বাংলাদেশের মানবাধিকার


১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে বিশ্ববাসী এ দিবসটিকে যথাযোগ্য মর্যাদা ও গুরুত্বের সাথে উদ্যাপন করে থাকে। দেশে দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হয়ে ওঠে স্বাধীনচেতা মানুষ।

১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মৌলিক মানবিক অধিকার সমূহ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ও ঘোষিত হয়। এরপর থেকে জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র ১০ ডিসেম্বর “মানবাধিকার” দিবস হিসাবে পালন করে আসছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। জাতিসংঘের নির্দেশনায় বিশ্বের সকল দেশে প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস উদযাপন করে নতুন করে শপথ গ্রহণ করে মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায়। সার্বজনীন মানবাধিকার সংক্রান্ত ঘোষণাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ তারিখকে নির্ধারণ করা হয়। সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী নবরূপে সৃষ্ট জাতিসংঘের অন্যতম বৃহত্তম ও ঐতিহাসিক অর্জন।
মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের জন্মগত অধিকার। নাগরিক জীবনের বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য মানবাধিকারের প্রয়োজনীয়তাকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না, পারবে না। 

মানুষ জন্মগতভাবেই স্বাধীন। ফরাসী দার্শনিক জ্যাঁ জ্যাঁক রুশো বলেছেন, “প্রতিটি মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্ম গ্রহণ করে।” ব্যক্তি সমাজ জীবনে যে সকল সুযোগ সুবিধার দাবিদার হয়, এবং যে সকল সুযোগ সুবিধা ছাড়া ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ হয় না, তাই মানবাধিকার। মানুষ জন্মগতভাবেই মর্যাদার অধিকারী।
মানবাধিকার ব্যাপারে জাতিসংঘের অভিমত হলো, ব্যক্তির যে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগের দাবিদার হয় এবং যা ছাড়া তার ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয় না, সেগুলোই হলো মানবাধিকার। বর্তমান বিশ্বে মানবাধিকার বিষয়টি সর্বাধিক আলোচিত।

জাতিসংঘের ঘোষনায় বলা হয়েছে, মানবাধিকার ভোগের বেলায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব যে ধরনের নাগরিকই হোন না কেন, তার রাজনৈতিক মতামত ও পদমর্যাদা যাই হোক না কেন, সে যে দেশেরই নাগরিক হোক না কেন, অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগের ক্ষেত্রে কোন তারতম্য বা পার্থক্য করা হবে না। প্রতিটি রাষ্ট্রের নাগরিক যাতে অধিকার ও স্বাধীনতা সমমর্যাদার সাথে ভোগ করতে পারে তার জন্যেই জাতিসংঘ মানবাধিকারের ঘোষণা করে। জাতিসংঘ সনদের ৩ নম্বর ধারা থেকে ৩০ নম্বর ধারা পর্যন্ত প্রায় ২৮টি গুরুত্বপুর্ণ মানবাধিকারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, “অধিকারের প্রশ্নে মানুষ স্বাধীন ও সমান হয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং সবসময় সেভাবেই থাকতে চায়।”

অনেকেই জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার সম্পর্কে জানতে চান। মানবাধিকার ব্যাপারে যাদের আগ্রহ রয়েছে তাদের জন্যই আজকের লেখা। জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণার প্রধান ধারাগুলো হলো-

১নং ধারা: সকল মানুষই সমমর্যাদা ও অধিকার নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। অতএব সকলের প্রতি ভ্রাতৃসুলভ আচরণ করতে হবে।

২নং ধারা: জাতি, গোত্র, বর্ণ, নারী-পুরুষ, ভাষা, ধর্ম, জন্ম, বির্নিশেষে সকলেই জাতিসংঘের ঘোষণা পত্রে উল্লেখিত সকল অধিকারের সমান অংশীদার।

৩নং ধারা: প্রত্যেক ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, নিরাপত্তার অধিকার থাকবে।

৪নং ধারা: কাউকে দাসত্বের বন্ধনে আবদ্ধ রাখা যাবে না। সকল প্রকার দাস প্রথা ও দাস ব্যবসা নিষিদ্ধ।

৫নং ধারা: কোন ব্যক্তির প্রতি অমানুষিক নির্যাতন, অত্যাচার, উৎপীড়ন, মর্যাদাহানিকর ব্যবহার ও কোন প্রকার শাস্তি দান করা চলবে না।

৬নং ধারা: আইনের চোখে সকলেই সমান মর্যাদা পাবে।

৭নং ধারা: আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান এবং সকলেই আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী হবে।

৮নং ধারা: কারো মৌলিক অধিকার ভঙ্গ বা খর্ব করা হলে উক্ত ব্যক্তি আদালতের মাধ্যমে বিচার পাওয়ার অধিকারী।

৯নং ধারা: কাউকে বিনা কারণে গ্রেফতার, আটক করা যাবে না।

১০ নং ধারা: প্রত্যেক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ব্যাপারে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারবে এবং এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ সুবিচার পাওয়ার অধিকারী হবে।

১১নং ধারা: যতক্ষণ পর্যন্ত কোন ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে দাবি করতে পারবে। কেউ দোষী প্রমাণিত না হলে তাকে শাস্তি দেয়া যাবে না।

১২ নং ধারা: সকল মানুষের গৃহের নিরাপত্তা ও যোগাযোগের গোপনীয়তার অধিকার থাকবে। কোন গৃহে বেআইনীভাবে হামলা করা যাবে না। কারো গোপন যোগাযোগে হস্তক্ষেপ করা যাবে না

১৩নং ধারা: প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজ দেশের সব এলাকায় স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও বসবাস করতে পারবে।

১৪ নং ধারা: নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যে কোন ব্যক্তির নিজ দেশ ত্যাগ করে অন্য রাষ্ট্রে আশ্রয় গ্রহণের অধিকার থাকবে।

১৫নং ধারা: প্রত্যেক ব্যক্তিরই জাতীয় অধিকার থাকবে। কাউকে জাতীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

১৬নং ধারা: জাতি, ধর্ম, বর্ণ বির্নিশেষে সকল প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরিবার গঠন করতে পারবে।

১৭নং ধারা: প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত এবং যৌথভাবে সম্পত্তির মালিকানার অধিকার থাকবে। কাউকে জোর পূর্বক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

১৮নং ধারা: প্রত্যেক ব্যক্তির মুক্ত চিন্তা, ধর্মের স্বাধীনতা ও বিবেকের স্বাধীনতা থাকবে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে প্রকাশ ও লালন-পালন করতে পারবে।

১৯নং ধারা: প্রত্যেক ব্যক্তি স্বাধীনভাবে নিজের মতামত পোষণ ও প্রকাশ করতে পারবে।
২০নং ধারা: প্রত্যেক ব্যক্তির সংঘ গঠন করার অধিকার থাকবে। কোন ব্যক্তিকে রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা অন্য কোন পেশাভিত্তিক সংস্থার সদস্য হওয়ার জন্য বাধ্য করা যাবে না।

২১নং ধারা: সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যেকের নিজ রাষ্ট্রের সরকার গঠনের অধিকার থাকবে। প্রত্যেক ব্যক্তি সরকারী চাকরী লাভের ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করবে।

২২নং ধারা: প্রত্যেক ব্যক্তির সমাজের সদস্য হিসেবে সামাজিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার রয়েছে।
.
২৩নং ধারা: প্রত্যেকের কর্মের অধিকার ও কর্মের উপযুক্ত শর্তাদি লাভের অধিকার রয়েছে। প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীনভাবে যে কোন পেশা গ্রহণ করার অধিকার ও উপযুক্ত মুজুরী লাভের অধিকার থাকবে।

২৪নং ধারা: প্রত্যেকেরই কর্ম জীবনের বিশ্রাম ও অবকাশ এবং কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর এবং বেতনসহ ছুটি ভোগের অধিকার থাকবে।

২৫নং ধারা: প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের এবং নিজ পরিবারের স্বাস্থ্য, মানসম্মত খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসা লাভের অধিকার থাকবে। তাছাড়া বেকারত্ব, অসামর্থ্যতা, অসুস্থতা এবং বৃদ্ধ বয়সে পূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার থাকবে।

২৬নং ধারা: প্রত্যেকের শিক্ষালাভের অধিকার থাকবে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাসহ বিভিন্ন ধরনের উচ্চ শিক্ষার অধিকার সকলেই সমানভাবে ভোগ করবে

২৭নং ধারা: প্রত্যেক ব্যক্তি সমাজের সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রে অংশ গ্রহণ করতে পারবে। প্রত্যেক ব্যক্তি শিল্প ও বিজ্ঞানের বিকাশে সুবিধা লাভের অধিকার পাবে।

২৮নং ধারা: সন্ত্রাস, অশান্ত ও কলহপূর্ণ বিশ্বে জাতিসংঘ ঘোষিত মৌলিক মানবিক অধিকারসমূহ সব সময় উপভোগ করা সম্ভব নয় বলে সকলের জন্য সামাজিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার অধিকার থাকবে।

২৯নং ধারা: ব্যক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ লাভের জন্য প্রত্যেককে অধিকার ভোগের সাথে সাথে তার সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য পালন করতে হবে।

৩০নং ধারা: জাতিসংঘের ঘোষিত অধিকার ও স্বাধীনতা ধ্বংসকারী কোন রাষ্ট্র, দল বা ব্যক্তির প্রতি এ ঘোষণা আরোপ করা চলবে না।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি :
 
বাংলাদেশ জাতিসংঘের অন্যতম সদস্য রাষ্ট্র। সেই হিসেবে জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার সনদ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার ভোগ নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। দেশ এবং বিদেশে রাজনৈতিক সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার, আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বর্তমান পরিস্থিতি। দেশে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। নাগরিকগণ সংবিধান উল্লেখিত মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতি পদে পদে মানবাধিকার লংঘন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমনান মানবাধিকার লংঘন অতীতের সব ইতিহাসকে যেন ছাড়িয়ে গেছে।

মানুষ তার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আইনের চোখে সবাই সমান মর্যাদার অধিকার থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই। বিনা কারণে মানুষকে অযথা গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে।  যারা মানুষের মুক্ত চিন্তা, বাক ও বিবেকের স্বাধীনতা নিয়ে মুখে ফেনা তুলছেন, তারাই আবার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য মুক্ত চিন্তা ও বাক স্বাধীনতা হরণ করছেন। গণতন্ত্রকে, আইনের শাসনকে গলাটিপে হত্যা করছেন। ব্যক্তি সংগঠিত হওয়ার এবং সংঘ গঠন করার অধিকার থাকলেও নাগরিকরা কি সে অধিকার ভোগ করতে পারছেন? জনগণ ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠনে ভূমিকা পালন করার মাধ্যমে তার মানবাধিকার-মৌলিক অধিকার ভোগ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে দেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন, সেখানে দেশের নাগরিক কতটুকু ভোটের অধিকার ভোগ করছেন তা সহজেই অনুমান করা যায়।

সরকারি চাকরি গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশের সকল নাগরিকেরই সমান অধিকার ভোগ করার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে কী দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? রাজনৈতিক পরিচয় এবং টাকা, মামার জোর না থাকলে যত মেধাবী হোক না কেন কেউ চাকরি পায় না। চাকরির ক্ষেত্রে দলীয়করণ মানবাধিকারের চরম লংঘন। বাংলাদেশে চাকরির ক্ষেত্রে প্রকাশ্যেই মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। এসব দেখার ও বলার যেন কোন কর্তৃপক্ষ নেই।

বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ২৭ অনুচ্ছেদ থেকে ৪৭ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত মৌলিক অধিকার সমূহ ঘোষিত হয়েছে। রাষ্ট্র নাগরিকদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্যই মৌলিক অধিকার নামক অপরিহার্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছে। সংবিধান সংশোধন, দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা ছাড়া মৌলিক অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত করার কোন সুযোগ নেই। সরকার রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ভোগের নিশ্চয়তা দিবে, সহায়তা প্রদান করবে, এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের সংবিধানে সন্নিবেশিত অনেক মৌলিক অধিকারই জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকারে স্থান পেয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধানে সন্নিবেশিত মৌলিক অধিকারের মধ্যে রয়েছে- আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, ধর্ম-বর্ণ, গোষ্ঠী, নারী-পুরুষ ভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগারিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না। প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ থাকবে। সুযোগের সমতার ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না। সকল নাগরিকের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার থাকবে। জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না। কোন গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের কারণ না জানিয়ে প্রহরায় আটক রাখা যাবে না। বিনা কারণে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। কোন ব্যক্তিকে তার মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শ ও তার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হতে বঞ্চিত করা যাবে না।

বিচার ও দন্ড সম্পর্কে সংবিধানের ৩৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেয়া, নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দন্ড দেয়া যাবে না। প্রত্যেক নাগরিক দেশের সর্বত্র অবাধে চলাফেরা করতে পারবে। শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার, সমিতি বা সংঘ গঠন করার অধিকার, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, পেশার স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তি অর্জন, সম্পত্তি ভোগ করার অধিকার বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, শৃঙ্খলার হুমকি সৃষ্টি না করলে কোন নাগরিকের গৃহে বলপূর্বক প্রবেশ, তল্লাশি বা আটক করা যাবে না।
 
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- বাংলাদেশের নাগরিকগণ কী রাষ্ট্র প্রদত্ত এসব মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারছেন? সরকার কী জনগণকে এসব অধিকার ভোগ করার সুযোগ করে দিচ্ছেন? মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার কতটুকু আন্তরিক? বাংলাদেশের মৌলিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন। অনেক নাগরিকই এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশের মৌলিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা উল্টালে এবং টেলিভিশনের খবর দেখলে বাংলাদেশের মানবাধিকারের পরিস্থিতি বুঝতে কারো একটু কষ্ট হওয়ার কথা নয়। হত্যা, খুন, সন্ত্রাস, রাহাজানি, সংবাদপত্র, বাকস্বাধীনতায় হস্থক্ষেপ, বিরোধীদলের উপর নির্যাতন ও সভা সমাবেশে বাধা প্রদান বাংলাদেশে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এসব ঘটনার মাধ্যমেই বোঝা যায় দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কতটুকু অবনতি হয়েছে। 

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হলেই মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের সুরক্ষা হবে। আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা ছাড়া গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরকার নাগরিকদের রাষ্ট্র প্রদত্ত মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কতটুকু আন্তরিক ও সচেষ্ট তার উপরই নির্ভর করবে দেশের সু-শাসন। দেশে সু-শাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে শুধু শুধু গলাবাজি করে মানবাধিকার বা মৌলিক অধিকারগুলো বাস্তবায়িত হতে পারে না


 জনগণও সেই অধিকার ভোগ করতে পারে না। যেই দেশের জনগণ মৌলিক ও মানবাধিকার ভোগ করতে পারে না, সে দেশে সুশাসনও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। যেখানে সু-শাসন নেই, মৌলিক অধিকার নেই, মানবাধিকার নেই, আইনের শাসন নেই, বাক ও বিবেকের স্বাধীনতা নেই, বিরোধী দলের মর্যাদা নেই, সেখানকার মানুষও সুখে নেই, শান্তিতে নেই, নিরাপদে নেই। তারা তাদের মূল্যবান জীবন ও নিরাপত্তা নিয়ে সব সময় উৎকন্ঠিত ও আতংকিত থাকে। সরকারের কাজ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া এবং ব্যক্তির মৌলিক ও মানবাধিকার ভোগের নিশ্চয়তা দেয়া।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ দুর্ঘটনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।

বাংলাদেশের সকল রাজবাড়ী ও জমিদার বাড়ীগুলির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্হা কি (ভিডও সহ )