয়েছে মানুষের প্রয়োজনে আকাশে উড্ডয়ন করার জন্য। এরা ভূমির মায়া ত্যাগ করে আকাশে ডানা মেলে, নদ-নদী, বনবাদার, বিস্তর মরুভূমি, সমুদ্র মহাসমুদ্র অতিক্রম করে দেশ থেকে দেশান্তর গমন করে। অতঃপর স্বচ্ছন্দে ধূলির ধরায় অবতরণ কর। এটা কেমন করে সম্ভব? কি এর গোপন রহস্য?
এ্যারোপ্লেন, হেলিকপ্টার ইত্যাদি এই বায়ু ম-লের যান। বায়ু আছে বলেই এরা উড্ডয়ন করতে পারে এক স্থান থেকে অপর স্থানে যেতে পারে। বায়ুর অস্তিত্ব না থাকলে কোন ধরনের বিমানই আবিষ্কার করা সম্ভব হত না। অবশ্য রকেট বা মহাকাশ যান পরিচালনার জন্য কোন বায়ুম-লের প্রয়োজন হয় না। বায়ু ম-ল ভূপৃষ্ট থেকে উর্দ্ধদিকে প্রায় ৬০০ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। অবশ্য ভূপৃষ্ঠের বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ সর্বদাই অধিক। উর্ধ্বদিকে বায়ুর চাপ ও ঘনত্ব ক্রমে কমতে থাকে। এই বায়ুম-লের নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত বিমান চালনা করা সম্ভব।
বিমান ও হেলিকপ্টারের আকাশে উড়ার গোপন রহস্য বিমানের ডানা ও হেলিকপ্টারের রোটরের আকৃতির মধ্যে লুকিয়ে আছ্ েযখন বিমান বায়ুর মধ্য দিয়ে পরিচালনা করা হয় অথবা হেলিকপ্টারের রোটর গুরানো হয় তখন সেগুলোর বিশেষ আকৃতির কারণে ডানার অথবা রোটরের উপরের বায়ুর বেগ তাদের নিুস্থ বায়ুর বেগ হতো অধিক হয় ফলে উল্লেখিত স্থানের বায়ুর চাপ হয় কম। অপর পক্ষে যন্ত্রসবের নিুস্থ বায়ুর বেগ তুলনামূলক ভাবে কম সুতরাং চাপ উপরস্থ স্থান তেকে অদিক। মহাত্মা বর্ণালী এই সত্যটি বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন। ভেলচুরী টিউবের ভেতর দিয়ে তরল পদার্থ প্রবাহিত করে এটা প্রমাণ করা সম্ভব।
যেহেতু ডানা অথবা রোটরে চলন্ত অথবা ঘুরন্ত অবস্থায় উপরন্থ এলাকা নীচের স্থান থেকে নিুচাপে অঞ্চল স্বাভাবিক ভাবেই নীচের উচ্চচাপ ঐগুলিকে ঠেলে উর্দ্ধদিকে উঠিয়ে দেয়।
https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/f/fa/HE2G8.jpg/
Paul Cornu’s helicopter of 1907.
চিত্র:হেলিকপ্টারের আগমন ও ক্রমবিকাশ
১৯৪০ সাল পর্যন্ত উড়োজাহাজ ডিজাইনারগণ প্রপেলারহীন জেট বিমান আবি®কৃত হয়েছে। অনেক আবিষ্কারকই কিন্তু একটু ভিন্ন ধরনের বিমানের জিডাইন নিয়ে চিন্তাভাবনা করছিলেন যা বিশেষ ধরনের কাজের জন্য ধীরগতিতে উড়তে পারবে। একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে। আজকের হেলিকপ্টার এই ধরনের একটি বিমান। এটি ধীরগতিতে উড়তে পারে, আকাশে একই স্থানে স্থিরভাবে উড়তে পারে, কোন কোনটি নিুে ভারী বস্তু ঝুলিয়ে ছুটে যেতে পারে।
আশ্চর্যের কথা ১৫০০ সালে লিউনার্দো দ্যা ভিনচি এই ধরনের একটি বিমানের ডিজাইন করেছিলেন। তিনি ¯িপ্রংচালিক ছোট্ট একটি মডেলও তৈরী করেছিলেন।
চীন দেশের লোকেরা বহু দিন পূর্ব থেকে এই ধরনের বিমানের চিন্তা ভাবনা করত। তাারা খেলনা হেলিকপ্টার বানাতে পারত। ১৭৮৪ সালে একটি সাধারণ খেলনা হেলিকপ্টার চীন দেশ থেকে ইউরোপে পৌঁছে। লনয় ও বিয়েনভেনো নামে দুইভাই কাজে লেগে গেলেন। একটি হেলিকপ্টার তৈরী করে ফেললেন। তারা সেটাতে লাগালেন পাখির পালকের রোটর। ঠিক যেন চীন দেশের ঐ হেলিকপ্টার।
ইংরেজ বিজ্ঞানী জর্জ কেলে খেলনাটি দেখে আকৃষ্ট হলেন। ওটার অনুকরণে তৈরী করলেন একটি হেলিকপ্টার। এতেই তিনি ক্ষতি হলেন না। আরো উন্নত ধরনের হেলিকপ্টার বানানোর নেশা তাকে উম্মাদ করে তুলল। তিনি ধাতু দিয়ে ঐ রকম একটি যন্ত্র তৈরী করলেন। প্রচেষ্টা চালালেন সেটাকে উর্ধ্বে প্রেরণ করতে। যন্ত্রটি ৯০ফুট পর্যন্ত উর্ধ্বারোহন করতে সমর্থ হয়েছিল। পরে তিনি আরো অনেকগুলি ডিজাইন করেছিলেন। সেসবের একটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ডিজাইনটি ছিল যেন একটি হেলিকপ্টার ও এ্যারোপ্লেনের মিশ্ররূপ।
গবেষণা ও ডিজাইন আপন গতিতে এগিয়ে চলল। ইতালিতে ভিতারিও সার্টি ১৮২৮ সালে একটি হেলিকপ্টারের ডিজাইন করেন। ফ্রান্সেও চলছিল গবেষণা। ১৮৬৩ সালে ঐ দেবের ভিকতে দ্য পনটন দ্য আমিকুর্ত হেলিকপ্টারের একটি নতুন ডিজাইন করলেন। পরবর্তী উল্লেখযোগ্য ডিজাইনটি ১৮৭৮ সালে করেছিলেন ইতালির ইনরিকোা ফরলানিলি। অবশ্য ঐ গুলি কখনো আকাশে উড়েনি।
১৯০৭ সালে ব্রিগয়েট ব্রাদার্স নামে পরিচিত দুইভাই লুই এবং জেকুইস একটি হেলিকপ্টার নির্মাণ করলেন। সেটার একটি দ-ে চারটি রোটর স্থাপন করা হয়েছিল। একটির নিচে অপরটি। হেলিকপ্টার লুইকে নিয়ে আকাশে উড়ল। তবে মুক্তভাবে নয়। চারজন লোক দ-টি ধরে রেখেছিল। এটিই ছিল হেলিকপ্টারে সর্বপ্রথম উড্ডয়ন। এই ধরনের ব্যোমযানে সর্বপ্রথম মুক্তবাবে আকাশে উড়েন অপর একজন ফরাসী আবিষ্কারক পল কর্নো, লুইয়ের উড্ডয়নের মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর। ১৯০৮ সালে লুই ব্রিনয়েট আর একটি হেলিকপ্টার নির্মাণ করেন। প্রাথমিক স্তরের এই যানটি কিছুটা উন্নত ছিল কিন্তু এগুলোর কোনটিকেই যথার্থ হেলিকপ্টার বলা চলে না।
একটি কার্যক্রম হেলিকপ্টার নির্মাণে বহু সমস্যা দেখা দেয়। আবিষ্কারকগণও সমস্যা সমাধানের উপায় নির্ধারণের জন্য আদাজল খেয়ে মাঠে নামেন। ১৯২৩ সাল স্পেনের জুয়ান দ্য লা সিয়েরভা বিমানের সাথে হেলিকপ্টারের ধারণার মিলন ঘটান। এটা ছিল যে সময়ের বিমানের মতই তবে উপরে লাগানো হয়েছিল একটি রোটর। তিনি ঐটির নাম দেন অটো জাইরো। তার অটোজাইরোকে হেলিকপ্টার বলা চলে না। কারণ উপরের বড় রোটরটি কোন ইঞ্জিন দ্বারা চালীত হনা। বিমানটির সম্মুখে ছিল প্রপেলার। ইঞ্জিন একে নিয়ন্ত্রণ করত। বিমানটি সম্মুখের দিকে চলতে থাকলে উপরের রোটর ঘুড়তে থাকত এবং সেই ঘূর্ণায়মান রোটর বিমানকে উড্ডয়নে সহায়তা করত মাত্র। তা সোজা খাড়া উঠানামা করতে পারত না কিন্তু অল্প স্থান উঠানমা করতে পারত ফলে হেলিকপ্টার আবিষ্কারের পরে অটোজাইরো আকাশ থেকে ক্রমে বিদায় নেয়।

অটো জাইরুর চিত্র।
১৯৩৮ সালের দিকে আকাশে উন্নত ধরনের হেলিকপ্টার দেখা যেত। ঐ সময় জামার্নতে ফকী এসজেলিস এসব ডব্লিউ-৬১ ধরনের হেলিকপ্টার নির্মিত হত। এটার সম্মুখে ছিল প্রপেলার এবং উপরে দুইদিকে ছিল দুইটি রোটর। এটা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৬ মাইল বেগে ১১০০০ ফুটের উর্ধ্ব দিয়ে ৮০ মিনিট পর্যন্ত আকাশে উড্ডয়ন করতে পারত।
ইগর সিকরঙ্কি একজন সফল হেলিকপ্টার নির্মাতা। তার জন্মস্থান রাশিয়া। পরে তিনি আমেরিকার নাগরিকত্ব লাভ করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি টর্কের অর্থাৎ রোটরের ঘূর্ণনের উল্টাদিকে লেজের ঘুড়ে যাওয়ার সমস্যা সমাধান করেন। তিনি লেজের নিকট কাঠামোর বাম দিকে ছোট্ট একটি রোটর স্থাপন করেন। এটা অর্থাৎ ডেইল রোটার হেলিকপ্টারের ভারসাম্যতা আনয়ন করে। একে লেভেল ফ্লাইট, হোভারিং ইত্যাদি সকল কিছুতে সহায়তা করে।

চিত্রঃ সিকরঙ্কি এস-৫৮
গবেষণা চলতে থাকে। অন্য আবিষ্কারকেরা এই সমস্যা সমাধানে ভিন্নপথ অবলম্বন করেন।
একজন নির্মাতা এক রোটরে উপর অপর রোটর স্থাপন করেন। রোটর দুইটি পরষ্পর বিপরীত দিকে গুরত। অপর নির্মাতা দুই পার্শ্বে দুইটি, কেউবা দুই প্রান্তে দুইটি রোটার স্থাপন করেন। উল্লেখ্য যে সকল ক্ষেত্রেই বিপরীত দিকে ঘূর্ণনের মাধ্যমে ভারসাম্যতা রক্ষা করা হত। আজও টর্ক সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে উল্লেখিত যে কোন একটি পদ্ধতি প্রত্যেক প্রকার হেলিকপ্টারে ব্যবহৃত হয়। অবশ্য আরো উন্নত পদ্ধতি উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান বিশ্বের বিমান নির্মাতা প্রায় সকল দেশ হেলিকপ্টারও নির্মাণ করে থাকে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, বৃটেন, ফ্রান্স ইত্যাদি। দেশের হেলিকপ্টার অধিক পরিচিত। সর্বাধিক বিখ্যাত হেলিকপ্টারগুলির মধ্যে সিকরকি, বেল, বোয়িং চিনুক, হিলার, এলিউট এবং রাশিয়ার এম আই ধরনের হেলিকপ্টারগুলি উল্লেখযোগ্য। ভারত, ইরান, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশী বিমান নির্মাণ শিল্পে ক্রমে উন্নতি করছে। ভারত ও ইরান নির্মিত ছোট্ট ধরনের হেলিকপ্টার তাদের সমারিক বাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। যথাযথ ভাবে যুদ্ধ, উদ্ধার, ত্রাণ সবরাহ ইত্যাদি কাজ করে যাচ্ছে।

ঐড়হম শড়হম: ঞযব ঐড়হম কড়হম লবভড়রষ ঋষড়ৎবং, ভড়ৎবমৎড়ঁহফ ংরঃব হবীঃ ঃড় ধ যঁমব ৎবপহব ংযরঢ় গধু ২ ধভঃবৎ রঃ যরঃ ধ ংঁনসবৎমবফ ড়নলবপঃ যিরষব যবধফরহম ভড়ৎ ঃযব হবধৎনু চড়ৎঃঁমঁবংব বহপষধাব ড়ভ গধপধঁ রহলঁৎরহম ১১৫ ঢ়বড়ঢ়ষব. অ যবষরপড়ঢ়ঃবৎ ধিং ঁংবফ ঃড় ধরৎষরভঃ ংড়সব ড়ভ ঃযব রহলঁৎবফ ঃড় যড়ংঢ়রঃধষং.
হেলিকপ্টার আবিষ্কারের ফলে উদার কার্য, অগ্নিনির্বাপন, অনুসন্ধান ইত্যাদি সহজ হয়েছে এর মাধ্যমে দ্রুত গতিতে আহতদের হাসপাতালে বহন করা যায়, বন্যাদূর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো যায়, যে সমস্ত এলাকায় বিমান যোগাযোগ সম্ভব নয় সে সমস্ত এলাকায় হ্যালিপ্যাড নির্মাণ করে যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করা সম্ভব। রাশিয়া, আমেরিকা, বৃটেন ইত্যাদি দেশে বড় বড় হেলিকপ্টার নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হয়। আধুনিক আকাশযুদ্ধে হেলিকপ্টার গণনশীপের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য শ্লথগতির কারণে শত্রুদেশের খুবই ভেতরে বোমাবর্ষণে এর ব্যবহার খুবই নগণ্য। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য, অস্ত্র, রসদ ইত্যাদি প্রেরণে হেলিকপ্টার তুলনাহীন। বড় হেলিকপ্টার যুদ্ধের ময়দানে প্রয়োজনে সেনা ও রসদ বহন করে নিয়ে যায়। এসব প্যারা ড্রপিং তথা ছত্রীসেনা নামানেতেও ব্যবহৃত হয়।

চিত্রঃ একটি টার্বোফ্যান ইঞ্জিন।
আকাশ শোনা যায় ইঞ্জিনের গর্জ্জন
পৃথিবীর মানুষ আজ গ্রহান্তরে ভ্রমণের প্রচেষ্টায় গবেষণারত। ইতোমধ্যে চাঁদে পড়েছে মানুষের পদচি‎হ্ন। আমাদেরই আকাশযান পাইয়ুনিয়ার ঘন্টায় ৪২ বাহজার ১৯৬ মাইল বেগে মহাকাশ ভেদ করে এগিয়ে চলেছে অজানার দিকে। হয়ত লক্ষ কোটি বছর এটি চলতেই থাকবে। মঙ্গল গ্রহের লাল রংয়ের রহস্য উদ্ঘাটন করতে কচ্চব গতিতে রোটযান সক্রিয়।


আমরা নির্মাণ করেছি কনকরড নামে যাত্রীবাহী সুপারিসনিক বিমান। এটা শব্দের দ্বিগুণেরও অধিক বেগে উড্ডয়নে সমর্থ। আমাদের যুদ্ধবিমানগুলি আরো ক্ষমতাধর। আরো দুর্দান্ত তেজে গর্জ্জন করে ছুটে যায় নীলাকাশ ভেদ করে। তবু মানুষ খুশি নয়। তারা আরো গতি চায়া চলছে হাইপারনিক গতি লাভের প্রচেষ্টা।
বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন আকাশে আকাশযানের সকল শক্তি ও বেগের উৎস। যদি ইঞ্জিন আবিষ্কার না হত তবে এত দুর্বার ও দুর্দান্ত গতি কখনো সম্ভব হত না।
বিবর্তনের পথ ধরেই ইঞ্জিন বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছতে সমর্থ হয়েছে। প্রথম কোন ব্যক্তি ইঞ্জিন আবিষ্কারের চিন্তা করেছিলেন তা আজ আমাদের জানান কোন উপায় নাই। তবে সম্ভবত: হেলিকপ্টারের মত ইঞ্জিনের ধারণাও চীন দেশ থেকে এসেছিল। ঐ দেশের এক ব্যক্তি বারুদ তৈরীর জন্য শোরা, গন্ধক এবং কাঠ কয়লা মিস্রিত করেছিলেন। তিনিই সম্ভবত: ইঞ্জিন আবিষ্কারের প্রচেষ্টা ও করেছিলেন। স্কটল্যান্ডের জেমস ওয়াট বাষ্প কাজে লগিয়ে ১৭৬৯ সালে একটি বাস্তব ইঞ্জিন উদ্ভাবন করেন। শুরু হল অগ্রযাত্রা। এক সময় জলযান এবং কলকারখানায় বাষ্পীয় ইঞ্জিনের ব্যবহার ছিল ব্যাপক।

একটি বাষ্পীয় ইঞ্জিনের চিত্র।
অনেক ডিজাইনার বাষ্পীয় ইঞ্জিন কাজে লাগিয়ে বিমান আবিষ্কারের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তারা তা দিয়ে একটি বাস্তব এবং উড্ডয়নক্ষম বিমান নির্মাণে ব্যার্থ হন। বিমানে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন ব্যবহারের প্রচেষ্টাও চালানো হয়েছিল। সে প্রচেষ্টাও শেষ পর্যন্ত পরিত্যাক্ত হয়। বর্তমান কালে বিমান চালনায় পেট্রোলের পিষ্টন ইঞ্জিন অথবা কেরোসিনের জেট ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। এয়ারশীপ নির্মাতারা তাদের বিমানে পেট্রোল ইঞ্জিন ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করতেন। রাইট ব্রাদার্সের প্রথম ধাতব বিমানে পেট্রোল ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়েছিল। বিমানে ব্যবহৃত প্রাথমিক ইঞ্জিনগুলির সিলেন্ডার একই সাড়িতে অথবা ইংরেজী (ঠ) আকৃতিতে স্থাপন করা হত। ঐ সময় অটোমোবাইল ইঞ্জিনের বিন্যাসও একইরকম ছিল এবং উল্লেখ্য উভয় প্রকার ইঞ্জিন শীতল করা হত পানির সাহায্যে।

বিমানে ব্যবহৃত পেট্রোল ইঞ্জিনের চিত্র।
পরে আরো উন্নত ধরনের পেট্রোল ইঞ্জিন আবিষ্কৃত ও বিমানে ব্যবহৃত হয়েছিল। সেগুলোর একটি রোটরী বা ঘূর্ণায়মান ইঞ্জিন। এটার এরূপ নাম ছিল কারণ একটি দন্ড বা ক্রাঙ্ক শেফটের চারদিকে ক্রাঙ্ককেইস এবং সিলিন্ডারগুলি নিজেরাই ঘুড়তে থাকত। অটোমোবাইলের ইঞ্জিনগুলির শুধু ক্রাঙ্ক শেপটই ঘুড়ে এবং তা চাকা ঘুড়িয়ে থাকে ও সকল ধরনের অটোমোবাইলকে সচল করে। বিমানে ব্যবহৃত অপর ধরনের ইঞ্জিনের নাম রেডিয়াল ইঞ্জিন। রোটরী ইঞ্জিনে সিলেন্ডারগুলি নিজেরাই ঘুড়তে থাকে কিন্তু রেডিয়াল ইঞ্জিনে সিলেন্ডারগুলি স্থির থাকে।

চিত্রঃ রোটরী ইঞ্জিন।
চিত্রঃ রেডিয়াল ইঞ্জিন।
পিষ্টনসমূহ দন্ড বা শেফটের কীলকে আবদ্ধ থাকে। শেফটের সাথে পিষ্টনও ঘুড়ে এবং সিলে-ারের দুই প্রান্তে উঠানামা করে ইঞ্জিনকে সচল ও বিমানকে চলমান রাখে। বায়ু এই ধরনের ইঞ্জিন শীতল করে থাকে। ঘূর্ণমান প্রপেলারের বেগে পেছনে প্রেরিত বায়ুই ইঞ্জিন শীতল করে অধিকসময় বিমানটিকে উড্ডয়নক্ষম রাখে। উল্লেখ্য যে বিমানের সকল ধরনের পিষ্টন ইঞ্জিনই অন্তরদহন ইঞ্জিন আর ইঞ্জিনের সম্মুখে স্থাপিত প্রপেলার ঘূণমান অবস্থায় সম্মুখের বায়ু সজোরে পিচনে নিক্ষেপ করে এবং এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বিমান সম্মুখে অগ্রসর হতে থাকে। পিষ্টন ইঞ্জিনের মত টার্বোপ্রপ ইঞ্জিনেও প্রপেলার ব্যবহৃত হয়।
চিত্রঃ একটি টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন।
ক্রমে বিমানের ইঞ্জিন থেকে প্রপেলার বিদায় নিচ্ছে। জেট ইঞ্জিনের আবিষ্কার ও বিমানে ঐগুলির কার্যকারীতা প্রমাণের পর আধুনিক বিমান নির্মাতারা শুধু জেট ইঞ্জিন সংযোগনের গবেষণায় অধিক সময় ও শ্রম ব্যায় করছেন। ফলে শক্তিশালী এবং নানাহ প্রকার জোট ইঞ্জিন আবি®কৃত হয়েছে ও উন্নতির ধারা এখনো অব্যবহৃত রয়েছে।

জেট ইঞ্জিন কিন্তু হঠাৎ করে এই বিংশ শতাব্দিতে এসে উদয় হয় নাই। আসলে এটা পুরাতন ধারণার আধুনিক রূপায়ন। মানুষ বহু পূর্বেই টাবাইন নামক একটি যন্ত্রের সাথে পরিচিত ছিল। টার্বাইন শব্দটি ল্যাটিন টার্বো থেকে উদ্ভূত। এটার অর্থ দ্রুত ঘূর্ণন অথবা ঘুর্ণিবায়ু। হাজার বছর পূর্বে কৃষি ক্ষেত্রে পানি সেচ করার জন্য যে ওয়াটার হুইস ব্যবহার হত এক ধরনের টার্বাইন। পরবর্তীকালে স্মোকজ্যাক (ধূম্রজ্যাক) ও এক ধরনের টার্বাইন ছিল। ধূম্র ব্যবহার করে এই যন্ত্রের সাহায্যে সাংস সেকার জন্য সেটি আুগনের উপর ঘুরানো হত। হাজার হাজার বছর পূর্বে নির্মিত মিশরের পিরামিডের ভিতরের পাথুরে দরজার সাথে লাগানো হয়েছিল কোন বস্তু যেটি জোট তত্বে পরিচালিত হতে বলে মনে করেন গবেষকগণ।
১৭৯১ সালে জন বার্বার নামে এক ব্যক্তি তখনকার যুগের গ্যাস টার্বাইনের একটি চিত্র আঁকেন। ঐ চিত্র থেকে বুঝা যায় যে সেটাতে একটি কম্প্রেসার ছিল। কম্প্রেসার থেকে বায়ু প্রবাহ অবিচ্ছিন্ন ভাবে দহন প্রকোষেট প্রবাহিত হতে থাকে। সেখানে দহন সম্পন্ন হওয়ার পর টার্বাইনের মাঝ দিয়ে উত্তপ্ত ও পোড়া গাস প্রবাহিত হতে থাাকাকালীন সময়ে টার্বাটনের ব্লেড ঘুরতে থাকত। ফলে টার্বাইনের সাথে কম্প্রেসার ও ঘুরতে থাকত। আধুনিক কালে বিমানে ব্যবহৃত ইঞ্জিনও একই নীতিতে কার্য সমাধা করে থাকে তবে এগুলি তখনকার গ্যাস টার্বাইন থেকে অনেক উন্নত।

চিত্রঃ টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন।
বর্তমান যুগের জেট ইঞ্জিনগুলি চুরুটাকৃতির। কোনটি ছোট, কোনটি বড়। কোনটি কম প্রশস্ত। কোনটি অধিক প্রশস্ত। এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলতে হয়। জেট ইঞ্জিন চুরুটাকৃতির পরিচালন যন্ত্র যেটি আবহমন্ডল হতে বায়ু গ্রহণ করে সংকুচিত করে অতঃপর দহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উত্তপ্ত ও প্রসারিত করে পেছনের দিক দিয়ে সজোরে বাইরে নিক্ষেপ করার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ সম্মুখে চলতে থাকে।
জেট ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে বিমান চালনায় পিষ্টন ইঞ্জিনের মত জটিল ইঞ্জিন পরিহার করা সম্ভব হচ্ছে। এর কার্যপদ্ধতি পিষ্টন ইঞ্জিন থেকে অনেক সহজ এবং অনেক কম জটিল যন্ত্রাংশ দিয়ে নির্মিত। ফলে উজনও তুলনামূলকভাবে কম। এই ইঞ্জিন ব্যবহারের ফলে বিমান পিষ্টন ইঞ্জিনের গতির সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেয়েছে। ডিজাইনারগণ দুর্জয় গতিসম্পন্ন ইঞ্জিন উদ্ভাবনের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ইঞ্জিনদ্বারা খুবই বৃহদাকৃতির বিমান ডিজাইন করা সম্ভব হয়েছে। সর্বোপরি জেট ইঞ্জিনের বিমান খুবই অধিক উচ্চতায় উড্ডয়নে সমর্থ। সুপার চার্জার লাপিয়ে আরো অধিক উচ্চতায় উড়া সম্ভব হয়েছে।

সুপার চার্জারের চিত্র।
জেট ইঞ্জিনের জগতে টার্বোজেট, টার্বোফ্যান জেট, টার্রোগ্রপ জেট, র‌্যামজেট, পালস জেট, হাই বাইপাস টার্বোফ্যান জেট, আয়ন্ট ফ্যান জেট ইত্যাদি বিখ্যাত।

টার্বোজেট ইঞ্জিন: এ ইঞ্জিনও একধরনের অন্তর্দহন ইঞ্জিন। এই ধরনের ইঞ্জিনের টি প্রধান অংশ আছে।
১. প্রবেশ পথ (ইনটেক) ২. কম্প্রেসার ৩. দহন প্রকোষ্ট ৪. টার্বাইন ৫. নির্গমণ পথ (জেট নোজল বা এক্সসট)
প্রবেশ পথ দিয়ে বায়ু ইঞ্জিনে প্রবেশ করে সরাসরি কম্প্রেসারে চলে যায়। প্রবেশ পথের বায়ু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কম্প্রেসারের প্রয়োজানুসারে বায়ু সরবরাহ করে থাকে। পূর্বে কোন কোন জেট ইঞ্জিনে সেন্ট্রিফিউগাল কম্প্রেসার ব্যবহার করা হত। বর্তমানে জেট ইঞ্জিনে, এক্সিয়াল ফ্লো কষ্ট্রোসার ব্যবহার করা হয়, এই ধরনের ইঞ্জিনে স্থির এবং ঘূর্ণনযোগ্য ব্লেডের অনেকগুলি স্তর থাাকে যা পর্যায়ক্রমে স্থাপিত। ক্ষুদ্র ইঞ্জিনে ব্লেডের স্তর কম থাকে পক্ষান্তরে বৃহৎ ইঞ্জিনে অধিক স্তর স্থাপন করতে হয়। প্রত্যেক স্তরে থাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেকগুলি বেস ব্লেডের প্রত্যেকটির স্তর পরিক্ষিত চাপ বৃদ্ধি করে। কম্প্রেসার থেকে বায়ু দহন প্রকোষ্ঠে গমন করে। বায়ু সেখানে উত্তপ্ত হয়ে উচ্চ চাঁপযুক্ত গ্যাস সৃষ্টি করে। অতঃপর সেগুলি দুর্বার গতিতে নির্গমণের পথ খুজতে থাকেও টার্কাইনকে সচল করে নির্গমণ নল দিয়ে সজোরে নি®ক্লান্ত হয়ে যায়। টার্বাইনের প্রধান কাজ কম্প্রেসার ঘুরানো। এটা একটি ঘূর্ণন যোগ্য চাকতি। এর চারিদিকে কিনারায় ব্লেড অথবা বাকেট একের পর এক অনেকগুলি সজ্জিত থাকে। কম্প্রেসারের স্থির ব্লেডের ক্লিংয়ের মত টার্বাইনের নিশ্চল ব্লেডের রিং থাকে। ইঞ্জিনের সর্বশেষ স্তর নির্গমণ পথ। এখানে অবশিষ্ট গ্যাস শক্তিগতি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে উচ্চগতিতে বের হয়ে যায়। প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বিমান সম্মুখে চলতে থাকে। নির্গমন পথে শব্দ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এবং থ্রারসট রিভারসার সংযুক্ত থাকে। কম্প্রেসার, দহন প্রকোষ্ঠ এবং টাকা ইনকে একত্রে গ্রাস জেনারেটর বলে। নিগর্মন পথের জেট জলে ব্যবহারিত কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমে সুপার সার্জার কাজ করে।
ফ্যান জেট ইঞ্জিন : এই ধরনের জেট ইঞ্জিনে কম্প্রেসারের সম্মুখে প্রবেশ পথের একটু ভিতরে ফ্যান স্থাপন করা হয়। ফ্যানও এক ধরনের প্রপেলার তবে ঐগুলি ইঞ্জিনের বাইরে থাকে না এবং বাহির থেকে তেমন নজরেও আসে না। কোন কোন ধরনের ইঞ্জিনে সম্মুখের বদলে পেছনে ইঞ্জিন স্থাপন করা হয়। টার্বো জেট ইঞ্জিনের সকল বায়ু গ্যাস জেনারেটর অতিক্রম করে থাকে কিন্তু করে। অবশিষ্ট বায়ু ফ্যান অথবা নিুচাপযুক্ত কম্প্রেসার হয়ে অতিক্রম করে। এই পদ্ধতিকে বলে বাইপাস পদ্ধতি। বাইপাশ অর্থ পার্শ্বপথ। এই পদ্ধতি ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য অতিরিক্ত জ্বালানী ব্যবহার না করে গতি বৃদ্ধি করা।
টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন: পিষ্টন ইঞ্জিনের প্রপেলর এবং জেট ইঞ্জিনের প্রপেলার একই রকম। পার্থক্য শুধু একে জেট ইঞ্জিনের সম্মুখে স্থাপন করা হয়। ইঞ্জিনের অস্তস্থিত টার্বাইন একে চালনা করে বিধায় এটার নাম টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন। হেলিকপ্টারেও এই ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। হেলিকপ্টারে এইগুলির নাম টার্বোশ্যাফট ইঞ্জিন। এগুলোর নাম টাবোশ্যাফট দেওয়া হয়েছে কারণ সেগুলো ইঞ্জিনের শ্যাফট বা দত্ত যা রোটরের সংযোন স্থল পর্যন্ত বি¯তৃত ঐগুলিকে সরাসরি ঘুরিয়ে থাকে।

চিত্রঃ ফ্যান জেট ইঞ্জিন।
র‌্যাম জেট ইঞ্জিন: এগুলো সবচেয়ে সহজ ধরনের জেট ইঞ্জিন। অনেক বিশেষজ্ঞ এটাকে উড়ন্ত নল চুল্লি বলে থাকেন।

চিত্রঃ র‌্যাম জেট ইঞ্জিন।
ভিতর কোন ঘূর্ণনযোগ্য অংশ নাই। ভিতরের সম্পূর্ণ অংশটিই একটি দহন প্রকোষ্ট মেন। র‌্যাম জেট খুবই উচ্চগতিতে বিশেষ করে শব্দের গতির তিনগুণ অধিক অথবা আরো উর্ধ্বগতিতে বাল কাজ করে। এই ধরনের ইঞ্জিনের প্রধান অসুবিধা অন্য ইঞ্জিনের সাহায্য ব্যতীত এই ধরনের ইঞ্জিন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। অন্য ইঞ্জিন দ্বারা বিমানের প্রয়োজনীয় গতি লাভের পর র‌্যাম ইঞ্জিন চালু করা হয় এবং মূল ইঞ্জিনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন মুক্তবায়ু র‌্যাম ইঞ্জিনে ভিষণ বেসে ধাক্কা দিয়ে প্রবেশ করে এবং দহন প্রকোষ্ঠে জ্বালানীর সাথে মিশ্রিত হয়ে দগ্ধ হয়। অতঃপর উত্তপ্ত ও প্রসারিত বায়ু পেছনের নির্গমণ পথ দিয়ে সবেগে বের হয়ে যায় এবং প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বিমান আপন পথে চলতে থাকে।
উল্লেখিত ইঞ্জিনসমূহ ব্যতীত আফট বার্নারসহ টার্বোজেট এবং টার্বোর‌্যামজেট উল্লেখযোগ্য ধরনের বিমানে ব্যবহৃত হয়।

চিত্রঃ আফটারসহ বার্ণারসহ টার্বোজেট।
খুবই দ্রুতগতি সম্পন্ন বিমানে যুদ্ধকালীন জরুরী প্রয়োজনে আফটার বার্ণার চালু করে অতিরিক্ত দ্রুত গতি অর্জ্জন করা সম্ভব হয়। অবশ্য আফটার বার্ণারে খুবই অধিক জ্বালানীর প্রয়োজন। এই ধরনের ইঞ্জিনে টার্বোজেটের সাথে একটি অতিরিক্ত বার্ণার টার্বাইনের পেছনে সংযুক্ত করা হয়।
টার্বোজেটের গতির সীমাবদ্ধতা এবং র‌্যামজেটের অন্য ধরনের ইঞ্জিনের সাহায্যের প্রয়োজনীয়তার কারণে সৃষ্ট অসুবিধা দুরীকরণার্থে বহু চেষ্টার পর ডিজাইনারগণ এক নতুন ধরনের ইঞ্জিন উদ্ভাবন করেছেন। এর নাম টাবোর‌্যামজেট। এটা নির্মাণ করা হয়েছে টার্বোজেট এবং র‌্যামজেট ইঞ্জিনের সমন্বয়ে। এটার টার্বোজেট অংশ প্রথমে বিমানকে নির্ধারিত সুপারসনিক গতি পর্যন্ত পরিচালনা করে থাকে। অতঃপর গ্যাস জেনারেটরের পথ বন্ধ করে দেয়। তখন ফ্যানজেটের মত পার্শ্ব পথ দিয়ে বায়ু প্রবাহিত থাকে। ঐ বায়ু খুব লম্বা দহন প্রকোষ্ঠের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি মূল ইঞ্জিনটির পিছনে অবস্থিত। অবশ্য গ্যাস জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পুরো ইঞ্জিনটিই র‌্যাম জেটে পরিণত হয়। টার্বাইন ও কম্প্রেসারের ব্লেডগুলিকে প্রবাহিত বায়ু থেকে রক্ষা করার জন্য বায়ু বন্ধ করার কৌশলসহ বিভিন্ন পদ্ধতি কাজে লাগানো হয়।

পাল্স জেট ইঞ্জিনও র‌্যামজেট ইঞ্জিনের মত কাজ করে থাকে। তবে এর ব্যবহার খুবই সীমিত। মহাকাশযানে রকেট ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। সিরিজের পরবর্তী পুস্তকে রকেট ইঞ্জিন সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
বিভিন্ন ধরনের জেট ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে দেশে দেশে বিমান নির্মাণ কারখানা গড়ে উঠেছে। উন্নত ধরনের জেট বিমান সম্বন্ধে গবেষণা চলছে। আত্মপ্রকাশ করছে নতুন নতুন শক্তিশালী বিমান।
http://i.space.com/images/i/000/017/022/original/enterprise-manhattan-1000.jpg?1335806218
চিত্রঃ বিমানের পিঠে স্পেস সাঁটল সওয়ার।
বিমান যুদ্ধ মুসলিম দেশে ও বিশ্বময়

প্রথম মহাযুদ্ধকালীন সময়ের মহাভারত যুদ্ধবিমান

চিত্রঃ মহাযুদ্ধের রণক্ষেত্রে যুদ্ধ বিমান।
প্রথম মহাযুদ্ধে জেপেলিন ও বিভিন্ন ধরনের এয়ারশীপ ছিল মহা পরাক্রমশালী আকাশযোদ্ধা। নিজ নিজ দেশের আকাশে ওরাই ছিল সদাজাগ্রত প্রহরী। ওরা আকাশে টহল দিয়ে বেড়াত। সমুদ্রে নিু উচ্চতায় উড়ে ওরা সাবমেরিন খুঁজত। শত্রু এয়ারশীপ অথবা বিমান আক্রমণ নস্যাৎ করে দিত। জার্মান নেপেলিন রা ছিল খুবই সাহসী আক্রমণকারী এয়ারশীপ। সুদূর ইংল্যা-ে সফলতার সাথে বোমাবর্ষণ করে আনন্দচিত্তে ফিরে আসত

ওই সময় অনেক এরোপ্লেন তথা বিমান ও নির্মিত হয়েছে। তবে তখন কার যুদ্ধ বিমান ছিল খুবই প্রাথমিক, অনুন্নত ও আনাড়ি ধরনের বিমান। তখনকার যুদ্ধ বিমান থেকে সাহসী বৈমানিক গণযুদ্ধ করতেন। তারা অনুভব করতেন এ যুদ্ধ থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই কারণ এ যুদ্ধ ছিল সম্মুখ সমর, বিমানে বিমানে মুখোমুখি যুদ্ধ যেমন প্রাচীন কালের বীর যোদ্ধা গণ তলোয়ার নিয়ে আর একজন বীরযোদ্ধার সামনে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। অসীম সাহসে বুক বেঁধে কুশলি অস্ত্র চালনায় যুদ্ধ করে যেতেন। অতঃপর একজন বীরের মতই মৃত্যুবরণ করতেন। তারা ভাবতেন যদি মরতে হয় তবে বীরের মতই মরব।

খুবই প্রাথমিক ধরনের বিমানে তখন যুদ্ধ করা বর্তমান বিমানের মত এত সহজ ছিল না। বৈমানিক নিজেই ছিলেন যোদ্ধা। তখন সেগুলির যুদ্ধাস্ত্রও ছিল খুবই অনুন্নত ধরনের। বৈমানিক নিজেই বিমানে স্থাপিত তখন কার মেশিনগান চালনা করে শত্রু বিমান ঘায়েল করতেন। নিজের বিমানকে শত্রু বিমান থেকে রক্ষা করার জন্য বিপদজনক কৌশলে বিমান চালনা করতেন। বিমানের এ যুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে ছিল আকাশে মানুষে মানুষে যুদ্ধেরই নামান্তর। খুবই দক্ষ বৈমানিকগণ শুধু যুদ্ধ শেষে জয়ের আনন্দ নিয়ে অবতরণ করতে সমর্থ হতেন। অন্যরা বীরের মত এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিতেন। প্রথম মহা যুদ্ধে অনেক দক্ষ বৈমানিক পাঁচ অথবা ততোধিক বিমান ধ্বংস করে বিশেষ সম্মানের অধিকারী হয়েছিলেন। সর্বাধিক বিমান যিনি গুলি করে নামিয়েছিলেন তিনি একজন জার্মান। তার নাম ছিল ব্যারণ ম্যানফ্রেড ভন রিকতুফেন। তিনি নামিয়েছিলেন ৮০টি বিমান। তারপর যিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন তিনি একজন ফরাসী বৈমানিক। তার নাম ছিল রেলী ফঙ্ক। তিনি ধ্বংস করেছিলেন ৭৫টি শত্রু বিমান। ইংল্যা-ের এডওয়ার্ড ম্যানক এবং কানাডার উইলিয়াম বিশপ যথাক্রমে ৭৩ এবং ৭২টি বিমান ধ্বংস করে বিখ্যাত হয়ে আছেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় শুধু জার্মানী, ফ্রান্স, গ্রেট বৃটেন, ইতালী এবং আমেরিকার বিমান বাহিনী ছিল। যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তখন জার্মান বিমান বহরে বিমান সংখ্যাছিল মাত্র ২৬০ খানা। ফ্রান্স, বৃটেন ও আমেরিকার ফোর, ফকার ডি সেভেন, আলবাটরস ডিথ্রি স্কাউট ফাইটার বিমানগুলো মহাবিক্রমে যুদ্ধ করেছে। জার্মান গোমা জি ফোর বোধার অথবা অন্য ধরনের বোকারগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে শত্রুদের অভ্যন্তরে বোমাবর্ষণ করেছে।


চিত্রঃ জার্মান বিমান বহরের কয়েকটি বিমান।
ওই সময় জার্মান বিমান বহরের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের স্পেড এবং গ্রেট বৃটেনের সপওইথ কেমেল ফাইটারগুলো সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করেছে। ইংল্যা-ের ডি এইচ ফোর এবং হ্যান্ডলি পেজ জিরু অবলিক ফোর হান্ড্রেড বোধারগুলো রণক্ষেত্রে অথবা জার্মানীর অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত হেনেছে। যুদ্ধ শুরুতে ওই দুইদেশের বিমান সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৫৬ এবং ১৫৪ খানা। তখন আমেরিকান বিমান বাহিনী বহরে বিমান সংখ্যা ছিল শতের ও কিছু কম। অবশ্য যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে আমেরিকানরা তাঁদের নিজস্ব ডিজাইনের বিমান দিয়ে তাঁদের বিমান বাহিনী সজ্জিত করতে সমর্থ হয়েছিল। তাদের একটি বিখ্যাত বিমানের নাম ছিল কারটিস জে এন ফোর জেনী। উল্লেখ্য যে তখন আমেরিকাতে ওই একটি কোম্পানীতেই বিমান নির্মাণ করা হত। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় ইতালীর ও নগণ্য নিজস্ব ডিজাইনের বিমান ছিল। বিখ্যাত কার্পনী তাদেরই বিমান। অবশ্য ওই যুদ্ধে তাদের বিমান ব্যবহৃত হয়নি।

চিত্রঃ প্রথম মহাযুদ্ধের কয়েকটি বিমান।
প্রথম মহাযুদ্ধ শেষে উন্নত বিমান আবিষ্কারের প্রচেষ্টা বহু গুণ বেড়ে যায়। জাপান ও রাশিয়া নিজস্ব বিমান নির্মাণ প্রচেষ্টায় গবেষণা চালাতে থাকে। দ্রুত তারা তাদের নিজস্ব বিমান বহর গড়ে তুলতে সমর্থ হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বহু পূর্বেই জাপান তাদের যুদ্ধ বিমান ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে যায়। তারা ছিল চীন ও রাশিয়ার শত্রু। এই দুই দেশের বিরুদ্ধে জাপান বহু যুদ্ধ করেছিল। জাপানের বিমান বহর তাদের সশস্ত্র বাহিনীর শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়। চীন দেশের বিরুদ্ধে মাঞ্চুরিয়ায় এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে মাঞ্চুকৃতে জাপান সর্বপ্রথম আকাশ থেকে বিমান দিয়ে আঘাত হানে। সম্ভবত: কার্যকর বিমানের অভাবে রাশিয়া সেই সময় পর্যন্ত কোন যুদ্ধে বিমান ব্যবহার করতে পারেনি।

১৯৩৬ সালের কথা। ওই সময় স্পেনে গণ বিদ্রোহ দেখা দেয়। স্পেনের জেনারেল ফ্রাঙ্কো ছিলেন বিদ্রোহীদের নেতা। জার্মানী ও ইতালী ছিল তাঁর মিত্র। উভয় দেশ জেনারেল ফ্রাঙ্কের সহায়তায় তাদের বিমান বহর প্রেরণ করেছিল। অবশ্য এই যুদ্ধের পূর্বে একবার ইতালী তাদের বিমান শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছিল। ইথিওপীয়া আক্রমণ কালে। তখন তাদের বিমানবহর ইতালীয় বাহিনীকে যথেষ্ট সহায়তা দান করে।

কালক্রম যুদ্ধ বিমানের আরও উন্নতি হয়। সেই সময়ের বৃহৎ শক্তিগুলো তাদের বিমান ও অন্যান্য অস্ত্রের শক্তিমত্তা পরীক্ষার সুযোগ খুঁজতে থাকে। একদিন সুযোগ এসেও যায়। গর্জে উঠে জার্মান ফুয়েবার হিটলারের বজ্র কণ্ঠ। বেজে উঠে রণ দামামা। দিনটি ছিল ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর। ক্রমে সংক্রামক ব্যাধির মত যুদ্ধ ধেমে দেশে ছড়িয়ে পড়ে রূপ নেয় মহাযুদ্ধের। বিশ্বের ৫৯টি দেশ যেন নর হত্যায় মেতে উঠে। রক্ত নেশায় যেন মাতাল হয়ে যায় তারা।


 অস্ত্রের গর্জন আর ধ্বংসলীলা একই সাথে হাত ধরে চলতে থাকে। রাতের আকাশে নিশারে পাখির মত হঠাৎ করে কোথা থেকে যেন উদয় হত শত্রু বিমানের ঝাঁক। শত নাগিনীর রুদ্র নিশ্বাসের মত গর্জন করে করে নিক্ষেপ করত অগ্নিবান। নিকট শব্দে ফেটে যেত সেগুলো। হাজার বছরের জামানো সভ্যতা করুণ আর্তনাদ করে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ত। দিনের আলোকেও এরা ভয় পেত না। হঠাৎ করেই কোন রণক্ষেত্রে যুদ্ধরত শত্রুসেনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মুহুর্তে তাদের সকল চাওয়া পাওয়ার আকাক্সক্ষা মিটিয়ে দিয়ে পালিয়ে যেত তাদের আপন ঘাটিতে। পথে হয়ত ওইগুলির কোন কোনটি শত্রু বিমানেরগুলি অথবা ভূমি থেকে নিক্ষিপ্ত গুলির আঘাতে বিস্ফোরিত হয়ে মুখ থুবরে মাটিতে পড়ে আপন তেজে চালকসহ নিশ্চি‎হ্ন হয়ে যেত।

(Cutaway of P-51, among the most famous aircraft of World War 2/দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বিমান। )
মানব জাতির অভিশাপ এই যুদ্ধে আকাশে আধিপত্য বিস্তার করতে সমর্থ হয়েছিল জার্মানী, বৃটেন, আমেরিকা, জাপান ও রাশিয়া। এই সমস্ত দেশ গড়ে তুলেছিল শক্তিশালী বিমান বহর। তৈরী করেছিল হাজার হাজার সাহসী বিমানযোদ্ধা। তাঁরা দেশের সম্মানে জান কুরবান করতে চিল সদা প্রস্তুত। আদেশ পাওয়া মাত্র জেহাদী দেশে তাঁরা তাঁদের বিমান নিয়ে মুহূর্তে আকাশে ডানা মেলত। তপ্ত বুলেট ছুড়তে ছুড়তে শত্রু বিমানের ঝাঁকে ঢুকে পড়ত। শত্রু বিমান বিধন করে বিজয়ী বেশে নিজ দেশের বিমান ঘাটিতে অবতরণ করত অথবা শত্রু গোলার আঘাতে বীরের মত মৃত্যুবরণ করে স্ব স্ব জাতির ইতিহাসে স্থান করে নিত। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন জার্মানীর ছিল সর্ববৃহৎ বিমান বহর। এ দেশের বিমান কাহিনীর প্রধান ফাইটার ছিল এম ই ১০৯। এটার ডিজাইন করেছিলেন উইলি মেসার্সস্মিথ। এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩৬৪ মাইল। জার্মান বিমান বাহিনীর ফকী উলফ ১৯০ এবং টুইন জেট এমই ২৬২ বিমানগুলোও ছিল পাকা যোদ্ধা। এ দেশের জে ইউ ষ্টোকা ডাইভ বোধার, ডরনিয়ার বোধার এবং হেলিকেল বোধার খুবই দক্ষতার সাথে শত্রুদেশে অথবা রণক্ষেত্রে বোমাবর্ষণে সমর্থ ছিল।


জার্মান বিমানগুলোর মোকাবেলায় ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বহরের স্পিটফায়ার ফাইটার খুবই দক্ষতার স্বাক্ষর রাখে। এরা ছিল জার্মান যে কোন বিমান থেকে আকাশে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ও কৌশলগত উড্ডয়নে সমর্থ। ১৯৪০ সালের আগস্ট মাসে জার্মানী বৃটেনের বিরুদ্ধে বিমান যুদ্ধ আরম্ভ করে। ওই সময় তাদের বিমান বহরে বিমানের সংখ্যা ছিল বৃটেনের বিমানের প্রায় দ্বিগুণ। এক এক দিন প্রায় ১০০০ বিমান জার্মানী থেকে বৃটেনে উড়ে যেত, বোম বর্ষণ কতর। এ ভাবে ক্রমাগত বারবার আক্রমণ চলে। ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে আহরিত লুণ্ঠিত সম্পদে গড়া সভ্যতা এ বিভীষণ আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়। নিহত হয় ১৪০০০ বেসামরিক লোক।

 হাত পা হারিয়ে কোন মতে বেঁচে থাকে আরো ২০,০০০ আদম সন্তান। রুখে দাঁড়ায় রয়েল এয়ার ফোর্সের সাহসী বিমান যোদ্ধাগণ। বাতাস ভেদ করে তাদের স্পিটফায়ার এবং হারিক্যান বিমান নিয়ে জার্মান বিমানের পিছু নেয়। এ যেন আকাশে ঈগলে ঈগলে যুদ্ধ। ৮৪ দিনে তারা প্রায় ২০০০ জার্মান বিমান গুলি করে ভূপাতিত করে। বন্ধ হয়ে যায় জার্মান বিমান আক্রমণ। এ জয় ছিল দেশ রক্ষায় নিবেদিত প্রাণ ইংরেজ বৈমানিকদেরই জয়। সে সময় ব্রিটিশ বিমান বহরে স্পিটফায়ার, হকার হারিক্যান ছাড়াও ছিল হকার টাইফুন এবং পেম্পেষ্ট ফাইটার। আর ছিল ল্যাঙ্কাশায়ার বোণ্টার। এগুলি ২২০০০ বোমা জার্মানীর বিভিন্ন লক্ষ্য বস্তুতে নিক্ষেপ করেছিল। এর অপর বিখ্যাত বিমানটি ছিল দ্য হ্যাভিল্যান্ড মসকুইটু। এ বিমানের কাঠামো ছিল কাঠ দিয়ে তৈরী। দু’ডানায় ছিল দুটি ইঞ্জিন, এটি বোমা ফেলে এবং টহল দিয়ে বেড়ায়।


দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের রণক্ষেত্রে জাপানী বিমানগুলোও বিশেষ দক্ষতার সাথে যুদ্ধ করে। দুর্বার তেজে আঘাত হেনে শত্রুদের পর্যুদস্ত করে দেয়। এক সময় আমেরিকার বিমান জাপানী বিমানের সাথে মহাসংগ্রামে লিপ্ত হয়। পরের গল্পে তোমরা এ চমকপ্রদ কাহিনী শুনবে। এতক্ষণ তোমরা যে যুদ্ধের গল্প শুনলে এ ছিল বিশ্বমানবের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়। এর সমাপ্তি ঘটে ১৯৪৫ সালে।
জাপান ও আমেরিকার আকাশ যুদ্ধ
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জাপান ও আমেরিকার মাঝে আকাশযুদ্ধ সবচেয়ে চমক প্রদ এবং সবচেয়ে দুঃখজনক। ইতিহাস থেকে এ কাহিনী কখনো মুছে যাবে না।
যুদ্ধের সময় জাপান ছিল জার্মানীর মিত্র আর আমেরিকা ছিল মিত্র বাহিনীর মিত্র। নিঃসন্দেহে জাপান ওই সময় একটি বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছিল। তার অস্ত্রভা-ারে স্তুপিকৃত ছিল হাজার ধরনের মরণাস্ত্র। বিশ্বে প্রাধান্য আবিষ্কারে জাপানকে সাহায্য করেন। কঠোর পরিশ্রমে ওরা একের পর এক ডিজাইন করেন আশ্চার্য দক্ষতার সাথে যুদ্ধক্ষম বিমান। জাপান গড়ে তুলে সে সময়ের যে কোন বৃহৎশক্তির বিমান বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করার মত বিমান বহর। জাপানের বিখ্যাত ফাইটারগুলো ‘জীরু’ ফাইটার নামে পরিচিত ছিল, ওইগুলোর পূর্ণ নাম ছিল মিটকুবিশিটাইপ ০। মিটসুবিশি মডেল ১৫২ বিমানগুলো ‘জেকী’ নামে পরিচিত ছিল।

 এছাড়া এর বিমান বহরে ছিল এক এবং দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট বহু বিমানগুলো শুধু বোমাবর্ষণের জন্য ব্যবহৃত হত। রাশিয়া জাপানের নিকটতম শত্রু হলেও দুদেশের মাঝে তেমন চমকপ্রদ বিমানযুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। এর কারণ সম্ভবত: রাশিয়া তার স্টারমেভিক এবং ইয়াক নামে ফাইটারগুলোকে আকাশযুদ্ধের জন্য তেমন উপযুক্ত মনে করেনি। আসলেও তাই। এগুলো খুবই দক্ষতার সাথে কৌশলগত উড্ডয়নে সমর্থ ছিল না। তাই তারা তাদের বিমানগুলোকে শুধু রণক্ষেত্রে স্থলবাহিনীর সহায়তায় ব্যস্ত রাখে। অপরদিকে জাপানের উচ্চাকাঙ্খা ও তার জানকুরবান বাহিনীর বৈমানিকদের সাহস ও দক্ষতা ওই দেশের যুদ্ধ পরিকল্পনাকারীদের প্রশস্ত মহা সাগর পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় আঘাত হানার জন্য যুদ্ধ পরিকল্পনা করার উৎসাহ দিতে থাকে। তারা কাজ করার নির্দেশ ও পেয়ে যায়। খুবই গোপনে তারা যুদ্ধ পরিকল্পনায় ব্যস্ত থাকে। কিন্তু আশ্চর্যের কথা পরিকল্পনার বিষয়বস্তু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাকপক্ষীও আঁচ করতে পারেনি। একদিন জাপানের বিমানবাহী নৌবহরের একটি অংশকে আমেরিকা হাওয়াই দীপস্থ নৌঘাটির দিকে যাত্রা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ঘাটিটি ছিল পার্লহার্বার নামক স্থানে, চারদিকে প্রশস্ত মহাসাগরের অথৈ কাল নয়নাভিরাম শান্ত জলরাশী।

১৯৪১ সালের ৭ই ডিসেম্বর। জাপানী নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে এক ঝাঁক বিমান পালহার্বরের দিকে উড়ে যায়। নির্বিঘেœ সেগুলো আমেরিকান নৌঘাটি পর্যন্ত পৌঁছে। হঠাৎ করেই শুরু হয়ে যায় প্রচন্ড গোলাবর্ষণ। আমেরিকানদের নিকট এ আক্রমণ ছিল কল্পনারও অতীত। নব্বই মিনিট ধরে চলে ঘাটিটির বিভিন্ন লক্ষ্য বস্তুর উপর হামলা। বিস্ফোরিত হয়ে ডুবে যায় চারটি আমেরিকান যুদ্ধ জাহাজ, একটি মাইন লেয়ার এবং একটি টারগেট শীপ। পুরো ঘাটিটিকেই যেন অগ্নি গ্রাস করে ফেললো। ক্ষতিগ্রস্ত হলো আরও চারটি যুদ্ধজাহাজ, তিনটি ক্রজার এবং তিনটি ষ্ট্রেয়ার। এ বিমান আক্রমণে নিহত হয়েছিল দু’হাজার ছিয়াশি জন আমেরিকান নৌসেনা। অপর ৭৪৯ জন আহত হয়ে এ যুদ্ধেরর স্মৃতি জীবনভর বয়ে বেড়িয়েছিল।

জাপানের এ বিমান আক্রমণের উদ্দেশ্য শুধু পার্লহার্বার ধ্বংস করাই ছিল না। একই সময় আরও কয়েক ঝাঁক জাপানী বিমান আক্রমণ করেছিল সেনা ও বিমান বাহিনী বেস হিকম্যান। হুইলার এবং বিল্লু। কেঁপে উঠেছিল ওই সমস্ত সেনা ছাউনি। মুহু মুর্হ বিস্ফোরণের শব্দ আর অগ্নির লেলিহান শিখার মাঝেও গর্জে উঠেছিল মার্কিন বিমান। সম্মুখ সমরে লিপ্ত হয়েছিল ওরা জাপানী বিমানের বিরুদ্ধে। অবশ্য তখন আর শেষ রক্ষা করার সময় ছিল না। এ আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যায় আমেরিকার ৬৪টি বিমান, ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরো ৮৬টি। পক্ষান্তরে জাপানের ক্ষতি হয়েছিল খুবই কম। এ চমকপ্রদ যুদ্ধ জাপানের যুদ্ধের ইতিহাসে এক বীরত্বপূর্ণ গাঁথা।
উল্লেখিত যুদ্ধের পরিণতিতে আমেরিকা নতুন সংকল্প নিয়ে যুদ্ধ পরিকল্পনায় মেতে উঠে। শক্তিশালী বিমান ডিজাইনে ব্যয় করে অপরিমিত সম্পদ। যুদ্ধের শুরুতে আমেরিকান ছিল খুবই দুর্বল বিমানবহর। ১৯৪০ সালে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের নির্দেশ এবং ১৯৪১ সালের জাপানী আক্রমণের চরম শিক্ষার আমেরিকা দ্রুত বিমান সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে। ১৯৪৪ সালে তাদের বিমান বাহিনীতে বিমান সংখ্যা ছিল ৯৬৩১৮ টি। জামানী, বৃটেন, রাশিয়া ও জাপানের মত আমেরিকারও ওই সময় প্রপেলার চালিত পিষ্টন ইঞ্জিনের বিমান ছিল। অবশ্য পরে তারা জেই ইঞ্জিনের বিমানও আবিষ্কার করেছিল। তাদের সর্ব প্রথম নির্মিত জেট বিমানটির নাম ছিল বেল পি-৫৯ এ এয়ারাকমেট।
বেল পি-৫৯ এ এয়ারাকমেট বিমান। এই বিমান দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে আমেরিকার বৈমানিক প্রশিক্ষণে ব্যবহার হত।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে আমেরিকা জাপানের মতই দুই ধরনের বিমান বহর গড়ে তুলেছিল। স্থলের বিমান ঘাটি থেকে এক ধরনের বিমান শত্রু লক্ষ্যবস্তুর দিকে চুটে যেত। বিমান বাহিনীতে বিখ্যাত বিমান ছিল পি-৫১ মোষ্টাঙ্গ। এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪৩৯ মাইল। এটি ছিল ফাইটার, এটা আকাশে শত্রু বিমানের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হত। শত্রুদেরকে বোমা বর্ষণ করতে বি-১৭ ফ্লাইং ফোট্রেস, বি-২৪ লিবারেটর, বি-২৯ সুপার ফোট্রো ইত্যাদি। কোন একটি লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানার জন্য হাজার হাজার আমেরিকান বিমান একবারে উড়ে যেত।


জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকান নৌবাহিনীর যুদ্ধ বিমানগুলো ছিল সবচেয়ে অধিক কার্যকর। বিমানবাহী জাহাজে সওয়ার হয়ে এরা সমুদ্রে ভেসে বেড়াত। আদেশ পাওয়া মাত্র ওগুলোর সাহসী বৈমানিকগণ জাপানী বিমান ও যুদ্ধ জাহাজের উপর আঘাত হানতো। জাহাজে সওয়ার ফাইটারগুলোর মধ্যে এফফ-৪ ওয়াইল্ড ক্যাট, এফ-৬ হেলক্যাট এবং এফ-৪ ইউ কর্নিয়ার ফাইটার এবং বি-২৪ লিবারেটর, বি-২৫ মিচেলস ইত্যাদি বোধার খুবই বিখ্যাত ছিল। বি-২৯ বোম্বার বিমানগুলোও নৌবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এগুলো ছিল দূরপাল্লার বোঙ্কার বিমান। এগুলো জাপানের খুবই ভেতরে বোমা বর্ষণ করত। বলা যেতে পারে শুধু দক্ষ বৈমানিকদের সাহস, মৃত্যুকে উপেক্ষা করার মত মানসিকতা এবং শক্তিশালী বিমানবহরের কারণে আমেরিকা, জাপানের নৌ ও বিমান শক্তির প্রাধান্য খর্ব করতে সমর্থ হয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সর্বত্র। ক্রমে জাপানের সমুদ্রের পানিতে যেন এর সকল গর্ব মিশে যায়।

(Aircraft of the 509th Composite Group that took part in the Hiroshima bombing. Left to right: Big Stink, The Great Artiste, Enola Gay)
জাপানের বিরুদ্ধে আমেরিকার গৌরবময় দুটি বিমান আক্রমণ ছিল যুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে বিভৎস ও হৃদয় বিদারক ঘটনা। আমেরিকার যুদ্ধবাজ নেতাগন রক্তলালসায় উম্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন। তাদের আরো রক্ত প্রয়োজন। স্রষ্টা আদর করে মানুষ নামরে যে আশরাফুল মখলুকাত সৃষ্টি করেছিলেন তাদেরই লাশের উপর অট্টহাস্য করার জন্য আমেরিকার একদল বিজ্ঞানী আবিষ্কার করল আনবিক বোমা। আদম সন্তানদের ধ্বংস করার জন্য এ মোক্ষম অস্ত্রটি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিল আমেরিকা। ভাবল জাপানই হবে প্রথম টার্গেট। পরিকল্পনানুসারে একটি বোমারু বিমান আকাশে উড়ল। এর পেটে লুকানো নব আবি®কৃত ওই কুৎসিত বোমা। দিনটি ছিল ৬ই আগস্ট ১৯৪৫ সাল। বিমানটি হিরোশিমার উপর চক্কর দিল। বিশ হাজার টন টি.এন.টি ক্ষমতা সম্পন্ন বোমাটি বুতাম টিপে খালাস করল বৈমানিক। সাজানো, গুছানো, সুন্দর শহরটি মুহুর্তে এক মহাশ্মশানের রূপ নেয়। নিহত হয় ৬০,০০০ হিরোশিমাবাসী। আহত হয়ে ধূকতে ধূকতে কোন মতে বেঁচে থাকে আরও ২ লক্ষ মানুষ। মর্মান্তিক ও অমানবিক এই হত্যাযজ্ঞে স্তস্তিত হয়ে যায় সারা পৃথিবী। কিন্তু পাষ- হৃদয় তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান নির্দেশ দেন এইরূপ আরো একটি হত্যাযজ্ঞের সিদ্ধান্ত হয়। হিরোসিমায় লিটলবয় নামের আনবিক বোমা বহনকারী বিমান এনেলা সেই গগসাকিতে ফ্যাটম্যান নামক আণবিক বোমা ফেলবে।
(Atomic cloud over Nagasaki/ নাগাসাকির আকাশে আণবিক মেঘ।)
৯ই আগস্ট ১৯৪৫ সাল। জাপানী শহর নাগাসাকির দিকে দুর্বার বেগে এগিয়ে চলেছে একটি আমেরিকান বোমারু। হয়ত শহরের সৌন্দর্য বিহবল করল বৈমানিককে। হয়তবা মাত্র তিনদিন পূর্বের ধ্বংসলীলা আর হত্যাযজ্ঞের একটি স্পষ্ট ছবি তার মানসপটে ভেসে উঠল। বোতামের উপর তার হাত সে হবে আর একটি হত্যাযজ্ঞের ঘৃণিত নায়ক। হয়তবা তার অবচেতন মন তাকে একাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিল, কেঁপে উঠল তার দেহমন। না সে যে একজন সৈনিক। তাকে যে কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা অবশ্যই পালন করতে হবে। দেশের স্বার্থে এ ভয়ানক নির্দেশ অবশ্যই মানতে হবে। প্রচ- শব্দে কেঁপে উঠল নাগাসাকি। প্রচ- আঘাতে বিধ্বস্ত হল হাজার হাজার অট্টালিকা। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল আগুন চারদিকে। নিমিশে মৃত্যুর নিকট আত্মসমর্পন করল ৪০ হাজার লোক। নিরুপায় আহতদের করুন চিৎকারে বিষণœ প্রকৃতি যেন মানব সভ্যতাকে ধিক্কার দিতে থাকল।
ঘটল জাপান ও আমেরিকার মাঝে চমকপ্রদ এবং মানবসভ্যতার সবচেয়ে ঘৃণিত ও ভয়াবহ আকাশ যুদ্ধের তথা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি।
এ দু’দেশের মাঝে সংঘটিত পার্লহার্বারের যুদ্ধ ছিল জাপানের জন্য গর্ব। আমেরিকার অহংকার তার শক্তিশালী নৌঘাটি ধ্বংস করে জাপান গড়ে ছিল চমকপ্রদ যুদ্ধের এক ইতিহাস। এ যুদ্ধে বেসামরিক লোক কুব কমই প্রাণ হারিয়েছে। আর যুদ্ধের ময়দানে শত্রু সেনা নিধন কোন আইন বিরুদ্ধ কাজ নয়। অবশ্য যুদ্ধ সভ্যতার জন্য সকল সময়ই অভিশাপ। সন্দেহ নাই আমেরিকার হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আণবিক বোমা বর্ষণ জাপানকে শীঘ্র আত্মসমর্পনে বাধ্য করেছ তবুও তার একাজকে কখনো সমর্থন করা যায় না। লাখো নিরপরাধ বেসামরিক লোক হত্যা করে যুদ্ধবন্ধ করার কোন আইন কোথাও আছে কি? একা জাপান আর কতদিন যুদ্ধ করতে সমর্থ হতো? অল্প কিছু দিন পর সে নিজ থেকেই যুদ্ধ বন্ধে বাধ্য হতো।
বিশ্বের মানুষ আর যুদ্ধ চায় না। চল আমরা এমন নির্দয়, দুঃখজনক ও কলঙ্কজনক যুদ্ধ থেকে মুক্তি কামনা করি।
আমেরিকান বোমারু ট্রাটোফোট্রেস কোয়েল বোমা নিক্ষেপ করছে। আমেরিকানরা এর দ্বারা কোয়েল মিসাইল শত্রু বিমান এবং রাডারকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য নিক্ষেপ করে থাকে। মাত্র একটি এই ধরনের ক্ষেপনাস্ত্র শত্রুরাডারে পাঁচটি পরিমাণ মনে হয়।/B-52F releasing its payload of bombs over Vietnam ।
আরও লড়াই আরও বিমান
দানবরূপী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দাবানলের মত দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ যুদ্ধ ধ্বংস করেছে হাজার হাজার জনপদ। বিষাক্ত করেছে প্রশান্ত ও আটলান্তিক মহাসাগরের পবিত্র জলরাশি। মানব রক্তের সিক্ত করেছে তপ্ত মরুর উত্তপ্ত বালুকণা। এ যুদ্ধ রক্তের স্রোত বইয়ে দিয়েছিল ডেনমার্ক, নরওয়ে, হল্যা-, বেলজিয়াম, ফ্লাখো। ওই সমস্ত দেশে জার্মান ব্রিটিশ বিমান বহর ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে গিয়ে সৃষ্টি করেছিল মহা প্রলয়। জার্মান বিমান বহর গর্জন করেছে রুমানিয়া, হাঙ্গেরী, গ্রীক, বুলগেরিয়া ও যুগোশ্লাভিয়ার আকাশে, সুয়েজখাল, মিশর, সুদান ও তিউনিয়ার আকাশে মুখোমুখি হয়েছে চাচিল আর মুসোলিনীর বিমান বহর। আল-আমিরের আকাশে মরণপণ লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছে, মিত্র শক্তি ও এফ এ ধরনের বিমান নর্থ আমেরিকান স্যবর (এফ-৮৬) বিমানের নিকট খায় প্রচ- মার, যদিও স্যবর ও মিগ-১৫ বিমান কার্যক্ষমতার দিক দিয়ে প্রায় সমকক্ষ ছিল। ৩৪০০০ ফুটের উর্ধ্ব দিয়ে মিগ-১৫ বিমান প্রচ- বেগে খুবই ফলপ্রসূভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারত শত্রু সৎবরের উপর। কিন্তু নিু উচ্চতার স্যবর ছিল অপ্রতিরোধ্য। এর ছয়টি মেশিনগানের দুর্বারগতি বুলেটের ঝাঁক মুহুর্তে ধরাশায়ি করতো দূরন্ত মিল বিমানগুলোকে। মিগ-১৫ বিমারে অল্প প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চীন দেশ ও কোরিয়ার বৈমানিকগণ তাদের কামানের বুতাম টিপার পূর্বেই স্যবরের মেশিন গানের গুলিতে ঝাঁকড়া হয়ে তাদেরই বিমানের অগ্নি গোলকের ভিতর দিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতো। ওই সময় কঠোর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অথবা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অভিজ্ঞ আমেরিকান বৈমানিকগণ স্যবরের ককপীটে অট্টহাসিতে পৈচাশিক উল্লাস প্রকাশ করতো। তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার সাথে যোগ হতো বিমান ভূপাতিত করার আরও নতুন অভিজ্ঞতা।

কোরিয়ার যুদ্ধে আহতদের করুন চিৎকারে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছিল হেলিকপ্টার। এর পূর্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও হেলিকপ্টার অল্প বিস্তর ব্যবহৃত হয়েছে। অবশ্য মানব হিতৈষি রূপ নিয়ে কোরিয়ার রণক্ষেত্রে হেলিকপ্টারের আগমনে বেঁচে গিয়েছিল অনেক মৃত্যুপথযাত্রী আদম সন্তান। ওই যুদ্ধে হেলিকপ্টার যেন ছিল স্রষ্টার আশীর্বাদ। রণক্ষেত্রে অথবা সমুদ্রে উদ্ধার কার্যে ওরা উড়ে যেত। বিপন্ন অথবা আহতদের বুকে নিয়ে ছুটত হাদপাগলের দিকে। কোরিয় যুদ্ধের তিন বৎসরে হেলিকপ্টারগুলো বহন করেছে ২৩০০০ এর অধিক আহত মানুষ।

১৯৫৬ সালে কোরিয়ার মত ভিয়েতনামে কমিউনিজম ঠেকানোর উদ্দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনাম সরকারকে বিমান, অস্ত্র ও সৈন্য দিয়ে সাহায্য করতে থাকে। তখন কমিউনিষ্ট গেরিলারা ছিল সরকারের বিরুদ্ধে তৎপর। তাদেরকে বলা হত ভিয়েতকং। ভিয়েতকংদের সাহায্য করেছিল উত্তর ভিয়েতনাম, রাশিয়া ও চীন। তাদের ধ্বংস করার ও ধ্বংস করার জন্য মানব সভ্যতার নিদর্শন ওরা বারবার আঘাত হানে ভিয়েকংদের উপর তাদের সবচেয়ে উন্নত বিমান ও অস্ত্র নিয়ে।


চিত্রঃ বৃষ্টির মত বোমাবর্ষণ করছে ভিয়েতকং অবস্থানে আমেরিকান বোমারু/A U.S. B-66 Destroyer and four F-105 Thunderchiefs dropping bombs on North Vietnam during Operation Rolling Thunder।
১৯৫৬ থেকে ১৯৭৫ প্রায় ২০ বৎসর। মহাকালের তুলনায় এ সময়টুকু খুবই অল্প মনে হতে পারে কিন্তু মানব জাতির জন্য নেহায়েত কম নয় এ সময়। বহমান এ দিনগুলোতে আবিষ্কৃত হয়েছে অনেক নতুন বিমান ও নতুন সমরাস্ত্র। আমেরিকা ও রাশিয়া তাদের অস্ত্রের কর্ম ক্ষমতা পরীক্ষা করেছে ভিয়েতনামের নিরিহ মানুষের উপর নিত্যই নতুন মডেলের আমেরিকান বিমান উড়ে যেত ভিয়েতকং ধ্বংস করার নামে হত্যাযজ্ঞ চালানোর উদ্দেশ্যে। তাই পুরানো মডেলের বিমান তারা ক্রমে বাদ দিয়েছে। ১৯৫০ সালে কোরিয়ার আকাশের যোদ্ধা বিমান দ্রাগলাস এ-১ স্কাইরাইডার আর ভিয়েতনামের আকাশে দেখা যায়নি। তার বদলে এসেছে ডগলাস এ-৩ স্কাইওয়ারিয়ার। রাশিয়ান মিনের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অবর্তিত হয়েছে স্যাবর, এফ-১৪ টমক্যাট, এফ-১৫ ঈগল, এফ-১০২ কনভেয়ার ডেল্টা ডেগার, এফ-১০৪ টারফাইটার, এফ-১০৫ থান্ডারচীফফ, এফ-১০০০ সুপার স্যবর, ফেনটম ইত্যাদি সকল সে সময়ের আধুনিক আমেরিকান ফাইটার বিমানগুলোর বেশিরভাগ।
(A F-105D shoots down a MiG-17, 1967./ আকাশে গুলি বিদ্ধ বিমান।)

বি-২৬ কে কাউন্টার ইনভেন্ডার, বি-৪৭, বি-৫৭ ক্যানবেরা ইত্যাদি বোমারুগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যেত ভিয়েতনামের বন বাদার ও গিরি কন্দরে ভিয়েতকং ঘাঁটি ধ্বংশের নেশায়। অতঃপর বোয়িং বি-৫২ ট্রাটোফোট্রেস অন্য সব বোমারু বিমানের স্থান দখল করে। এটি যেন ছিল আকাশে উড়ন্ত একটি দূর্গ। এ বিমান থেকে বৃষ্টির মত ঝড়ে পড়ত অগ্নি বোমা। আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়তো ভিয়েতনামের জনপদ, কল কারখানা, বনজঙ্গল ও পাহাড় পর্বতে।
সম্পর্কিত চিত্র

(An Antonov An-26 lands at Tan Son Nhat Int’l / ভিয়েতনামে রুশ নির্মিত একটি আন্তনভ- ২৬ বিমান।)
Antonov An-26 Military Transport Aircraft

Developed by Antonov from the An-24. the Antonov An-26 is a soviet twin turboprop tactical transport aircraft which first flew in April 1963 and has seen extensive use with the Soviet Air Force. A total of 1,403 Antonov An-26 aircraft were built (some built by Xian Aircraft in china as the 
  • Antonov An-26 Specifications:
  • Crew: Two pilots, radio operator/engineer and a navigator
  • Capacity: 40 passengers
  • Payload: 5,500 kg (12,000 lb)
  • Length: 23.8 m (78 ft 1 in)
  • Wingspan: 29.2 m (95 ft 9½ in)
  • Height: 8.32 m (27 ft 3½ in)
  • Empty weight: 15,020 kg (33,110 lb)
  • Useful load: 4,500 kg (9,900 lb)
  • Max takeoff weight: 24,000 kg (53,000 lb)
  • Engines: Twin 2,820 shp (2,100 kW) Progress AI-24VT turboprops
  • Cruise speed: 440 km/h (240 knots, 275 mph)
  • Maximum range: 2,550 km
  • Service ceiling 7500 m (17,000 ft)


Antonov An-26 Military Transport Aircraft


মিগ
মিগ 29_kubb


mc1eG

ওই সময় রাশিয়ার বিমানের ও যথেষ্ট উন্নতি হয়। কোরিয় যুদ্ধের সময় রাশিয়ার কিমোয়েন/গুরেভিচ মিগ-১৫ ছিল একমাত্র শক্তিশালী যুদ্ধবিমান।

 ক্রমে তাদের হাতে আসে মিগ-১৭, মিগ-১৯, মিগ-২১, ফিশবেড, মিগ-২৩ ফ্লগার, মিগ-২৫, ফক্সরেড, সুকুই এসইু-৭ বিফিটার, এসইউ-১১ ফ্লাগন, টিউপলেভ টিইউ-১৬ বেজার, টিইউ-২০ বিফার, টি ইউ-২২, ব্লাইভার, টিইউ-২৮ ফিডলার, ইয়াক-৩, ইয়াক-১৫, ইয়াক-১৭, ইয়াক-২৩, ইয়াক-২৫ যুদ্ধবিমান। এদের অনেক বিমানই আমেরিকান যুদ্ধ বিমানের সাথে সমানে সমানে লড়েছে। আসলে এ যুদ্ধে কারও কার হয় নি বরং মানব রচিত সভ্যতার বুক করা হয়েছে ক্ষতবিক্ষত। যুদ্ধকালে বিধ্বস্ত অসহায়-মানুষের করুন আহাজারি বারবার ইথারে প্রতিধ্বনিত হয়ে মানবসমাজকে করেছে ব্যাঙ্গ।
mig 29
এরপরও যুদ্ধ প্রস্তুতি থেমে থাকেনি, থেমে থেমে বেজে উঠেছে রণদামামা, যুদ্ধবাজদের বজ্র হুংকার কেঁপে উঠেছে বিশ্বের শক্তিকামী মানুষ। যুদ্ধ নামক কাল আজাদাহা এর সকলকে জিহ্বা প্রসারিত করেছে বিভিন্ন দিকে। এর স্ফুলিংগ উল্কার মত আঘাত হেনেছে এ উপ মহাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য, ইরাক ইরান এবং আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে। বিভিন্ন সময় হঠাৎ করেই ইসরাইল নির্লজ্জভাবে তার নিজস্ব শক্তিশালী কাফির অথবা আমেরিকা থেকে প্রাপ্ত ফ্যানটম বিমান দিয়ে আঘাত হেনেছে প্যালেষ্টাইনের উদ্বাস্ত শিবিরে। সন্ত্রাবাদী দেশ হিসেবে আত্ম প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইরানে কমান্ডো হামলা প্রচেষ্টায় হারিয়েছে এর কিচু বমিান ও সেনা। প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফিকে হত্যা প্রচেষ্টায় ভূমধ্যসাগরে ভাসমা এর বিমানবাহী জাহাজ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বিমান উড়ে এসে হত্যা করেছে লিবিয়ার শত শত মানুষ। ধ্বংস কেেছ কলকারখানা, বাড়িঘড়, রাস্তাঘাট, শহরবন্দর।

রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২01২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ২0 মিগ ২9 কে এবং চারটি মিগ -২9 কিউব যোদ্ধাদের সরবরাহের জন্য মিগের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
DETAIL_PICTURE_572333রাশিয়ান নৌবাহিনীর নৌবাহিনী ইগর কোজিনের প্রধানের মতে, রাষ্ট্র প্রতিরক্ষা আদেশের জন্য বিমানগুলি একটি নতুন প্রযুক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির সাথে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয়তা পূরণের সাথে নির্মিত হয়।
মিগ কোম্পানির জেনারেল ডিরেক্টর সের্গেই কোরোটকভ জানান যে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক প্রতিরক্ষা মজিদ -২9 / কিউব সরবরাহ সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংস্থাটি পরিকল্পনা করে।
রাশিয়ার একমাত্র সেবা প্রদানকারী এডমিরাল কুজেনটসভ, নর্দার্ন ফ্লেট সহ মুরমাস্ক ভিত্তিক বিমানটি স্থাপন করা হবে।
অ্যাডমিরাল কুজেনটসভ বর্তমানে সুকোই সু -33 নৌবাহিনী যোদ্ধা বিমান পরিচালনা করছেন।
fazotronমিগ -২9 কে মিগ -২9 ফুলকুম ফাইটার জেটের একটি নৌ-ভার্চুয়াল এবং একটি ঝুলন্ত পাখি, একটি গ্রেপ্তারকারী পুঁচকে হুক, দৃঢ় আকাশগমন এবং মস্তিষ্কের সামর্থ্য রয়েছে তার ঝুক-এমই স্লটেড অ্যারে রাডারের জন্য, মিগ বলেন।
তারা নৌবাহিনীর বায়ু প্রতিরক্ষা, বাতাসের সার্বভৌমত্ব, পৃষ্ঠের আঘাত এবং সঠিক আবহাওয়ার সাথে স্থল লক্ষ্যমাত্রা, আবহাওয়া এবং আবহাওয়াতে দিন ও রাতের সমস্যা সমাধানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
জেটগুলি কম্পোজিট উপকরণের উচ্চ অনুপাত, চতুর্ভুজ বিশিষ্টতা সহ টেলিগ্রামের বিমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, রাডার স্বাক্ষর উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পললোড, এভিয়েশনের খোলা আর্কিটেকচারকে উন্নত করেছে।
BkGxTমিউনিখ -২9 কে বিমানের প্রতিরক্ষামূলক মিশন করতে সক্ষম Su-33 এর বিপরীতে, মিগ -২9 কে বিভিন্ন ধরণের এয়ার-টু-পৃষ্ঠের পাশাপাশি আকাশ থেকে বাতাসের অস্ত্রশস্ত্র এবং লেজার-শূন্যপদ ব্যবস্থা সশস্ত্র করা যেতে পারে।
বিমানটি "বন্ধু" এর সমর্থকও রয়েছে যা অন্য মিগ -২9 কে পিএজেড-1 এমকে পুনর্বিবেচনার পড ব্যবহার করে ফেরত দিচ্ছে।
এ পর্যন্ত, 15 নভেম্বর 15 নভেম্বর ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে রাশিয়ার নির্মিত ক্যারিয়ার আইএনএস বিক্রমাদিত্যকে ব্যবহারের জন্য বিমানটি শুধুমাত্র ভারতের সাথে প্রবেশ করেছে।
এটি লক্ষ্য করা উচিত যে বর্তমানে রাশিয়ান ডিজাইনার মিগ 35 যোদ্ধাদের উন্নয়নশীল হয়। মিগ কর্পোরেশনটির মিগ 35 উড়োজাহাজের ডিজাইনটি নিখুঁত করতে তিন বছর এবং ব্যাপক উৎপাদন করার জন্য তার মসৃণ পরিবর্তনটি প্রস্তুত করা হবে।মিগ -২9-এর মিগ -২35 নামের একটি মিউজি -35-এর মাধ্যমে এয়ার-টু-এয়ার এবং এয়ার-টু-সাইজ গাইডেড মিসাইলসহ সশস্ত্র করা যেতে পারে। এপ্রিল মাসে, মিগ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সের্গেই Korotkov
178078225
এইত সেদিনের কথা এ কাহিনী আলোড়ন তুলেছিল বিশ্বময়। আমেরিকার চোখের কাটা পানামার প্রেসিডেন্ট নরিয়েনা। তাঁর দেশের উপর আমেরিকার কতৃত্ব সহ্য করতে পারতেন না তিনি। পানামা কালের উপর অপ্রকাশ্য নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য, পানামাতে তার ঘাঁটির ভবিষ্যৎ কণ্টকমুক্ত করার জন্য একদিন লৌহমানব নরিয়েনাকে গ্রেফতারের ঘোষণা দিয়ে আক্রমণ করে বসল পানামার বিভিন্ন সেনা ছাউনির উপর। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মূলত: গণতন্ত্রের বুকে ছুড়ি হেনে অপর এক সর্বভৌম দেশে গণহত্যা চালালো আমেরিকা। একটি দুর্বল দেশের রক্ষক নিজেই তার ভক্ষক হয়ে বসল। তার বিমান ও হেলিকপ্টার গগনশীপ আক্রমণে দিশেহারা দুর্বল পানামার সশস্ত্র বাহিনী পরাজিত হয়ে অস্ত্র সম্বরণ করল। ব্যর্থ ৗেহ মানব নরিয়োগ ১৯৯০ সালের জানুয়ারী মাসের এক বিশাদময় দিনে আত্মসমর্পণ করলেন।




কত রকম বিমান!
আকাশের দানব—
আকাশের দানব বলেই মানছেন সবাই। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিমানের নাম ‘এয়ারল্যান্ডার-১০’। সম্প্রতি এ বিমান আকাশে উড়ে উড়োজাহাজের ভবিষ্যতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। প্রায় ৮৫ বছরের সাধনার পর উড়োজাহাজ ইঞ্জিনিয়ারদের মুখে হাসি ফোটায় এয়ারল্যান্ডার-১০। ৯২ মিটার দীর্ঘ এয়ারল্যান্ডার-১০ তৈরি করে হাইব্রিড এয়ার ভেহিক্যালস (এইচএভি) কর্তৃপক্ষ। ১৩ লাখ ঘনফুট হিলিয়ামে ১৬ হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে পারবে এটি। যাত্রী ছাড়া দুই সপ্তাহ এবং যাত্রীসহ পাঁচ দিন আকাশে উড়তে পারবে এ যান। ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবেও ব্যবহার করা যাবে এয়ারল্যান্ডার-১০। মানবিক ত্রাণ বিতরণ, যোগাযোগ ও নজরদারির জন্যও ব্যবহার করা যাবে এটি।
পাকভারত ও স্বাধীনতা যুদ্ধে বিমান
১৯৪৭ সালে পাকভারত যুদ্ধের সময় এ ধরনের এফ-৮৬ স্যবর পাকিস্তানের আকাশে টহল দিত।
১৯৪৭ সনের ১৪ ও ১৫ই আগস্ট বৃটিশ সিংহ পাকিস্তান ও ভারতকে স্বাধিনতা দিতে বাধ্য হয়। প্রায় দুইশত বৎসরের গোলামীর জিঞ্জির ছিন্ন করে উদয় হয় দুটি মুক্ত সূর্য। বৃটিশরা যখন ছলে বলে কৌশলে এ উপমহাদেশের ভারতবর্ষ নামক এলাকাকে গ্রাস করেছিল তখন মুসলমানরা ছিল এ অঞ্চলের হর্তা কর্তা। এ বিশাল ভূখ-ের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করত বিভিন্ন জাতি। এদের নিজেদের মাঝে কলহ বিবাদই এদেশে বৃটিশ আগমনের পথ করে দিয়েছিল। ক্রমে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। ভবিষ্যতে সমস্যা উৎরাগের লক্ষ্যে এ উপমহাদেশের বুদ্ধিমান লোকেরা আওয়াজ তোলেন দুটি স্বাধীন দেশের। ভারত বিভক্ত হয়ে স্বাধীন হয়। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত ইংরেজ বিভক্তকারীদের স্বার্থপরতার দরুন মুসলিম প্রধান কিছু অঞ্চল ভারতকে দিয়ে দেওয়া হয়। গর্জে উঠে ওই সকল অঞ্চলের জনতা। শীর দেনা, নেহী দেগা আমামা জান দিয়ে দেব কিন্তু সম্মান ভূলুণ্ঠিত হতে দেব না। তারা আওয়াজ তোলে স্বাধীনতার। মুসলিম অধ্যূষিত দেশ পাকিস্তান তাদের প্রজ্জলিত অগ্নিতে দেয় ঘৃতাহুতি। ফলে পাকিস্তান ও ভারত বেশ কয়েকবার লড়াইয়ে নিজেদের শক্তি পরীক্ষা করে নেয়। সমৃদ্ধ করে তাদের অস্ত্রশালা, ক্রমে তাদের বিমান বহরে যোগ করে নতুন ও উন্নততর বিমান। আমেরিকা ও চীন দেশ হয়ে যায় পাকিস্তানের অস্ত্রের প্রধান জোগানদার। অপরপক্ষে রাশিয়া ও বৃটেন থেকে ভারত ও সংগ্রহ করতে থাকে বিভিন্ন অস্ত্র আর বিমান। নিজেরাও নিজেদের কারখানায় রাশিয়া ও বৃটেনের কিছু বিমান সংযোজনে সমর্থ হয়। একে অপরকে কাবু করার জন্য তাদের সৈনিক ও বৈমানিকদের দিতে থাকে কঠোর প্রশিক্ষণ শান দিতে থাকে নিজেদের অস্ত্র।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। বিশ্ব মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে এর আগমন। হিন্দু ধর্ম ও শান্তির কথা বলে। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধবাজ নেতারা স্ব স্ব ধর্মের লোকদের রক্ষার নামে বক্তৃতা মঞ্চে ও রেডিও টেলিভিশনে ছড়াতে থাকেন হিংসার বীজ। গোপনে দিতে থাকেন নহরত্যার তালিম, এ দু’টি দেশ ধর্মের নামে, দেশের অখ-তা রক্ষার নামে বেশ কয়েকবার একে অপরের উপর প্রচ- হামলা চালায়। বিশ্বস্ত শান্তিকামী মানুষের হস্তক্ষেপে হিন্দু ও মুসলমান সৈনিকদের লাশের উপর থেমে যায় তাদের যুদ্ধ। পুনঃ লালসা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। বক্তৃতা মঞ্চে ইথারে প্রচারণা যুদ্ধ তুঙ্গে উঠে। জোর কদম এগিয়ে চলে সেনাদল সীমান্তের দিকে। শো শো করে উভয় দেশের বিমান কোন কারণ ছাড়াই ঢুকে পড়ে একে অপরের সীমানার ভিতর। কঠোর ভাষায় উভয় দেশই পাঠাতে থাকে প্রতিবাদ লিপি। যেন উভয় দেশেরই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়।
৬ই সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ সাল। জলে, স্থলে, আকাশে হঠাৎ করেই গর্জে উঠে উভয় দেশের মারণাস্ত্র। আর্তনাদ করে উঠে উভয় দেশের আদম সন্তান। অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ঠোটের কোণে দেখা দেয় ক্রোড় হাসি। রক্তিম গোলার আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে যায় চাল, খেমকারান ও লাহোলের মাটি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অসীম সাহসী বাঙ্গালী যোদ্ধাগণ, বুকে ডিগমাইট বেঁধে লাফিয়ে পড়ে অগ্রসর মান্য শত শত ভারতীয় চ্যাঙ্কের সামনে লাহোর রণক্ষেত্রে। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে উর্ধ্বে উচিত হয় ট্যাঙ্ক যেন প্রদয়ের আঘাতে যাওয়া কোন ফুটবল আকাশে খোঁজে আশ্রয়। অতঃপর মাটিই একে নিজের দিকে টেনে আশ্রয় দেয়। হতভম্ব হয়ে যায় ভারতীয় যুদ্ধবাজ নেতারা। বাদবাকী ভারতীয় ট্যাঙ্ক পিছু বটে নিজ দেশের মাটিতে ফিরে যায়।
স্থলযুদ্ধের সাথে সাথে উভয় দেশের ভিতরে বিমান ঘাটি, কলকারখানা, বাড়ীঘর, রাস্তায় পুলে পড়তে থাকে। আকাশ থেকে বোমা, আহত দুই দেশের কণ্ঠে ধ্বনিও হতে থাকে বন্দে মাতরম, হরেকৃষ্ণ হরে রাম আর নারায়ে তকবীর ও ইয়া আঈ ধ্বনি। কাঁপতে থাকে বিষণœ প্রকৃতি। ভারতীয় হান্টার নেট, মীগ, ক্যানবেরা বিমানগুলো আপন পেটে গোলাগুলি রকেট মিসাইল, বোমা ইত্যাদি মারণাস্ত্র লুকিয়ে ছুটে যায় পাকিস্তানের সীমান্ত অতিক্রম করে। স্যবর, এফ-৬ (মীগ-১৯), এফ-১০৪ ষ্টার ফাইটারও প্রস্তুত। ওদের দক্ষ বৈমানিকেরা পাকিস্তানের আকাশ রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বিমান ঘাটিগুলিতে ক্ষণে ক্ষণে বেজে উঠে পাগলা ঘণ্টা। দূরন্ত বৈমানিকের দল মুহুর্তে তাদের বিমান নিয়ে উল্কাবেগে ছুটে চলে শত্রু বিমানের খোঁজে। আকাশে বাজতে থাকে আজরাইলের মরণঘণ্টা। উভয় বিমান বহর থেকে ছুটে আসে বুলেট, রকেট, মিসাইল। কোন কোনটি আঘাত হানে যুদ্ধরত কোন বিমানে। বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিবহরে প্রবেশ করে সেটি। প্যারাস্যুট নিয়ে ককপীট সহ পাইলট প্রচ- গতিতে বের হয়ে যায় বিমান থেকে অথবা বিমানের অগ্নিবলয়ই হয় তার জীবনের শেষ চিতা। সেখান থেকে সে নিরবে একাকী নিঃশব্দের জগতে প্রবেশ করে। তার গৌরবময় জীবনের হয় অবসান।
ওই যুদ্ধে পাকিস্তানের এফ-৮৬ স্যবর, এফ-৬ (মীগ-১৯), এফ-১০৪ ষ্টার ফাইটার বহুবার ভারতীয় হাণ্টার, নেট, মীগ ফাইটার বিমানের মুখোমুখি হয়েছে। অসীম সাহসে প্রচ- তেজে, অবিশ্বাস্য কৌশলে পাকিস্তানী বৈমানিকগণ হামলাকারী ভারতীয় বিমান বহরের উপর সৃষ্টি করেছে যুদ্ধের এক চমকপ্রদ ইতিহাস। ১৯৬৫ সালের ১৭ দিনের যুদ্ধে পাকিস্তান বিমান বহর যে বীরত্ব প্রদর্শন করেছিল তা সম্ভবত: কখনো ম্লান হবে না। হয়ত তারা কখনো মুছে ফেলতে সমর্থ হবেনা। ওকে এক বাঙ্গালী বৈমানিকের সৃষ্ট রেকর্ড যা বিশ্বের বিমানযুদ্ধের ইতিহাসে খুবই বিরল। তোমরা ওই বাঙ্গালী বৈমানিকের নাম জানকি?
তাঁর নাম স্কোয়াড্রন লীডার আলম, তিনি ছিলেন বর্তমান বাংলাদেশেরই একজন দূরন্ত সন্তান। পয়ষট্টির ওই ভয়ঙ্কর যুদ্ধের সময় তিনিও অনেক বাঙ্গালীর মত পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে সারগোদা বৈমানিক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। যুদ্ধ যখন তুঙ্গে একদিন ভারতীয় বিমান বাহিনীর অনেক বিমান ঝাঁকে ঝাঁকে আঘাত হানলো। পাকিস্তানের মূল ভূখ-ে। অন্যান্য বৈমানিকদের মত সেদিন ওই তরুণ স্কোয়াড্রন লীডার তাঁর স্যবর জেট নিয়ে সারগোদ্দার আকাশে উড়েন। সাহসী কৌশলে ডুকে পড়েন শত্রু বিমান ঝাঁকের ভিতর। মুহুর্তে তিনি পাঁচটি ভারতীয় হান্টার বিমান গুলি করে নামিয়ে ফেলেন। এ যুদ্ধে ৩ বার মাত্র শত্রুর মুখোমুখি হয়ে তিনি ধ্বংস করেছিলেন ৯টি ভারতীয় হান্টার। এ যুদ্ধের অপর বীর বৈমানিক ছিলেন পনজ্ঞাবের দামাল ছেলে স্কোয়াড্রন লিডার সাদ হাশমী। আর অনেক সাহসী বৈমানিক ছিলেন। তাদের কেউ কেউ ফাইটার নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন আর কেউবা পাক্সিতান বিমান বাহিনী বি-৫৭ বোমারু বিমান নিয়ে রাতের আঁধারে ভারতের মূল ভূখ-ের ভিতরে বোমাবর্ষণ করে বীরবিক্রমে ফিরে এসে গর্বিতভাবে। রানওয়ের উপর চক্কর দিয়ে অবতরণ করেছিলেন ১৯৬৫ সালের যুদ্ধ বাংগালী সৈনিক ও বৈমানিকদের জন্য বয়ে এনেছিল বিশেষ সম্মান। ওই যুদ্ধে তারা সর্বত্রই প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন তাদের শক্তি, সাহস, দক্ষতা আর যুদ্ধকৌশলের বাস্তব অবস্থা। এ যুদ্ধ পাঞ্চাবী শাসক গোষ্ঠীর টনক নাড়িয়ে দিয়েছিল। তারা বুঝতে সমর্থ হয়েছিল বাংগালীদের আর খাট করে দেখলে চলবে না। যে কোন সম্মুখ সমরে ওরা মোটেই দুর্বল ও ভীরু নয়।

(From the dog fight over Karachi: A story of 1971 war/করাচির আকাশে যুদ্ধ বিমান।)
পাকিস্তান ও ভারতের মাঝে ১৯৭১ সালে আবারও বেজে উঠল রণদামামা। এ বারের সংগ্রাম আর কোনক্রমেই হিন্দু ও মসলিম জাতীয়বাদ থেকে উদ্ভূত ছিল না। এ সংগ্রাম ছিল ১৯৪৭ সালে পাক ভারত স্বাধীনতার পর থেকে ধূকে ধুকে রূপ নেওয়া বাংগালী জাতীয়তাবাদ থেকে উদ্ভূত সংগ্রাম বলা যেতে পারে ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পর পরই এ যুুদ্ধের বীজ বপন করা হয়ে গিয়েছিল। আস্তে আস্তে সেটা মহিরূহে পরিণত হয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই যদি মুসলিম প্রধান এ অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তান নাম নিয়ে স্বাধীন না হত অথবা ভারতের অংশ হয়ে স্বাধীন হত তবে বাংগালী জাতীয়তাাবাদ এত শীঘ্র পূর্ণতা প্রাপ্ত হতে সমর্থ হত না। তাই ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা বর্তমান বাংলাদেশের জন্য কোন ক্রমেই অভিশাপ ছিল না।
১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধ প্রমাণ করেছে জাতীয়তাবাদের ক্ষয় নেই আর এর নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই। কখন এটা ধর্মের কখনো দেশের কখনো বা ভাষার লেবেল লাগিয়ে এগিয়ে চলে। এর যেন পেছনে যেয়ে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ারও কোন অবকাশ নেই। ১৯৪৭ সালের পরপরই পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দারা রাষ্ট্রভাষা বাঙ্গলা চাই স্লোগান দিল। ১৯৫২ সনে সালাম, বরকত, রফিক আরো অনেকে ভাষার জন্য প্রাণ দিলেন। শ্লোগান উঠল রাষ্ট্রভাষা বাঙ্গলা চাই, নূরুল আমিনের কল্লা চাই। সময় দাড়িয়ে চলল। ১৯৭০ সালের গণভোটে শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ ভূট্টোর পিপলস পার্টিকে নির্বাচনে হারিয়ে দিল। পাঞ্চাবী শাসক গোষ্ঠীর সহায়তায় সিন্ধ ভূট্টোা ক্ষমতা দখলের পায়তারা চালালেন। এগিয়ে আসলেন এয়াহিয়া, টিক্কা খান আরও অনেক জেলারেল। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ গভীর নিশিতে ঢাকার রাজপথে শোনা গেল গুলির আওয়াজ। বন্দি হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলার দামাল ছেলেরা শুরু করল মুক্তিযুদ্ধ। এদেশ থেকে পাঞ্চাবীদের হটাতে হবে। দেশকে স্বাধীন করতে হবে। শেখ মুজিবকে ফিরিয়ে আনতেই হবে। শহর গ্রামে গঞ্জে শ্লোগান উঠল স্বাধীন বাংলাদেশ চাই, শেখ মুজিবের মুক্তি চাই।

(Indian aircraft carrier INS Vikrant launches an Alize aircraft/ভারতীয় বিমানবাহী জাহাজ।)
হাতিয়ার হাতে অবস্থান নিল পাক সেনারা। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর বাংগালী ফৌজদের নিয়ে যাওয়া হল যবনিকার অন্তরালে। অনেক সৈনিক আর বৈমানিক পালিয়ে এসে নাম লেখাতে থাকল মুক্তিফৌজে। অচেনা মরু ও বন্ধুর গিরিকন্দর পার হয়ে ওদের অনেকেই ছুটে চলল ভারত আর আফগানিস্তানের দিকে মুক্তির সন্থানে। আমার মত অনেকেই খায়বরের বাধা চক্করে পড়ে ফিরে গেল বন্দি শিবিরে। সে আরেক ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের অনেক বইতেই সেগুলো লিখা হয়েছে। যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সলের ২৬ শে মার্চ সে যুদ্ধ প্রায় চূড়ান্ত রূপ লাভ করে একই সনের নভেম্বর মাসের দিকে। ভারতীয় বাহিনী মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় সরাসরি পাক বাহিনীর উপর হামলা করার সুযোগ বুঝতে থাকে। ২৯ নভেম্বর ভারতের হিলি বালুরঘাট অঞ্চলে হামলা চালায় পাকিস্তান বিমান বাহিনীর এক ঝাঁক স্যকর। প্রচ- তেজে ছুটে আসে ভারতীয় বিমান। তাদের গোলার আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তিনটি পাক স্যবর জেট। এক দিন প্রচ- শক্তি নিয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনী হামলা চালায় ঢাকায় পাকিস্তানী বিমান ঘাটির উপর। হামলার পর হামলা চলতে থাকে। রাতের আধারে ভারতীয় বিমানের দিকে ছুটে পাক এন্টি এয়ার ক্রাফক্ট গায়ের গোর্লা, উজ্জল আলোকে নিমিশের জন্য দূর হয়ে যায় অন্ধকার। রানওয়ের উপর আছরে পড়ে শক্তিশালী বোমা। কেঁপে উঠে ঢাকা শহর। একে একে অকেজো হয়ে পড়ে পাক বিমান বহরের কুল্লে কুড়িটি স্যবর পেটের সবগুলো। পূর্ব রণাঙ্গনের আকাশ ছিল একচেটিয়াভাবে ভারতীয় বিমান বহরের ডানার নিচে। ওদের বাধা দিতে উড়ে যেত না কোন স্যবর। এক সময় এন্টি এয়ারক্রাফট গানের গোলা বর্ষণও থেমে গেল। পশ্চিম রণাঙ্গনে মোকাবেলা করতে সমর্থ হয়েছিল অল্প বিস্তর পাক বিমান বাহিনীর এফ-৬, মিরেজ, স্যবর ও এফ-১০৪ ষ্টার ফাইটার বিমানগুলো। তবে যেন তারা বাঙ্গালী বৈমানিকদের হারিয়ে ১৯৬৫ সনের দূর্দান্ত প্রতাপও হারিয়ে ফেলেছিল। ওই যুদ্ধে শত শত ভারতীয় হাণ্টার, নেট, মীগ, সিরেজ, হ্যারিয়ার, সুকুই ক্যানবেরা বিমানের তুলনায় মাত্র ২৪৫টি এফ-৬, স্যবর, এফ-১০৪, মিরেজ, বি-৫৭ বিমান ছিল খুবই নগণ্য। ১৯৭১ সনের ১৬ই ডিসেম্বর পূর্ব রণাঙ্গনে পাক সেনাদের ভারতীয় বাহিনীর নিকট আত্ম সমর্পনের পর মিটে যায় পাকিস্তানের যুদ্ধস্পৃহা। পাক বিমানগুলো তাদের স্ব স্বা ঘাটির শান্তিময় আশ্রয়ে ফিরে যায়। এ যুদ্ধে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিমান বহর তার সীমিত শক্তি নিয়ে কৌশলগত যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল। বাংলাদেশ এয়ারফোর্স মুক্তযুদ্ধের প্রয়োজনে ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের গগল্যা-ের ডিমাপুর এয়ার বেসে প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই যুদ্ধের শেষের দিকে ভারতের নিকট থেকে একটি ডাকোটা, একটি অটার এবং দুটো হেলিকপ্টার পেয়ে পাক বিমান বাহিনীর পলাতক বৈমানিকেরা একটি ক্ষুদ্র বাহিনী গড়ে তোলে। অটার আর হেলিকপ্টার গুলিতে মেশিনগান লাগানো হয়েছিল। ওরা শত্রুর যোগাযোগ পক্ষ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সফলভাবে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত হেনেছে।
সন্দেহ নাই ১৯৭১ সলে নবগঠিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনী মোটেও শক্তিশালী ছিল না তবে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই, আজকের বিমান বাহিনীর ভিত্তি প্রস্তুর তখনই স্থাপিত হয়েছিল।

চিত্রঃ আকাশে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত যুদ্ধবিমান।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর অনেক বৈমানিক ও বিমান সেনা ভাবতেন যদি কোন না কোন ভাবে একটি বিমান কাবু করা যেত। যদি কোন বিমান নিয়ে ভারতের মাটিতে অবতরণ করা যেত, তবে সেই বিমান দিয়েই পাক বাহিনীর উপর হামলা করা যেত। একদিন এ বাংলাদেশের দামাল ছেলে বীর বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যাণ্ট মতিয়ুর রহমান পি এ এফ বোমারুদের একটি সুযোগ পেয়ে গেলেন। তিনি ছিলেন পাক বিমান বাহিনীর একজন ফ্লাইট ইনস্ট্রাক্টর। তাঁর ট্রেনিং বিমান খানা (জেট-৩৩) তারই পাকিস্তানী ছাত্র মিনহাজকে নিয়ে আকাশে উড়ল। তিনি তার ছাত্রকে উড্ডয়নের বিভিন্ন কৌশল শিক্ষা দিয়ে চলেছেন। কখনো হয়ত দ্রুত বেগে চক্কর খেতে খেতে উপরে উঠে লেভেল ফ্লাইট যাচ্ছেন। কখনো মরুর, বালি ছুই ছুই অবস্থায় রাডার ফাঁকী দেওয়ার কৌশলে উড়ে চলেছেন। চমৎকৃত মিনহাজ উস্তাদের রাহাদুরীতে মনে মনে পঞ্চমূল। প্রশিক্ষকের মনের অবস্থা তিনি জানবেন কি করে? উস্তাদের মনে তখন আর একটি বিমান বাহিনী গড়ার স্বপ্ন। মতিয়ুরের দেশ প্রেমে উদ্বেলিত মন ছাত্র মিনহাজসহ বিমান নিয়ে পাকিস্তানের রাডারের চোখে ধূলা দিয়ে ভারতের কোন বিমান ঘাটিতে অবতরণের লক্ষ্যে কৌশলে সীমান্তের দিকে এগিয়ে চলেছেন। ক্রমে দূরত্ব কমতে থাকল। ভাবাবেগে আপ্লুত মিনহাজ যেন বাস্তবে ফিরে এলেন। ভাবলেন এপথে কেন? এত প্রশিক্ষণ এলাকা নয়। আকাশ থেকে ভারতের জামনার বিমানঘাটি দেখা যাচ্ছে। তবে কি উস্তাদ তার মাতৃভূমিতে যেতে চাচ্ছেন? তিনিও তার সমস্ত যুক্তি দিয়ে প্রকৃত ঘটনা আঁচ করতে সমর্থ হলেন। তাঁর পাকিস্তানী রক্ত, পাকিস্তানের জন্য দান করার প্রতিজ্ঞা করে ফেললেন তিনি। মনে মনে ঘোষণা করলেন, কখনো নয়, জীবন দেব তবুও দেশের সম্মানকে ভারতের কাছে বিকিয়ে দেব না। তিনিও তার কর্তব্য স্থির করে ফেললেন। দুই শত্রু দেশের দুই দেশ প্রেমিক একই বিমানে দুই বিপরীত প্রতিজ্ঞায় অটল। মতিয়ুর ভাবছেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য ভারতে অবতরণ করতেই হবে। মিনহাজও ভাবছেন মাতৃভূমির স্বার্থে উস্তাদের ইচ্ছায় সমর্পন করা যাবে না। সীমান্ত অতিক্রমের পূর্বেই বিমানটিকে পাকিস্তানে অবতরণ করিয়ে দেশের মান বাঁচাতে হবে। ককপীটের ভিরত শুরু হয়ে গেল অঘোষিত যুদ্ধ। নিজ নিজ কণ্ট্রোল ষ্টিক নিয়ে উভয় দেশ প্রেমিক সিংহ বিমানটিকে আপন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য লড়াই করছেন। বিদ্রোহ করল তাঁদের বিমান এলোমেলো চক্কর খেয়ে কাঁপতে কাঁপতে বিমানটি আশ্রয় নিল সীমান্তের পাকিস্তানী মরুর তপ্ত বালুকাময়। অগ্নিবিমানটিকে ছেয়ে ফেলল। জীবন দিয়ে সৃষ্টি করলেন দুই তাজা তরুন দুইটি ভিন্ন ইতিহাস। দুই দেশের মানুষ তাদের নিজ নিজ দেশের দুইটি আত্মাকে তাদের হৃদয়ে স্থান দিল। ওরা আজ বীর শ্রেষ্ঠ মতিয়ুর আর নিশানে হায়দার মিনহাজ। জীবনে ছিলেন তাঁরা অচেনা সাধারণ বৈমানিক। দেশের জন্যে জান কুরবান করে হয়ে গেলেন তাঁরা জননন্দিত মহান সাহসী দেশ প্রেমিক।
মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে যুদ্ধবিমান

(An Incident on the Western Front, view of a dogfight involving five aircrafts. In the upper foreground a biplane of the RAF flies towards a stricken German biplane, which is falling towards the ground leaving a trail of smoke in its wake (Imperial War Museum)/ চিত্রঃ পশ্চিম রণাঙ্গনের আকাশে যুদ্ধবিমান।
‘সবার উপর মানুষ সত্য, তার উপর নাই’। এটি একটি দার্শনিক তত্ত্ব। কোন একজন কবি বলেছেন ‘জগত জুরিয়া দেশলাম আমি একই মায়ের পুত’। পৃথিবীর সকল দেশের কবি, সাহিত্যিক ও দার্শনিকগণ মানুষের জয়গান গেয়েছে। শান্তির বাণী প্রচার করেছেন কিন্তু এ বিশ্বেরই যদ্ধবাজ জঙ্গিনেতারা দেশের নামে ধর্মের নামে, ভাষার নামে, স্বার্থের নামে যুগ যুগ ধরেই যুদ্ধের বাণী, হিংসার বাণী প্রচার করে আসছেন। যুদ্ধের লেলিহান শিকার মাঝে লেলিয়ে দিচ্ছেন লাখ লাখ আদম সন্তান। স্রষ্টার আশরাফুল মখলুকাত মানুষ অপর আশরাফুল মাখলুকাতের বুকের রক্তদেখে প্রচ- অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছে।
কিন্তু স্রষ্টাত এমনটি চান নি। তাঁর ইচ্ছা তারই সৃষ্টি সবচেয়ে বুদ্ধিমান মখলুক মানুষ মুখে থাকুক। যুদ্ধ হানাহানি থেকে দূরে থাকুক। তাই তিনি যুগে যুগে দেশে দেশেতাঁর প্রতিনিধি প্রেরণ করেছেন। এসেছেন নূহ (আ), ইব্রাহিম (আ), মূসা (আ), ঈসা (আ) ও ইসলামের সর্বশেষ রসূল। একই স্রষ্টা বিভিন্ন সময়ে তাদের পাঠিয়েছেন একই বিধান দিয়ে। একই ঘোষণা দেওয়ার জন্যে এ মহাবিশ্ব স্রষ্টার, এখানে শুধু তারই আইন চলবে। সুতরাং হে মানুষ একই দেশে সবাই সুখে থাক।
স্রষ্টার ইচ্ছা সফল হয়নি। যুগের বিবর্তনে একই বিধান বিভিন্ন ধর্মের রূপ নিয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে ইহুদী, খৃষ্টান ও ইসলাম ধর্ম। আশ্চর্যের বিষয় এই তিন ধর্মেরই সৃষ্টি হয়েছে মধ্য প্রাচ্যে। এই ধর্মগুলোর প্রবর্তকগণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় শান্তির বাণী প্রচারক। কিন্তু হায় তাদের জন্ম ভূমি আজ জ্বলছে। আজ পুরো মধ্যপ্রাচ্য একটি বারুদাগার। আরো আশ্চর্যের বিষয় তিনটি মহান ধর্মের কথিত সেবকগণই এখানে যুদ্ধে লিপ্ত। অতীতে গ্রীক, রোমানও পারসীকগণ এ রণাঙ্গনে লড়াই করেছে। খৃস্টান ও মুসলমানেরা একে অপরকে ক্রুশেডের নামে হত্যা করেছে। সময়ের বিবর্তনে এসেছে নতুন সমসা। কতিপয় বৃহৎ রাষ্ট্রের প্রচেষ্টায় ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে দুর্বল রাষ্ট্র প্যালেষ্টাইনের উপর উড়ে এসে জুরে বসল ইসরাইল নামে একটি ইহুদী রাষ্ট্র। সেখানে বাস করত ৪০ লক্ষ দরিদ্র মুসলমান। জীবনের ভয়ে তাদের ৩০ লক্ষ লেবানন ও অন্যান্য আরব রাষ্ট্রে উদ্বাস্ত হিসাবে আশ্রয় নেয়। বাদ বাকি ১০ লক্ষ থেকে যায় অধিকৃত এলাকায়। তারা গড়ে তোলে প্যালেস্টাইন মুক্তি আন্দোলন। øোয়ের মত আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশ থেকে ইহুদীরা ইসরাইলের পথ ধরে, ইসরাইল গড়ে তোলে শক্তিশালী সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী। শুরু থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সময়ের সবচেয়ে উন্নত অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে থাকে। প্যালেস্টাইনীদের সশস্ত্র গেরিলা সংগ্রাম স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য আমেরিকা তাদের দিতে তাকে নতুন নতুন বিমান।
১৯৪৮ সালের মে মাসেই ইসরাইল ও আরবদের মাঝে প্রথম যুদ্ধ বাধে। ১৯৫৬ সালে মিসর সুয়েজ কালকে জাতীয়করণ করে। এ উপলক্ষ্যে ওই ইসরাইল মিসরের সাথে যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়। ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইসরাইলের পক্ষে যুদ্ধ করে। ১৯৬৭ সালের ৫ই জুন ইসরাইল কোন উস্কানি ছাড়াই আরব দেশগুলোকে হামলা করে। এ যুদ্ধ ৬ দিন স্থায়ী হয়। পুনরায় ১৯৭৩ সালের ৬ই অক্টোবর আরব ইসরাইল যুদ্ধ বাঁধে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্য ও সমর্থনে ১৯ দিনের এই যুদ্ধে মিসরের গাজা ও সিরিয়ার সোপন মাল ভূমিসহ অনেক এলাকা ইসরাইল দখল করে নেয়।
ওই সমস্ত যুদ্ধে ইসরাইল ব্যবহার করে বৃটিশ, ফ্রান্স ও আমেরিকান বিভিন্ন ধরনের বিমান। কখনো ওরা স্যবর জেট দিয়েল আক্রমণ চালিয়েছেন। কখনো ওদের ফ্যানটম দৈত্যদানুর মতই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। কখনো ফ্রান্সের মিরেজের অনুকরণে নির্মিন তাদের নিজস্ব কাফির নামক বিমান দিয়ে লেবাননের উদ্বান্ত শিবিরের অসহায় মানুষগুলোর উপর বীর বিক্রমে বোমা ও গোলাবর্ষণ করে কাপরুষের মত নিজ দেশের ঘাটিতে ফিরে গেছে। ইসরাইলী যুদ্ধবাজ নেতাদের যুদ্ধ পৃহা মিটানোর খায়েশে ওরা আবার উড়ে গেছে কোন উদ্বান্ত শিবিরের উপর। হত্যাকারী জল্লাদের মত নির্দ্বিধায় ওরা খালাস করেছে তাদের ডানার নিচে ঝুলানো বোমা, রকেট, মিলাইল। আজো তারা ধ্বংসের এ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।
ফ্রান্সের মিরেজ বিমানের অনুকরণে ইসরাইলের নিজস্ব কারখানায় নির্মিত একটি কাফির বিমান।
আরব ইসরাইল যুদ্ধে আরব দেশগুলো বরাবরই রুশ যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করেছে। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন যুদ্ধে আরবরা কখনো মীগ-১৫, কখনো মীগ-১৭, কখনো মীগ-১৯, কখনো বা মীগ-২১, নিয়ে শত্রু বিমানের সাথে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়েছে। ওই সকল যুদ্ধের সময় পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বহু বাঙালী বৈমানিক আরবদের পক্ষে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বাঙ্গালী জাতির সুনাম বৃদ্ধি করেছে। জানা যায় স্কোয়াড্রন লীডার সাইফুল আজম ১৯৭৩ সালের আরব ইসরাইল যুদ্ধে চারটি ইসরাইলী যুদ্ধ বিমান ধ্বংস করেন।
মধ্য প্রাচ্যের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ইরাক-ইরান যুদ্ধ। এটি উপসাগরীয় যুদ্ধ নামে পরিচিত। ১৯৮০ সনের ২২ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই ইরানের রাজতন্ত্রের আমলে সৃষ্ট কিছু সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ইরাক আয়াতুল্লাহ খোমেনীর ইরানে আক্রমণ করে বসে। এ যুদ্ধ শেষ হয় ১৯৮৮ সালের ২০শে আগস্টের একটি সুন্দর মুহুর্তে। এটি ছিল মুসলিম বিশ্বের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। দীর্ঘ আট বছর ধরে যুদ্ধ করেও বলতে গেলে কোন সমস্যার সমাধান হয়নি। শাতিল আরব জনপথের সমস্যা এখনো সমস্যাই রয়ে গেছে কিন্তু যুদ্ধের ফলে জীবন হারিয়েছে লাখ লাখ আদম সন্তান। গোলা, রকেট, মর্টার, ক্ষেপনাস্ত্র ও বিমান হাামলায় ধূলার সাথে মিশে গেছে উভয় দেশের একেক জনপদ, কলকারখানা, রাস্তাঘাট ও সেতু। নির্দয় ক্ষেনাস্ত্র উভয় দেশেই আঘাত হেনে তার নিজস্ব ভাষায় কথা বসেছে। অসহায়ের আহাজারিতে আর্তনাদ করে উঠেছে বিষন্ন প্রকৃতি। উভয় দেশের জঙ্গি-বিমানই উড়ে গেছে শত্রুদেশের স্কুল, মাদ্রাসা ও ধর্মস্থানের উপর। আগুনে বোমার আঘাতে ওইগুলি অগ্নিময় হয়েগেছে। হাজার হাজার মাছুম শিশু, নারী ও বৃদ্ধ অগ্নিশিখার নিকট অবলিলায় আত্ম সমর্পণে বাধ্য হয়েছে।
যুদ্ধের সুযোগ নিয়েছে ইসরাইল। দূরপাল্লার বিমান নিয়ে উড়ে এসে বোমার আঘাতে ধ্বংস করে গেছে ইরাকের পারমাণবিক কেন্দ্র। উপসাগরে ডুবেছে বিভিন্ন দেশের পণ্যবাহী জাহাজ। এ যুদ্ধের সুযোগ যুক্তরাষ্ট্রত্ত নিয়েছে। উপসাগরে শান্তির নামে প্রেরণ করেছে এর বিমানবাহী শক্তিশালী জাহাজসহ দুর্ভেদ্য নৌবহর। হামলা করেছে দুর্বল ইরানী নৌবহরের উপর। ডুবিয়ে দিয়েছে ইরানী রণতরী। ধ্বংস করেছে ইরানী তৈল মঞ্চ। সর্বশেষে ইরানী যাত্রীবাহী বিমান গুলি করে ধ্বংস করে ঠা-ামাথায় হত্যা করেছে এর সকল যাত্রী। সেদিন বিশ্বমানবতা ঘৃণায় চিৎকার করে উঠেছিল। কিন্তু সে ঘৃণা যেন বিদ্রোপ হয়ে পৃথিবীর দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। উপসাগরে ঘটনা দ্রুত বয়ে গিয়েছিল। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়েছিল। আঘাত হেনেছিল তার হেলিকপ্টার ও গানশীপের উপর। ফলে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব আশংকা করেছে পরাশক্তিও ইরানের সাথে মুখোমুখি যুদ্ধের। শেষ পর্যন্ত আর যুদ্ধ হয়নি। হলে কি হত? বাঘে মহিষে যুদ্ধ জমতে পারে, কিন্তু সে যুদ্ধ খুবই অসম।
শেষ পর্যন্ত উপসাগরীয় যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে যাওয়ার পূর্বেই যুদ্ধমান উভয় দেশের হুশ হয়েছে। কিন্তু এর পূর্বেই মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব বিশ্ব দ্বিধা বিভক্ত হয়ে গেছে। মিশর ও জর্দান শুরু থেকেই ইরাককে সকল প্রকার সহযোগীতা দিয়ে আসছিল। সিরিয়া ও লিবিয়া তাদের আদর্শের বন্ধু ইরানকে দিয়ে আসছিল সম্ভাব্য সকল প্রকার সাহায্য। সৌদি আরব ও একদিন ইরাকের মিত্র হয়ে যায়। ইরাক কাবু করার জন্য ইরাকের নিকট পৌঁছাতে থাকে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সাহায্য। নিজেও সম্ভাব্য ইরানী হামলা মোকাবেলায় গড়ে তোলে আমেরিকার সহায়তায় বিশেষ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সম্ভবত: সৌদি সরকারের নিজের অজান্তেই তা ইরান ভীতি প্রবল হয়ে উঠে। সন্দেহ দানা বেধে উঠতে থাকে। ইরানীদের সকল কার্যক্রমে তারা সৌদি বিরোধিতা দেখতে পায়। ফলে পবিত্র হজ্জের নিষিদ্ধ মাসেও শত শত হজ্জযাত্রীকে মৃত্যু বরণ করতে হয়। হজ্ঝের ইতিহাসে এ এক দুঃখজনক ঘটনা। ১৯৮৭ সালের হজ্জ রক্ত দিয়ে লিখা।
ইরাক যুদ্ধ শুরু করেছিল একই সাথে স্থল, জল ও আকাশে। এর স্থল বাহিনী অপ্রস্তুত ইরানী বাহিনীর লাশের উপর দিয়ে ট্যাঙ্ক চালিয়েছে। মুহূর্তে পাঠিয়ে দিয়েছে বহু তাজা প্রাণ পরপারে। এর যুদ্ধ বিমানগুলো ইরানী ঘাটি ও সীমান্তের ইরানী চৌকিতে হঠাৎ করে বোমাবর্ষণ করে গুড়িয়ে দিয়েছে। সাদ্দামের আঘাতে আয়াতুল্লাহ খোমেনী হতভম্ব হয়ে যান। জ্বলে উঠে তার প্রতিশোধ স্পৃহা। ঘোষণা করেন এর বদলা অবশ্যই নিতে হবে। গজ্জে উঠেন সাদ্দাম হোসেন। ইরানকে যুদ্ধ পরিকল্পনারই সুযোগ দেওয়া হবে না। ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যায় ইরানের শাহের গড়া বিমান বাহিনীর মারাত্মক ফ্যানটম। আঘাত হানতে থাকে ইরাকের অভ্যন্তরে। তাদের দক্ষ পাইলটগণ খুবই দক্ষতায় গুলি করে মাটিতে ফেলতে থাকে ইরাকী মীগ। পৃথিবী চমকিত হয়ে তাকিয়ে থাকে ওই সকল বীর বৈমানিকদের দিকে। আশ্চার্য তাদের আক্রমণ কৌশল। তারা যেন ঘড়ি কাঁটার সাথে তাল রেখে একে একে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত হানতে থাকে। আকাশ যুদ্ধে সাদ্দামের বিমান বাহিনীর ক্ষীণ ও হেলিকপ্টার গানশীপ রণাঙ্গনে যথেষ্ট সহায়তা দান করে। উপসাগরে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তু যেমন তৈল টার্মিনাল, ইরানী ও অন্যান্য দেশের জাহাজের উপর সফল আঘাত হানে। ভুলবশত: উপসাগরে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজের একটির উপর ক্ষেপনাস্ত্র হামলা করে তা অকেজো করে দেয়। ইরাকের দূরপাল্লার বোমারু বিমান তেহরান ও পবিত্র কোম শহরের উপর বোমা বর্ষণ করে ইরানী বিমানের বাগদাদের উপর বোমাবর্ষণের প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে। যুদ্ধ ফ্রান্সের তৈরি ইরাকের মিরাজ বিমান বহরও পিছিয়ে ছিল না।
https://encrypted-tbn3.gstatic.com/images?q=tbn:ANd9GcSbwM30iZeRxEr9a2Pvcbb5m9qPUQPQgwP_QAKLo7zTWLSX2KeNH0T10WU
চিত্রঃ এক ঝাঁক মীগ-২১ বিমান। যুদ্ধের সময় বিভিন্ন ধরনের মীগ বিমানই ছিল ইরাকী বিমান বাহিনীর মূল শক্তি।
ইরাক ও ইরানের মাঝে যুদ্ধে উভয় দেশের বহু বৈমানিক খুবই দক্ষতার সহিত অপূর্ব কৌশলে যুদ্ধ করেছে। নিজ নিজ দেশের সরকার উভয় দেশের বীর বৈমানিকদের দিয়েছে বিভিন্ন খেতাব।
আল্লাহর নিকট হাজার শোকারিয়া অনেক জীবন ও অনেক ধ্বংসের পর উভয় জঙ্গী নেতা বাস্তবকে উপলব্ধি করতে সমর্থ হয়েছেন। উভয়ই যুদ্ধ বন্ধ কতে সম্মত হয়েছেন। যুদ্ধত থামল, কিন্তু কি লাভ হয়েছে? লাখো প্রাণের বিনিময়ে ওরা কি পেল? আসলে এ যুদ্ধে কেউই জয়লাভ করেনি। ইরাক ও ইরান উভয়েই পরাজিত হয়েছে। পরাজিত হয়েছে বিশ্ব মানবতা। আহত হয়ে মুষরে পরেছে উভয় দেশের হাজার বছরের লালিত সভ্যতা। আজো উভয় দেশের আহত অর্থনীতি আর্তনাদ করছে। যুদ্ধের ফসল আহত আদম সন্তান উভয় দেশের সর্বত্র যুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে। সন্দেহ নাই যুদ্ধের ফলে উভয় দেশই কিছু কিছু অস্ত্র নির্মাণ করতে সমর্থ হয়েছে। নিজস্ব ক্ষেপনাস্ত্র প্রযুক্তি অর্জন করেছে। ওই সমস্ত কি ওদের যুদ্ধের ক্ষতির সান্তনা দিতে পারবে? বিশ্বের সকল যুদ্ধবাজ নেতার সুভবুুিদ্ধর উদয় হোক। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন যুদ্ধ শুরু করেছিলেন ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে। তাঁর গোয়েন্দারা তাঁকে ইরানের সঠিক শক্তির তথ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ইরাকের যুদ্ধবাজ নেতারা হয়ত ভেবেছিলেলন ইরানের আভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার কারণে আয়াতুল্লাহ খোমেনীর সরকারের কোমড় ভেঙ্গে গেছে। সুতরাং পয়লা আঘাতেই ইরান পরাজয় বরণ করবে। আট বছরের যুদ্ধ ইরাকের এ ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত করেছে। ইরানীদের দৃঢ় মনোবল ও বিশ্বাসের ফলে তারা ইরাকের পয়লা আঘাতে মুষরে পড়েনি বরং মাথা ঠা-া রেখে একের পর এক যুদ্ধ পরিকল্পনা করেছে। ইরানের ভিতর থেকে ইরাকীদের হটিয়ে দিয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে ইরাকের বিরুদ্ধে জয় লাভ করেছে। অবশেষে যুদ্ধ না করে ফাউ রণাঙ্গন ত্যাগ করে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। এ যুদ্ধ ধৈর্য্য, সাহস, আত্মবিশ্বাস ও ইচ্ছা শক্তির এক চমকপ্রদ ইতিহাস। একথা বললে ভুল হবে না যে শুধুমাত্র ইরানী জনগণের দৃঢ় মনোবলের কারণে ওরা একই ইরাক এবং সকল পরাশক্তির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে সমর্থ হয়েছে। ওদের জেহাদী জোশ সারা বিশ্বকে আত্মত্যাগের তালিম দিয়েছে। তা সত্বেও যুদ্ধ কখনো মঙ্গল বয়ে আনে না এ সত্যটি মানব জাতির নিকট প্রমাণিত হয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে সাদ্দাম হোসেন ও আয়াতুল্লাহ খোমেনী আরও পূর্বে যুদ্ধ না থামিয়ে মহা ভুল করেছিলেন, কেননা হিংসা কখনো শান্তির জন্ম দিতে পারে না। হিংসা থেে হিংসারই উদ্ভব হয়ে থাকে। মানুষের জীবনের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত শান্তি কখনো স্থায়ী হতে পারে না।

চিত্রঃ এসআর-৭১ ব্লাকবার্ড গোয়েন্দা বিমান।
শিস্ দিয়ে উড়ে যায় গোয়েন্দা বিমান
গোয়েন্দা তৎপরতা যুদ্ধে সফলতার জন্য, যথেষ্ট যুদ্ধাস্ত্র, কঠোর প্রশিক্ষণ এবং উচ্চ মনোবলের মতই গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধ জয় শুধু অস্ত্র দ্বারা কখনো সম্ভব নয় যদিনা ওই সমস্ত অস্ত্র চালানোর জন্য কঠোর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, দক্ষ ও সাহসী জনবল না থাকে। খুবই শক্তিশালী ও জানবাজ সেনাদলও বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারে না যদিনা যুদ্ধ পরিকল্পনা সঠিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে করা হয়।
যুদ্ধ আর পাখি শিখার এক কথা নয়। রাতের আঁধারে কোন পত্র পল্লবে ছাওয়া গাছে গুলি করলে হয়ত কোন পাখি মাটিতে লুটিয়ে পড়তে পারে। কিন্তু সঠিক সংবাদ ব্যতীত শত্রু দেশে গোলাবর্ষণ অথবা বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করলে কোন লাভত হবেই না বরং হীতে বিপরীত ফল হতে পারে। এ সত্যকে মনে রেখে বিশ্বের সকল দেশে গোয়েন্দা বাহিনী গড়ে তোলার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। সশস্ত্র বাহিনীতে এ দলের কাজ শত্রুর সঠিক অবস্থান, এর জনবল, অস্ত্রের সংখ্যা ও ধরন, শত্রু অবস্থানের দুর্বলতম স্থান ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করা।
শত্রু দেশের খুবই ভেতরে ব্যক্তির পক্ষে গোয়েন্দা তৎপরতা চালানো কঠিন। শ্লথগতি মানুষের পক্ষে শত্রু দেশের অভ্যন্তরে সামরিক খবরাখবর সহজে সংগ্রহ করা সম্ভব নয় বলে বিমান নির্মাতা দেশের যুদ্ধবিমান ডিজাইনারগণ গোয়েন্দা বিমান নির্মাণের প্রতি মনোনিবেশ করেন। প্রথম দিকেতারা সমকালীন বিমানে বড় বড় ক্যামেরা লাগিয়ে গোয়েন্দাকাজের জন্য ওই সমস্ত বিমান নিয়োগ করতেন। ক্রমে ক্রমে উন্নত বিমান আবিষ্কৃত হয়েছে। যুদ্ধবিমান সাবসনিক থেকে সুপারসনিক গতি পেয়েছে। তখন ডিজাইনারগণ ফাইটার বিমানে ক্যামেরা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি যেমন শক্তিশালী রাডার, বেতার যন্ত্র ইত্যাদি সংযোজন করে গোয়েন্দা কাজের উপযোগি করে ফেলেছেন। আসলে যে কোন ধরনের বিমান বিশেষ করে ফাইটার বিমানে বিশেষ গোয়েন্দা সরঞ্জাম সংযোজন করে বিমানটিকে গোয়েন্দা বিমানে পরিবর্তন করা সম্ভব। কার্গো বিমানও একাজে ব্যবহৃত হতে পারে।
ফাইটার বিমানের সীমিত ক্ষমতা, শত্রুদেশের খুবই অভ্যন্তরে প্রবেশকরে সামরিক সংবাদ সংগ্রহে অপারগতা, এর নির্দিষ্ট গতি এবং সর্বোপরি একজন দক্ষ বৈমানিক হারানোর ক্ষতি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা বিবেচনা করে আমেরিকা ও রাশিয়া শুধু গোয়েন্দা কার্যে ব্যবহারযোগ্য খুবই দ্রুতগতি সম্পন্ন, সাধারণ জঙ্গীবিমান থেকে অনেক বেশি উচ্চতায় উড্ডয়নক্ষম বৈমানিক বিহীন বিমান উদ্ভাবনের পরীক্ষা নীরিক্ষা করে বহু ধরনের গোয়েন্দা বিমান নির্মান করে ফেলল। সেগুলোর কোন কোনটি বৈমানিক ব্যতিত দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করে পরিচালনা করা যেত। কোন কোনটি শত্রু বিমান আক্রমণের আগাম সংবাদ প্রদানের জন্য বিশেষ ধরনের রাডার ও অন্যান্য সরঞ্জামে সজ্জিত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বৈমানিকবিহীন এস-আর-৭১ ব্লাকবার্ড গোয়েন্দা বিমান খুবই দক্ষতার সাথে গোয়েন্দাবৃত্তি সমাপন করত। এ ধরনের বিমান অন্তত: এক হাজার বার রাশিয়া, চীন, মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্যান্য দেশের উর্দ্ধ আকাশে শিস্ দিয়ে অতি উচ্চগতিতে উড়ে গেছে। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট অবস্থানের উপর চক্কর দিয়ে দিয়ে ছবি উঠিয়েছে। কখনো আক্রমণ ফাঁকি দেওয়ার জন্য হঠাৎ করে অনেক উচ্চতায় উঠে গিয়ে এ বিমানের সর্বোচ্চ বেগে আপন ঘাঁটিতে ফিরে যেতে সমর্থ হয়েছে। এ ধরনের বিমান ঘণ্টায় প্রায় তিন হাজার মাইল বেগে এক লক্ষ ফিটেরও উপর দিয়ে উড়ে যেতে সক্ষম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন গোয়েন্দা বিমানও বৈমানিক বিহীনভাবে উড্ডয়নে সমর্থ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাওয়াক বিমান নিজ দেশের অভ্যন্তরে শত্রু দেশের বিমান আক্রমণের সংবাদ আগাম দিতে সমর্থ। অবশ্য এ সময় বিমানটিকে আকাশে উড্ডয়নরত থাকতে হবে এবং এর রাডার চালু থাকতে হবে। এ দেশের এফ-১৯ বিমানটি বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত গোয়েন্দা বিমান। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাওয়াক বিমান ন্যাটো জোটসহ অনেক দেশ সাফল্যের সাথে ব্যবহার করছে।
অপরদিকে রাশিয়ারও রয়েছে টি.ইউ-১২৬ এবং অন্যান্য কয়েক ধরনের শক্তিশালী গোয়েন্দা বিমান। এদেশের বিমানগুলো ওয়াশজোট এবং নিজ দেশের পক্ষে কাজ করছে। বৃটেন, জার্মানী ও ইতালীর যৌথ প্রচেষ্টায় নির্মিত টরনেডো বিমান যুদ্ধও গোয়েন্দা কাজে দক্ষ।
বর্তমান যুগ মহাশূন্য যাত্রার যুগ। পরাশক্তিগুলো অনুধাবন করতে সমর্থ হয়েছে যে বৈমানিক বিহীন গোয়েন্দা বিমানের কাল ফুরিয়ে এসেছে। তাই সেগুলো ক্রমে তাদের বিভিন্ন যাদুঘরের শোভাবর্ধন করছে। কারণ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির দান গোয়েন্দা উপগ্রহগুলো খুবই নিখুতভাবে সামরিক তথ্য সংগ্রহে সমর্থ। এগুলোর কাজে কোন দেশই সহজে বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। পক্ষান্তরে অপরদেশে তথ্য সংগ্রহরত যেকোন গোয়েন্দা বিমানের এন্টি এয়ারক্রাফটগানের গুলি খাওয়ার ঝুকি নিতে হয়। শত্রু বিমানের ধাওয়া খেয়ে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে হয়। রিমোট কন্ট্রোলের ত্রুটির দরুন বিধ্বস্ত হওয়ার দৃষ্টান্ত ও বিরল নয়। গোয়েন্দা তৎপরতার জন্য পরিবর্তিত সাধারণ ফাইটার জঙ্গী বিমানগুলোর অবস্থান আরও নাজুক।
সোভিয়েট রাশিয়া, আমেরিকা, চীন, ফ্রান্স, বৃটেন ইত্যাদি দেশ মহাশূন্যে তাদের বহু উপগ্রহ প্রেরণ করেছে। এদের বহু গোয়েন্দা উপগ্রহ আজ পৃথিবী থেকে বহু দূর দিয়ে তাদের কক্ষপথ অতিক্রম করছে। ক্রমাগত গোয়েন্দা উপগ্রহগুলো খুবই বিশ্বস্ত সেবকের মত নিখুত ভাবে তাদের কাজ সমাপন করে যাচ্ছে। টি ভি ক্যামেরার সাহায্যে অনবরত বিশ্বের সকল দেশের সামরিক অবস্থানগুলোর ছবি স্ব স্ব দেশের কন্ট্রোল রুম গুলিতে পাঠিয়ে যাচ্ছে। অস্ত্র বিক্রয়ের মত পরাশক্তিগুলো গোয়েন্দা উপগ্রহ প্রেরিত তথ্য যুদ্ধরত দেশগুলোর নিকট বিক্রয় করে লুটছে লাখ লাখ ডলার। ইরাক ইরান যুদ্ধের সময়ও নাকি উভয়দেশ গোয়েন্দা উপগ্রহপ্রেরিত তথ্যের জন্য বৃহৎ শক্তির নিকট ধর্না দিয়েছে। কোন কোন সময় কোন বিশেষ দেশের প্রতি বিশেষ শত্রুতার কারণে ভুল তথ্য সরবরাহ করেছে। ফলে দেশটি যুদ্ধের ময়দানে খেয়েছে দারুন মার। বিশ্ব শিখেছে যুদ্ধ তথ্যের জন্য অপরের উপর নির্ভর করলে অবশ্যই পরাজয় বরণ করতে হবে।
যুদ্ধে ব্যবহৃত পরিবহন বিমান

(An AC-130U releasing flares)
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা উপগ্রহগুলোর নাম খুবই অদ্ভূত। যেমন বিগবার্ড ল্যান্ডবার্ড ল্যা-স্যাট, সি ম্যাট, ম্যাসটিগ স্কাই আই, ফায়ার বি ইত্যাদি। এগুলো সোভিয়েট রাশিয়া, চীন এবং
অন্যান্য দেশের সামরিক ঘাঁটির ছবি তুলে থাকে। গোয়েন্দা উপগ্রহের প্রেরিত বিভিন্ন ছবি থেকে সামরিক বিশেষজ্ঞগণ শত্রুদেশের দুর্বলতম স্থান, সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ সামরিক চৌকির অবস্থান, স্থল, জল ও নৌ আক্রমণের সম্ভাব্য পথ ইত্যাদি নির্ণয় করে থাকেন। এদের প্রেরিত তথ্য বিশ্লেষণ করে এত নিখুত তথ্য পাওয়া যায় যে অস্ত্রের সংখ্যা, অস্ত্রের অবস্থান, অস্ত্র স্থাপনার দিক অস্ত্রের ধরণ ইত্যাদি সকল কিছু বিশেষজ্ঞগণ সহজে নির্ণয় করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ফ্রান্স সোভিয়েট ও মার্কিন পত্র পত্রিকায় বিভিন্ন দেশের অস্ত্র শস্ত্রের যে সমস্ত ছবি ও তথ্য সরবরাহ করা হয় সেগুলোর প্রায় সকলগুলোই উপগ্রহের প্রেরিত বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে নির্ণয় করে পত্রিকায় পাঠানো হয়। আমেরিকান মত সাবেক সোভিয়েট রাশিয়ারও বেশ কিছু উপগ্রহ আকাশে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্যে জুড়ে বেড়াচ্ছে। প্রেরণ করছে ন্যাটো জোট, চীন ও অন্যান্য সকল সম্ভাব্য শত্রু দেশের সামরিক স্থাপনার ছবি ও অন্যান্য তথ্য। বর্তমানে রাশিয়ার কসমস ও সুয়ুজ সিরিজের বহু গোয়েন্দা উপগ্রহ মহাকাশে টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে। এ দুদেশ ছাড়াও আরও কয়েকটি বৃহৎ শক্তি তাদের নগণ্য সংখ্যক গোয়েন্দা উপগ্রহ আকাশে প্রেরণ করেছে। বৃহৎ শক্তিগুলোর সামরিক গোয়েন্দাসমূহ আজ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের জন্য গোয়েন্দা উপগ্রহের উপর নির্ভর করছে। ওরা প্রাপ্ত তথ্য সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণ করে সর্বাধুনিক তথ্য সদাই তাদের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর নিকট পাঠিয়ে চলছে।
আকাশের গোয়েন্দা উপগ্রহ ভবিষ্যতে নতুন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। আজ দিকে দিকে ষ্টার ওয়ার বা এস.ডি. আই এর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সম্ভবত: কোন একদিন এ পৃথিবীর মতই নিকট মহাকাশে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে। গোয়েন্দা এবং সামরিক উপগ্রহ ধ্বংসের জন্য পরাশক্তিগুলো একে অপরের দিকে নিক্ষেপ করবে লেসার অস্ত্র। বিষাক্ত হবে পবিত্র মহাশূন্য। হয়ত তখন একে একে সকল উপগ্রহ আকাশ থেকে বিদায় নিবে অথবা আহত অবস্থায় অকেজো হয়ে ভাসতে থাকবে শূন্যালোকে অনন্তকাল।
কিন্তু তবুও এ পৃথিবীর যুদ্ধ ও গোয়েন্দা তৎপরতা বন্ধ হবে এমন আশা করা যায় না। যতদিন হিংসা ও স্বার্থের হানাহানি থাকবে আকাশে অন্তত: সাধারণ গোয়েন্দা বিমান অথবা হেলিকপ্টার উড়বে। দেশের অভ্যন্তরে অথবা সীমান্তে অথবা শত্রুদেশের ভিতরে শত্রুসেনার অবস্থান খুজে বেড়াবে। দেশের স্বার্থে মরণঝুকি নিয়ে সাহসী বৈমানিকের দল গোয়েন্দা বিমান নিয়ে সহস্র কালনাগিনীর ডাকের মত শিস দিয়ে দ্রুত গতিতে উড়ে থাকে।
ক্যারিয়ারে যুদ্ধবিমানের ঝাঁক

চিত্রঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী জাহাজ এন্টারপ্রাইজ। এর বুকে বিমানের ঝাঁক।
পুরাকালে জলদস্যুর দল সমুদ্রে জাহাজ নিয়ে ঘুড়ে বেড়াত। তাদের জাহাজে থাকত ডাকাতি করার জন্য নানা রকমের অস্ত্র। তারা ছিল সমুদ্রের বাদশাহ। সাগর মহাসাগরে এদের অস্তিত্ব আরো আছে। তবে সভ্যতার অগ্রগতিতে কমে গেছে তাদের প্রতাপ। সোমালিয়ার জলদস্যুরা এর প্রমাণ।
আজ পরাশক্তিগুলোর নৌবাহিনী নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণা করে সাগর মহাসাগরে বড় বড় যুদ্ধজাহাজ, ডুবো জাহাজ, ফ্রিগেট, ডেস্ট্রয়ার, ক্রুজার, গানকোট ইত্যাদি নিয়ে ভেসে বেড়ায়। কোন কোন নৌদলের সাথে থাকে এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার নামে বড় বড় যুদ্ধ জাহাজ। এগুলোর কাঁধে সওয়ার থাকে যুদ্ধ বিমান ও হেলিকপ্টার গান শীপের ঝাঁক। এরা জাহাজে চড়ে সাগর মহাসাগরে ঘুড়ে বেড়ায়। কখনো হাইকমান্ডের নির্দেশে জাহাজের ডেক থেকে দ্রুত আকাশে উড়ে যায়। কোন দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। হার্মাদ দস্যুদের মতই নিক্ষেপ করে অস্ত্র চালায় ধ্বংযজ্ঞ এবং অবশেষে নিজস্ব ক্যারিয়ারের সুখের আশ্রয়ে ফিরে যায়। এরাই বর্তমান বিশ্বের সমুদ্র তথা পৃথিবীর বাদশাহ। এদের দুর্দান্ত প্রতাপে বিশ্বের ক্ষুদ্র ও দুর্বল দেশগুলো এদের সমিহ করে চলতে বাধ্য হয়।
এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার থেকে উড্ডয়ন করে ১৯৮৬ সালে লিবিয়া আক্রমণ করেছিল এমন বহু যুদ্ধ বিমান।
বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজের ধারণা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় থেকে শুরু হয়েছে। জাপান আমেরিকার পার্লহাবারস্থ নৌঘাটি আক্রমণ করেছিল বিমানবাহী জাহাজ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে যুদ্ধ বিমান পাঠিয়ে। বৃটেন বৃটিশ সাম্রাজ্যের সর্বত্র তার যুদ্ধ বিমান পাঠাত জাহাজে করে। জার্মানীও তার জঙ্গিবিমানগুলো রণাঙ্গনের কাছাকাছি তাদের বিমান ঘাটিতে পাঠাত জাহাজে করেই। ক্রমে আমেরিকাও তাদের ফাইটার ও বোমারুগুলো জাহাজে করেই দূরের ঘাটিগুলোতে তাদের বিমানশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য প্রেরণ করে থাকত।
কালের বিবর্তনে দ্রুতগতিসম্পন্ন বিমান নির্মিত হয়। বৃহৎ শক্তিগুলো যুগের সাথে তাল মিলানোর জন্য বৃহৎ ও প্রশস্ত বিমানবাহী জাহাজ নির্মাণ করে। আধুনিক যুদ্ধে বিমানবাহী জাহাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮২ সালে ফকল্যান্ড যুদ্ধের সময় গ্রেটবৃটেন শুধুমাত্র তার বিমানবাহী জাহাজ থেকে আর্জেনিনিনার সেনা ও নৌ অবস্থানে বিমান আক্রমণ চালিয়ে দেশটিকে পর্যুদস্ত করতে সমর্থ হয়েছিল এবং জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল। এ যুদ্ধে আমেরিকাও বৃটেনকে সমর্থন দিয়েছিল এবং এর নৌ বহর ফকল্যা-ের দিকে অগ্রসর হয়েছিল। নৌ বহরটির মূল শক্তি ছিল একটি বিমানবাহী জাহাজ এবং এর উপর সওয়ার বিমানবহর। যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রাম্যমান বিমানবাহী জাহাজগুলোর মধ্যে এন্টারপ্রাইজ, কিটিহক, নিমিজ, আইজেন হাওয়ার, কোরাল সি, কালভিংসর, মিডওয়ে, কনস্টিলেশন ইত্যাদি বিখ্যাত। এ দেশের আরও অনেকগুলো ছোট বড় জাহাজ আছে যেগুলো বেশ কয়েক স্কোয়াড্রন এ্যারোপ্লেন ও কিছু সংখ্যক হেলিকপ্টার নিয়ে সমুদ্রে ভেসে বেড়ায়, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমেরিকার সপ্তম নৌবহরের সাথে তার বিমানবাহী জাহাজ এন্টারপ্রাইজ বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়েছিল। ১৯৮১ সালে ভূমধ্যসাগরে লিবিয়ার সমুদ্র সীমানার নিকটে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমানবাহী জাহাজের বিমান লিবিয়ার দুটি টহলরত মীগ ধ্বংস করে। ১৯৮৮ সালে উপসাগরে অবস্থানরত মার্কিন নৌবহরের বিমানবাহী জাহাজের বিমান ও হেলিকপ্টার বহু বার ইরানী লক্ষ্যবস্তুর উপর হামলা চালায়।
https://encrypted-tbn3.gstatic.com/images?q=tbn:ANd9GcRn4da0_mpDw1v7r754R2qAT8982_O_mqjXsNdidibMC4-yoFJB
চিত্রঃ উপকূলের ভাসমান ডেকের উপর একটি হ্যালিপ্যাড।
১৯৮৯ সালে মার্কিন বিমানবাহী জাহাজের দুটি এফ-১৪ যুদ্ধ বিমান লিবিয়ার দুটি মীগ-২৩ বিমানগুলি করে ভূপাতিত করে। ষষ্ঠ নৌবহরের এ বিশাল জাহাজটির নাম ইউ এস এস এফ কেনেডী। ১৯৮৬ সালেও আমেরিকার বিমানবাহী জাহাজ থেকে গাদ্দাফীকে হত্যঅর জন্য বিমান হামলা চালিয়েছিল। আমেরিকার বিমান বাহী জাহাজ এফ-১৪, এফ-১৮, এ-৬, এ-৭ ইত্যাদি যুদ্ধ বিমান বহন করে। অপরদিকে বৃটেন তার বিমান বাহী জাহাজে সিহ্যারিয়ার, স্কাইজাম্প জেট ইত্যাদি বহন করে থাকে। রাশিয়ার ও আছে শক্তিশালী বিমান বাহী নৌবহর। এরাও সমুদ্র থেকে সমুদ্রে ঘুড়ে বেড়ায়। ইদানিং ভারত বৃটেন থেকে একটি বিমানবাহী জাহাজ পেয়েছে। ১৯৭১ সালেও এর বিক্রাস্ত নামে একটি বিমানবাহী জাহাজ ছিল।
চনি দেশ ও এ ধরনের বহর গড়ে তোলার চেষ্টায় আছে। এর ভাসমান ডেকে সমুদ্র হেলিকেপ্টার বহরের সংখ্যা নগণ্য নয়। অবশ্য এসকল ডেক থেকে যাত্রীবাহী হেলিকপ্টারের সাহায্যে উপকুল থেকে তৈল মঞ্চ, সমুদ্রের বিভিন্ন দ্বীপ অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোন অবস্থানের সাথে সেতু রচনা করা হয়। প্রয়োজনে সমুদ্রে উদ্ধার কার্য চালানো যায়। চোরা কারবার রোধের জন্য গোয়েন্দা হেলিকপ্টারের টহলকার্য জোরদার করা যায়। ভাসমান ডেক অবশ্যই বিমানবাহী জাহাজ নয় তবে প্রয়োজনে এগুলোকে অন্য হাজাজ দিয়ে টেনে একস্থান থেকে অপর স্থানে স্থানান্তর করা যায়। শান্তির সময় বিভিন্ন উন্নত দেশের সামুদ্রিক উপকূলীয় অঞ্চলের ভাসমান হ্যালিপ্যাড নিঃসন্দেহে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে।
বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ ও শান্তিতে উন্নততর বিমানের ব্যবহার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। রণক্ষেত্রের আকাশে বিমানযুদ্ধ নিঃসন্দেহে অপূর্ব। যুদ্ধরত দুই ঝাঁক শত্রু বিমানের আশ্চর্য রণকৌশল অবলোকন করার জন্য মানুষ মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে ট্র্যঞ্চ থেকে বের হয়ে আসে। আশ্চর্য হয়ে অপলক দৃষ্টিতে ধাওয়া, পাল্টাধাওয়া, বোমাবর্ষণ, রকেট ও মিসাইল নিক্ষেপ, শত্রুবিমানের প্রতি পরষ্পরের গুলিবর্ষণ এবং ডগফাইটের অন্যান্য কৌশল সম্মোহিতের মত দেখতে থাকে। রাতের আকাশযুদ্ধ আরও মনোরম, ভয়াল রাত্রির নিথর নিরবতা খান খান করে ভঙ্গ করে ফাটতে থাকে বোমা। অগ্নি দ্রুত চারিদিকে ছরিয়ে পড়ে। বিমান ঘাটি থেকে প্রচ- গর্জন করে আকাশে উড়ে আক্রান্ত দেশের বিমানের ঝাঁক। ওরা মুখোমুখি হয়। এলোপাথারি ছুটতে থাকে উভয় দেশের বিমানের অগ্নিময় গুলি। যেন ঝাঁকে ঝাঁকে উল্কা উড়ে যাচ্ছে। নিুে আতশবাজির মত ফাটছে এন্টি এয়ারক্রাফট গানের আগুনে গোলা। বিমান যুদ্ধ সাহসী বৈমানিকদের রক্তে আগুন জ্বালায়। তারা ভুলে যায় দেশে অথবা বিমানবাহী জাহাজে নিজেদের ঘাটিতে ফেরার কথা। পৌছেন তাদের কানে নিুে জ্বলন্ত জনপদ ও কাল দরিয়ার যুদ্ধ জাহাজের বাসিন্দাদের আর্তচিৎকার। এক সময় হয়ত তাদের কারো বিমানে দাউ দাউদ করে জ্বলে উঠে আগুন।
বিমানযুদ্ধ আধুনিক যুদ্ধ কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যুদ্ধে শত্রু বিমান ঘাটি, বিমানবাহী জাহাজ, রণতরী, সামরিক ছাউনিতে বোমাবর্ষণ এবং শত্রু বিমানের পরষ্পরের মাঝে ডগ ফাইট কখনো যুদ্ধ আইনের লঙ্ঘন নয়। তবে জনপদ, বিদ্যাপীঠ, ধর্মস্থান, হাসপাতাল ইত্যাদির উপর বোমাবর্ষণ সমর্থন করা যায় না। শত্রুবিমান জুজুর ভয়ে বৃহৎশক্তি অথবা যে কোন দেশের সামরিক বাহিনীর শত্রুদেশের যাত্রীবাহী বিমান গুলি করে নিরপরাধ যাত্রীদের হত্যা করা কখনো যুদ্ধ আইনের অংগ নয়। সন্দেহ নাই লিবিয়া ও ইসরাইল একে অপরের শত্রু। কিন্তু ইসরাইলের যুদ্ধ বিমানের লিবিয়ার যাত্রীবাহী বিমানগুলি করে ধ্বংস করে দেওয়া ঠা-া মাথায় সন্ত্রাসবাদ ব্যতীত আর কিছু ছিল না। ১৯৮৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর রাশিয়ার মীগ বিমান ২৬৯ জন যাত্রীসহ দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বোয়িং যাত্রীবাহী বিমান গুলি করে এবং বিমানটি সমুদ্রবক্ষে নিমজ্জিত হয়। ১৯৮৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইরাক ইরান যুদ্ধের সময় মার্কিন বিমানবাহী জাহাজ বহর থেকে মিশাইল নিক্ষেপ করে দুই শতাধিক যাত্রীসহ একটি যাত্রীবাহী ইরানী বিমান ধ্বংস করা হয়। গনগনে আগুনের লেলিহান কুন্ডে প্রজ্জলিত বিমান উপসাগরে পতিত হয়। এ দুটো ঘটনাকে কখনো বিমান যুদ্ধের উদাহরণ বলা যায় না। হয়ত এগুলো তাদের শক্তির দম্ভ অথবা গোয়েন্দা ব্যবহার ত্রুটির ফল। বিশ্ব মানবতাকে ধ্বংস থেকে রক্ষার জন্য পরাশক্তিগুলোর অহেতুক দম্ভ ত্যাগ করা উচিত, ত্রুটিমুক্ত করা উচিত তাদের গোয়েন্দা ব্যবস্থা।

চিত্রঃ পারমাণবিক শক্তিচালিত মার্কিন বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস জর্জ ওয়াশিংটন। ইনসেট: এই জাহাজের যুদ্ধবিমানগুলি পরীক্ষা করা হইতেছে।
বীর বাঙ্গালী বৈমানিকদের গাঁথা

চিত্রঃ(Bangladesh Air Force MiG-29 Taking Part in Flypast of victory day, 2012./ আকাশে বি এ এফের মিগ- ২৯ বিমান।)
স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্ত আকাশে আজ এদেশেরই দামাল ছেলেরা জঙ্গী বিমান নিয়ে বিদ্যুৎ বেগে আকাশের নিলিমা ভেদ করে উড়ে বেড়ায়। বাংলার আকাশ মুক্ত রাখার অঙ্গিকার দ্রুতবেগে ওরা তাঁদের বিমান নিয়ে আকাশে বিপজ্জনক মহড়া চালিয়ে যায় নির্ভিক চিত্তে। সম্ভবত: বর্তমান বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাহসী বাঙ্গালী বৈমানিকগণ উড়ে চলেছেন এক ঝাঁক যুদ্ধবিমান নিয়ে
ভারতের বিমান বাহিনীতেও বাঙ্গালী বৈমানিকদের সংখ্যা নগণ্য নয়। স্বাধীনতা উত্তরকালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বহু সাহসী বাঙ্গালী বৈমানিক বিভিন্ন যুদ্ধে সৃষ্টি করেছিলেন বীরত্বের অমর গাঁথা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এদের কারণে কারো নাম অমর হয়ে ঠাঁই পেয়েছে। এ ইতিহাসে সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং ফ্লাইট লেফটেনেন্ট মতিয়ুরের নাম চিরদিন রক্তের প্রখরে লিখা থাকবে।
পাকভারতের স্বাধীনতা বহু বাঙ্গালীকে বৈমানিক হতে সুযোগ করে দিয়েছিল। অতঃপর বাংলাদেশের উদ্ভবে এ সুযোগ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু বাঙ্গালীর উড্ডয়নের ইতিহাসে প্রথম চমক সৃষ্টি করেছিলেন। একজন বেলুন বীর ১৮৮৯ সালে। বেলুনই ছিল সে যুগের বিমান। বৃটিশ ভারতে জন্মগ্রহণকারী যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম বেলুন চালাতে সমর্থ হয়েছিলেন তিনি একজন বাঙ্গালী। তাঁর নাম ছিল রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। অবশ্য তিনিই এ উপমহাদেশে সর্বপ্রথম বেলুনে উড্ডয়ন করেন নাই। বৃটিশভারতে বেলুনে আকাশ ভ্রমণের ইতিহাস আরও বহু পুরানো। বেলুন আবিষ্কারের দুবছরের মধ্যেই কলকাতায় একজন বিদেশী সর্বপ্রথম বেলুন নিয়ে আকাশে ডানা মেলেছিলেন। তার নাম ছিল মি: উইন্টম। ২৯ জুলাই ১৭৮৫ সালে তিনি কলকাতার কোন এক স্থান থেকে আকাশে উড়ে ভারতে বেলুনের প্রবর্তন করেন। অতঃপর একজন ফরাসী বেলুন চালক ১৮৩৬ সালে কলকাতার গার্বেনরীচের এক বাগান থেকে বেলনে আরোহন করে বেশ কিছুদূর উঠে দুর্ঘটনায় পতিত হন। তিনি বেলুন সহ মাটিতে আছড়ে পড়েন। আহত হন তিনি। তাঁর নাম ছিল রবার্টসন। অতঃপর এদেশে আসেন বাঙ্গালী বেলুন চালক জানার রামচন্দ্রের প্রশিক্ষক পার্সিডাল স্পেন্সার। এ দেশে তিনি এসেছিলেন ১৮৮৯ সালে। কলকাতায় তিনি সে সময় কয়েকটি বেলুন প্রদর্শনির আয়োজন করেছিলেন। এ সময় জানার রামচন্দ্র তাঁর নিকট থেকে বেলুনে উড্ডয়ন শিক্ষা করেন এবং ‘ভাইসরয়’ নামক বেলুনে একবার আকাশে উড্ডয়ন করেন। কয়লা গ্যাস দ্বারা এ বেলুন, আকাশে উড্ডয়ন করত। এরপর তিনি নিজেই একটি বেলুন বানিয়ে ফেলে। এর নাম দেওয়া হয় ‘সি সিটি অব ক্যালকাটা’। এটিতে তিনি একাই ১৮৮৯ সালের ৪ঠা মে আকাশে উড্ডয়ন করেন, এটি ৪০০০ ফুট উপরে উঠেছিল এবং ৪০ মিনিট আকাশে ছিল। এ থেকেই হয়েছিল তাঁর বেলুনের যাত্রা শুরু। তিনি গঠন করেছিলেন চ্যাটার্জী বেলুন কোম্পানী। এ কোম্পানীর পক্ষে তিনি কলকাতা, এলাহাবাদ ও ঢাকায় বহুবার তাঁর বেলুনে উড্ডয়ন করেছিলেন। দেশে ও শুনে চমকিত হয়েছিল বৃটিশ ভারতের মানুষ।
ক্রমে বহু সময় বয়ে গেছে। আবি®কৃত হয়েছে ধাতব বিমান। বৃটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর কল্যাণে ভারতের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত হয়েছে বিমান ঘাঁটি। এসেছে বিমানবহর। সে সময় মূলত: বৃটেনবাসী ইংরেজগণ সে সব বিমান পরিচালনা করতেন। প্রথম মহাযুদ্ধে বৃটিশ বিমান বাহিনীতে কোন বাঙ্গালী বৈমানিক ছিলেন কিনা এ এখন আর জানার উপায় নেই। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পূর্বে ভারতীয় কিছু লোক বৈমানিক হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। এদের মাঝে কতজন বাঙ্গালী ছিলেন তাও আজ জানার কোন উপায় নেই। ইতিহাসে শুধু ওই সকল বৈমানিকদের নাম খুজে পাওয়া যায় পাঁচ অথবা ততোধিক শত্রুবিমান ধ্বংস করে এসে (অপব) নামের বিশেষ সম্মান পেয়েছেন। এ তালিকায় কোন বাঙ্গালীর নাম অনুপস্থিত।
বাঙ্গালী বৈমানিকদের ইতিহাসে যিনি সর্বপ্রথম এটা (অপব) উপাধি লাভ করেন তার নাম জনাব আলম। তিনি এ সম্মান লাভ করেন ১৯৬৫ সালের পাকভারত যুদ্ধে। তখন তিনি ছিলেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন স্কোয়াড্রন লীডার।। বাঙ্গালী এ স্কোয়াড্রন লীডার সে যুদ্ধে হয়ে উঠেছিলেন ভয়ঙ্কর। সারপোদা বিমান ঘাটির উপর তিনি দুর্দান্ত তেজে স্যাবর জেট নিয়ে ভারতীয় বিমান বহরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তিনি ৬ই সেপ্টেম্বর দুটি, ৭ই সেপ্টেম্বর পাঁচটি এবং ১৭ই সেপ্টেম্বর দুটি অর্থাৎ সর্বমোট নয়টি বিমান ধ্বংস করে হয়েছিলেন জেট বিমান যুগের প্রথম এসে (অপব)। তাঁর ৭ই সেপ্টেম্বরের যুদ্ধটি ছিল খুবই রোমাঞ্চকর। সে দিন তিনি ছয়টি ভারতীয় হান্টারের একটি ঝাঁকের উপর হামলা চালান। সুযোগ বুঝে একটি হান্টারকে তিনি তাঁর বিমানের সাইড উইন্ডার মিসাইলের আঘাত হানেন। ধ্বংস হয় সেটি। অতঃপর তরিৎ গুলি করে ধ্বংস করেন আরো চারটি বিমান। অপর হাণ্টারটি কোনক্রমে পলায়ন করে।
বাঙ্গালী বৈমানিকদের মধ্যে সে সময়ের স্কোয়াড্রন লীডার আলমের সম্মান যুদ্ধের ইতিহাসে খুবই সুলভ। বাংলার অপর একজন দামাল ছেলে জানার সাইফুল আজম আরব ইসরাইল যুদ্ধে জর্ডানের পক্ষে যুদ্ধ করে আধুনিক বিমান যুদ্ধের ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। সে যুদ্ধে তিনি ধ্বংস করেছেন চারটি ইসরাইলী জেট জঙ্গী বিমান। তাঁর বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তিনটি দেশ তাকে দিয়েছে চারটি যুদ্ধ পদক। তার এ সম্মন বাঙ্গালী জাতির অহংকার।
এরা ব্যতীত আরও বাঙ্গালী বৈমানিক ছিলেন এখনো আছেন। এরা সকলেই দুঃসাহসী। বিমান কাহিনীর ইতিহাসে এরা অমর হয়ে থাকবেন।
বেসামরিক বৈমানিকগণও যুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ার লাইনের বাঙ্গালী বৈমানিক ক্যাপ্টেন খালেক, ক্যাপ্টেন শাহাব উদ্দিন, ক্যাপ্টেন আকরাম, ক্যাপ্টেন শরফুদ্দিন, ক্যাপ্টেন কাজী আবদুস সাত্তার, ক্যাপ্টেন আব্দুল মুকিত প্রমুখ বাংলাদেশ বিমানের জাইলগ্ন থেকে (২৮/৯/১৯৭১) দেশ সেবায় নিয়োজিত হয়েছিলেন। তাঁরা দেশের স্বাধীনতার জন্য সেকালের স্বল্পগতি সম্পন্ন বিমান নিয়ে বিবিধ অপারেশনে যেতেন।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেকালীন সময়ে ব্যবহৃত অটার (ডিএইচসির) ১৯৩৫ সালে নির্মিত ম্যাকডোগল এন্ড ডগলাস কোম্পানি নির্মিত ডিসি-৩ বিমান এবং এ্যালিউট নামের পৈর্বো শ্যাফট ইঞ্জিন সংযোজিতে ছোট একটি হেলিকপ্টার। এগুলো যুদ্ধ উপযোগী করেছিলেন পাকিস্তান বিমান বাহিনী থেকে পলাতক কারিগরী শাখার দক্ষ বৈমানিকগণ। সংস্কারের মাধ্যমে প্রেট এন্ড দুইটনি ১৩/১৪ পিস্টন ইঞ্জিন সংযোজিত অটারটিকে ফাইটার কাম বোম্বারে পরিণত করা হয়েছিল। এ বিমানে ১৫ পাউন্ড ও ৩০ পাউন্ড ওজনের ১০টি বোমা, দুই ডানার নিচে সংযোজিত ট্রাসে ২টি করে মোট ৪টি রকেট পড বহন করা যেত। প্রতিটি পড়ে মোট ৮টি করে ২০ পাউন্ড ওজনের ৩২টি রকেট বহন করা যেত। সে বিমান থেকে হাত দিয়ে পিন খেলে বোমা ধাক্কা দিয়ে ফেলতে হত। ডিসি-৩ (ডাডকোটা) বিমানটিকে প্যারাট্রপার ও যুদ্ধসামানী ড্রপ করার উপযোগী করা হয়েছিল এর পেছনের কার্গো হ্যাচ (কপাই) খুবে ফোলা। হেলিকপ্টারটিকে যুদ্ধ উপযোগী করা হয়েছিল এর দরজায় স্বয়ংক্রিয় বন্দুক এবং ফিউজলেজের উভয় পাশে রকেট বাড সংযোজন করে। পি আই এর উল্লিখিত বৈমানিক এগুলোতে যুদ্ধ অপারেশনে যেতেন। স্বাধীনতার পর তাঁদের অধিকাংশ বাংলাদেশ বিমানে যোগ দেয়।
১৯৭১ থেকে ২০০২। এ বিশাল সময়ের মাঝে বাংলাদেশের বহু বেসরকারী বিমান ও হেলিকপ্টার সার্ভিস জন্ম দিয়েছে। সেগুলেতে যোগ দিয়েছেন বিবিধ শাখার বহু বৈমানিক। কেউ কেউ জীবনের ঝুকি নিয়ে যাত্রী ও বিমান বাচানোর তাগিদে দুঃসাহসী ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৯৮ সালের ২৮ এমন একটি ঘটনার জন্য সুপরিচিত হয়েছেন এয়ার পারাবতের ক্যাপ্টেন এহসান। সেদিন সাভারের একটি পাট ক্ষেতে তাঁর বিমানটিকে সফলতার সাথে আপদকালীন অবতরণ করিয়েছিলেন। এই সাহসী বৈমানিক এদেশের এ্যারোবেঙ্গল ইতিপূর্বে কর্মরত ছিলেন এবং ফ্রাইং একাডেমী বাংলাদেশের প্রধান উড্ডয়ন প্রশিক্ষক।
এদেশের মেয়েরাও বৈমানিক হিসেবে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। এদেশের প্রথম মহিলা পাইলট ক্যাপ্টেন রোখশানাও ছিলেন পুরুষ বৈমানিকদের মত নির্ভয়। তিনি এক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করেন। তারপরও বহু মহিলা বৈমানিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। কর্মরতও আছেন কেউ কেউ ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর এয়ারপারাবত ফ্লাইং একাডেমীর সেসন-১৫০ চালাতে গিয়ে মারা গেলেন হজ্জ উড্ডয়ন প্রশিক্ষক ফারিয়া লারা। সেদিন তিনি ও সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বরিশাল বিমান বন্দরে ল্যা-িং অনুশীলন শেষে ফিরে আসছিলেন। ওদের বিমান সেদিন ১০টা ৩০ মিনিটের সময় ঢাকার পোস্তাগোলার নিকট বিধ্বস্ত হয়। সাহসী বৈমানিকেরা কখনো মরে না।
বিমানবাহী জাহাজ ও আধুনিক যুদ্ধ
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ফরাসী বিমানবাহী জাহাজ ক্লিমেঞ্চু পূর্ব ভূমধ্যসাগরের দিকে এগিয়ে চলেছেÑ ইউএনবি/এএফপি
১৯৯০ সালের ২রা আগষ্ট। সারা পৃথিবীকে চমকে দিয়ে হঠাৎ ইরাক কুয়েত দখল করে ফেলল। মধ্য প্রাচ্যের দুর্বল রাজাগণ আপন অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বৃহৎ শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপ কামনা করলেন। ফ্রান্স, বৃটেন, আমেরিকা ইত্যাদি পরাশক্তিগুলো মহাসমুদ্রের ওপার থেকে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ইরাকের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিল। আদেশ পেয়ে তাদের নৌবহর শাস্ত মহাসাগরগুলোর অবাধ জলরাশী তোলপার করে এগিয়ে চলল উপসাগরের দিকে। সেগুলোর সঙ্গনিল বিশাল বহু বিামনবাহী জাহাজ। এদের কাঁধে সওয়ার হয়ে এগিয়ে চলেছে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ বিমান ও হেলিকপ্টার গান শীপের ঝাঁক। হয়ত কখনো জাহাজের ডেক হতে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাবে সে বিমান। প্রচ- শক্তি নিয়ে হামলা চালাবে শত্রু অবস্থানের উপর।
ভূমধ্যসাগরে প্রেরিত মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ‘সারাটোগার’ ফ্লাইট ডেক হইতে উড্ডয়নের প্রস্তুতি লইতেছে একটি অত্যাধুনিক জঙ্গী বিমান।
আক্রমণ শেষে অবশ্যই কিছু বিমান পুনঃ ফিরে আসবে বিমানবাহী জাহাজে। ফেরার পথে যদি কোন বিমানের জ্বালানির অভাব হয় তবে নিকটবর্তী কোন বিমান ঘাটি থেকে উড়ে আসবে ট্যাঙ্কার বিমান এবং উড্ডয়নরত অবস্থায়ই সে বিমানে করবে জ্বালানি সরবরাহ। অবশ্য জাহাজ থেকে যদি গন্তব্য বহু দূর হয় তবে একই পদ্ধতিতে জ্বালানি সরবরাহ করা হয়।
কে সি-১৩৫ ট্যাঙ্কার বিমান। একটি যুদ্ধ বিমানে জ্বালানি সরবরাহ করছে
বিমানবাহী জাহাজের ধারণা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় থেকে শুরু হয়েছে। জাপান আমেরিকার হাওয়াই দ্বিপের পার্ল হার্বারস্থ স্থাপনায় বিমানের সাহায্যে আঘাত হেনেছিল আর সে বিমানগুলি লক্ষ্যবস্তুর উদ্দেশ্যে উড়ে গিয়েছিল বিমানবাহী জাহাজ থেকে।
অবশেষে সমাপন হল স্মরণকালের সর্বাধিক ব্যয়বহুল যুদ্ধ। উপসাগরীয় অঞ্চলে কুয়েতকে ইরাকের দখলদারী হইতে মুক্ত করার জন্য এ যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে গঠিত বহুজাতিক বাহিনী ইরাকের ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালায় এবং ইরাকী বাহিনীকে কুয়েত হতে হটিয়ে দেয়। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর ইরাক ১৯৯১ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব মেনে নেয় এবং যুদ্ধের অবসান হয়।
এই যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরীয় অঞ্চলে ৪ লাখ ১৪ হাজার স্থলসেনা, ১০০০ ট্যাংক, ২০০০ সাক্ষরিক যান, ১৫০০ হেলিকপ্টার, ১৩০০ যুদ্ধবিমান, ১০৮টি নৌ যুদ্ধ জাহাজ প্রভৃতির সমাবেশ ঘটিয়েছিল। ইরাকের ছিল ৫ থেকে ৭ লাখ সৈন্যের ৬০ ডিভিশন স্থলবাহিনী, ৭০০ যুদ্ধ বিমান, ২৫০টি বোমারু বিমান, ৪০০০টি ট্যাংক, ২৭০০ সামরিক যানবাহন, ৩০০০ কামান ও প্রচুর রাসায়নিক অস্ত্রের এবং বিশাল সাক্ষরিক বাহিনী। ন্যাটোর হেড কোয়ার্টার হিসেবে তুরস্কে সমাবেশ ঘটানো হয়েছিল বেলজিয়াম, জার্মানী ও ইটালীয় বিমান বাহিনীর ৪২টি যুদ্ধ বিমান। এছাড়া বৃটেন ও ফ্রান্স ব্যতীত বাংলাদেশসহ বহুদেশের সেনাগণ মিত্র জোটের পতাকাতলে সমবেত হয়েছিল। বৃটেনের ছিল ৩৫ হাজার স্থল সৈন্য, ৩৫০টি ট্যাঙ্ক, ৭৭২টি জঙ্গী বিমান এবং ২০টি নৌ যুদ্ধ জাহাজ। এ যুদ্ধে ফ্রান্সের সামরিক বাহিনীর অবস্থিতি ও লক্ষণীয় ছিল। জানা যায় মিত্র জোটের স্থল সৈন্য সংখ্যা ছিল ৬ লক্ষ ৮০ হাজার।
এই অদক্ষ যুদ্ধের সূচনা হয় বিমান যুদ্ধের মাধ্যমে। হাজার হাজার বিমান রাতের আধারে বাগদাদের উপর প্রচ- বোমাবর্ষণ করে। বিমানবাহী জাহাজ ও উপসাগরীয় অঞ্চলের বিবিধ দেশের ঘাটি থেকে এরপর ক্ষণে ক্ষণে বিমান হামলা চালানো হতে থাকে। বিভিন্ন লক্ষ্য বস্তুর উদ্দেশ্যে নৌ জাহাজ থেকে নিক্ষেপ করা হতে থাকে শত শত টুমাহক ক্রুজ ও লেসার নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক সব ক্ষেপনাস্ত্র। ইরানী রাডার স্থাপনার উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করা হতে থাকে হার্ম মিশাইল। ইরাকী বিমান বিধ্বংসী কামানগুলোর গর্জে উঠে। বিমানগুলো ডগ ফাইটে লিপ্ত হয়। মিত্র বিমানগুলি ইরাকী বিমান ঘায়েল করার জন্য আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণ যোগ্য ফনিক্স মিসাইল ব্যবহার করে। ইরাকী স্কাডও সফলভাবে আঘাত হানে মিত্র জোটের কয়েকটি স্থাপনায় এবং ইসরাইল। অবশেষে জল, স্থল ও আন্তরিকে মিত্র শক্তির অধ্যাধুনিক প্রযু্িক্তর নিকট ইরাকের পরাজয় ঘটে।
অবশ্য ইরাকের বিরুদ্ধে মিত্র জোটের আকাশযুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। ওরা ইরাকের কিছু এলাকার আকাশকে ইরাকী বিমানের জন্য উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা ঘোষণা করেছে। সে এলাকার আকাশে মার্কিন ও বৃটিশ যুদ্ধ বিমানের অবাধ বিচরণক্ষেত্র যেন। মাঝে মাঝে ইরাকী বিমানের সাথে ডগ ফাইটের কথা শুনা যায়। কখনো মিত্র জোটের দ্ইু একটি বিমানের গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথাও শুনা যায়। যুদ্ধ নব উদ্যোগে চালাচ্ছে মিত্র জোট। প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ওদের বিমান হামলা চালাচ্ছে ইরাকী রাডার ও অন্যান্য সাক্ষরিম ও বেসামরিক স্থাপনায়। স্থলের বিমান ঘাটি থেকে যেমন আক্রমণ করা হয় ঠিক তেমনি ঘাটি থেকে যেমন আক্রমণ করা হয় ঠিক তেমনি কখনো বিমানবাহী জাহাজ থেকে পাঠানো হয় অত্যাধুনিক এফ এ-১৮ জেট যুদ্ধ বিমান। ইরাকের এ অঞ্চল যেন মিত্র জোটের জন্য স্থায়ী যুদ্ধ সহায়তা ক্ষেত্র। ওরা ইরাকের বিরুদ্ধে আরো বৃহত্তর যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে সাদ্দাম উৎখাতের উদ্দেশ্যে।
উল্লিখিত যুদ্ধগুলি ছাড়া ভিয়েতনাম যুদ্ধে (১৯৫৬-৭৬) যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী জাহাজ ছিল খুবই সক্রিয়। বসনিয়া হারজে গোভিনর যুদ্ধে (১৯৯২) বিমানজঙ্গী জাহাজ ব্যবহৃত হয়েছে। পাকভারত যুদ্ধে (১৯৬৫) মার্ক ও রুশ বিমানজঙ্গী জাহাজ সাগরে অবস্থান নিয়ে নিজেদের মিত্রদের পক্ষে øায়ুযুদ্ধ কমিয়ে যাচ্ছিলে (১৯৭১ সালে ভারত ব্যবহার করেছে)।
অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জবুশ ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে হটানোর যুদ্ধও শুরু করে দেন। এর পূর্বে অস্ত্র পরিদর্শনের নামে দফায় দফায় সেখানে পাঠানো হয় অস্ত্র পরিদর্শক। ইরাকে অস্ত্র পরিদর্শকরা গোয়েন্দাগিরি করেছে বলে সাদ্দাম হোসেন অভিযোগ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রণসজ্জা জোরদার করতে থাকে। লক্ষাধিক মার্কিন সৈন্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হয়। ২০০৩ সালের ১১ জানুয়ারী পরিদর্শক দলের হ্যান্সব্লিক্স ইরাকে বিধ্বসী অস্ত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে ঘোষণা করেন। তা সত্ত্বে ১৫ ফেব্রুয়ারী ইরাকের অদূরে ৬টি মার্কিন বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করা হয়। সে সময় বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিরোধী প্রচ- বিক্ষোভ চলছিল। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা ঘোষণা করে পরমাণু অস্ত্র বাতিলের চার ইরাক পুণরায় তা চালু করেনি। এসব মতামত, বিশ্বব্যাপি যুদ্ধবিরোধী সমাবেশ এমনটি খোদ ওয়াশিংটনে যুদ্ধবিরোধী জন সমুদ্র উপেক্ষা করে মার্কিন যুদ্ধবাজগণ ইরাকে রণপ্রস্তুতি অব্যাহত রাখে।
ইরাকে হামলার বিরোধিতায় ফ্রান্স ও জার্মানী অনড় থাকে। যুক্তরাষ্ট্র একক শক্তি গোটা দুনিয়ার নিয়ন্ত্রক হতে পারে না বলে ফ্রান্স ঘোষণা করে। ইরাকে যুদ্ধ নয় চাই অস্ত্র পরিদর্শন এই মর্মে জাতিসংঘে ৬০টি দেশের দাবী ও বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ সত্ত্বেও ইরাকনীতি না বদলানোর হুমকি দেন মার্কিন নেতা জর্জ বুশ। ২২ ফেব্রুয়ারী মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্র, যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ণ প্রসূত বলে ঘোষণা দেয়।
অতঃপর ২০০৩ সালের ২০ মার্চ ইরাকে মার্কিন হামলা শুরু হয়। সাদ্দাম হোসেনকে বিমান হামলায় হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। ইঙ্গ-মার্কিন জঙ্গী বিমান সমূহ বাগদাদের উপর, বসরার উপর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দফায় দফায় হামলা চালাতে থাকে। শুধুমাত্র ২২ মার্চেই বাগদাদের উপর ৩ সহস্রাধিক বিমান হামলা চালানো হয়। নিক্ষেপ করা হয় দেড় সহস্রাধিক ক্ষেপনাস্ত্র। স্থানে স্থানে গুচ্ছ বোমাসহ বিবিধ বোমা নিক্ষেপ করা হতে থাকে। ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর বিমান থেকে রাসায়নিক বোমা নিক্ষেপের খবর পাওয়া যায়। ২৭ মার্চ ইরাকের উত্তরাঞ্চলে মার্কিন ছত্রীসেনা অবতরণের সংবাদ পাওয়া যায়।
বিমান হামলার ছত্রছায়ায় মার্কিন বাহিনী বাগদাদের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসের ৯ তারিখে অবশেষে প্রতিরোধ ছাড়াই মার্কিন বাহিনীর কাছে বাগদাদের পতন হয়। শুরু হয় গণ হত্যার মঞ্ছর। ইরাকের দিকে দিকে প্রতিরোধের আগুন জ্বলে উঠে। গোটা ইরাক অগ্নিগর্ভে পরিণত হয়। ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখে মার্কিন দখলদার বাহিনীর হাতে ইরাকের অবিসংবাদিত নেতা সাদ্দাম হোসন গ্রেফতার হন। অবশ্য এরপরও গোরিলা যুদ্ধ চলছিল যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ মে মাসের ৩১ তারিখে মূল যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করেছিলেন।
উল্লেখ্য এ অসম যুদ্ধে সাদ্দামের বিমান বাহিনী হামলাকারী ইঙ্গমার্কিন বিমানের বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রতিরোধই গড়ে তোলতে পারেনি। সাদ্দাম হোসেন বিমানগুলি রক্ষার জন্য ইরানে পাঠিয়ে দেন। তাসত্ত্বেও এফ ১৬ যুদ্ধ বিমান ও এ্যাপাচি হেলিকপ্টারসহ কিছু বিমান গেরিলাদের হামলার শিকার হয়।
আফগানিস্তানে চলমান যুদ্ধসমূহে বিমান
“নতুন শতাব্দীর নবম মাসে আকাশ থেকে নেমে আসবে এক কিং অব টেরর’। পয়তাল্লিশ ডিগ্রী সবকোণে আকাশ জ্বলে উঠবে। নতুন শহরে দেখা দিবে অগ্নিকা-।” (নস্ট্রাডেমাস)’
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে বিমান হামলার পর সারা বিশ্বে ৪শ বছর পূর্বের ফরাসি ইতিহাস বেত্তা ও জ্যোতিষী নষ্ট্রামেস এর ভবিষ্যদ্বানী নিয়ে আলোচনার তুফান উঠে। তিনি আরো বলেছেন “সেপ্টেম্বর ১১ই তারিখে আকাশ হতে নেমে আসবে দুটি ধাতব পাখী। আর তা আঘাত হানবে দুটি সুউচ্চ টাওয়ারে।”
উল্লিখিত দিন সত্যসত্যিই যুক্তরাষ্ট্রের অহংকার টুইন টাওয়ারে দুটি বিমান আঘাত হেনেছিল। সেদিন বিমান সন্ত্রাসীগণ যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং ৭৪৭ সহ চারটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করে সেগুলোকে তাদের ধ্বংসকারী পরিকল্পনার নিখুত অথচ ভয়ানক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে। জানা যায় ১৯ জন সন্দেহভাজন ছিনতাইকারী বিমানগুলো ছিনতাই করে। ইউনাইটেড এয়ার লাইসেন্স ১৭৫ এ এবং আমেরিকান এয়্যার লাইসেন্সের ১১ এ এই দুটি বিমান বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের দুটি টাওয়ারে আঘাত হানে। আমেরিকান এয়ার লাইসেন্সের ফ্লাইট ৭৭ এ আঘাত হেনেছিল পেন্টাগনে এবং ইউনাইটেড এয়ার লাইসেন্স ফ্লাইট ৯৩ পেনসেলভার্নিয়ার বিশ্বস্ত হয়। বিশ্লেষকগণ ঘটনার পিছনের ঘটনা নিয়ে ভাবতে থাকেন। ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্ক এর উপর সুপার সন্ত্রাসী হামলার কারণ কি? কেউ বলেন এ কাজ বহুকাল থেকে মার খেতে থাকা ফিলিস্তিনিদের। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরাইল এখনো তার ঘৃণ্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের হৃৎপি-ের ওপর আঘাত হানতে হবে। অল্প সময়ের মাঝে সকল ইউরোপীয় বিশ্লেষকেরা এক ও অভিন্ন হয়ে যায়। তাদের মতে ওসামা বিন লাদেন এই অঘটনের হোতা। যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করল তাকে ধরতে হবে। তার বিচার হবে। সুতরাং আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হল লাদেনকে অবশ্যই হস্তান্তর করতে হবে। লাদেন জানালেন এর আমি কিছু জানিনা। তালেবান যুক্তরাষ্ট্রকে প্রমাণ উপস্থাপন করার কথা জানাল কারণ তাদের মতে কোন নির্দোষ মুসলমানকে বিধর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া কুরআনের বিরোধী। যুক্তরাষ্ট্র লাদেনের বোমা মেরে ধ্বংস করার আর তালেবান সরকারকে উৎখাত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। এর কারণ কি? সম্ভবত: উন্ট্রাডেমাসের ভবিষ্যৎবাণীও এর কারণ য়ে থাকবে। তিনি মধ্যপ্রাচ্য থেকে সারা বিশ্ব কাঁপানো এক ব্যক্তির ১৯৯৯ সালে আলোকিত আবির্ভাবের কথা বলেছেন। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, রিয়াদে জন্মগ্রহণকারী সউদি কুবের ওসামা বিন লাদেনই সে ব্যক্তি। অনেকে মনে করেন তাঁর বাণী বিশ্বাস করার তেমন যুক্তি নাই কেননা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের যুগে এদিকে বিশ্বাস না করার শ্রেয়। অতপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আফগানিস্তানে হামলা চালায়। ওরা রাতের আধারে প্রথম বিমান ও মিশাইল আক্রমণ চালায়। ক্রমে আক্রমণ প্রচ-তার হয়।
আফগানিস্তানে মার্কিন হামলাকে ধর্মযুদ্ধ অভিহিত করে মুসলিম দেশের তরুণদের মাঝে শুরু হয় জেহাদে হাওয়ার উম্মাদনা। এদিনে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে যুক্তরাষ্ট্র আফগান শহর, গ্রাম, মক্তব, মাদ্রাসা, বাজার, হাসপাতাল, মসজিদ, স্কুল ইত্যাদির উপর বাছাবিচারহীনভাবে আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে। এতে নিহত হয় হাজার হাজার আদম সন্তান। মৃত্যুর ভয়ে হাজার হাজার আফনাতের স্রোত প্রতিবেশী দেশগুলির দিকে ধাবিত হয়। লাখ লাখ মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলিতে আস্রয় নেয়। যুদ্ধের প্রথম দিকে দৃশ্যত অনঢ় তালেবান প্রশাসন ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার এবং এভাবে দেশতে মার্কিন ও মিত্রদের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। জেহাদী জোশে উদ্দিপ্ত শহিদী মেজাজের তালেবান মোকালয় ছেড়ে পাহাড়ে পর্বতে আশ্রয় নেয়। এখন আফগানিস্তানে সরকার ক্ষমতায়। কিন্তু যুদ্ধ এখনো থামে নাই।
প্রতিনিয়ত আল-কায়দা ও তালেবানরা যুদ্ধ পরিকল্পনা করছে। ওরা মিত্র বাহিনীর সৈন্য সীমান্তের ওপর গেরিলা হামলা চালাচ্ছে। মার্কিন বিমান ও হেলিকপ্টার গাম শিপ বহর যে হামলার জবাব দিচ্ছে পাহার পর্বত ধ্বংসকারী ডেইজি কার্টার ও অন্যান্য বিধ্বংসী অস্ত্র নিক্ষেপ করে। এ যুদ্ধের শেষ করে হবে একমাত্র মহা স্রষ্টাই তা জানেন। এখনো সাগরে বিমানটি জাহাজের ও প্রতিবেশী দেশসমূহ ও আফগান ভূমির মার্কিন ঘটবে হাজার হাজার বিমান আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
মার্কিন আমেরিকার ড্রোন যুদ্ধ যুদ্ধে চালক বিহীন বিমান তথা ড্রোন ব্যবহার সাম্প্রতিক যুদ্ধসমূহে এবং সংযোজন বলা যায়। অবশ্য এ ধরনের বিমান দ্বারা গোয়েন্দা কর্মকা- ও বোমাবর্ষণ পরিচালনা ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপকভাবে করেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে এ ধরনের কার্যকর কোন বিমান আকাশে উড়েনি।
যতদূর জানা যায় ভিয়েতনাম যুদ্ধ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯১ সালে বহুজাতিক বাহিনী কর্তৃক ইরাকের বিরুদ্ধে পরিচালিত অপারেশন ডেজার্টসন্ত্রাসে, ১৯৯৮ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের সামরিক অভিযান অপারেশন ডেজার্ট যকে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ইঙ্গ-মার্কিন হামলা অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডমে, ২০০৩ সালে ইরাকে ইঙ্গ মার্কিন পরিচালিত সামরিক হামলা অপারেশন ইরাকী ফ্রিডম ইত্যাদির সফলতার জন্য গোয়েন্দা কার্যক্রমে ড্রোনের বহুল ব্যবহার হয়েছে।
ড্রোন যুদ্ধ ভয়ানক রূপলাভ করেছে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে পর্বতময় এলাকায় তালেবান ও আলকায়দা যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত মার্কিন অভিযানের সময় থেকে। আগে যেখানে শুধুমাত্র গোয়েন্দা কার্যক্রম, গবেষণা, বিমানবাহিনীর যুদ্ধ বিমানের গুলা-গুলি বর্ষণ অনুশীলনে টার্গেট বিমান হিসাবে ড্রোন ব্যবহৃত হত বর্তমানে তা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানব হত্যার হোলি খেলায় মেতেছে।
আফগানিস্তান ও ইয়েমেতে এ পর্যন্ত (২০১৩) ড্রোন হামলায় মারা গেছে বহু আল-কায়দা নেতা। জানা যায় ২০১১ সালের ২ মে তারিখে আল কায়দার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাগেন পাকিস্তানের এর্বোটাবাদে মার্কিন সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পূর্বে বহুবার মার্কিন বাহিনী সন্দেহজনক বিন লাদের অবস্থান বলে কথিত কোন বাড়ীতে হামলা চালিয়েছে মার্কিন ড্রোন। সেসব হামলায় বিন লাগেন নয় মারা গিয়েছে অন্যরা যাদের অধিপত্য সাধারণ মানুষ। তাছাড়া ড্রোন হামলার পর কোন বিশেষ নেতার নিহত হওয়ার কাহিনী প্রচারকরা হয়েছে বারবার। প্রকৃত পক্ষেও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে হামলা করা যায়। কিন্তু হামলার পর কে মারা গেল, ক্ষয়ক্ষতি কেমন হল যথাযথ নির্ণয় করা একেবারেই অসম্ভব কোন কোন সময়। কেননা সেসব হামলার অধিকাংশ দুর্গম এলাকা হয়ে থাকে। নিচে ড্রোনের কর্মপদ্ধতি দেখানো হল।
এ থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায় প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট অবস্থানে হামলা সহজ। কিন্তু যাকে লক্ষ্য করে হামলা যে ব্যক্তি হামলাকালে সেখানে নাও থাকতে পারে।
পাকিস্তান ও ইয়েমেনে চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রনিয়িতই বহু মানুষ হত্যা করে চলেছে। শন্তিকামী বিশ্ব এ ধরনের হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পাকিস্তান ও ইয়েমেনে মার্কিন ড্রোন হামলায় বহু বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে এবং এসব বেআইনি হামলার জন্য মার্কিন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরাধের অভিযোগ তোলা যেতে পারে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র দেশ দু’টিতে ড্রোন হামলা বৈধ বলে দাবি করেছে। হোয়াইট হাউসের দাবি, সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করবে চালানো ড্রোন হামলায় নির্দোষ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা কম।

চিত্রঃ কম্পিউটার থেকে একটি ড্রোনের ছবি।
প্রকৃত পক্ষে ড্রোন হামলায় যথাযথ তথ্যের খুবই প্রয়োজন। নতুবা যাক বা যাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হওয়ার কথা তাদের বদলে নিরাপরাধ অন্যদের মারা যাওয়ার সম্ভাবনা অধিক। এ দুস্ততের ভূমিকায় উল্লিখিত পরিসংখ্যান থেকে তাই নিশ্চিত হওয়া যায়। উল্লেখ্য যে চিকিৎসক শাকিল। আফিদির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হেলিকপ্টার হামলায় পাকিস্তানের এবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করেন। এর পূর্বে তার বিরুদ্ধে ড্রোন হামলা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাষণ হল, আল-কায়েদা এবং তালেবানের বিরু্েদ্ধ লড়াইয়ে তার সবচেয়ে বড় অস্ত্রহচ্ছে ড্রোন। এতে তুলনামূলক ভাবে ক্ষতি কম। বাস্তবে মার্কিন এ বক্তব্য একপেশে অর্থাৎ হামলাকারীদের ক্ষতি কম তথা বোমা, ক্ষেপনাস্ত্র ইত্যাদি নিক্ষেপ ছাড়া কোন ক্ষতি হয় না বললেই চলে। অপর পক্ষে যে স্থানে হামলা চালানো হয় সেখানে যেন জাহান্নাম কায়েম হয়। বিধ্বস্ত হয় ইমারত ও অন্য স্থাপনা বোমার আঘাতে পুড়ে ছাড়খার হয় মানব সভ্যতা। ইতস্ত এখানে সেখানে ছড়িয়ে থাকে আদম সন্তানের লশ সেখানে লক্ষ্যের মানুষটি থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। তার আম ধারা-পুরুষ ও শিশু সংখ্যা মোটেও কম থাকে না। যেমন বহু হামলায়ে নিহতদের মাঝে উসামা বিন লাদেন ছিলেন না।
২০১৩ সালের শেষের দিকে ভারতীয় পত্র-পত্রিকা ফলাও করে লেখা হয় ভারত তাদের বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সংলগ্ন সীমান্ত ড্রোন মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা এর সমালোচনা নয়। আশংকা করা হ য় এতে সীমান্তে বি এস এফের হত্যাকা- বহুগুণ বেড়ে যাবে মার্কিন ড্রোন হামলা সম্পর্কে ফিরে আসা যাক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক উবামা এ হামলার বৈধতা দিয়েছেন তার মুুখপাত্র জে কারনি ্টকে ব্রিফিয়ে বলেন, “ড্রোন হামলা আইনসঙ্গত ও কার্যকর।”

চিত্রঃ(A BAE Raven during flight testing/ উড্ডয়ন পরীক্ষাকালে একটি রেভেন বিমান।)
বিভিন্ন সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের জবাব হল, ড্রোন হামলার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন মানত তারা বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করে যাকে। তারা আরো বলে যাকে আমরা সব আইএনর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সন্ত্রাস বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকি। এ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করার জন্য সরকার বরাবরই গুরুত্বারোপ করে থাকে। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ দুর্ঘটনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।

বাংলাদেশের সকল রাজবাড়ী ও জমিদার বাড়ীগুলির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্হা কি (ভিডও সহ )