কিশোর বয়সের ছেলেরা বোঝে উঠেনা কোনটা অপরাধ আর কোনটা অপরাধ না। নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয়

ইদানিং আশংকাজনকভাবে বাড়ছে কিশোর অপরাধ প্রবণতা। কী শহর কী গ্রাম সবখানেই সমানতালে এ অপরাধ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। কি কারণে কিশোর অপরাধের দিকে অনুপ্রাণিত হচ্ছে সেদিকে সমাজ বিজ্ঞানীদের নজর দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ বয়সের অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়াতে অভিভাবক মহলসহ সকলেই উদ্বিগ্ন। যে বয়সে তারা শিক্ষাগ্রহণ করে বড় হওয়ার কথা ছিলো সে সময়ে তারা যখন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তখন উদ্বিগ্ন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। বড়জনরা যা করেন তাই তারা করতে ও শিখতে চায়। কিশোর যুবকদের তাদের বয়সে সিনিয়র ভাইয়া স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লাব সমিতিতে নানা কর্মকান্ডে ব্যবহার করে থাকে। পরিবার সমাজে বড়দের কা‌র্য্ক্রম এ বয়সে অনুসরণের চেষ্টা করে থাকে। টিভির পর্দার বিভিন্ন সিনেমা, বই , চরিত্র তারা দেখে। এসব অনুষ্ঠান বই সিনেমা দেখে অনেক সময় কিছু কিছু চরিত্রের প্রতি তারা অনুপ্রাণিত হয়।

কিশোর বয়সের ছেলেরা বোঝে উঠেনা কোনটা অপরাধ আর কোনটা অপরাধ না। অনুশীলন ও চর্চা করে তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনে সহকর্মীদের সাথে নিষ্ঠুর ও কঠোর হয়ে উঠতে চেষ্টা করে। যাদের সাথে তাদের উঠা বসা যাদেরকে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড় ভাই হিসেবে ধরে নেয়, অনেক সময় তাদের চরিত্র অনুসরণ করতে গিয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। স্কুল আঙিনা, খেলার মাঠ, সামাজিক অনুষ্ঠান আড্ডা স্থানেও সামান্য কথা কাটাকাটির বিতর্কে একে অপরের প্রতি শারীরিকভাবে আক্রমণ করতেও দ্বিধাবোধ করছেনা। সেখান থেকে‌ পর্যায়ক্রমে খুনাখুনির ‌পর্যায় চলে যেতে দেখছি আমরা।

এখন কথা হলো মাত্র কয়েক বছর আগের সময়ে যদি আমরা তাকাই তাহলে তখনকার ছাত্র কিশোর যুবকদের মাঝে এতো অপরাধ প্রবণতা ছিলনা। সামান্য ঝগড়া হলেও তা ছোটখাটো ভাবেই থাকতো এবং ছোট পরিসরেই শেষ হয়ে যেতো। কিন্তু মাত্র এক দশকের মধ্যে মনে হয় এসব অপরাধ বেড়েই চলছে। তাহলে কেন এ অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে সেদিকে আমাদের নজর দেয়ার সময় হয়েছে। তখন ও শিক্ষাকেন্দ্র ছিলো, এখনো আছে। তখন ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ছিলো এখনো আছে। তখন ও বয়ান, ভাষণ, বক্তব্য, উপদেশ ছিলো, এখনো আছে। কিন্তু একটি জায়গায় মনে হয় সমাজ পিছিয়ে পড়ছে। আরো বাড়ছে শিক্ষাকেন্দ্র। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নৈতিকতার শিক্ষা যত বেশী কমে যাচ্ছে ততই কিশোর যুবক ছাত্ররা বেশী হারে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।লেখাপড়াবস্থায় তাহলে তারা এসবের অনুশীলন অনুপ্রেরণা কোথা থেকে পাচ্ছে, কারা তাদের এসব খারাপ চরিত্র শিখাচ্ছে সেটায় এখন নজর দিতে হবে। সেখান থেকে তাদের দূরে রাখা, বারণ করা সকলের দায়িত্ব। অভিভাবক ও সমাজ এখনিই যদি এসব বিষয় চিন্তা করে তাদের প্রতি শুদ্ধি ব্যবস্থা না নেয় তাহলে এ কিশোর অপরাধীরা আরো ভয়ংকর অপরাধী হিসেবে বেড়ে উঠবে।


তাহলে এর জন্য দায়ী কারা? আগের দিনে পরিবারের পক্ষ থেকে ছেলে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা উপদেশ দেয়া হতো। সকাল বেলায় মক্তব নামক প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষায় সন্তানদের পাঠানো হতো। প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষায় অনেক উপদেশ ধর্মীয় কথা বলা হতো। বয়স্ক সিনিয়ারদের সাথে কী ভাবে কথা বলতে হয়, তা শেখানো হতো। শিক্ষা আর তালিমের মাধ্যমে অনুশীলন চর্চা করানো হতো। ঘরে বাইরে সন্তান, ছাত্রদের আদব আখলাক শিক্ষা দেওয়া হতো। রাস্তা ঘরে বয়স্ক মুরুব্বীদের সাথে সাক্ষাৎ হলে কীভাবে কুশল বিনিময় করতে হয় সে সব বিষয়ে বাস্তবে শিক্ষা ছিলো।
এখন কিন্তু সে মক্তব শিক্ষা এক প্রকার নেই। তখন ঐ মক্তব শিক্ষায় ধনী গরীব সব ধরনের পরিবারের ছেলে সন্তানরা দল বেধে শিক্ষা নিতে দেখা যেতো। সে মক্তব বা ভোরের শিক্ষায় যারা অংশ গ্রহণ করতো তারা কখনো কিশোর অপরাধ, যুব অপরাধ, ইভটিজিং, সন্ত্রাসী, অস্ত্রবাজ, জঘন্য প্রকৃতির অপরাধ করতে চোখে পড়তো না।
যারা মক্তব শিক্ষা ভোর বেলায় গ্রহণ করেই পরিবারের কাজে জড়িয়ে পড়ে তাদের পক্ষে আর অন্যসব লেখা পড়ায় আর সুযোগ হয় না। যে উদ্দেশ্য মক্তবের শিক্ষা ছিল তাও এখন আর সমাজ পাচ্ছে না। মক্তবের শিক্ষার নীতি আদর্শ নৈতিকতা যা সমাজ ও শিক্ষার্থীরা পেতো ফলে তাও এখন বন্ধ। তাহলে ঐ সকল কিশোর যুবকগণ নৈতিক শিক্ষা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করবে? নৈতিক শিক্ষার কেন্দ্র বর্তমান সময়ে নেই বললেই বেশি বলা হবে না। কারণ কেজি জাতীয় স্কুলে যেসকল পাঠ্য বই দেওয়া আছে সেখানে নৈতিক শিক্ষার কোন সিলেবাস পাওয়া যাবে না। যা পড়ানো হয় সবই বাংলা, ইংরেজী, অংক। ইত্যাদি বিষয়ে, নির্ধারিত টাকা খরচের মাধ্যমে শিক্ষা আর শিক্ষকরাও নির্দিষ্ট বইয়ের বাইরে গিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। কারণ স্কুলের সিলেবাসের পাঠ শিখতেই সেখানে ছাত্রদের হিমশিম খেতে হয়। যে শিক্ষায় কোনো সময় পায়না গল্প করার মতো সেখানে নৈতিকতার শিক্ষা কী করে শিক্ষক ছাত্রদের দিবেন সে সুযোগ নেই।
তাহলে বলতে হবে এখন নৈতিক শিক্ষা দেয়ার সময় পরিবেশ দুটোই সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্ধ। এখানে ছাত্র কিশোর যুবকদের দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। এ বিষয়ে অভিবাবক সমাজও কম দায়ী নয়। তাহলে সমাধান কী? আমরা বেশি আধুনিক হয়ে গেছি, বেশী ধরনের দুনিয়ার শিক্ষায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ছি, ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া ‍ও নেয়ার কথা একেবারেই ভুলে গেছি। পরিবার ও সমাজকে সেই পুরোনো ধর্মীয় ও মূল্যবোধ শিক্ষার দিকে ফিরে যেতে হবে।
পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যুবক কিশোর ছাত্রদের ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষায় আকৃষ্ট করতে হবে। তাদের সময় ও সিলেবাস নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এ বিষয়ে অভিবাবক, শিক্ষক, শিক্ষানুরাগী সমাজ সচেতন সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষা মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। পরিবার থেকে এ উদ্যোগ প্রথমে নিতে হবে। সামাজিক শান্তি, শৃংখলা মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় কিশোর যুবকদের এখন থেকেই তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন না করলে কোনো অবস্থায় এ অপরাধ প্রবণতা কমবার মতো কোনো লক্ষণ দেখছিনা।
অবশ্যই বিদেশি দেশি সিনেমা অপরাধ জাতীয় চারিত্র পরিষ্কার করতে হবে। খুন হত্যা করার মতো জঘন্য চরিত্র এসব সিনেমা বা নাটক হতে কাটছাট করতে হবে। নৈতিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলার চরিত্র দিয়ে সিনেমা বা নাটক তৈরী করলে হয়তো কিশোর যুব সমাজ কিছু শিখতে পারবে। এ ধরনের চিন্তা চেতনা সমাজ বিজ্ঞানীদের তৈরী করা দরকার। তবেই হয়তো বা সমাজ অভিবাবক মহল কিছুটা হলেও কিশোর যুবকদের একটা নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। যা এখনি সমাজ ও রাষ্ট্রের ভাবা প্রয়োজন। তাহলেই আগামী দিন ও সমাজ সুন্দর হবে। শংকা মুক্ত চিন্তা ও পরিবেশে সমাজ এগিয়ে যেতে পারবে। এ সমাজ এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে। তখন আর কিছুই করার থাকবেনা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

The national flag Cambodia

world map

TOP 10 REASONS TO VISIT THAILAND