ইসলামে নারীর অধিকার ও মর্যাদা


এ বিশ্বের যা কিছু কল্যাণকর তার অর্ধেকই নারী জাতির অবদান। কিন্তু কথিত আধুনিক ও সভ্যতার যুগেও প্রতি দিন বহু সংখ্যক কিশোরী ও যুবতী কিংবা নারী অমানবিকতা, নৃশংসতা, পাশবিকতা এবং নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গত কয়েক দশকে পশ্চিমা সমাজ নারীকে পুরুষের সমান অধিকার দেয়ার নামে নারীর অধিকার পুনরুজ্জীবিত করার এবং তাদেরকে সামাজিক অঙ্গনের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করার চেষ্টা চালিয়েছে। এরপরও বিশ্ব নারী সংস্থার পরিচালক ও বিশিষ্ট লেখিকা শার্লোট পাঞ্চ লিখেছেন, বিশ্বের জনসংখ্যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ কেবল নারী হবার কারণে প্রতিনিয়ত, নির্যাতন, অবমাননা, ক্ষুধা এবং এমনকি হত্যারও শিকার হচ্ছে।
জাতিসংঘের নারী বিষয়ক বিশ্ব সম্মেলনে নারী অধিকার বিষয়ক কর্মীরা বলেছেন, নারী অধিকার নিয়ে শুধু শ্লোগান আওড়ালেই চলবে না, একইসাথে নারী অধিকারকে মানবাধিকারের মতোই গুরুত্ব দিতে হবে এবং তাদের অধিকার বাস্তবায়নের কার্যকরী নিশ্চয়তা দিতে হবে।
 ইরানের সর্বোচ্চ নেতার দৃষ্টিতে নারীর অধিকার
এটা স্পষ্ট যে নারীর অধিকার ও সম্মান যদি যথাযথভাবে উপলব্ধি করা হয় তাহলে বিভিন্ন সমাজে নারীর অবস্থার দ্রুত উন্নতি ঘটবে। ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী নারীর মর্যাদা সম্পর্কে প্রায়ই পশ্চাত্যের ও ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গীর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে থাকেন। তাঁর মতে, নারীর মর্যাদা সম্পর্কে পাশ্চাত্যের দৃষ্টিভঙ্গী ভুল ধারণা ও সংকীর্ণ চিন্তায় ভরপুর। এর প্রমাণ হলো পাশ্চাত্য নারীকে কর্মক্ষেত্রে এবং সামাজিক অঙ্গনে সক্রিয় হতে উদ্বুদ্ধ করলেও সমাজে নারীর অধঃপতনের বা বিপথগামীতার সমস্ত উপকরণ ও ব্যবস্থা যুগিয়ে দিয়েছে। পাশ্চাত্য নারীর ব্যাপারে মানবিক মূল্যবোধগুলোকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রচারণাগত শ্লোগানের চাপে ম্লান করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, নারীর অধিকার বিষয়ে পাশ্চাত্য আমাদের কাছে বা ইসলামের কাছে ঋণী। অর্থাৎ ইসলামই নারীকে সবচেয়ে বেশী মর্যাদা দিয়েছে। আমরা পাশ্চাত্যকে এ কথা বলতে পারি যে, তোমরা সামগ্রীকভাবে মানবজাতির প্রতি এবং বিশেষ করে নারী জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছ। নারী ও পুরুষকে যৌণ অনাচারের মধ্যে টেনে আনা এবং সমাজে লাগামহীন যৌণ অনাচারের আগুন প্রজ্জ্বলিত করা ও নারীকে তুচ্ছ বা হীন সত্ত্বা হিসেবে ময়দানে নামানো বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া অন্য কিছু নয়। নারী হচ্ছে মানবীয় সত্ত্বার এক কোমল ও সুন্দর অংশ। তাই নারী প্রকৃতিগতভাবেই পর্দানশীন থাকতে ও সতীত্ব বজায় রাখতে পছন্দ করে। মানবীয় সত্তার এই কোমল ও সুন্দর অংশের তথা নারীর এটাই বৈশিষ্ট্য।
পশ্চিমা সংস্কৃতিতে নারীকে তার আসল ভূমিকা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং নারীকে পুরুষের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, পুরুষালী কাজ নারীর জন্য শোভনীয় নয়। বর্তমানে রহস্যময় বা সন্দেহজনক একটি মহল বিশ্বব্যাপী মূল্যবোধ বিরোধী তৎপরতার জোয়ার তুলে নারীকে পুরুষের মত হতে বাধ্য করতে চাইছে। তারা এ ধরনের কথার বিরোধীতা করে যে, নারী বা মেয়েরা তো নারী এবং পুরুষরা পুরষ। কিন্তু এটাই কি বাস্তবতা নয়? তারা অর্থাৎ পশ্চিমারা এটা বলতে চায় যে নারীও একজন পুরুষ তথা এক ধরনের কৃত্রিম পুরুষ বা পুরুষেরই দ্বিতীয় কপি! এতে নারীর জন্যে গৌরবের কী রয়েছে? বরং নারীর জন্য একজন পূর্ণ নারী হওয়াই অহংকার বা গৌরবের বিষয়।
নারী মহান আল্লাহর এক অসাধারণ সৃষ্টি। কারণ পুরুষের উন্নতি বা পূর্ণতার পথে নারীর সহযোগীতা অপরিহার্য। ইসলামের দৃষ্টিতে বৈজ্ঞানিক উন্নতি, সামাজিক অগ্রগতি, গঠনমূলক কাজ এবং বিশ্বের ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনার কাজে দায়িত্ব পালনের জন্য নারীকে অবশ্যই সুযোগ দেয়া উচিত। প্রত্যেক সুস্থ সমাজেই নারীর রয়েছে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা। আর এই দিক থেকে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে মানব জাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য অভিন্ন। একজন মানুষের পক্ষে যত বেশী সম্ভব সদ্ গুণাবলী অর্জন করা ও পূর্ণতার শিখরে পৌঁছাই মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য। হযরত ফাতেমা জাহারা (সাঃ) ও অন্যান্য মহিয়ষী নারী এ ধরনের নারীর দৃষ্টান্ত। ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সমাজে নারীর ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেছেন, পবিত্র কোরআনে আদর্শ মানুষ বা ভালো মানুষ এবং মন্দ মানুষের উদারহণ দেয়ার সময় নারী ও পুরুষ উভয়েরই দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে। নারী বা মহিলারা প্রাগৌতিহাসিক যুগ থেকে সব সময়ই সংকট বা সমস্যার উৎস ছিল এমন ভুল ধারণা দূর করা এবং নারীর মানবীয় মর্যাদা তুলে ধরার জন্যই পবিত্র কোরআন এ ধরনের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছে। ইসলাম জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিন্তা, সমাজ ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রসহ আধ্যাত্মিক এবং অন্য সব গুণের ক্ষেত্রে নারীকে সর্বোচ্চ অবস্থানে দেখতে চায়। পরিবার ও মানব সমাজের সদস্য হিসেবে নারীকে সবচেয়ে কল্যাণময়ী হিসেবে গড়ে তোলাও ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য।
ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর দৃষ্টিতে শিল্প-সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সমাজ অঙ্গনে নারীর মর্যাদা এবং নারীকে রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে ব্যবহারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ইসলামী ইরানের নারী তার নারীত্বের মর্যাদা বজায় রেখেই সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে এবং এখনও রাখছে। কারণ, ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ছাড়া অন্য কেউই মাতৃত্বের ও সহধর্মীনীর গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম নয়। মায়েদের ত্যাগ ও ভালোবাসা ছাড়া মানবীয় প্রতিভার বিকাশ ও সমাজের স্থায়িত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। কারণ, মায়েরাই সমাজের প্রধান ভিত্তি তথা পরিবারের প্রশান্তির উৎস।
ইসলামী ইরানের মহিলারা মাতৃত্ব ও সন্তানের শিক্ষা বা প্রতিপালনের ভূমিকা বজায় রেখে এবং শালীন পোশাক পরেই শিল্প-সংস্কৃতি, রাজনীতি, অধ্যাপনা ও গবেষণার মতো বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। এটা নারী সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গীর সাফল্যেরই প্রমাণ। ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মতে পর্দা বা হিজাব যে নারীর উন্নতি বা অগ্রগতির পথে বাধা নয়, ইরানের এ অভিজ্ঞতা তারই প্রমাণ। ইরানের নারীরা আধ্যাত্মিকতা ও পবিত্রতাকে সব কিছুর উর্ধ্বে স্থান দেন বলেই তারা সব ক্ষেত্রে সফল। এ প্রসঙ্গে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন,
ইসলামী ব্যবস্থায় নারীর জন্য যে সীমাবদ্ধতা তা তার নারীসূলভ প্রকৃতির সাথে মানানসই । ইসলামে পুরুষের জন্যেও ভিন্ন আঙ্গিকে এ ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই সীমাবদ্ধতা নারী ও পুরুষের প্রতিভার অপচয় রোধ করে। আর এ জন্যেই আমরা পরপুরুষের সামনে নারীর সৌন্দর্য তুলে না ধরার আহ্বান জানাই এবং তাদেরকে পবিত্রতা ও পর্দা বা হিজাব বজায় রাখার পরামর্শ দেই। মুসলিম নারীর জন্য এটাই সম্মানের বিষয়।
ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মতে নারীর অধিকার আদায়ের জন্য ও নারীর যথাযথ সম্মান অর্জনের জন্য নারী জাতিকেই সচেষ্ট হতে হবে। অর্থাৎ এ কাজের জন্য তারাই সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত। তাঁর মতে, "প্রতিভাবান মহিলাদের যে অতিরিক্ত ও মৌলিক দায়িত্ব পালন করতে হবে তা হলো নারী ও পুরুষের বিষয়ে ভুল দৃষ্টিভঙ্গিগুলো শুধরানো, যেসব ভুল ধারণা পাশ্চাত্য দুনিয়াময় প্রচারের চেষ্টা করছে। এ ধরনের ভুল ধারণার ফলে বহু সমাজের মূল্যবোধ বিনষ্ট বা পদদলিত হয়েছে । আসলে নারীর প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ যেসব অবিচার করা হচ্ছে তা শুধু নৈতিকতা, আইনের শাসন, নারী ও পুরুষকে সুশিক্ষিত করে তোলার মাধ্যমেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।" #

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ দুর্ঘটনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।

বাংলাদেশের সকল রাজবাড়ী ও জমিদার বাড়ীগুলির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্হা কি (ভিডও সহ )