আইনে বিধবা নারীর অধিকার


Image result for বিধবা নারী
দেশের প্রচলিত আইন ও ইসলাম বিধবাদের দিয়েছে নিরাপত্তা, অধিকার ও মর্যাদা। জন্মের মাধ্যমে প্রত্যেকের মৃত্যু অবধারিত। আর কোন নারীর স্বামী মৃত্যুবরণ করলে সে স্বাভাবিকভাবেই অসহায়ত্ব বোধ করে। এই অসহায়ত্ব ও নিরাপত্তাহীনতা দূর করার জন্য কোরআনের সাথে মিল করে আমাদের দেশেও আইন তৈরী হয়েছে। যার মাধ্যমে সে নিজেকে পবিত্র করতে পারে ও নিজের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আর তা হলো বিধবার ইদ্দত পালন করা।


ইদ্দত একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ দিন, সংখ্যা বা রজঃস্রাব গণনা করা। এটি মূলত নারীর মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা বিশেষ করে তার অনাগত সন্তানের জন্ম পরিচয়ের অধিকারকে নিশ্চিত করার জন্য করা হয়। কেননা এ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই জানা যায় যে নারীটি তার পূর্ববর্তী স্বামীর সন্তান গর্ভে ধারণ করেন কি-না। তবে মনে রাখা দরকার যে, ইদ্দত শুধু স্বামী মারা গেলে বা বিবাহবিচ্ছেদ হলেই শুধু প্রযোজ্য।

ধরুন একজন স্ত্রী গর্ভবতী হয়নি এমন অবস্থায় তার স্বামী মারা গেল। এ ক্ষেত্রে তাকে চার মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। আর যদি তিনি গর্ভবতী থাকা অবস্থায় তার স্বামী মারা যান এবং চার মাস ১০ দিন অতিক্রান্ত হয়ে যায়, তাহলে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হবে। যদি চার মাস ১০ দিন পূরণ হওয়ার আগেই সন্তান জন্ম লাভ করে সে ক্ষেত্রেও তাকে চার মাস ১০ দিনই ইদ্দত পালন করতে হবে। স্বামীর মৃত্যুর দিন হতে বা তালাকের ক্ষেত্রে তালাকের দিন হতে এ ইদ্দত শুরু হয়। তবে মৃত্যুর সংবাদ ইদ্দতের সময় কাল পেরিয়ে যাবার পর তার নিকট পৌঁছিলে ইদ্দত পালনের দরকার নেই।

ইদ্দতের উদ্দেশ্য:

মুসলিম আইনে ইদ্দতের প্রধান উদ্দেশ্য হলো স্বামীর মৃত্যু বা বিবাহ বিচ্ছেদের সঙ্গে সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকরী হয় না। এ জন্য ইদ্দতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। স্ত্রী যে স্থানে বসবাস করছে সে স্থানেই বসবাস করবে। স্বামীর স্থানেই বসবাস করতে হবে এমনটি নয়। ইদ্দত পালনের পর নতুন বিবাহ বৈধ হয়।


বিধবার সম্পত্তি ও বাসস্থানের অধিকার

একজন বিধবা নারীকে তার স্বামীর মৃত্যুর পর কোনভাবেই তার বাসস্থান থেকে জোর করে বের করে দেয়া যাবে না। স্বামীগৃহ, যেখানে তিনি বসবাস করছেন, এ গৃহে তার বাস করার অধিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তার প্রাপ্য সম্পত্তি তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। তবে তিনি স্বেচ্ছায় অন্য কোথাও থাকতে চাইলে তাকে বাঁধা দেয়া যাবে না। তিনি অন্যত্র বিয়ে না করলে তার সন্তানদের তত্ত্বাবধান করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না। একজন বিধবা স্ত্রী স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তির সন্তান থাকা অবস্থায় ১/৮ এবং সন্তান না থাকলে ১/৪ অংশ পাবেন।

