আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার পরিবর্তে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে ঘটনাগুলো অস্বীকার করে
বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমসহ বিভিন্ন গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার পরিবর্তে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে ঘটনাগুলো অস্বীকার করে যাচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিও)।
তবে এই প্রতিবেদনে “সত্যতা নেই” মন্তব্য করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার।
বিশ্বের ৯০টির বেশি দেশের গত বছরের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত প্রায় সাড়ে ছয় শ পৃষ্ঠার ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০১৮’র বাংলাদেশ অধ্যায়ে এই অভিযোগ করে সংস্থাটি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সকল বাহিনী অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনে যুক্ত এবং সব ক্ষেত্রেই তাঁদের দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়।
এতে বলা হয়, “অভ্যন্তরীণ নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ জোরপূর্বক নিখোঁজের শিকার হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধীদলের সমর্থক ও সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করছে।”
তবে এই অভিযোগগুলোকে “বাজে কথা” এবং এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদনটিতে “সত্যতা নেই” বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বেনারকে বলেন, “দেখুন তথাকথিত গুম হওয়া ব্যক্তিদের ব্যাপারে তদন্ত করেছি। অনেককেই খুঁজে বের করেছি। এরা আমাদের সরকারকে বিব্রত করতে নিজে নিজে লুকিয়ে থেকে বলে গুম হয়েছে।”
“আমি এই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করি। কারণ এতে সত্যতা নেই,” বেনারকে বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তবে মানবাধিকার কর্মীরা এই প্রতিবেদনটিকে সঠিক বলে মূল্যায়ন করেছেন।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী নূর খান বেনারকে বলেন, “আমাদের দেশে গত কয়েক বছর ধরে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও জনগণের মধ্যে ভয় বেড়েছে এবং দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা দেশের মানবাধিকার কর্মীরা এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে সরকারের প্রতি বার বার আহ্বান জানানোর পরও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।”
তবে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেবার জন্য বাংলাদেশের প্রসংশা করা হয় প্রতিবেদনটিতে।
এ প্রসঙ্গে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরডব্লিউর এশিয়া ডিরেক্টর ব্রাড এডামস বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জোর করে ফেরত না পাঠানো ও স্বল্প সামর্থ্যের ভেতরেও সামায়িকভাবে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ যা করেছে তার জন্য অবশ্যই দেশটি প্রসংশা পেতে পারে।”
“তবে শরণার্থীদের বসবাসের অযোগ্য দ্বীপে স্থানান্তর অথবা বার্মায় তাঁদের মৌলিক নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা উদ্বেগজনক,” বলেন তিনি।
প্রতিবেদনটিতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমসহ সর্বস্তরের নাগরিকরা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে চাপের মধ্যে রয়েছেন বলে মন্তব্য করা হয়।
“দেশে এখন মত প্রকাশ করার স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হয়েছে। দেশের মানুষ তাদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে ভয় পায়। তার কারণ, কারো কোনো কথা যদি কারো বিশেষ করে, সরকারের বিরুদ্ধে যায় তাহলে তাঁকে হয় জঙ্গি অথবা রাজাকার বলে লেবেলিং করা হয়,” প্রতিবেদনকে সমর্থন করে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান।
এছাড়া মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করা, সমকামীদের অধিকার স্বীকার না করা ও আন্তর্জাতিক মানের শ্রম আইন করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্যও সরকারের সমালোচনা করা হয় প্রতিবেদনটিতে।
“বিগত বছরগুলোতে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে একটি ইতিবাচক ঘটনাও খুঁজে পাওয়া কঠিন,” সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্তব্য করেন ব্রাড এডামস।
তিনি বলেন, “দেশ যখন ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আইনের শাসন ফিরিয়ে আনা এবং বিরোধীদের স্তব্ধ করে দেবার মতো সকল কর্মকাণ্ড বন্ধ হওয়া জরুরি।”
“সরকারের উচিত দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো,” ব্রাড এডামসের মন্তব্যকে সমর্থন করে বলেন নূর খান।
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরী।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন