চলুন জেনে নেওয়া যাক বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ৮টি সুপার কম্পিউটার সম্পর্কে।

আজকের সময়ে কম্পিউটার ব্যাবহারের অভিজ্ঞতা কয়েক দশক আগের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক ভিন্ন। প্রতি বছর কম্পিউটার সিস্টেমের প্রায় দ্বিগুণ অগ্রগতি হচ্ছে। আগে যে ট্রানজিস্টর পেনসিলের রাবারের মতো ছিল তা এখন এতো ছোট হয়েছে যে আঙুলের একটি নখের ওপর কয়েক বিলিয়ন ট্রানজিস্টর ধরে যাবে।
বর্তমান সময়ের একটি ল্যাপটপের় সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (সিপিইউ) প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২১ বিলিয়ন নির্দেশাবলী সম্পাদন করতে পারে। যা কিনা ১৯৭০ এর দশকের সবচেয়ে উন্নত কম্পিউটারের তুলনায় অনেক দ্রুততর।

যেহেতু কম্পিউটিং শক্তি প্রতিনিয়ত অনেক উন্নত হচ্ছে, তাই এর মাধ্যমে জটিল থেকে জটিলতর গণনা করা প্রয়োজন। এখন আরো অনেক বেশি তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং সেসব প্রক্রিয়া করতে প্রয়োজন বিস্ময়কর শক্তির কম্পিউটার। নতুন বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে, যেমন- আবহাওয়ার উন্নত পূর্বাভাস, পারমাণবিক পরীক্ষা সিমুলেশন, আণবিক স্তরে সেল মডেলিং, এমনকি মানুষের মস্তিস্ক সিমুলেশন-এগুলো আরো জটিল হয়ে ওঠছে, যা পূর্বাভাস দিচ্ছে যে, আরো দ্রুততর এবং আরো শক্তিশালী সুপার কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তার।
চলুন জেনে নেওয়া যাক বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ৮টি সুপার কম্পিউটার সম্পর্কে।
৮. ফুজিৎসুর ‘কে’K-supercomputer
ফুজিৎসুর ‘কে’ কম্পিউটারটি প্রথম ছিল সুপার কম্পিউটার যা ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে ১০.৫ পেটাফ্লপ গতি নিয়ে তৈরি হয়েছিল। এই কম্পিউটারটি প্রায় ৮০,০০০ সিপিইউ এর সমান কাজ করতে পারে। এটিতে ওয়াটার কুলিং টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে এটি অতিরিক্ত গরম হয় না। ৮৮,১২৮টি অক্টা কোর প্রসেসর (এসপিএআরসি৬৪ ৮এফক্স) বিশিষ্ট এই সুপার কম্পিউটারটি মহাকাশ গবেষণা, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস, পারমাণবিক গবেষণা, জ্বালানি শক্তি অনুসন্ধানসহ অনেক কাজে ব্যবহার করা হয়। ফুজিৎসুর কারিগরি সহায়তায় কম্পিউটারটি বসানো হয়েছে গবেষণা সংস্থা রিকেন অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট ফর কম্পিউটেশনাল সায়েন্সে।
৭. ওকফরেস্ট-পিএসিএস
Related image
টোকিও ইউনিভার্সিটি, সুকুবা ইউনিভার্সিটি এবং ফুজিৎসু কোম্পানি মিলিতভাবে এই কম্পিউটারটি তৈরি করে। এটি ২৫ পেটাফ্লপ গতি সম্পন্ন। ইন্টেলের এর লেটেস্ট জেনারেশনের ‘জিওন ফি’ প্রসেসরের ফলে এটি জাপানের সবচেয়ে দ্রুত গতিসম্পন্ন সুপার কম্পিউটারে পরিণত হয়েছে। সিস্টেমটি ৮,২০৮ কম্পিউটেশনের নোড এর মাধ্যমে তৈরি। এটি কম্পিউটেশনাল বিজ্ঞান অনুসন্ধানের কাজে ব্যবহৃত হয় এবং এর দ্বারা তরুণ গবেষকদের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
৬. কুরি (এনইআরএসসি)
ক্যালিফোর্নিয়ার ন্যাশনাল এনার্জি রিসার্চ সায়েন্টিফিক কম্পিউটিং সেন্টার এই কম্পিউটারটি তৈরি করে এবং আমেরিকার প্রথম নোবেল বিজয়ী নারী ‘গার্টি কুরি’ এর নাম অনুযায়ী এই সুপার কম্পিউটারের নাম দেওয়া হয় কুরি। ক্রে এক্স৬০ সিস্টেমের এই কম্পিউটারটি ২৯.১ পেটাফ্লপ গতি সম্পন্ন। এটিতে ইন্টেলের জিওন এবং জিওন পাই প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে।
৫. সেকোইয়া
Sequoia-Supercomputer
এ সুপার কম্পিউটারটি উন্নত অস্ত্র বিজ্ঞানের ফলে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি গণনার কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি ৯৮,৩০৪ নোড সম্পন্ন। এটি পৃথিবীর ৫ম শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার এবং এর গতি ১৭.২ পেটাফ্লপ। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিন (আইবিএম) করপোরেশনের তৃতীয় প্রজন্মের ব্লু জিন/কিউ প্রযুক্তিতে তৈরি এই সুপারকম্পিউটার বসানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে।
৪. টাইটান
Titan-Supercomputer
এটি পশ্চিমা বিশ্বের অন্যতম সেরা সুপার কম্পিউটার। ২০১৩ সালে ‘তিয়ানহে-২’ নামক সুপার কম্পিউটারটি আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত এটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটার ছিল। এটিই হল এএমডি অপটেরন সিপিইউগুলো এবং এনভিডিয়া টেসলা জিপিইউগুলো সংযুক্ত প্রথম সুপার কম্পিউটার, যা ২৭ পেটাফ্লপ গতিসম্পন্ন। এই ধরনের শক্তিসম্পন্ন কম্পিউটার গবেষকরা জলবায়ু বিজ্ঞান, জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যা এবং আণবিক পদার্থবিজ্ঞানে প্রয়োজনীয় জটিল হিসাব নিকাশ সম্পাদন করতে ব্যবহার করেন।
৩. তিয়ানহে-২
TIANHE.2.SUPERCOMPUTER.plate_
কম্পিউটারটি প্রতি সেকেন্ডে ৩৩.৮৬ পেটাফ্লপ (১০০০ ট্রিলিয়নে ১ পেটাফ্লপ) গতিতে গাণিতিক হিসাব করতে সক্ষম। চীনের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ডিফেন্স টেকনোলজির গবেষকেরা বিশ্বের দ্রুতগতির এ সুপার কম্পিউটারটির নির্মাতা। এটির ‘মিল্কিওয়ে-২’ নামেও পরিচিত। ১৬,০০০ কম্পিউটার নোড বিশিষ্ট কম্পিউটারটি ২০১৩ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটার ছিল।
২. পিজ ডেইন্ট
পিজ ডেইন্ট নামক সুপার কম্পিউটারটি সুইজারল্যান্ডের সুইস কম্পিউটিং সেন্টারে অবস্থিত। এই সুপার কম্পিউটারটি ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার। এর পারফরম্যান্স আগের থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি করে ২৫.৩ পেটাফ্লপ করা হয়।
১. সানওয়ে তাইহুলাইট
সানওয়ে তাইহুলাইট সুপার কম্পিউটারটি চীনের গুয়াংঝু ন্যাশনাল সুপার কম্পিউটার সেন্টারে অবস্থিত। এটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার। এটি ১২৫ পেটাফ্লপ গতি সম্পন্ন। এতে আছে এক কোটির বেশি প্রসেসিং কোর এবং ৪০ হাজার ৯৬০টি নোড। কম্পিউটারটি জলবায়ু গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, তাছাড়া আর্থ সিস্টেম মডেলিং এবং তথ্য বিশ্লেষণ এর কাজেও ব্যবহার হচ্ছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ দুর্ঘটনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।

বাংলাদেশের সকল রাজবাড়ী ও জমিদার বাড়ীগুলির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্হা কি (ভিডও সহ )