এশিয়ার রহস্যময়তার মূর্ত প্রতীক। এছাড়াও চীনের এমন কিছু স্থান আছে যেখানে যেতে কখনোই ভুলবেন না।

চীন এশিয়া মহদেশের পূর্ব অঞ্চলে এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। চীনের স্থলভাগের আয়তন প্রায় ৯৬ লক্ষ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে চীন এশিয়ার বৃহত্তম দেশ এবং রাশিয়া ও কানাডার পর চীন বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। 

শুধু তাই নয় এটি এশিয়ার রহস্যময়তার মূর্ত প্রতীক। এছাড়াও চীনের এমন কিছু স্থান আছে যেখানে যেতে কখনোই ভুলবেন না। 


ট্যারাকোটা আর্মি



Related image


ট্যারাকোটা আর্মি বা পোড়ামাটির তৈরি সৈন্য মূর্তি গুলো ২০০০ বছর মাটির নিচে ছিল। ১৯৭৪ সালে কৃষকেরা খনন কাজের মাধ্যমে এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি উন্মোচিত করে। ১৯৮৭ সালে এটি বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ৪৭৫-২২১ খ্রিষ্টপূর্বের শত শত সৈনিকের এই মূর্তিগুলো তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ তারাই ঐক্যবদ্ধ চীন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলো। এখানে ৮০০০ সৈন্য মূর্তি আছে যাদের দেখলে জীবন্ত মনে হয় এবং ১৩০ টি রথ আছে। এই মূর্তিগুলোর একটির সাথে অন্যটির চেহারার মিল নেই। এই নির্মাণের দক্ষতা দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। 


মৃত রাজাকে পাহারা দেওয়ার জন্য আস্ত একটি সৈন্যদলকে কবর দেওয়া হয়, দেখুন অষ্টম আশ্চর্য টেরাকোটা আর্মি





২। চীনের প্রাচীর


চীনের প্রাচীর (গ্রেট ওয়াল অব চায়না) সম্পর্কে কে না জানে? এটি পৃথিবীর সবচাইতে জনবহুল দেশ চিনে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর সপ্তাশ্চার্যগুলোর মধ্যে একটি। পৃথিবীর এই আশ্চর্য ও দীর্ঘতম প্রাচীর এর দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৬৯৫ কিলোমিটার এবং উচ্চতা ৪.৫৭ থেকে ৯.২ মিটার বা প্রায় ১৫ থেকে ৩০ ফুট। ও চওড়ায় প্রায় ৯.৭৫ মিটার বা ৩২ ফুট। কথিত আছে চিনের প্রাচিরের উপর দিয়ে একসাথে ১২ জোড়া ঘোড়া একসাথে চলতে পারতো।

প্রাচীরের ইতিহাস:

খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে খ্রিস্টীয় ১৬শ শতক পর্যন্ত সময়ে চীনের উত্তর সীমান্ত রক্ষা করার জন্য এ প্রাচীর তৈরি শুরু করা হয়। ২২১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হওয়া কাজ শেষ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ১৫ বছর। যা ইট আর পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়। এ সময় প্রায় একইরকম অনেকগুলো প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল, তবে খ্রিস্টপূর্বাব্দ ২২০ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াঙের অধীনে নির্মিত প্রাচীরটিই সবচেয়ে বিখ্যাত। এটি বর্তমান প্রাচীরের একেবারে উত্তরে অবস্থিত এবং এর খুব সামান্যই অবশিষ্ট আছে। বর্তমান প্রাচীরটি মিং রাজবংশের শাসনামলে নির্মিত হয়।
মহাপ্রাচির তৈরির উদ্দ্যেশ্য ও ইতিহাস:

প্রশ্ন থাকতে এ রকম বিশাল আকৃতির প্রাচীর তৈরি করার প্রয়োজন হয়েছিল কেন ? ইতিহাস হতে যানাযায় সে সময় মাঞ্চুরিয়া আর মঙ্গোলিয়ার যাযাবর দস্যুরা চিনের বিভিন্ন অংশে আক্রমন করতো এবং বিভিন্ন ক্ষতি সাধন করতো ফলে দস্যুদের হাত থেকে চীনকে রক্ষা করার জন্য এই প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল। ২৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চীন বিভিন্ন খণ্ড রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এদের মধ্যে একজন রাজা যার নাম ছিল ষি হুয়াং-টি, তিনি অন্যান্য রাজাদের সংঘবদ্ধ করে নিজে সম্রাট হন। চীনের উত্তরে গোবি মরুভূমির পূর্বে দুর্ধর্ষ মঙ্গলিয়দের বাস, যাদের কাজই হলো লুটতরাজ করা। এদের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য সম্রাটের আদেশে চীনের প্রাচীর তৈরির কাজ আরম্ভ হয়।
প্রাচীর তৈরি হয়েছিল চিহলি-পুরোনো নাম পোহাই উপসাগরের কূলে শানসীকুয়ান থেকে কানসু প্রদেশের চিয়াকুমান পর্যন্ত। সম্রাটের উদ্দেশ্য কি সিদ্ধ হয়েছিল? এই প্রশ্ন থেকেই যায়। অনেক জায়গা প্রায়ই ভেঙে পড়ত অথবা মঙ্গোল দস্যুরা ভেঙে ফেলে চীনের মূল ভূখণ্ডে লুটপাট করার জন্য ঢুকে পড়ত। বর্তমানে প্রাচীর ঐতিহ্য বলে রক্ষার ব্যবস্থা করা হলেও প্রাচীরের অনেক জায়গা এখনও কিছু কিছু ভাঙা রয়েছে। এর মূল অংশের নির্মাণ শুরু হয়েছিল প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ২০৮ সালের দিকে।
চীনের প্রথম সম্রাট কিং সি হুয়াং এটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন এবং শত্রুর হাত থেকে নিজের সাম্রাজ্যকে রক্ষার জন্য দীর্ঘ প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন। এটি চীনের প্রাকৃতিক বাঁধাগুলো ছাড়া অন্যান্য অঞ্চল পাহারা দেওয়ার কাজে এবং উত্তর চীনের উপজাতি সুইং নু বিরুদ্ধে প্রথম স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। হান, সুই, নরদান এবং জিং সাম্রাজ্যের সময়ের ইতিহাসেও যে কারণে তারা এটি তৈরি করেছিলেন ঠিক একই কারণে চীনের প্রাচীরের পরিবর্ধন, পরিবর্তন, সম্প্রসারণ, পুনঃনির্মাণের উল্লেখ আছে। 

বেইজিংয়ের উত্তরে এবং পর্যটন কেন্দ্রের কিছু অংশ সংরক্ষণ এমনকি পুনঃনির্মাণ করা হলেও দেয়ালের বেশ কিছু অংশ ধ্বংসের সম্মুখীন হয়। ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো গ্রাম্য খেলার মাঠ এবং বাড়ি ও রাস্তা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পাথরের উত্স হিসেবে ব্যবহূত হয়। দেয়ালের কিছু অংশ নাশকতার জন্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেয়াল পুনঃনির্মাণের জন্য কিছু অংশ ধ্বংস করা হয়েছে। উন্নত পর্যটন এলাকার কাছে মেরামতকৃত অংশ পর্যটন পণ্যের বিক্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। দেয়ালটিতে নিয়মিত বিরতিতে পর্যবেক্ষণ চৌকি আছে, যা অস্ত্র সংরক্ষণ, সেনাবাহিনীর আবাসন এবং স্মোক সংকেত প্রদানে কাজে লাগত। 
সেনাঘাঁটি এবং প্রশাসনিক কেন্দ্রসমূহ দীর্ঘ বিরতিতে অবস্থিত। গ্রেট ওয়ালের সীমানার মধ্যে সেনা ইউনিটগুলোর যোগাযোগ যেমন—দলকে শক্তিশালী করা এবং শত্রুদের আন্দোলন সম্পর্কে সাবধান থাকা ছিল উল্লেখযোগ্য। দেখার সুবিধার জন্য পাহাড়সহ অন্যান্য উঁচুস্থানে সংকেত টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছিল। 

Image result for চীনের প্রাচীর

বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাচীর ‘দ্যা গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’ চীনের প্রতীক। এটি প্রাচীন আত্মরক্ষামূলক স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। পাহাড়ের উপরে নির্মিত এই প্রাচীরটি ঘুরে দেখা বেশ শ্রমসাধ্য হলেও চমৎকার দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এটি বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি। এটি চীনের পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। যার দৈর্ঘ্য ৫০০০ কিলোমিটার। তবে এই প্রাচীরের সবচেয়ে সংহত ও সংরক্ষিত অংশটি রাজধানী বেইজিং এর কাছাকাছি অবস্থিত।


৩। নিষিদ্ধ নগরী




Image result for নিষিদ্ধ নগরী


বেইজিং এর এই শহরটি ‘প্রাসাদের শহর’ নামে পরিচিত ছিল যেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ করতে পারতোনা। মিং ও কিং এবং পুই রাজবংশের সম্রাটদের বাসস্থান ছিল এই প্রাসাদ। এটি নির্মাণ করা হয় ১৫শ শতকে। ১৯১২ সালে সর্বশেষ সম্রাট সিংহাসন ত্যাগ করে। এটি একটি দেয়ালঘেরা কমপ্লেক্স এবং পরিখা দ্বারা  পরিবেষ্টিত। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম জটিল প্রাসাদ। কথিত আছে এখানে ৯৮০টি ভবন ও ৯৯৯৯ টি কক্ষ আছে। এই স্থানটির ভিড় দেখলেই বুঝা যায় এটি বেইজিং এর সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা।


৪। লি নদী



গুইলিং এর লি নদী
গুইলিনে অবস্থিত লি নদী শিল্পীদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হন চীনা চিত্রশিল্পী ও কবিরা। গুইলিন ও ইয়াংশু এর মধ্যকার লি নদীর ৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশটিই সবচাইতে সুন্দর। নদী বরাবর চমৎকার পাহাড়, খাড়া বাঁধ, গ্রাম, চাষের ভূমি ও বাঁশের উদ্যান এই অঞ্চলটিকে অনন্য সুন্দর করে তুলেছে। আমেরিকার ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনে পৃথিবীর ১০টি ওয়াটারি ওয়ান্ডারের তালিকায় লি নদীকে রাখা হয়।



৫। জায়েন্ট পান্ডা


Image result for জায়েন্ট পান্ডা

চীন ভ্রমন অপরিপূর্ণ থেকে যাবে যদি পান্ডাদের দেখতে না যান। জায়েন্ট পান্ডার হোমটাউন হিসেবে পরিচিত চীনের সিচুয়ান প্রদেশের চেংদু শহর। চেংদু পান্ডা ব্রিডিং এন্ড রিসার্চ সেন্টারে প্রাকৃতিক পরিবেশে খুব কাছ থেকে এই কিউট প্রানিটিকে দেখার সুযোগ আছে। এখানে প্রায় ৮০টির মত পান্ডা রয়েছে। চেংদু পান্ডা সেন্টারটি শহরের উত্তরে অবস্থিত। বাইফেনেগক্সিয়া পান্ডা বেজ এ অনেক বেশি পান্ডা আছে। ডুজিয়াংইয়ান পান্ডা ভেলী ও বাইফেনেগক্সিয়া পান্ডা বেজ এ আপনি ভলান্টিয়ার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে পান্ডাদের কাছাকাছি যেতে পারেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

The national flag Cambodia

world map

TOP 10 REASONS TO VISIT THAILAND