ইসলাম ধর্মে এতিমদের অধিকার
ইসলাম ধর্মে এতিমদের অধিকার
বাবা-মা হচ্ছে দুনিয়ায় আমাদের সবচেয়ে আপনজন। তারাই আমাদের বড় করার জন্য, আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য- সবধরনের চেষ্টা চালিয়ে থাকেন। কিন্তু সমাজে অনেকেই আছে যাদের বাবা-মা বেঁচে নেই। এদেরকে এতিম বলা হয়। বাবা-মা বেঁচে না থাকায়
এতিমদের দুঃখ-কষ্টের শেষ থাকে না। কিন্তু ইসলাম ধর্মে এতিমদের অধিকার রক্ষায় উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি তাদের সাথে উত্তম আচরণের জন্য
ব্যাপক তাগিদ দেয়া হয়েছে। সামর্থ্যবান ব্যক্তি ও শাসকদের প্রতি
এতিমের অধিকার আদায় করার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইসলামের আবির্ভাবের আগে
এতিম-মিসকিনদের জান-মালের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। তাই এতিমের ধন-সম্পদ
লুটেপুটে খাওয়ার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে পবিত্র কোরআনে
বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা অন্যায়ভাবে এতিমের ধন-সম্পদ ভোগ করে,
তারা নিজেদের পাকস্থলীকে অগ্নি দ্বারা পূর্ণ করে এবং অতিসত্বর তারা অগ্নিতেই
প্রবেশ করবে।‘ (সূরা আন-নিসা, আয়াত-১০)
অন্যদিকে এতিমদের ধন-সম্পদ রক্ষার
সার্বিক বিষয়ে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, ‘আর এতিমদের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য
রাখবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌঁছে। যদি তাদের মধ্যে
বুদ্ধি-বিবেচনা দেখা যায়, তাহলে তাদের সম্পদ তাদের হাতে অর্পণ করতে
পারবে। এতিমের সম্পদ প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করো না অথবা তারা বড় হয়ে যাবে
মনে করে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলো না। যখন তাদের কাছে তাদের সম্পদ তাদের হাতে
হস্তান্তর করবে তখন সাক্ষী রাখবে। অবশ্যই আল্লাহ হিসাব নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।‘
(সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬)
আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ
(সাঃ) নিজেও একজন এতিম ছিলেন। তাই তিনি এতিমের দুঃখ-কষ্ট অন্তর দিয়ে
অনুভব করতে পেরেছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এতিমদের মাথায়
শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যে হাত বুলায়, তবে যেসব চুলের ওপর দিয়ে হাত
বুলিয়েছে তার প্রত্যেকটি চুলের বিনিময়ে কয়েকটি করে নেকি লাভ করবে।‘ তিনি
আরও বলেছেন, ‘সর্বোত্তম ঘর হলো সেই ঘর, যেখানে এতিমদের প্রতি দয়া
প্রদর্শন করা হয়, আর নিকৃষ্টতম ঘর হলো সেই ঘর, যেখানে এতিম বসবাস
করে কিন্তু তার সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়।‘
একবার একটি এতিম ছেলে এসে নবীজির দরবারে
উপস্থিত হলো এবং একজন লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বললো, লোকটি জোরপূর্বক
তার খেজুর বাগান দখল করে নিয়েছে।
অভিযোগ শুনে রাসূলেখোদা ঐ লোকটিকে দরবারে
উপস্থিত হতে বললেন। যথাসময়ে লোকটি উপস্থিত হলো। এরপর নবীজী দু‘জনের বক্তব্যই
শুনলেন। কিন্তু বিচারের রায়ে গেলো এতিমের বিরুদ্ধে। রায় শুনে এতিম ছেলেটি
জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো। ছেলেটির কান্না শুনে রাসূল (সাঃ) ভীষণ কষ্ট পেলেন।
তার দু‘চোখ জুড়ে নেমে এলো অশ্রুর বান। নবীজী যার পক্ষে রায় ঘোষণা
করেছেন, তাকে বললেন, ‘রায় তো তোমার পক্ষেই হয়েছে কিন্তু তা
সত্ত্বেও কতই না ভাল হতো যদি তুমি এ বাগানটি এতিম বাচ্চাটিকে দান করে দিতে!
মহান আল্লাহ এর বিনিময়ে তোমাকে জান্নাতে এর চাইতে আরো অনেক উন্নত ও সুসজ্জিত
বাগান তোমাকে দান করতেন।‘ কিন্তু লোকটি কোনভাবেই বাগানটি দান করতে রাজি হলো
না।
সে সময় দরবারে উপস্থিত ছিলেন
রাসূলেখোদার সাহাবী হযরত আবু দারদা (রাঃ)। তিনি বাগানের মালিক লোকটিকে একপাশে
ডেকে নিয়ে চুপি চুপি বললেন, আচ্ছা ভাই, আমি তোমার এ বাগানটির
পরিবর্তে আমার অমুক বাগানটি যদি তোমাকে দিয়ে দেই তাহলে কি তুমি তোমার এ
বাগানটি আমাকে দেবে?
হযরত আবু দারদার এ প্রস্তাবে লোকটি রাজি হয়ে গেলো। কারণ আবু দারদা যে বাগানটি দিতে চাইলে সেটি এ বাগানের তুলনায় অনেক বেশী উন্নত ছিল। লোকটি সাথে কথা শেষ করে আবু দারদা আবারও রাসূলের দরবারে হাজির হলেন এবং বললেন, হে রাসূলুল্লাহ! আমি একটি কথা জানতে এসেছি। নবীজী তার কথা শুনে মুচকি হেসে বললেন, বলো তুমি কি বলতে চাও। আবু দারদা বললেন, আপনি যে বাগানটি এতিম ছেলেটিকে দান করার জন্য লোকটিকে উৎসাহিত করছিলেন তা যদি আমি ঐ এতিমকে দান করে দেই তাহলে কি আমি তার পরিবর্তে জান্নাতে বাগান লাভ করতে পারবো?
হযরত আবু দারদার এ প্রস্তাবে লোকটি রাজি হয়ে গেলো। কারণ আবু দারদা যে বাগানটি দিতে চাইলে সেটি এ বাগানের তুলনায় অনেক বেশী উন্নত ছিল। লোকটি সাথে কথা শেষ করে আবু দারদা আবারও রাসূলের দরবারে হাজির হলেন এবং বললেন, হে রাসূলুল্লাহ! আমি একটি কথা জানতে এসেছি। নবীজী তার কথা শুনে মুচকি হেসে বললেন, বলো তুমি কি বলতে চাও। আবু দারদা বললেন, আপনি যে বাগানটি এতিম ছেলেটিকে দান করার জন্য লোকটিকে উৎসাহিত করছিলেন তা যদি আমি ঐ এতিমকে দান করে দেই তাহলে কি আমি তার পরিবর্তে জান্নাতে বাগান লাভ করতে পারবো?
রাসূলেখোদা বললেন, অবশ্যই। আবু
দারদা বললেন, হে রাসূলুল্লাহ আমি ঐ বাগানটি আমার একটি বাগানের বিনিময়ে
কিনে নিয়েছি এবং আপনি সাক্ষী থাকুন আমি বাগানটি এই এতিম ছেলেকে দান করে
দিচ্ছি।
এ কথা শোনার পর এতিম ছেলেটির চেহারা পুনরায় আনন্দে নেচে উঠলো। আর নবীজীও আনন্দে মুচকি হাসতে লাগলেন। এভাবেই রাসূল (সাঃ) অসহায়, দুঃখী, এতিম ও গরীবদের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। তাদের ব্যথায় ব্যথিত হতেন আবার তাদের আনন্দে আনন্দিত হতেন।
এ কথা শোনার পর এতিম ছেলেটির চেহারা পুনরায় আনন্দে নেচে উঠলো। আর নবীজীও আনন্দে মুচকি হাসতে লাগলেন। এভাবেই রাসূল (সাঃ) অসহায়, দুঃখী, এতিম ও গরীবদের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। তাদের ব্যথায় ব্যথিত হতেন আবার তাদের আনন্দে আনন্দিত হতেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন