জেনে নিন পুলিশ গাড়ি আটক করলে করণীয়
সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থে যানচলাচলে ট্রাফিক আইনসহ বেশকিছু নিয়মনীতি মেনে গাড়ী চালাতে হয়। এসব নিয়ম না মানলে আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। অপরাধীকে জরিমানাসহ মামলা দায়ের করতে পারে।
প্রয়োজনে পুলিশ গাড়ি আটক করতে পারে। গাড়ি আটক হলে অনেকেই ঘাবড়ে যান, এক্ষেত্রে আপনার সব কাগজপত্র যদি ঠিক থাকে তাহলে বিচলিত হওয়ার কোন কারণ নেই । মনে রাখবেন গাড়ি ছাড়িয়ে আনা একটু ঝামেলার কাজ। এ সময় মাথা ঠিক রেখে সতর্ক হয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনি পদ্ধতি অনুসরণ করে গাড়ি ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। বিষয়টি সম্পর্কে অনেকেই ভালভাবে অবগত নন। নিয়মকানুন না মানার ফলে সড়কে বিশৃঙ্খলা, ট্রাফিক সিস্টেমে অব্যবস্থাপনা দেখা যায়। যে কারণে প্রতিদিন সড়কে ঘটছে অস্বাভাবিক মৃত্যু ও সড়ক দূর্ঘটনা। আসুন এই সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিই। দেশের সকল নাগরিকের এসব নিয়মকানুন জানা উচিত। যাতে নিজে এবং অন্যকে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ হতে বিরত রাখতে পারে।
যেসব কারণে গাড়ি আটক হতে পারে
পুলিশ বিভিন্ন কারণে আপনার গাড়ি আটক করতে পারে, যেমন, গাড়ীর রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফিটনেস সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেন , ইন্স্যুরেন্স কাগজপত্র , সাধারণ পরিবহনের জন্য রুট পারমিট, চালকের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি বৈধ কাগজপত্র না থাকলে মামলা হতে পারে।
ট্রাফিক সিগন্যাল/লাইট না মেনে গাড়ী চালানো, বিপদজনকভাবে দ্রুত গতিতে গাড়ী চালানো, যখন তখন লেন পরিবর্তন করা, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা, হেলমেট ছাড়া মটরসাইকেল চালানো ,ওভার লোড বহনে ইত্যাদি ভুলের কারণে ট্রাপিক পুলিশে মামলা দিতে পারে। যানবাহনের বিভিন্ন ত্রুটি যেমন হেডলাইট না জ্বলা বা না থাকা, ইন্ডিকেটর লাইট না থাকা বা না জ্বলা, সাধারণ পরিবহন/গাড়ীর বডিতে পার্টিকুলার বা বিবরণ না থাকা, মালিক বা মালিকের নাম ঠিকানা না থাকা, গাড়ীতে অতিরিক্ত আসন সংযোজন অথবা গাড়ীতে বিআরটিএ অনুমোদন ছাড়া কোন সংযোজন বা পরিবর্তন করা, ইত্যাদি ত্রুটির কারণে ট্রাপিক পুলিশ মামলা দিতে পারে। এছাড়াও ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন না করা,বীমার মেয়াদ উত্তীর্ণের জন্য, সঠিক জায়গায় গাড়ি পার্ক না করা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, চালাতে গিয়ে পুলিশের নির্দেশনা না মানা,আদেশ অমান্য, বাধা সৃস্টি ও তথ্য প্রদানের অস্বীকৃতি, নিষিদ্ধ হর্ণ কিংবা শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র লাগানো, নির্ধারিত গতির চেয়ে দ্রুত গতিতে গাড়ী চালনা, ইত্যাদি কারণেও মামলা করতে পারে ট্রাপিক পুলিশ।
যা করতে হবে
গাড়ি আটক করার সময় পুলিশ আপনার কাগজ জব্দ করবে এবং আপনাকে একটি রশিদ প্রদান করবে। যদি মামলা দেয় তাহলে ফটোকপি নিতে। হবে তবে দূর্ঘটনার ক্ষেত্রে মোটরযান আইন ছাড়াও নিয়মিত মামলা হতে পারে। কী অপরাধে জরিমানা করল , কে জরিমানা করলেন , কোথায় করা হল, কত তারিখের মধ্যে হাজির হতে হবে সবকিছু লিখে দেওয়া হয় রসিদটিতে।
কোন জোনের ট্রাফিক পুলিশ আপনার গাড়িটি আটক করল সেটা ট্রাফিক পুলিশের প্রদত্ত রসিদের পেছনে লেখা থাকে ।উল্লেখিত সেই জোনের অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। রশিদের পেছনে জোন ভিত্তিক উপস্থিতির সময়ও লেখা থাকে। কাজেই সে অনুয়ায়ী গেলে আপনার সময় বাঁচবে। এসব ক্ষেত্রে আপনার অনুকূলে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে সব কাগজপত্র দাখিল করতে পারেন। সংশ্লিষ্ট জোনের ডেপুটি কমিশনার জরিমানা নির্ধারণের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি করে থাকেন। ডেপুটি কমিশনার পূর্ণ জরিমানার চার ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত জরিমানা নির্ধারণ করতে পারেন। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অফিস থেকে জরিমানা প্রদানের জন্য আরেকটি রশিদ দেয়া হবে আপনাকে। জরিমানা পরিশোধের পরপরই জব্দ হওয়া ডকুমেন্ট এবং আপনার প্রদত্ত সব কাগজপত্র বুঝে নিবেন। অনেক সময় ডেপুটি কমিশনার আপনার জরিমানা মওকুফও করে দিতে পারেন। জরিমানা না দিলে বা জোন অফিসে যথাসময়ে হাজির না হলে প্রতিবেদন সহকারে মামলাটি আদালতে পাঠানো হতে পারে। আদালত ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে পারে। আদালতে মোটরযান মামলাসংক্রান্ত শাখা রয়েছে।
মোটরযানসংক্রান্ত মামলায় সাধারণত জরিমানা হয়ে থাকে। এ জরিমানার টাকা আদালতে জমা দিলে মামলা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। পুলিশ যদি কোন কারণে গাড়ি অহেতুক আটক করা তাহলে আইনজীবীর মাধ্যমে উপযুক্ত প্রমাণাদি আদালতে উপস্থাপন করে গাড়িটি নিজের জিম্মায় নিতে আপনি আবেদন করতে পারেন।সাধারণত প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে (আইও) বিআরটিএ (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি) থেকে গাড়ির মালিকানা নিরূপণ করে কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আদেশ দিয়ে থাকেন । এরপর প্রতিবেদন থানা থেকে আদালতে পাঠানো হলে আইনজীবী নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখবেন যে তা নথির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে কি-না। আইনজীবী একটি দরখাস্তের মাধ্যমে আদালতকে অবহিত করবেন যে বিআরটিএ থেকে গাড়ির মালিকানা নিরূপণ করা হয়েছে।
আদালত বিআরটিএ প্রতিবেদন, তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন ও আইনজীবীর শুনানিতে সন্তুষ্ট হলে থানা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেবেন আটক গাড়িটি জিম্মায় দেওয়ার জন্য। পরবর্তী সময়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে গাড়ি নিজের জিম্মায় নিতে পারবেন এই শর্তে যে পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন হলে তিনি তা থানায় হাজির করবেন।
আইন অমান্যকারীদের শাস্তি হিসাবে মোটরযান অধ্যাদেশ এবং দন্ডবিধি সহ প্রচলিত বিভিন্ন আইনে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড বা বিভিন্ন পরিমানের জরিমানা অথবা উভয়বিধ শাস্তি দিয়ে থাকে।
মো: রায়হান ওয়াজেদ চৌধুরী:
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন