এক রহস্যের নাম......প্রাণীজগত নানান রঙের ,নানান ঢং এর প্রাণী দিয়ে সমৃদ্ধ এই জগত.
প্রাণীজগত এক রহস্যের নাম। নানান রঙের ,নানান ঢং এর প্রাণী দিয়ে সমৃদ্ধ এই জগত। প্রতিটি প্রাণীই নিজস্ব কিছু স্বভাব, বৈশিষ্ট্য ধারণ করে নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখে। কিছু প্রাণীর সেরকম কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে এই লেখা। তাহলে শুরু করা যাকঃ


বাদুড়ঃ
বাদুড় Animalia জগতের Chordata পর্বের Mammalia শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত। প্রজাতি সংখ্যা হিসেব করলে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রজাতি এরা। মূলত এরা নিশাচর প্রাণী।
কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্যঃ
- বাদুড় একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী যে উড়তে পারে।
- এই পর্যন্ত প্রায় ১১০০ এর ও বেশি প্রজাতির বাদুড় পাওয়া গেছে।
- একটি মাঝারি সাইজ এর বাদুড় ঘন্টায় যে পরিমাণ পোকা খায় তা একজন মানুষের এক রাতে ২০ টা পিজ্জা খাওয়ার সমান।
- ব্যাট কনজারভেশান ইন্টারন্যাশনাল এর মতে, ১৫০ টি বাদুড় বছরে ফসলের জন্য ক্ষতিকর যে পরিমাণ পোকা খেয়ে ফেলে তা কৃষক কে অন্তত ১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির হাতথেকে রক্ষা করে।

বাদুড় এর সবচেয়ে বড় কলোনী বলা হয় টেক্সাস এর ব্র্যাকেন গুহা কে(Bracken Cave, Texas)ধারণা করা হয় এই এক গুহাতেই প্রায় ২০ মিলিয়ন বাদুড় আছে।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকানরা বাদুড় কে প্রশিক্ষণ দিয়ে বোমা ফেলার জন্য চেষ্টা করেছিল।
- চীন এবং জাপানে বাদুড় আর হ্যাপিনেস একই শব্দ দিয়ে বোঝানো হয়। এই দুই দেশে "হ্যাপিনেস" এবং "বাদুড়" এই দুই শব্দকেই "ফু(fu) " দিয়ে বোঝানো হয়।
- বেশিরভাগ বাদুড় বিশ্রাম, ঘুম, মিলিত হওয়া এবং বাচ্চা জন্ম দেয়ার কাজটি করে উল্টা হয়ে।
উটপাখিঃ
উটপাখি Animalia জগতের Chordata পর্বের Aves শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত। এরা প্রধানত ভেজিটেরিয়ান মানে তৃণভোজী তবে মাঝে মাঝে ছোটখাটো বিভিন্ন অমেরুদন্ডী প্রাণী শিকার করে থাকে। এবং দলবদ্ধভাবে থাকে।
কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্যঃ
- উটপাখি কে পাখিদের মাঝে সবচেয়ে বড় পাখি বলা হয়। একটি পুরুষ উটপাখি ৭ ফুট থেকে ৯ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং মহিলা উটপাখি ৫.৬ ফুট থেকে ৬.৬ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।

উটপাখি কে সবচেয়ে টিকে থাকার দিক থেকে সবচেয়ে পুরনো পাখি ও বলা হয়। ১২০ মিলিয়ন বছর ধরে তারা পৃথিবীতে টিকে আছে।- উটপাখির লাথি একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট।
- উটপাখি ঘোড়ার মত দৌড়াতে পারে। এটি ঘণ্টায় ৪৩ মাইল বেগে দৌড়াতে পারে এবং পুরুষ উটপাখি সিংহের মত গর্জন করতে পারে।
- স্থলজ প্রাণীদের মধ্যে উটপাখির চোখ ই সবচেয়ে বড় চোখ। এতটাই বড় যে এর মস্তিষ্কের এর পরিমাণ চোখের চেয়ে কম।
- উটপাখি এবং জেব্রা প্রায় একসাথে থাকে নিজেদের শিকারী হতে রক্ষা করার জন্য। উটপাখির দৃষ্টিশক্তি জেব্রা হতে ভালো আবার জেব্রার ঘ্রাণ এবং শ্রবণশক্তি উটপাখি হতে উন্নত।
- উটপাখির সমাজে এক অদ্ভুত উপায়ে সমতা আছে। উটপাখি ডিম পাড়ার পর সেই ডিম দিনের বেলায় মহিলা উটপাখি তা দেয় এবং রাতের বেলায় পুরুষ উটপাখি। জন্মের আগ থেকেই সন্তানের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেয় তারা। স্মার্ট পাখি
হাতিঃ

হাতি Animalia জগতের Chordata পর্বের Mammalia শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত ।এবং Proboscidea বর্গের, Elephantidae গোত্রের সবচেয়ে বড় প্রাণী হাতি। এই পর্যন্ত ৩ টি প্রজাতি সনাক্ত করা গেছে। এশিয়ান, আফ্রিকান, আফ্রিকান বন্য হাতি। এর মাঝে আফ্রিকান হাতি ১১ ফুট পর্যন্ত ও হয়ে থাকে এবং গড়ে ৬০-৭০ বছর বেঁচে থাকে।
কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্যঃ
- হাতি একমাত্র স্তন্যপায়ী যে লাফাতে পারেনা।
- একটি হাতির দাতের ওজন প্রায় ৯ পাউন্ড।
Elephant - ব্ল্যাক আইভরি কফি (Black Ivory Coffee) নামক এক বিখ্যাত ব্র্যান্ডের কফি প্রস্তুত হয় হাতির বর্জ্য থেকে।
- হাতি মোটামুটি প্রায় ১২ মাইল দূর থেকে কোথাও পানি থাকলে বুঝতে পারে।
- দিনে গড়ে ২/৩ ঘন্টা ঘুমায় এই বিশালদেহী প্রাণী।
- হাতির বাচ্চা প্রায় ২ বছরের মত পেটে থাকে।
- স্থলে বসবাসকারী স্তন্যপায়ীদের মধ্যে হাতির মস্তিষ্ক সবচেয়ে বড়। যা মানুষের মস্তিষ্কের তুলনায় ৩/৪ গুণ বড় যদিও তা আবার হাতির তুলনায় কম ই বলা যায়।
- হাতি খুবই স্পর্শকাতর এবং পরিবারের প্রতি যত্নশীল একটা প্রাণী। পরিবারের কোনো বাচ্চা হাতির কোনো সমস্যা হলে পরিবারের সবাই এগিয়ে আসে এবং তার যত্ন নেয়ার চেষ্টা করে।
- হাতি অনেক সামাজিক একটা প্রানী ও বলা যায়। যখন পরস্পরের সাথে দেখা হয় তখন এরা শুঁড় এর মাধ্যমে একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানায়।

পিপড়াঃ
পিঁপড়া Animalia জগতের Insecta শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এই পর্যন্ত ২০০০০ এর বেশি পিঁপড়া প্রজাতি পাওয়া গেছে। এন্টার্কটিকা ছাড়া পৃথিবীর সব জায়গাতেই এরা কম বেশি আছে।
কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্যঃ
- পৃথিবীতে পিঁপড়ার বসবাস অনেক প্রাচীনকাল থেকেই। প্রায় বলা যায় ডায়নোসর যখন পৃথিবীতে রাজত্ব করেছিল তখনও পিঁপড়া ছিল পৃথিবীতে। খুব ছোট হবার কারণে হয়ত বেশি সুবিধা করে উঠতে পারেনি। প্রত্নতববিদদের মতে, পৃথিবীতে মানুষের বসবাস আনুমানিক ২,০০,০০০ বছর থেকে। আর পিঁপড়াদের বসবাস আনুমানিক ১১০-১৩০ মিলিয়ন বছর আগে থেকে।
- এই পর্যন্ত সবচেয়ে বড় পিঁপড়ার দৈর্ঘ্য পাওয়া গেছে ২.৪ ইঞ্চির মত। যদিও সেটি ফসিল হিসেবে আবিষ্কৃত হয়েছে।
- পিঁপড়ারা "ফেরোমেন" নামক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থের সাহায্যে নিজেদের মাঝে যোগাযোগকরে। যেমন, কোথাও খাদ্য আছে কিনা, কিংবা কোন পথে বিপদ আছে তা অন্যদের জানিয়ে দেয়ার কাজগুলো এরা এভাবেই সম্পন্ন করে।
- পিঁপড়া নিজের ওজন থেকে ৩ গুণ ভারি কিছুও অনায়াসেই বহন করে নিয়ে যেতে পারে। আর কোনো কিছু টেনে নেয়ার ক্ষেত্রে নিজের চেয়ে ১০০ গুণ ভারি জিনিস ও এরা টেনে নিয়ে যেতে পারে।
- পৃথিবীতে সর্বশেষ গণনা অনুযায়ী মানুষ আছে প্রায় ৭ বিলিয়ন। কিন্তু সম্প্রতি পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীতে পিঁপড়া আছে প্রায় ১০ কোয়াড্রিলিয়ন এর মত। [১ কোয়াড্রিলিয়ন = ১০,০০,০০০ বিলিয়ন]। যা বোঝা যাচ্ছে সাইজে বড় হলে পৃথিবী হয়ত পিঁপড়ার দখলে থাকতো।
- পিঁপড়া কখন ও ঘুমায় না।
- পিপড়ার কোনো ফুসফুস নেই। এবং কান ও নেই। শোনার জন্য এরা ভূমির কম্পাঙ্ক ব্যবহার করে ।
- কিছু পিঁপড়া সাতার কাটতে পারে।
- আমাজন এ কিছু পিঁপড়া পাওয়া গেছে যারা নিজেদের ক্লোন তৈরী করে ফেলতে পারে। একে Asexual reproduction বলা হয়।
ব্যাঙঃ

কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্যঃ
- কিছু ব্যাঙ নিজের উচ্চতা থেকে ২০ গুণ উচ্চতা পর্যন্ত লাফ দিতে পারে।
- ২০১৪ সালে ব্যাঙের ১৪ টি প্রজাতি আবিষ্কার হয়েছে যারা নাচতে পারে।
- ব্যাঙ পানি পান করে না। শরীরে যে পরিমাণ পানি প্রয়োজন তা ত্বকের সাহায্যে শুষে নেয়।
frog - ব্যাঙ চোখ খোলা রেখে ঘুমায়।
- মিশরে ব্যাঙ কে উর্বরতার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
- গোল্ডেন পয়জন ফ্রগ কে সবচেয়ে বিষাক্ত ব্যাঙ বলা হয়। এর সবচেয়ে ছোট আকারের ব্যাঙ এ যে পরিমাণ বিষ থাকে তা ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট।
- ব্যাঙ প্রায় প্রতি ১ সপ্তাহ অন্তর নিজের গায়ের চামড়া বদলায়। নতুন চামড়া গজানোর পর সাধারণত পুরানো চামড়া খেয়ে ফেলে।
সাপঃ

সাপ Animalia জগতের Chordata পর্বের Sauropsida শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত। ২৫০০ এর ও বেশি প্রজাতি রয়েছে। এদের দৈর্ঘ্য ১০ সেঃমিঃ থেকে শুরু করে ২৫ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এন্টার্কটিকা ছাড়া সব জায়গাতেই কিছু না কিছু প্রজাতি পাওয়া যায়।
কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্যঃ
- সাপ জিহ্বার সাহায্যে গন্ধ নেয়ার কাজটি করে থাকে।
- সাপের চোখে কোনো পাতা বা আইলিড নেই।
- কিছু সাপ কোনো রকমের খাবার গ্রহণ ছাড়াও একটি সাপ প্রায় ২ বছর বেচে থাকতে পারে।
- সাপ তার খাদ্য কে কামড়ে খেতে পারেনা। পুরোটা একেবারে গিলে ফেলে। এজন্য শিকার একটু বড় হয়ে গেলে গেলার জন্য যতটা প্রয়োজন ততটাই নিজের চোয়াল কে এটি বাঁকিয়ে ফেলতে পারে।
- কিছু সাপ আছে কামড়ে বিষ নষ্ট করা অপ্রয়োজনীয় মনে করে। কামড়ের বদলে শিকার কে চেপে শ্বাসরুদ্ধ করে মারতেই তারা বেশি যুক্তিযুক্ত মনে করে। যেমন, এনাকোন্ডা।
- সাপের মেটাবলিজম রেট খুব স্লো হওয়ার কারণে এদের নিয়ম করে প্রতি বেলায় খেতে হয়না । কিং কোবরা এক মাস ও কিছু না খেয়ে আরামসে কাটিয়ে দিতে পারে।
- ব্ল্যাক মাম্বা কে বলা হয় সবচেয়ে দ্রুত গতির সাপ। এরা ঘণ্টায় ১২ মাইল বেগে ছুটতে পারে ।
- দুই মাথাওয়ালা সাপ কোনো রূপকথা নয়। বাস্তবেই এর অস্তিত্ব থাকা সম্ভব।

জিরাফঃ

জিরাফ Animalia জগতের Chordata পর্বের Mammalia শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত। লম্বায় ১৮ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। দৃষ্টিশক্তি প্রখর।
কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্যঃ
- মানুষ এবং জিরাফের ঘাড়ের হাড় সংখ্যা সমান।
- জিরাফের গায়ের দাগ দেখে এর বয়স অনুমান করা যায়। বয়সের সাথে সাথে এই দাগ গাড় হতে থাকে। জিরাফের লেজ অনেক লম্বা। এতটাই লম্বা যে এটি দিয়ে জিরাফ অনায়াসেই নিজের কানপরিষ্কার করতে পারে।
- জিরাফের জিভ এর রঙ কালো। জিরাফ সাধারণত বসেনা। ঘুমানো থেকে খাওয়া, পানি পান, বাচ্চা জন্মদান সবই দাঁড়িয়ে করে থাকে।
- এরা খুব ভালো দৌড়াতেও পারে। বিপদ দেখলে প্রায় ৬০ কিলোমিটার বেগেও এরা দৌড়াতে পারে।
- এরা এতই লম্বা যে জন্মের সময় ই একটা শিশু জিরাফ প্রায় ৬ ফুটের মত হয়ে থাকে।
- প্রাণীজগতে জিরাফ একমাত্র প্রাণী যাদের জন্মের সময় ই শিং থাকে।
- জিরাফের গায়ের আঁকাবাঁকা দাগ কিছুটা ফিঙ্গার প্রিন্টের মত। দুইটি জিরাফের এই আঁকাবাঁকা দাগের প্যাটার্ন কখন ও একরকম হয়না।
- জিরাফ সাধারণত কোনো শব্দ করেনা। এমন নয় যে তারা শব্দ করতে পারেনা। বরং তারা পছন্দ করেনা। জ্ঞানীর মত নিঃশব্দে থাকতেই পছন্দ করে তারা।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন