মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হয়েও অধিকার আদায়ের জন্য করতে হয় লড়াই সংগ্রাম।
মানব সমাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে
মানবাধিকার। মানবাধিকার হল মানুষের যা অধিকার বা প্রাপ্য। এ অধিকার কাদের জন্য?
বিশ্বজুড়ে যারা শক্তিশালী, ক্ষমতাবান তাদের জন্য? না বিশ্বজুড়ে যারা দুর্বল,
ক্ষমতাহীন তাদের জন্য? নাকি জ্ঞানের দিক দিয়ে যারা শ্রেষ্ঠ তাদের জন্য? না, এসবের
একক দল হিসেবে কেউই না। মানবাধিকার হচ্ছে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-দুর্বল-শক্তিশালী,
ক্ষমতাবান-ক্ষমতাহীন, জ্ঞানী-অজ্ঞ নির্বিশেষে সবার জন্য। আজ এ অধিকার নিয়ে হচ্ছে
কত লড়াই সংগ্রাম। এ লড়াই সংগ্রাম কেন হচ্ছে? এসবের কারণ কি? এসবের মূল কারণ
মানুষের প্রকৃত পরিচয়ের অভাব। মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হয়েও অধিকার আদায়ের জন্য করতে
হয় লড়াই সংগ্রাম। জগতের অন্যসব সৃষ্টি তাদের নিজেদের দাবি ও অধিকার নিয়ে লড়াই
সংগ্রাম করে না। করতে হয়ও না। কারণ তাদের মানুষের মতো এতবেশি অধিকারে প্রয়োজন নেই।
মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তাই তাদের অধিকারের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।
আমাদের
চারপাশে আজ প্রতিনিয়ত হচ্ছে ধর্ষণ, হত্যা-জুলুম, লড়াই-সংগ্রাম, মানবতার বিপর্যয়।
এসবের একমাত্র কারণ মানুষের মৌলিক পরিচয়ের অভাব। সঠিক জীবন দর্শনের অভাব।
মানুষের মৌলিক পরিচয় কোনো ধর্ম-বর্ণ-গোত্রে নয়, অর্থ-বিত্ত-কর্মে নয়। মানুষের
মৌলিক পরিচয় তার মৌলিক গঠনে। মৌলিক আকৃতির মৌলিক বৈশিষ্ট্যে। যা সৃষ্টি জগতে অন্য
কারো মাঝে নেই। মানুষের মৌলিক পরিচয় তার চাহিদায়, শক্তিতে, চিন্তায়, চেতনায়।
অন্যকে সহযোগীতা, সহমর্মিতা ও আন্তরিকতায়। অভাব-অনটনে যাদের জীবন যাপন তাদের
পাশে দাঁড়িয়ে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ায়।
ভাবতে অবাক লাগে, শিক্ষিত মানুষরাও তাদের এই মৌলিক পরিচয় অস্বীকার
করছে। আমরা ভুলে গেছি আমরা একই জাতি।
আমি যা খাই, যা পরি, আমার ভালোবাসা পাওয়া সব কিছুতেই তার অধিকার আছে।
আমরা
সবাই জানি খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা, শিক্ষা, কর্ম, বিবাহ, বাকস্বাধীনতা,
চিন্তার স্বাধীনতা- এসব প্রতিটি মানুষেরই একান্ত প্রয়োজনীয় অধিকার। আমাদের জীবনে
চলার পথে এ অধিকারগুলো কখনোই আমরা অস্বীকার করতে পারি না। কিন্তু আজকের বাস্তবতায়
কী হচ্ছে এসব! এই একবিংশ শতাব্দিতেও পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এসব অধিকার থেকে
বঞ্চিত। কেন এরা বঞ্চিত? পৃথিবীর সম্পদ কম, মানুষ গরিব? কখনোই নয়। বরং সমানুপাতিক
বণ্টনের সমস্যা। ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছার অভাব, মানসিক দৈন্য এবং দৃষ্টিভঙ্গিগত
দুর্বলতা। তাই এসব অধিকার আদায়ের লক্ষে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে
মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করা অপরিহার্য। তবে এসব অধিকার আদায়
করতে গিয়ে নতুন করে সংঘাত-সংঘর্ষ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং বিশেষ করে কোনো রাজনৈতিক
দলের নেতা-কর্মী কিংবা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে হিংসা প্রতিহিংসায় আমরা যেন জড়িয়ে না
যাই সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
মানুষের
অধিকার নিয়ে সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে প্রবৃত্ত হতে হবে আমাদের।
যতক্ষণ না একটি সমাজ, একটি দেশ ও একটি জাতি সাধারণভাবে এর উপর সহমত পোষণ করে। কারণ
বিশ্বের সমস্ত মানুষ মৌলিকভাবে এক, তাদের মৌলিক চাহিদা এক মৌলিক আশা-আকাঙ্ক্ষা এক।
এর গতি-প্রকৃতি এক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন