চট্টগ্রামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম জোহান নাম লিখিয়েছে গিনেস বুকে।
ফ্রিস্টাইল ফুটবলের বিশেষ একটি পারফরম্যান্সে এই রেকর্ড গড়েছে সে।
আশরাফুল ইসলাম জোহানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। এবার চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে চলছে প্রস্তুতি।তার রেকর্ডের গল্প শোনার আগে জেনে নেওয়া যাক ফ্রিস্টাইল ফুটবল কী। ফ্রিস্টাইল ফুটবল হলো ফুটবলে নিজের দক্ষতার প্রকাশ। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, যেমন— মাথা, কাঁধ, বসে থেকে অথবা পায়ের সাহায্যে ফুটবল দিয়ে বিভিন্ন কলাকৌশল প্রদর্শন করার নাম ফ্রিস্টাইল ফুটবল। এটি ফুটবলের একটা বিশেষ প্রতিভা। বড় বড় খেলোয়াড়কেও মাঝে মাঝে দেখবে এসব দক্ষতা দেখাতে। কঠিন প্র্যাকটিসেই এ দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব।
জোহানের ফুটবলপ্রেম
ছোটবেলা থেকেই জোহান স্বপ্ন দেখত ফুটবলার হওয়ার। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময়ই নিয়মিত ফুটবল খেলা শুরু করে। পাড়ার মাঠ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফুটবল নিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। ২০১৪ সালে এয়ারটেল রাইজিং স্টার প্রগ্রামে নির্বাচিত ১২০ জন খেলোয়াড়ের একজন ছিল সে। সেই প্রগ্রামের সেরা ১২ জনকে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হোম গ্রাউন্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল স্কুলের পেশাদার কোচদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেই দলে সুযোগ না পাওয়ায় সে সময় বেশ মন খারাপ হয়েছিল জোহানের। ফুটবল খেলায় নিয়মিত থাকায় টুকটাক ফ্রিস্টাইল ফুটবল জানত আগে থেকেই। তবে সেগুলো ছিল সাধারণ মানের। ২০১৬ সালের শেষ দিকে ফ্রিস্টাইল ফুটবলের বেশ কয়েকটি ভিডিও চোখে পড়ে তার। নিজে নিজে সেগুলোর চর্চা করতে থাকে। সেই চর্চা থেকেই ফ্রিস্টাইল ফুটবলে বাড়াতে থাকে নিজের মুনিশয়ানা। ইউটিউবে ভিডিও দেখে প্রায় প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় প্র্যাকটিস করত ফ্রিস্টাইল ফুটবলের বিভিন্ন কলাকৌশল।
যেভাবে গিনেস বুকে
এ বছরের ফেব্রুয়ারির ঘটনা। জোহানের ভারতীয় বন্ধু আর্চিস পাটেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের কথা জানায়। তার রেকর্ড এক মিনিটে সে ১০১ বার সাইড হেড স্টল বল কন্ট্রোল করতে পারে। সেই পোস্ট দেখে জোহান আগ্রহ নিয়ে তার কাছে জানতে চাইল প্রক্রিয়াটা। বিদেশি বন্ধুর কাছ থেকে প্রক্রিয়া জেনে চেষ্টায় নামল জোহান। কিন্তু এই সাইড হেড স্টল বল জিনিসটাই বা কী? জোহান জানাল, ‘এক মিনিট সময়ের মধ্যে মাথার ডান পাশের অংশ বা বাঁ পাশের অংশে (কানের ওপরে) হেড দিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ রাখা। মানে হেডও করতে হবে আবার বল যেন পড়ে না যায় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।’
জোহান প্র্যাকটিস করে দেখল, সে এক মিনিটে ১০৪ বার সাইড হেড স্টল বল কন্ট্রোল করতে পারছে। দেরি না করে ২১ ফেব্রুয়ারি আবেদন করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ওয়েবসাইটে। ফিরতি মেইলে জানানো হলো, পরের ই-মেইলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১২ সপ্তাহ। তারপর ২১ মে জোহানের কাছে চাওয়া হলো তার রেকর্ডের ভিডিও। জোহানও কোমর বেঁধে নামল ভিডিও করতে। জানাল, ‘কোথায় আর কিভাবে শুটিং করব সেই চিন্তায় সারা রাত ঘুম হয়নি। আমি ও আমার কাজিনরা মিলে ঠিক করলাম, শুটিং হবে আমার বাসার ছাদে। পরদিন ২২ মে শুটিং করি। এর পুরো বন্দোবস্ত করেছে আমার কাজিনরা। সব ঠিকঠাক থাকলেও ক্যামেরার সামনে সাইড হেড স্টল বল কন্ট্রোল করতে আমি কিছুটা ঘাবড়ে যাই। কয়েকবার শুট করতে হয়েছিল। কাজিনরা পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দিয়েছিল বেশ। শেষ পর্যন্ত এক মিনিটে ১০৪ বার হেড নিয়ে বল কন্ট্রোল করেছি। অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো ছিল না। শুধু মনে হচ্ছিল, সব ঠিকঠাক থাকলে দেশের নাম গিনেস বুকে উঠতে চলেছে।’
এবার অপেক্ষা আরো ১২ সপ্তাহের। এবারের মেইলে জানানো হলো, মের ২২ তারিখ জোহান অফিশিয়ালি রেকর্ডটি নিজের করে নিয়েছে। তাকে অভিনন্দন জানিয়ে সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য আবেদন করতে বলেছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ। সেই সনদটা জোহানের হাতে এলো ৯ সেপ্টেম্বর।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ফিস্টাইল ফুটবল ফেডারেশন আয়োজন করে বিশ্ব ফ্রিস্টাইল ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ, ওয়ার্ল্ড ট্যুর, সুপারবল, রেড বুল স্ট্রিট স্টাইল, এফ-৩ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপসহ বেশ কিছু প্রতিযোগিতার। আশরাফুল ইসলাম জোহান এসব প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চায়। তবে তার বিশেষ আগ্রহ বিশ্ব ফ্রিস্টাইল ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপকে ঘিরে, যা প্রতিবছর চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগে অনুষ্ঠিত হয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন