মানবসৃষ্ট পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় স্থান ‘এরিয়া ৫১’


পৃথিবীতে যদি মানুষের সৃষ্টি কোন দুর্লভ যায়গা থেকে থাকে তবে “এরিয়া ৫১” তার মদ্ধে অন্যতম।  এ এলাকায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দুর্ভেদ্য বেষ্টনীতে ঘেরা এ ঘাটির প্রবেশপথে লেখা আছে ‘সংরক্ষিত এলাকার দিকে প্রবেশের চেষ্টা করলেই তাকে গুলি করা হবে’।
তাই এই জায়গাটি নিয়েই বিশ্ববাসীর সবচেয়ে বেশি কৌতূহল। কি আছে এর ভেতর? কিইবা এমন কার্য সম্পাদন করা হয় এই ঘাটিতে, যার দরুন সেখানকার তালিকাভুক্ত কর্মীদের ছাড়া আর কাউকেই ঢুকতে দেয়া হয় না । এমন প্রশ্ন বিশ্ববাসীর মনে ঘুরপাক খাবে এটাই যেন স্বাভাবিক ।
আর ‘এরিয়া ৫১’ এমন এক সামরিক ঘাটি, যেখানকার কর্মীরা সরাসরি প্রেসিডেন্টের কাছে দায়বদ্ধ। এরিয়া ৫১ এর ভেতর আজপর্যন্ত বেসামরিক কেউ ঢুকতে পারেননি। যদি কেউ ঢুকেও থাকেন তাহলে তিনি ফিরে এসেছেন লাশ হয়ে ।
“এরিয়া ৫১” ইউএসএ গভ এতোটায় গোপন করে রেখেছে যে, যখন আমেরিকা ও সোভিয়েত উইনিয়নের মধ্যকার “স্নায়ুযুদ্ধ” হয়েছিলো তখনও এটির সম্পর্কে সোভিয়েত উইনিয়নের অভিযোগ করার পরেও তার অস্তিত্ব সিকার করে নি।
অবশেষে ১৮ই আগষ্ট ২০১৩ সালে  প্রথমবারের মত আমেরিকার সরকার স্বীকার করে নেয় যে, হ্যাঁ এই এরিয়া ৫১ এর অস্তিত্ব আছে। তাঁরা স্বীকার করে যে “যুক্তরাষ্ট্র সরকার দেশটির এক গোপন সামরিক পরীক্ষার স্থান হিসেবে ‘এরিয়া ৫১’ নামক জায়গাটি ব্যবহার করে। মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) নথি থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।



এরিয়া ৫১। এটি এমন একটি স্থান যা সম্পর্কে সঠিক কোনো ধারণা নেই। যা নিয়ে মানুষের কৌতুহলেরও শেষ নেই। সাধারণ কোনো মানুষ আজ পর্যন্ত এই স্থানে প্রবেশ করেছে বলে দাবি করেনি। কেউ যদি প্রবেশ করে থাকে তাহলে সে সেখানে থেকে আর ফিরে আসার কথা না। এরিয়া ৫১ খুবই রহস্যময় একটি এলাকা এবং এটা নিয়ে গুজবেরও শেষ নেই। যেমন অনেকে এই এলাকার আশেপাশে ভিন গ্রহের প্রাণী বা ভিন গ্রহের যান দেখার দাবী করেছেন। যা হোক, চলুন জেনে নেই, এরিয়া ৫১ নিয়ে কেন এতো রহস্য বা গুজব।
এরিয়া ৫১ মূলত মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি সামরিক ঘাটি। যার আয়তন ২৬,০০০ বর্গকিলোমিটার। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে এবং লাস ভেগাস থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম রেকেল গ্রামের কাছে অবস্থিত। খুবই গোপনীয় এই সামরিক বিমান ঘাঁটি গ্রুম হ্রদের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত
রহস্য হলো এমন কিছু যা সম্পর্কে সঠিক কোনো ধারণা আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। পৃথিবীতে রহস্যের শেষ নেই। আর এইসব রহস্য নিয়ে মানুষের কৌতুহলেরও শেষ নেই। আজও মানুষেরা অনেক রহস্যের কূলকিনারা খুজে পায় নি। অনেক কিছুর রহস্য আবিষ্কার করলেও অইসব জিনিসের ব্যাখ্যাও সঠিকভাবে দিতে পারে নি। যার কারনে আজও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র কিছু রহস্যের ব্যাখ্যা পাবার জন্য।



ভিনগ্রহের প্রানী এলিয়েন নিয়ে মানুষ এর কৌতুহলের সীমা নেই। কিন্তু নানা ধরনের গুজব-গুঞ্জন তখনি ডালপালা মেলতে শুরু করে যখন শোনা গেলো মার্কিন গোপন বিমান ঘাঁটি “এরিয়া ৫১” নাকি ঘুরে গেছে এলিয়েন এর দল। ঘাঁটিটি থেকে অনেক উচ্চতায় নাকি অজ্ঞাত উরন্ত বস্তু “ইউএফও” এর দেখাও মিলেছে। এর পর থেকেই এ জায়গা আরো রহস্যময় হয়ে উঠে। কিন্তু এইসব কথাগুলো আদৌ সত্য কিনা তা নিয়েই সন্দেহের সীমা নেই। ধারনা করা হয় এখান থেকে এলিয়েনদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়।

সবচেয়ে রহস্যময় হলো এই জায়গাটুকু পৃথিবীর মানচিত্রে পাওয়া যায় নাহ এমনকি গুগল আর্থ এও নাই। আমেরিকার নেভাদা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাংশে লাস ভেগাস থেকে ১৩৩ কিলোমিটার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে গ্রুম হ্রদের দক্ষিনতীরে এরিয়া ৫১ এর অবস্থান। ২০১৩ সালে “সিআইএ” সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে এরিয়া ৫১ এর কথা স্বীকার করে। ঠিক কবে থেকে মার্কিন এ গোপন ঘাঁটি “এরিয়া ৫১” নামে মানুষের নিকট পরিচিতি লাভ করে তা জানা যায় নি।

কোথায় অবস্থিত এরিয়া ৫১?

লাস ভেগাস থেকে ১০০ মাইলেরও কম দূরত্বে অবস্থিত নেভাডা টেস্ট সাইট (NTS)। এই NTS-এ পারমানবিক বোমার পরীক্ষা চালায় এটমিক এনার্জি কমিশন। সব কিছুই তো রৌদ্রজ্জ্বল দিনের মতো পরিষ্কার, তাহলে গোপনীয়তা কোথায়? না, অবশ্যই উল্লেখ্য জায়গাটি NTS নয়; দুনিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত গোপন জায়গাটি হলো এই NTS-এর সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত এরিয়া ৫১। এই এরিয়া ৫১ নামকরণের অনেক তত্ত্ব রয়েছে, তার মধ্যে একটি NTS সাথে জড়িয়ে। NTS বিভিন্ন বর্গাকৃতি অংশে বিভক্ত, যেগুলোকে নামকরণ করা হয় ১ থেকে ৩০ নম্বর দিয়ে। NTS এর এরিয়া ১৫-এর সাথে সীমানা রয়েছে এরিয়া ৫১-এর। মনে করা হয় এই এরিয়া ১৫ এর ১ ও ৫ কে অদল-বদল করে নামকরণটি করা হয়েছে। জায়গাটির অফিশিয়াল নামগুলো আজও গোপনই রয়ে গেছে, তবে এরিয়া ৫১ ছাড়াও আরো অনেক নামেই অবিহিত করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের গোপন এই সামরিক স্থাপনাটিকে। যেমন- Paradise Ranch, The Ranch, The Watertown Strip, The Box, Red Square, Dreamland ইত্যাদি।

প্রথম নজরে আসা

গোপন এই জায়গাটি গোটা দুনিয়ার নজরের বাইরে ছিল প্রায় কয়েক যুগ। সর্বপ্রথম ১৯৮৮ সালে একটি সোভিয়েত স্যাটেলাইট ছবি তুলে এরিয়া ৫১-এর। এরপর বিভিন্ন পাবলিকেশন এসব ছবি প্রকাশ করে দিলে বের হয়ে আসে থলের বিড়াল। শুধু স্যাটেলাইটের ছবিটুকুই প্রকাশিত হওয়া পর্যন্তই, এরিয়া ৫১-এর গোপনীয়তায় ছেদ পড়েনি বলতে গেলে এতটুকুও। স্যাটেলাইটে জায়গাটির অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়ার পর  অনেক রকমের তত্ত্ব, মতবাদ, গুজব, কল্পকথা, রহস্যময়তা, রহস্যময় যান ও অ্যালিয়েন প্রযুক্তি ইত্যাদি নিয়ে নানান কিছু উঠে আসতে থাকে। এত কিছুর মধ্যে আপনি হয়ত খেই হারিয়ে ফেলবেন কোনটি কল্পনা ও কোনটি সত্য! কী হয় এরিয়া ৫১-এ? কেন ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সরকার স্বীকার করেনি জায়গাটির অস্তিত্ব? কেন এরিয়া ৫১-এর উপর দিয়ে বিমান চলাচল নিষিদ্ধ, এমনকি তাদের নিজস্ব সামরিক বিমানও? এরিয়া ৫১ নিয়ে হাজারটা প্রশ্নের লক্ষ কোটি উত্তর হতে পারে; কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা তা যাচাই করা কতটা সম্ভব, বলা মুশকিল। তবে এখানে কিছু জনপ্রিয় তত্ত্ব তুলে ধরছি, যা সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে যাচাই করবেন!

আজকে এই এরিয়া ৫১-এর অবস্থান সবার জ্ঞানের সীমার ভিতরে চলে আসলেও একটা সময় ছিল যখন এর অবস্থান একেবারেই অজানা ছিল সবার কাছে। মানচিত্রের কোথাও উল্লেখ ছিল না এরিয়া ৫১-এর, স্থাপনাটি নেলিস এয়ারফোর্স বেসের সীমার মধ্যেও পড়লেও মানচিত্রের কোথাও কোন রাস্তার উল্লেখ ছিলনা। দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত বলে লোক চোখের অন্তরালে রাখা বেশ সহজ কাজ ছিল। পুরো এরিয়া ৫১ অঞ্চলটি ঘিরে রয়েছে হাজার হাজার একরের মরুভূমি, যা অতি আগ্রহীদের উঁকিঝুঁকি থেকে সহজেই ড়াল করে রাখতে পারে। আপনি যদি আগ্রহী হয়ে থাকেন জায়গাটিতে যাওয়ার ব্যাপারে, তবে এরিয়া ৫১ এক ঝলক দেখতে পাবেন সবচেয়ে কাছ থেকে- সেই জায়গাটিও প্রায় ২৬ মাইল দূরের টিকাবু চূড়া থেকে! এরিয়া ৫১-এর সীমানায় কোন বেড়া নেই, তবে কমলা রঙের পোল ও সতর্কবার্তা দেওয়া রয়েছে; যেখানে বলা রয়েছে প্রবেশ নিষিদ্ধ, ছবি তোলা নিষেধ এবং প্রবেশ করলে জরিমানা গুনতে হবে। সতর্কবার্তায় আরো বলা থাকে যে, কর্তৃপক্ষ অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ফোর্স ব্যবহার করতে পারে, যারা আপনাকে গুলি করতেও দ্বিধা করবে না! গুজব রয়েছে অনেক সত্যান্বেষীই মারা গিয়েছে এরিয়া ৫১-এর সীমানায়। তবে বেশিরভাগ বিশ্বাস করে অনুপ্রবেশকারীদের সাথে এতটা নির্মম হয় না এরিয়া ৫১ কর্তৃপক্ষ।

কঠোর গোপনীয়তা

নিজেদের গোপনীয়তা রক্ষায় এরিয়া ৫১-এর সীমানাজুড়ে রয়েছে অসংখ্যা সেন্সর যা সহজেই মানুষ ও প্রাণী যে কোন অনুপ্রবেশকারী সনাক্ত করতে পারে। তাছাড়া সীমানাজুড়ে পাহাড়া দেয় Wackehunt বা EG&G এর গার্ডরা, যাদের নির্দেশ দেওয়া থাকে লোকের সাথে সরাসরি কথোপকথনে না জড়াতে এবং নিজেদেরাও যেন কৌতুহলী দর্শনার্থীর ভূমিকায় অবতীর্ণ থাকে। এদেরকে ‘Cammo dudes’ ডাকা হয় কারণ এরা মরুভূমির ক্যামোফ্ল্যাজে থাকে।
আগেই বলেছি এরিয়া ৫১-এর একটি সীমানা রয়েছে NTS এর সাথে, এটি পশ্চিম দিকে; শুষ্ক গ্রুম লেকের কোল ঘেঁষে রয়েছে অন্য সীমানা। এবং এরিয়া ৫১-এর উত্তরে সবচেয়ে কাছের শহরটি র‍্যাচেল প্রায় ২৫ দূরে অবস্থিত। প্রায় ৯০,০০০ একর জায়গা নিয়ে গঠিত এরিয়া ৫১। বিশাল এই এলাকা নিয়ে গঠিত অঞ্চলটিতে ঠিক কি রয়েছে জানা যায় না, তবে বলা হয় বিশাল এই অংশের আপনি যা দেখেন বা শুনেন তা এর সত্যিকার অবকাঠামোর অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ। অনেকেই বিশ্বাস করেন মাটির নিচে আরো প্রায় ৪০ তলা পর্যন্ত অবকাঠামো রয়েছে, আরো রয়েছে গোপন রেল লাইন যা লস অ্যালামস, হোয়াইট স্যান্ডস এবং লস এঞ্জেলেসের অন্যান্য গোপন অঞ্চলের সাথে যুক্ত! বিপুল এই অবকাঠামো নির্মান কিন্তু সহজ কথা নয়, ব্যাপক এই কর্মযজ্ঞের জন্যে টন টন মাটি সরাতে হতো, বিপুল পরিমানের কংক্রিট ও নির্মানসামগ্রীর প্রয়োজন ছিল, আরো দরকার ছিল ব্যাপক লোকবল। তবে এমন কোন কর্মযজ্ঞ কেউ কোন দিন দেখেছে বলে শোনা যায়নি। যতটুকু জানা যায় এরিয়া ৫১-এ রয়েছে একটি হ্যাঙার, একটি নিরাপত্তা কর্মীদের আবাসস্থল, কিছু রাডার অ্যান্টেনা, কিছু বিল্ডিং, অফিস, রানওয়ে এবং আশ্রয়স্থল! এই আশ্রয়স্থলগুলো বিশেষভাবে তৈরি যেন ভেতরের যেকোন উড়োযান কিংবা গবেষণাধীন উড়োযানগুলো স্যাটেলাইটের দৃষ্টি এড়িয়ে লুকিয়ে থাকতে পারে।
কতটা গোপন এরিয়া ৫১ অঞ্চল? এরিয়া ৫১ আকাশসীমা R-4808 নামে পরিচিত এবং এই সীমা সব ধরণের বানিজ্যিক ও সামরিক বিমানের জন্যে নিষিদ্ধ, যা এরিয়া ৫১ থেকে উড্ডয়ন করেনি। ধারণা করা হয় এরিয়া ৫১ ক্যালিফোর্নিয়ার এডওয়ার্ড এয়ারফোর্স বেস বা নেলিস এয়ারফোর্স রেঞ্জের অংশ, কিন্তু এসব ঘাঁটির বিমানও এই R-4808 এর মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারবে না। এই অঞ্চল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমান পাইলট উড়িয়ে নিয়ে গেলে তা ভয়াবহ রকমের অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয়, এক্ষেত্রে ঐ পাইলটকে কোর্ট মার্শাল, জেল এবং বহিষ্কার করা হতে পারে। R-4808 প্রথমে বিস্তৃত ছিল আকাশের উপরের দিকে প্রায় ৫ থেকে ৯ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, এরপর এটি বিস্তৃত করা হয় ২০ থেকে ২২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত। এই বিশাল বিস্তৃত নিষিদ্ধ অঞ্চলের জন্যেই Area 51 এর আরেক নাম The Box. অঞ্চলটির গোপনীয়তা এতটা যে একই সময়ে ও একই প্রজেক্টে কাজ ভিন্ন ভিন্ন লোকেরা জানে না যে তারা একই রকমের কাজের সাথে যুক্ত কিংবা এক বিল্ডিংয়ের লোকেরা জানে না অন্য বিল্ডিংয়ে কী হচ্ছে! 
কী ধরণের কাজ করা হয় এই ঘাঁটির ভেতরে? যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর ভাষ্যমতে এরিয়া ৫১-এর উদ্দেশ্য প্রযুক্তির সক্ষমতা যাচাই এবং বিভিন্ন কঠিন অপারেশনের প্রশিক্ষণ, যা ইউএস সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এরিয়া ৫১-এর ভেতরের সবকিছুই একেবারেই গোপন। সিআইএ, বিমান বাহিনী এবং লকহিড এটিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের জন্যে, গোপন বিমান তৈরি, নতুন প্রযুক্তির পরীক্ষা ও উন্নয়ন ইত্যাদি নানাবিধ কাজে যার সবকিছুই চূড়ান্ত পর্যায়ের ক্লাসিফাইড।

অ্যালিয়েন, ইউএফও-এর অস্তিত্ব?

সম্ভবত এরিয়া ৫১-এর সাথে জড়িত সবচেয়ে জনপ্রিয় তত্ত্বটি অ্যালিয়েন ও ভিনগ্রহের যান সংক্রান্ত। অনেকেই বিশ্বাস করেন- নিউমেক্সিকোর রসওয়েলে একটি অ্যালিয়েন স্পেস ক্র্যাফট ধ্বংস্প্রাপ্ত হয়, যার ভগ্নাংশ ও অ্যালিয়েনের দেহাবশেষ পরীক্ষা ও গবেষণার জন্যে সরকার অতি গোপনে চালান করে এরিয়া ৫১-এ। এই তত্ত্ব থেকে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে কেউ কেউ দাবি করে এরিয়া ৫১-এর ভেতরে জীবিত অ্যালিয়েন ও অ্যালিয়েনদের স্পেস ক্রাফট রয়েছে; তাদের ধারণা মাটির নিচে অনেক সুরঙ্গ রয়েছে, যেগুলো দিয়ে তারা অন্যান্য গোপন জায়গার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। এই তত্ত্বের সবচেয়ে বিস্ময়কর দাবিটি হলো, আসলে এরিয়া ৫১-এর পেছনের মূল হোতা অ্যালিয়েনরা এবং তারা চেষ্টা করছে অ্যালিয়েন-মানুষ হাইব্রিড জাত তৈরি করতে।
১৯৪৭ সালের জুলাইতে ওয়াশিংটনের উপর দিয়ে একটি ইউএফও (Unidentified Flying Object) দেখতে পাওয়ার দাবি করা হয়। এই দাবিটি আরো বদ্ধমূল হয় যখন একই বছরের ৮ জুলাই Roswell Army Air Field এর জেনারেল উইলিয়াম ‘বুচ’ এর লিখিত একটি প্রেস রিলিজ, যেখানে তিনি বলেন তারা একটি ইউএফও উদ্ধার করেছেন। পরে যদিও বিবৃতিটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, তবে ততক্ষণে বিভিন্ন পত্রিকায় এটি প্রকাশ করা হয়ে যায়। নতুন বিবৃতিতে দাবি করা হয় উদ্ধারকৃত যানটি আদতে কোনো ইউএফও ছিল না, আসলে সেটি ছিল একটি আবহাওয়া বেলুন! ইউএফও বিশ্বাসীরা এটি কিছুতেই মানতে রাজি নন, তাদের মতে সেটি একটি অ্যালিয়েন যান ছিল এবং রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে অনেক উন্নত প্রযুক্তির জ্ঞান লাভ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে!
১৯৮৭ সালে গোটা দুনিয়া নড়েচড়ে বসে যখন রবার্ট ল্যাজার নামক একজন একটি টিভিতে দাবি করেন তিনি অ্যালিয়েন সংক্রান্ত একটি প্রজেক্টে এরিয়া ৫১-এ কাজ করেছেন! ল্যাজার দাবি করেন গ্রুম লেক থেকে খুব দূরে নয় S-4 নামের একটি জায়গায় যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের হাতে রয়েছে ৯ টি অ্যালিয়েন স্পেসক্র্যাফট, যেখানে লেখাও রয়েছে ‘তারা এখানে’! ল্যাজারকে নিয়োগ দেওয়া হয় অ্যালিয়েনদের প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তিতে কীভাবে ব্যবহার করা যায় এই সংক্রান্ত একটি গবেষণার জন্যে। এমন একটি দাবি সাময়িকভাবে গোটা দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দিলেও পরবর্তীতে বের হয়ে আসে যে ল্যাজারের দাবি মিথ্যে, কেননা তিনি বলেছিলেন MIT ও Caltech থেকে ডিগ্রী নিয়েছেন তিনি। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে এই সংক্রান্ত কোন প্রমাণ নেই। ল্যাজার অবশ্য এরপরে দাবি করেন যে সরকার তাকে মিথ্যা প্রমাণ করতে তার অস্তিত্ব সংক্রান্ত সব তথ্য বিলীন করে দিয়েছে! এতকিছুর পরও ল্যাজারের দাবিটিই আসলে ইউএফও এবং এরিয়া ৫১ সংক্রান্ত তত্ত্ব জনপ্রিয়করণে দারুণ ভূমিকা রেখেছে।
ল্যাজারের দাবির সমর্থনে অনেকেই বলে থাকেন বর্তমান প্রযুক্তি আসলে অ্যালিয়েনদের প্রযুক্তির রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ফলাফল/ তাদের মতে মানুষের নিজেদের জ্ঞানচর্চায় এত অল্প সময়ে অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির অধিকারী হওয়া সম্ভব না কোনো অ্যালিয়েন প্রযুক্তি ছাড়া। আরো শোনা যায়, অ্যালিয়েনদের প্রযুক্তিই অ্যালিয়েনদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো হয়- তাদের স্পেসক্র্যাফট নামানো হয়, তাদেরই প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গবেষণায় কাজে লাগে।
ল্যাজারের তত্ত্বের পথ ধরে ইউএফও সংক্রান্ত অতিআগ্রহীদের একটি বিশ্বাস যে MJ-12 একটি গোপন সংগঠন রয়েছে যেটির সদস্য মূলত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, সিআইএর মতো সংস্থার প্রধানেরা এবং ধনী ব্যবসায়ীরা। এই সংগঠনটি ইউএফও এবং অ্যালিয়েন সংক্রান্ত নানা তত্ত্বের সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত বলে দাবি করা হয়। তবে এমন কিছুর প্রমাণ আদতে পাওয়া যায়নি, বরং যেসব দলিলাদি দেখিয়ে এই দাবি করা হয় সেগুলো ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে এমনটাই বলা হয়। এখন এমন একটি তত্ত্বের কথা বলতে যাচ্ছি যেটির কাছে মনে হবে যে পৃথিবীতে অ্যালিয়েন আছে এমন দাবি খুবই সামান্য! চরম মাত্রার এই গুজবে অনেকে বলে থাকেন যে আসলে গোটা দুনিয়াটা আসলে নিয়ন্ত্রণ করছে এই অ্যালিয়েনরাই, নিজেদের অজান্তে আমরা তাদের হাতের পুতুল কেবল।
এরিয়া ৫১ নিয়ে যত তত্ত্বই উঠে আসুক না কেন, নিরপেক্ষভাবে তা প্রমান করা প্রায় একরকম অসম্ভব! কেননা এরিয়া ৫১-এর ভেতরকার কর্মকান্ডের গোপনীয়তা বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখছে। তবে এরিয়া ৫১ নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্বের ব্যপারে সবশেষে একটি কথা বললে বোধহয় বাহুল্য হবে না- যা রটে, তার কিছু হলেও তো ঘটে!

PD44915296_gl_new0_1923513b
 অতীতের বিভিন্ন পত্রিকা, নথিপত্র ঘাটাঘাটি করে জানা যায়, পরীক্ষামুলকভাবে বিভিন্ন উড়োজাহাজ,ভারী অস্ত্র-শস্ত্র তৈরির কাজে এ ঘাঁটি ব্যবহার করা হয়। ২০০৯ সালে এরিয়া ৫১ থেকে অবসরপ্রাপ্ত কিছু কর্মকর্তা মানুষের কৌতুহল নিবারনের জন্য বলেছিলেন, এখানে মানবজাতির জন্য ক্ষতিকারক কিছুই করা হচ্ছে নাহ। নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়, অন্যান্য দেশের তুলনায় নিজেদের প্রযুক্তি উন্নত করার জন্য গবেষণার কাজগুলো অতি গোপনীয়তার সঙ্গে করা হচ্ছে। এখানে নাকি চন্দ্র মডিউল,সামরিক বিমান ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু কথাগুলো আদৌ সত্য না মিথ্যা তা বোঝার উপায় নেই।

কিন্তু যে গোপনীয়তার সহিত পুরো পৃথিবী হতে এলাকাটি নিশ্চিহ্ন করা তার কারনেই রহস্যের অন্ত নেই। নীল আর্মস্ট্রং এর চন্দ্র অভিযানের যে ইতিহাস, তাও নাকি পুরোটাই সাজানো একটি নাটক। এ নাটকের মঞ্চ হিসেবে নাকি ব্যবহৃত হয়েছিলো এরিয়া ৫১ নামের রহস্যঘেরা এ ঘাঁটির। আসলে অনেক খবর বের হয় এই এরিয়া ৫১ নিয়ে কিছু মিথ্যা কিছু সত্য, কিন্তু কোনগুলো মিথ্যা আর কোনগুলো সত্য তা না জানার কারনেই আজও এইসব রহস্যের জালে বন্দি।


Image result for এরিয়া ৫১ এর রহস্য

এরিয়া ৫১ নামের এই সামরিক ঘাটি এতটাই গোপনীয় যে, ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর অস্তিত্ব কখনোই স্বীকার করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে সবসময়ই প্রভাবশালী দেশ। আর তাদের এই প্রভাব টিকিয়ে রাখতে হলে সামরিক খাতে এগিয়ে থাকতেই হবে। আর যতটা গোপনীয়তা বজায় রাখা যায় ততই ভালো। কিন্তু বিপত্তিটা ঘটল তখনই যখন রাশিয়া এরিয়া ৫১ নিয়ে প্রশ্ন তুলল। শুরু হল জল্পনা কল্পনা আর রহস্য।
২০১৩ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো আমেরিকার সরকার স্বীকার করে নেয় যে, এরিয়া ৫১ এর অস্তিত্ব আছে। তারা স্বীকার করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার দেশটির এক গোপন সামরিক পরীক্ষার স্থান হিসেবে ‘এরিয়া ৫১’ নামক জায়গাটি ব্যবহার করে। ২৬,০০০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে এ এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার এতটাই কঠোর যে, এর সীমানায় প্রবেশকারী বহিরাগত যেকাউকে সরাসরি গুলি করার নির্দেশ রয়েছে। যদিও এখন তা কিঞ্চিত শিথিল হয়েছে।

সুরক্ষিত এই এলাকা দেয়াল ঘেরা না হলেও প্রবেশ পথে সাইনবোর্ডে কঠোরভাবে অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি লেখা রয়েছে। এরিয়া ৫১ এ ঢোকার জন্য কোনো পিচের রাস্তা নেই। মূল গেট ঘাটি থেকে প্রায় ২৫ মাইল দূরে অবস্থিত। এখানে কর্মরতদের পরিচয় সম্পর্কে বাইরে কেউ কিছু জানে না। এই এলাকার চতুর্দিকে সিসি ক্যামেরা, মোশন ডিটেক্টর, লেজার ডিটেক্টর, সাউন্ড ডিটেক্টর অত্যাধুনিক নানা প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হয়েছে এলাকার নিরাপত্তায়। আকাশ পথ দেখার জন্য রয়েছে রাডার। ঘ্রাণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আশেপাশে থাকা যেকোনো মানুষ বা বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব তারা পর্যবেক্ষণ করতে পারে।

কেউ কোনো ভাবে এলাকায় ঢুকে পড়লে তার অস্তিত্ব ধরা পরবে সেন্সরে। মুহূর্তে চলে আসবে সুরক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী। সুরক্ষায় যারা থাকে তারা শুধুমাত্র এরিয়া ৫১ এর সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত। কেউ যদি সব সুরক্ষা ব্যবস্থাকে কাটিয়ে ভেতরে ঢুকলেও রয়েছে বড় সমস্যা। কেননা এই এলাকাটি মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত। প্রকৃতির সঙ্গে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী লড়াই করে বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য। তাই প্রাকৃতিকভাবেও এরিয়া ৫১ অনেক সুরক্ষিত।

এই এলাকা সর্ম্পকে মানুষ তেমন কোনো খবর জানে না। এছাড়াও এরিয়া ৫১ এর ভিতরে যে সব স্থাপনা আছে তারও তেমন ভালো কোনো ছবি পাওয়া যেত না, যে সব ছবি পাওয়া গেছে সেগুলো সব স্যাটেলাইট থেকে তোলা। মার্কিন সরকারের অবাধ তথ্য অধিকারের সুযোগ নিয়ে ১৯৬০ সালে মার্কিন গোয়েন্দা উপগ্রহ ‘করোনা’র সাহায্যে এরিয়া ৫১ এর ছবি তোলে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সরকার সেই ছবি মুছে ফেলে। পরবর্তীতে নাসার ল্যান্ডস্যাট ৭ উপগ্রহের সাহায্যে ৫১ এর ছবি তোলা হয়, এই ছবিটিই সরকারিভাবে প্রকাশিত এরিয়া ৫১ এর ছবি।


গোপন রাখার নানা চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। রাশিয়ার গোয়েন্দা উপগ্রহ ইকনস ও রাশিয়ার বেসামরিক উপগ্রহ আমেরিকা রাশিয়ার ঠান্ডা যুদ্ধের সময় এই এরিয়া ৫১ এর ভেতরের উচ্চ রেজল্যুশনের ছবি তোলে। প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায় যে, এরিয়া ৫১ এর ভিতরে সাতটি রানওয়ে আছে। ছবিতে আরো দেখা যায় বড় বড় গুদাম ঘর, আবাসিক এলাকা, ফায়ার স্টেশন, বিশাল আকারের পানির ট্যাংকি, বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার, খেলাধুলা করার জন্য টেনিস এবং বেসবল কোর্ট। আরো আছে যোগাযোগের জন্য বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট ডিশ।


২০১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) প্রকাশিত নথিতে জানানো হয়, বিমানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ১৯৫৫ সালে নেভাদার জনশূন্য মরুভূমিতে ‘এরিয়া ৫১’ -এর বর্তমান জায়গাটি বেছে নেয়া হয়। সুতরাং মানুষজন এলাকাটিতে নানা সময়ে যে ভিন গ্রহের যান দেখার দাবী করে এসেছেন, তা আসলে হয়তো অত্যাধুনিক কোনো যুদ্ধ বিমান।

Related image


কি আছে ওখানে আর কেনই বা কোন সাধারণ মানুষ ওখানে প্রবেশ করতে পারে না-


এরিয়া ৫১ এর কর্মকতারা জানান, এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো পরীক্ষামূলক উড়োজাহাজ তৈরি, অস্ত্রশস্ত্রের সিস্টেমের পরীক্ষাকরণ এবং উন্নতিসাধন সমর্থন করা। এটি মূলত একটি সামরিক ঘাটি যেটি খোদ ইউএসএ গভ নিয়ন্ত্রণ করে। এটি পশ্চিমা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে এবং লাস ভেগাস থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিম রেকেল গ্রামের কাছে অবস্থিত। মূল ঘাটির আয়তন প্রায় ২৬,০০০ বর্গকিলোমিটার। ইউএসএ গভারমেন্টের যত ধরনের গোপন সামরিক পরিক্ষা আছে তার সব এখানে করা হয়।
কিন্তু এই স্থানটির আশেপাশের বাসিন্দারা জানান ভিন্ন কথা।  তাদের দাবী এরিয়া ৫১ এর আকাশে ফ্লাইং সসারের মতো কিছু উড়তে দেখেছেন তারা। আবার অনেকেই এমন দ্রুতগতির বিমান উড়তে দেখেছেন যার গতি ও আকৃতি সাধারণ বিমান কিংবা যুদ্ধবিমান কোনোটার সাথেই যেন মিলে নেই।
এতো বিতর্কে ছাইয়ের মধ্যে যেন বাতাস ছড়িয়ে দিলেন এরিয়া ৫১ এর কর্মরত পদার্থবিজ্ঞানী বব লেজার ।
টিভি সাক্ষাৎকারে বব জানান, ‘সেখানে রেটিকুলাম-৪ নামক জ্যোতিষ্ক থেকে আসা এলিয়েন ও এক ফ্লাইং সসার রয়েছে। এলিয়েন বা ওই ভিনগ্রহের প্রাণীটির উচ্চতা সাড়ে তিনফুট । যার রোমহীন শরীর এবং বড় বড় কালো চোখ রয়েছে । এলিয়েনটির দেহ ব্যবচ্ছেদ করার পর এর ভেতরে ফুসফুস ও হৃৎপিন্ডের বদলে পাওয়া গেছে বিশাল এক পতঙ্গ।’ এছাড়া বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে এখান থেকে ভিনগ্রহের প্রাণীদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছে বলে দাবি করেন অনেক কর্মকর্তা।
তবে এতসব বিতর্কই শেষ নয়। এরিয়া ৫১ নিয়ে চলমান বিতর্কের সব চেয়ে বড়টি হল মানুষের চাঁদে যাওয়া নিয়ে নাটক। আপনারা হয়ত বলবেন, মানুষ চাঁদে গিয়েছে এ নিয়ে নাটকের কি আছে? কিন্তু দুনিয়াতে প্রচুর সন্দেহবাদী আছেন যাদের ধারনা মানুষ কখন চাঁদে যায়নি। পুরো নাটকটি সাজানো হয়েছে এই এরিয়া ৫১ এর ভেতরে। মানুষ প্রথম চাঁদে গিয়েছিল ১৯৬৯ সালে, এর পর আজ পর্যন্ত একবারও কেন মানুষ চাঁদে যায় না? মজার ব্যাপার হচ্ছে এত বিতর্ক চললেও আমেরিকান সরকার এসব কোনোকিছুই স্বীকার করেনি আজ পর্যন্ত। আর তাতে করে সন্দেহ কমার বদলে আরো বেড়েছে।
পত্র-পত্রিকায় নানা সময়ে রহস্যময় এ জায়গাটিকে কেন্দ্র করে নানা খবর বের হলেও সেগুলোকে বরাবরই এড়িয়ে গেছেন আমেরিকান সরকার ।

এই স্থান সর্ম্পকে মানুষ তেমন কোন খবর জানে না। এ ছাড়াও এরিয়া ৫১ এর ভিতরে যে সব স্থাপনা আছে তারও তেমন ভাল কোন ছবি পাওয়া যেত না, যে সব ছবি পাওয়া গেছে সেগুলো সব স্যাটেলাইট থেকে তোলা।
এই স্থানটি নেলস মিলিটারি অপারেশন এরিয়ার অর্ন্তগত। এরিয়া ৫১ এর চারদিকের আকাশ সীমা অন্য সবার জন্য নিষিদ্ধ, এই আকাশসীমা (R-4808N) হিসাবে পরিচিত। পাইলটরা এই এলাকার আকাশকে বলে “দি বক্স” অথবা “দি কনটেইনার”।
মার্কিন সরকারের অবাধ তথ্য অধিকারের সুযোগ নিয়ে ১৯৬০ সালে মার্কিন গোয়েন্দা উপগ্রহ “করোনা” র সাহায্যে এরিয়া ৫১ এর ছবি তোলে এই ছবিতে ৫১ এর ভিতরকার সবকিছু প্রকাশ হয়ে পড়ে। সাথে সাথে মার্কিন সরকার সেই ছবি মুছে ফেলে।
পরবর্তীতে “নাসার” ল্যান্ডস্যাট ৭ উপগ্রহের সাহায্যে ৫১ এর ছবি তোলা হয়, বর্তমানে এই ছবিটিই সরকারি ভাবে প্রকাশিত এরিয়া ৫১ এর ছবি।
কিন্তু এত কিছু চেস্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। রাশিয়ার গোয়েন্দা উপগ্রহ “ইকনস” ও রাশিয়ার বেসামরিক উপগ্রহ আমেরিকা রাশিয়ার ঠান্ডা যুদ্ধের সময় এই এরিয়া ৫১ এর ভিতরে কি হচ্ছে তা জানার জন্য (রাশিয়ার নিজেদের প্রয়োজনে) এর উচ্চ রেজল্যুশনের ছবি তোলে। এই ছবিতে ৫১ এর ভিতরকার প্রায় সবকিছু প্রকাশ হয়ে পড়ে। বর্তমানে এরিয়া ৫১ এর ভিতরকার ছবি আর গোপন নেই নেটে এর প্রায় সব ছবি পাওয়া যায়।
এই ছবিতে দেখা যায় যে এরিয়া ৫১ এর ভিতরে সাতটি রানওয়ে আছে। ছবিতে আরো দেখা যায় বড় বড় গুদাম ঘর, আবাসিক এলাকা,ফায়ার স্টেশন,বিশাল আকারের পানির ট্যাংকি, বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রন টাওয়ার, খেলাধুলা করার জন্য টেনিস এবং বেসবল কোর্ট। আরো আছে যোগাযোগের জন্য বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট ডিশ।
image052
ছবিগুলা দেখে যে ধারণা করা হয়েছে যে, সেখানকার কর্মীদের জন্য প্রায় সব ধরনের আবাসিক সুজক সুবিধা দেয়া হয়েছে। তবে বাহিনীর লোকজন তথা এরিয়া ৫১ প্রজেক্টে যারা কাজ করে তাদের অবাধ বিচরণের কিন্তু কোন সুজক নেই। এমনকি কারা সেখানে কাজ করছে তাদের পরিচয় কি সেটিও বাইরের কোন মানুষ বলতে পারবে না। কর্তিপক্ষের ওপরে সবসময় একটি চাপ কাজ করতো যে, হয়তো এটি যদি শত্রু পক্ষ জানতে পারে তবে যেকোনো ভাবে চেষ্টা করবো তাদের কাছ থেকে ভেতরের তথ্য বের করার।
এরিয়া ৫১ এর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা অনেক শক্তিশালী। এরিয়া ৫১ এ ঢোকার জন্য কোন পিচের রাস্তা নেই। শুধু একটি মাটির রাস্তা আছে যা নেভেদার হাইওয়ে ৩৭৫ সিস্টেমের সাথে সংযোগ করা। এই রাস্তাটি প্রায় ৩৫ মাইল লম্বা, এর মধ্যে পশ্চিম এবং উওর পশ্চিম দিকের ১০ মাইল পড়ে এই রাস্তার এক মাথা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরিয়া ৫১ এর মূল গেট ঘাটি থেকে প্রায় ২৫ মাইল দূরে অবস্থিত।
এত সুরক্ষিত স্থান, নিরাপত্তাও সর্বাধুনিক। এর এলাকার চারিপাশে না আছে কোন দেয়াল বা কোন বেড়া। শুধু আছে কয়েকটি সাইনবোর্ড। কিন্তু সবার অলক্ষ্যে কাজ করে অনেক প্রযুক্তি। যেমনঃ Mobile CC Camera, Motion detector (নড়াচড়া পর্যবেক্ষক), Laser detector (লেজার পর্যবেক্ষক), Sound detector (শব্দ পর্যবেক্ষক) আর সব থেকে আধুনিক Smell detector (ঘ্রান পর্যবেক্ষক) আর এছাড়া আকাশ পথ দেখার জন্য রয়েছে রাডার। এই ঘ্রান পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে আসে পাশে থাকা যে কোন মানুষ বা বন্য প্রানীর অস্তিত্ব তারা পর্যবেক্ষন করতে পারে।

image052
এখানে অনেক উপরের নীতি নির্ধারকদের অনুমতি বাদে প্রবেশ সম্পুর্ন নিষেধ আর ঢুকলেই তার মৃত্যু অনেকটাই অবধারিত। কেননা ক’দিন আগেও যে স্থানের কোন অস্তিত্ব ছিল না কাগজ কলমে সেখানে সাধারন আইন কানুন মানা হয় না। তাই আপনার কোন বিচার হবে না কোন আদালতে। মাঠেই আপনার বিচার, মাঠেই আপনার শাস্তি। মানবাধিকার এখানে কোন মূল্য রাখে না। এবার ধরুন আপনি কোন মতে এই সব সুরক্ষা ব্যাবস্থাকে কাটিয়ে ভিতরে ঢুকলেন। এবার আরো বড় সমস্যা। মনে রাখবেন এটি মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত। আর আপনাকে পারি দিতে হবে প্রচন্ড গরমে শুকিয়ে যাওয়া গ্রুম লেক। এখানে যদি আপনি অবস্থান করতে যান তাহলে দিনে আপনাকে ৪ গ্যালন পানি পান করতে হবে। তা না হলে আপনি ৪ দিনের বেশী টিকে থাকতে পারবেন না। আর রাতের বেলা সম্মুক্ষিন হবেন শীতের। অর্থাৎ এত কিছু নিয়ে কোন ভাবেই আপনি সুরক্ষা দেওয়ার ভেদ করতে পারবেন না। আর ধরুন আপনি একটা গাড়ি নিয়ে কোন এক ভাগ্যের জোরে পার করলেন সব সুরক্ষা ব্যাবস্থা। এখন আপনাকে পারি দিতে হবে এই গ্রুম লেক। গাড়ি চালাচ্ছেন মনের সুখে। ভাবছেন একটানে চলে যাবেন এরিয়া ৫১ এর প্রানকেন্দ্রে। কিন্তু আপনি যাচ্ছেন শুকিয়ে যাওয়া এক লেকের উপর দিয়ে। আপনার পিছে উড়ছে বালি। আর অনেক দূর থেকেই বোঝা যাবে আপনার অবস্থান। এখন বুঝলেন প্রাকৃতিক ভাবেও এই এরিয়া ৫১ কেমন সুরক্ষিত।
Comments





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ দুর্ঘটনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।

বাংলাদেশের সকল রাজবাড়ী ও জমিদার বাড়ীগুলির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্হা কি (ভিডও সহ )