বিধবা পুনরায় বিয়ে করতে পারবেন

একজন নারী তার স্বামীর মৃত্যুর পর ইদ্দতকালীন (চার মাস ১০ দিন) সময় পার করার পর নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী অন্য সাধারণ নারীর মতো স্বাভাবিক স্বাধীন জীবনযাপন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে কোনভাবে তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না। তিনি অন্যত্র বিয়ে করবেন কি করবেন না, এটা তার সম্পূর্ণ স্বাধীন সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

বিধবার দেনমোহর ও ভরণপোষণের অধিকার

একজন বিধবা তার স্বামীর পরিশোধ করে না যাওয়া দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী। স্বামীর মৃত্যু হলেই যে দেনমোহর পাবেন না, তা নয়। দেনমোহর ঋণের মতো, স্বামীর অবর্তমানে স্বামীর উত্তরাধিকারীরা তা পরিশোধ করতে বাধ্য। দেনমোহর পরিশোধ না করা হলে স্বামীর মৃত্যুর তিন বছরের মধ্যে পারিবারিক আদালতে মামলা করে তিনি তা আদায় করতে পারবেন। এছাড়া স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত অংশ একজন বিধবা স্বাধীনভাবে ব্যবহার করতে পারবেন কিংবা দখলে রাখার অধিকার রয়েছে বলে বিবি বাচান বনাম শেখ হামিদ (১৮৭১) ১৪ এম.আই.এ. পৃষ্ঠা ৩৭৭ এ উল্লেখ রয়েছে। একজন বিধবা মা তার সন্তানের কাছ থেকে ভরণপোষণ পেতে হকদার। সন্তানেরা ভরণপোষণ না দিলে আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। (জমিলা খাতুন বনাম রুস্তম আলী, ৪৮ ডিএলআর (আপিল বিভাগ), পৃষ্ঠা ১১০।

দেনমোহরের দাবীতে কোন বিধবা স্ত্রী তার স্বামীর সম্পত্তি দখল করে থাকলে যদি তাকে অন্যায়ভাবে সেই সম্পত্তি হতে বেদখল করা হয়, তবে সে দখল পূণরুদ্ধারের জন্য মামলা দায়ের করতে পারে। (মজিদ মিয়া বনাম বিবি সাহেব (১৯১৬) ৪০ বম. পৃষ্ঠা-৩৪)

বিধবা অন্যত্র বিয়ে করলেও আগের স্বামীর সম্পত্তি পাবেন

মুসলিম আইনে ৬ ব্যক্তি কখনোই উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয় না। এই ছয় শ্রেণি হলো: বাবা, মা, ছেলে, মেয়ে, স্বামী ও স্ত্রী। সুতরাং, স্বামী কিংবা স্ত্রী একে অপরের মৃত্যুতে সবসময়ই উত্তরাধিকারী হবেন। এ ক্ষেত্রে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী বা স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী অন্য কাউকে বিয়ে করলেন কি-না, উত্তরাধিকারী হওয়ার ক্ষেত্রে এটি মোটেও কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। অন্যত্র বিয়ে করলেও তাকে কোনোভাবেই স্বামীর উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

অন্যত্র বিয়ে করার দোহাই দিয়ে কোনো স্বামী বা স্ত্রীকে যদি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়, সে ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ পক্ষ দেওয়ানি আদালতে মামলা করে তার অংশ আদায় করে নিতে পারবেন। এ ধরনের মামলা নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত আদালত মৃত ব্যক্তির পুরো সম্পত্তির ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাখতে পারে। সেক্ষেত্রে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই সম্পত্তি কোনোভাবে হস্তান্তর কিংবা জমিতে কোনো স্থাপনা তৈরি করা যাবে না।

এখানে উল্লেখ্য যে, স্বামী-স্ত্রীর জীবদ্দশায় তাদের মধ্যে যদি বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে, সেক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার পাবে না। এরকম ক্ষেত্রে স্ত্রী কেবল তার দেনমোহরের টাকা (যদি বাকি থাকে) দাবি করতে পারবেন। এ ছাড়া তিন মাস পর্যন্ত খোরপোষ পাবেন স্ত্রী।
সিরাজ প্রামাণিক:

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

The national flag Cambodia

world map

TOP 10 REASONS TO VISIT THAILAND