যে প্রাণির পুরুষ সদস্য স্ত্রীর দেহের ভিতর বসবাস করে!

যে প্রাণির পুরুষ সদস্য স্ত্রীর দেহের ভিতর বসবাস করে!

চিত্রঃ- Bonellia viridis
ভালোবাসার মানুষটার ভিতর যদি বসবাস করতে পারতাম! এই ভাবনা আমাদের সবার ই আছে। যদিও কার্যত এ ভাবনা কখনো বাস্তবে রূপ দেয়া সম্ভব না। কিন্তু প্রাণিজগতের এমন এক অদ্ভুত প্রাণি আছে যে প্রাণির পুরুষ সদস্য তার সঙ্গিনীর দেহের ভিতর বসবাস করে। 
আজব এই প্রাণিটির নাম ‘Green spoonworm’ বাংলায় ‘সবুজ চামচ কৃমি বা সবুজ চামচ কীট’। বৈজ্ঞানিক নাম Bonellia viridis ((Rolando , 1821)। এটি এনিলিডা পর্বের একটি প্রাণি।
এটি উত্তর – পূর্ব আটলান্টিক মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগর এর সাথে সংযুক্ত মেডিটেরানিয়ান সমুদ্রে পাওয়া যায়। এরা সমূদ্রের ১০-১০০ মিটার গভীরে নুড়ি পাথরের মাঝে গর্ত খুঁড়ে অথবা পাথরের ফাটল/ চিরে কিংবা কখনো কখনো অন্য প্রাণিদের বানানো পরিত্যক্ত বাসায় গর্ত খুঁড়ে বসবাস করে। 
এদের স্ত্রী প্রাণি লম্বায় ১৫ সে.মি পর্যন্ত হয়। দেহের আকৃতি গোলাকার কিংবা সসেজ এর মত। দেহের বর্ণ ফ্যাকাসে সবুজ।
এদের দেহের নিম্নদেশে এক জোড়া এঙ্করিং হুক (Anchoring hook) রয়েছে। এদের একটি প্রসারণযোগ্য ভোজন প্রোবোসিস (Feeding proboscis)  রয়েছে যা এদের দেহের দৈর্ঘ্যের চেয়ে দশগুণ লম্বা হতে পারে যার দ্বারা এরা খাবার খায়। পঁচা গলা প্রাণিদেহ কিংবা প্রাণির মল এদের খাবার। এছাড়া ও এদের কখনোবা ছোট ছোট প্রাণিও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে দেখা যায়। 
এবার আসি এদের পুরুষ প্রাণি সম্পর্কে। এদের পুরুষ প্রাণি আকারে মাত্র ১-৩ মিলিমিটার লম্বা (যেখানে স্ত্রী প্রাণি আকারে ১৩ সেন্টিমিটার লম্বা)। দেহ চ্যাপটা ও বর্ণহীন। মজার ব্যাপার হলো এই পুরুষ প্রাণিগুলোর দেহে জনন অঙ্গানুগুলো ছাড়া আর কিছুই নেই। অর্থাৎ পুরুষ প্রাণি মানে ই জননাঙ্গ! 
আর এই পুরুষ প্রাণি রা এদের সঙ্গিনী বা স্ত্রী প্রাণিদের দেহের ভিতর বসবাস করে। মানে প্রিয়তমার দেহের ভিতর এ শান্তির আবাস!অবশ্য এই পুরুষ প্রাণিদের কখনো স্ত্রী প্রাণির গায়ের উপর এও বসবাস করতে দেখা যায়।এবার আসি কেনোই বা এদের পুরুষ প্রাণি আকারে এত ছোট ও স্ত্রী দেহে ই বসবাস করে সে প্রসঙ্গে।এই প্রাণিটি যখন লার্ভা দশায় থাকে তখন এদের পুরুষ ও স্ত্রী কোনো জননাঙ্গ ই থাকে না মানে তখন এরা সেক্সুয়ালি অবিচ্ছেদ থাকে।
এদের মুক্ত সাঁতারু প্লাঙ্কটোনিক লার্ভা গুলো এক সময় খালি সমূদ্রতলে ল্যান্ড করে ও বছরের পর বছর এভাবে থাকে। এসময় এরা ম্যাচিউর হয় ও পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী প্রাণিতে রূপ নেয়। আগেই বলেছি যে এদের গায়ের বর্ণ ফ্যাকাসে সবুজ। এ সবুজ বর্ণ আসলে বিষাক্ত পিগমেন্ট কণা যা বোনেলিন নামে পরিচিত। এই বোনেলিন এদের প্রোবোসিস এ অধিক মাত্রায় পাওয়া যায়। বোনেলিন বিষাক্ততা ছোট ছোট প্রাণিদের প্যারালাইজড করে দিতে এবং ব্যাকটেরিয়া, অন্যান্য প্রাণি লার্ভা ধ্বংস করতে সক্ষম। এই প্রাণিটির অন্য লার্ভাগুলো যখন স্ত্রী প্রাণির দেহের সংস্পর্শে আসে তখন এই লার্ভাগুলো বিষের প্রভাবে আর বড় হয় না। কেবল পুরুষাঙ্গ বিশিষ্ট ক্ষুদ্র পুরুষ প্রাণিতে রূপান্তরিত হয় মাত্র। 
যা পরবর্তীতে স্ত্রী প্রাণির ফিডিং প্রোবোসিস দ্বারা ভক্ষিত হয়ে স্ত্রী প্রাণির দেহে প্রবেশ করে এবং স্ত্রী প্রাণির জনন থলিতে প্রবেশ করে সেখানে স্ত্রী প্রাণির উপর নির্ভরশীল হয়ে ই বাকী জীবন পার করে দেয়। আর এখানেই এরা স্পার্ম বা শুক্রাণু উৎপন্ন করে যা স্ত্রীদেহে উৎপন্ন ডিম্বাণু নিষিক্ত করে।
চিত্রঃ- পুরুষ ও স্ত্রী Bonellia viridis
মজার তথ্যঃ- প্রাণিটির শরীরে বোনেলিন পিগমেন্ট পাওয়া যায় বলেই এদের বৈজ্ঞানিক নামের গণ অংশটির নামকরণ করা হয়েছে Bonellia
পরীক্ষাগারে দেখা গেছে যে এদের দেহে বিদ্যমান বোনেলিন পিগমেন্ট লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস করতে পারে।আরো মজার ব্যাপার হলো এই বোনেলিন ব্যাকটেরিয়া ও কিছু জীবের লার্ভা ধ্বংস করে বলে এদের থেকে এন্টিবায়োটিক তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
চিত্রঃ- Bonellia viridis 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ দুর্ঘটনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।

বাংলাদেশের সকল রাজবাড়ী ও জমিদার বাড়ীগুলির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্হা কি (ভিডও সহ )