মৌলিক অধিকারগুলোই কি মানবাধিকার নাকি মানবাধিকারের অংশ মৌলিক অধিকার?
মৌলিক অধিকারগুলোই কি মানবাধিকার নাকি মানবাধিকারের অংশ মৌলিক অধিকার? দুটো কি একই বিষয়? একটা কি অপরটির পরিপূরক নাকি প্রতিটিই স্বতন্ত্র? প্রশ্নগুলো অনেক সময়েই ধন্দে ফেলে। জানি আবার ঠিক জানি না এমন ইতস্তত পরিস্থিতিতে পড়তে হয় অনেককেই। তাই বিষয়টি সবার কাছে খোলাসা থাকাটা খুব জরুরি বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট সূক্ষ্ম বিভাজনটার বিষয়ে না জানার কারণে অধিকার আদায় প্রশ্নে কিছু ফাঁক থেকে যায়। এসব নিয়ে কাজ করতে বাংলাদেশের দায়িত্বশীল সংস্থার সংখ্যাও হাতে গোনা বলে তাদের অভিমত।
তত্ত্বাবধায়ন সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের পার্থক্যের জায়গা কম। মানবাধিকারের সূত্রগুলো মৌলিক অধিকারের ওপর ভিত্তি করেই হয়। একজন মানুষ মানুষ হিসেবে জন্মেছে বলেই কিছু অধিকার সে দাবি করতে পারে।
মানবাধিকারে তার চলাচলের অধিকার, জীবনের অধিকার থাকবে, বিশ্বাসের অধিকার থাকবে, বাকস্বাধীনতা থাকবে। এগুলোও মৌলিক অধিকার। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র যে মৌলিক অধিকারগুলো সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে কখনও কখনও সেগুলোকে মানবাধিকার বলে স্বীকার করতে চায় না। কারণ, নাগরিক সেই অধিকার না পেলে রাষ্ট্র দিতে বাধ্য থাকে। বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হলো তখন পাঁচটি মৌলিক অধিকার নির্ধারিত হলেও সেগুলো মানবাধিকার হিসেবে গৃহীত হলো না। কিন্তু আমাদের ৩১ থেকে ৩৫ ধারায় মানবাধিকারের বিষয়গুলো আনা হলো। অর্থনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো না কিন্তু নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো।
ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম মনে করেন, মানবাধিকারগুলো আইনগতভাবে প্রয়োগ সবসময় বাধ্যতমূলক নয়। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, মানবাধিকারের বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক সনদের মাধ্যমে বলা আছে। এই মানবাধিকারগুলো আইনগতভাবে প্রয়োগ করতে সব দেশ সবসময় বাধ্য নয়। তিনি আরও বলেন, সংবিধানে কিছু মৌলিক অধিকার নির্দিষ্ট আছে। বাংলাদেশের কোনও আইন যদি মৌলিক অধিকার পরিপন্থী হয় তাহলে বাতিল হবে। মৌলিক অধিকার অনেক শক্তিশালী, নাগরিককে ব্যাপক অর্থে নিরাপত্তা দেয়।
তিনি বলেন, সব মানবাধিকার মৌলিক অধিকার না। মানবাধিকার অনেক উঁচু মাপের অধিকার, যেটির মধ্যে মৌলিক অধিকারের কথাও রয়েছে।
মানবাধিকার কর্মী আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান গণমাধ্যমকে বলেন, মানুষের যে অধিকার বেঁচে থাকার জন্য অতীব জরুরি সেগুলো মৌলিক অধিকার। এ অধিকারের পাশাপাশি এটি নিশ্চিত করার জন্য মানুষের কথা বলা, প্রতিবাদ করা, সমস্যার কথা তোলা, এই অধিকারটাই মানবাধিকার। বাংলাদেশে সেই অধিকার কতটুকু নিশ্চিত হচ্ছে প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেক উন্নয়ন সাধিত হলেও মানুষের স্বস্তির জায়গা, বেঁচে থাকার জন্য যে অধিকার দরকার সেগুলো অনেকক্ষেত্রেই সংকুচিত। গুম ‘ক্রসফায়ারের’ নামে যে ঘটনা, বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি প্রবাহিত, এটার মধ্য দিয়ে সমাজে বিভীষিকাময় অবস্থা তৈরি হয়েছে।বাংলাদেশে মানবাধিকার সংস্থাগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে না । না পারার পেছনে কারণ সমাজে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করে,লুটপাটের অর্থনীতি বিকশিত হলে তখন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী শ. ম. রেজাউল করিম মনে করেন বাংলাদেশে প্রত্যাশিত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি তবে মানবধিকার নেই এটি বলার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের পার্থক্যের জায়গা নির্দিষ্টই আছে, সেটি বিবেচনায় রাখা জরুরি। তিনি বলেন, মৌলিক অধিকার সংবিধান সম্মতভাবে নির্ধারিত। যেকোনও নাগরিকের সহজাত অধিকারগুলোকে মানবাধিকার বলা হয়। এর নির্দিষ্ট সীমারেখা করে দেওয়া হয়নি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন