হজের প্রস্তুতি : এ টু জেড

হজের প্রস্তুতি : এ টু জেড


প্রথমে আপনার নিয়ত পরিশুদ্ধ করুন। কেননা নিয়তের ওপরই আমল নির্ভরশীল। হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই নিয়তের ওপর আমল নির্ভরশীল’। তাই লোক-দেখানো, হজ করলে সমাজে মান-মর্যাদা বাড়বে, নামের সাথে আলহাজ্ব লেখা যাবে, নির্বাচনি লড়াইয়ে জনতাকে অধিক পরিমাণে প্রভাবিত করা যাবে ইত্যাদি ভাবনা থেকে নিজেকে পবিত্র করুন।

হজের এর ছবির ফলাফল
 মানসিক প্রস্তুতি
 প্রথমে আপনার নিয়ত পরিশুদ্ধ করুন। কেননা নিয়তের ওপরই আমল নির্ভরশীল। হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই নিয়তের ওপর আমল নির্ভরশীল’। তাই লোক-দেখানো, হজ করলে সমাজে মান-মর্যাদা বাড়বে, নামের সাথে আলহাজ্ব লেখা যাবে, নির্বাচনি লড়াইয়ে জনতাকে অধিক পরিমাণে প্রভাবিত করা যাবে ইত্যাদি ভাবনা থেকে নিজেকে পবিত্র করুন। এসব মনোবৃত্তিকে ‘রিয়া’ বলা হয়। রিয়া মারাত্মক অন্যায় যাকে হাদিসে ছোট শিরক বলা হয়েছে। ছোট শিরক বুকে ধারণ করে হজ করলে হজ কবুল হবে না কথাটি ভালোভাবে স্মরণ রাখুন। তাই রিয়া থেকে মুক্ত থাকুন ও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন তিনি যেন রিয়া-মুক্ত হজ পালনের তাওফিক দান করেন। রাসূলুল্লাহ [সা.] নিজেও এরূপ প্রার্থনা করতেন। এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ [সা.] আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলেছেন, হে আল্লাহ! এমন হজের তাওফিক দাও যা হবে রিয়া ও সুনাম কুড়ানোর মানসিকতা হতে মুক্ত।

 দুই. তাওবাহ ও হক আদায়মূলক প্রস্তুতি 
যে দিন থেকে হজ পালনের নিয়ত করেছেন সেদিন থেকেই মনে করবেন যে আপনার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। ইতোপূর্বে যদি আপনি আল্লাহর হক নষ্ট করে থাকেন, সালাত, সিয়াম যাকাত আদায় ইত্যাদির কোনোটিতে অবজ্ঞা-অনীহা-অমনোযোগ দেখিয়ে থাকেন তাহলে ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসুন। হক্কুল্লাহ বিষয়ে সকল জানা-অজানা গুনাহ-পাপ থেকে মুক্তি কামনা করে আল্লাহর দরবারে আহাজারি করুন। কাঁদুন। মুক্তিকামনা করুন হৃদয় উজাড় করে, আল্লাহ তালার সীমাহীন রহমত ও ক্ষমাশীল হওয়ার কথা খেয়াল রেখে। এখন থেকে হক্কুল্লাহ বা আল্লাহর অধিকারের আওতাভুক্ত প্রতিটি বিষয়ই অত্যন্ত যতেœর সঙ্গে আদায় করুন। বিগত পাপ-অন্যায়ের জন্য তাওবা করুন। তাওবার নিয়ম হলÑ ক. সকল প্রকার গুনাহ-পাপ থেকে ফিরে আসা, ও তা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা। খ. পূর্বের সকল পাপ-অন্যায়ের প্রতি অনুশোচনা ব্যক্ত করা। গ. এমন অপরাধে ভবিষ্যতে আর কখনো জড়াবেন না এমর্মে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া। অপরাধ যদি হক্কুল ইবাদ তথা বান্দার হক সংশ্লিষ্ট হয়, তাহলে তাওবার পূর্বে তা মীমাংসা করে নিতে হবে। ক্ষতিপূরণ দিয়ে হোক বা ক্ষমা চেয়ে হোক, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে সমঝতায় আসার পর তাওবা করতে হবে। এর অন্যথা হলে তাওবার দ্বারা কোনো ফল পাওয়া যাবে না। মনে রাখবেন যে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির সাথে সুরাহা না করলে কিয়ামতের দিন আপনার সমস্ত নেক আমল তার আমল-নামায় লিখে দেয়া হবে। নেক আমলের অনুপস্থিতিতে ওই ব্যক্তির পাপের বোঝা আপনার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হবে। তাই এবিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। হজ করলেও হক্কুল ইবাদ ক্ষমা হয় না, যতক্ষণ না ক্ষতিপূরণ দিয়ে অথবা ক্ষমা চেয়ে ওই ব্যক্তিকে রাজি-খুশি করা হবে। কাউকে আর কোনো দিন অবৈধভাবে কষ্ট দেবেন না, কারও অর্থ-কড়ি বেহালালভাবে কখনো খাবেন না এই প্রতিজ্ঞা করুন। সাথে সাথে যাদের সাথে আপনি অতীতে অসদাচরণ করেছেন বা যাদের অর্থসম্পদ হারামভাবে আপনার দখলে এসেছে তাদের কাছে ক্ষমা চান। তাদের প্রাপ্য-সম্পদ ফিরিয়ে দিন। তাদের ভালো চেয়ে দোয়া করুন। নিজের অন্যায়ের জন্যও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। ইস্তিগফার করুন।

 তিন. শারীরিক প্রস্তুতি হজের ফ্লাইট শুরু হওয়ার এখনো বেশ বাকি। তাই শারীরিকভাবে যাঁরা অসুস্থ বা সফর করার অযোগ্য রয়েছেন, অতিসত্বর চিকিৎসা গ্রহণ করে নিজেকে প্রস্তুত করে তুলুন এবং হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার আগে মেনিনজাইটিস টিকা গ্রহণ বা মেডিক্যাল চেক-আপের বিষয়ে এখন থেকেই ভেবে রাখুন। প্রয়োজন বা সুযোগ হলে আগে থেকেই এ ব্যাপারে প্রস্তুত গ্রহণ করা ভালো।

 চার. স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রতিষেধক গ্রহণ
 হজে যাওয়ার আগে প্রত্যেক হজযাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালসহ বিভিন্ন জেলায় সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, ঢাকায় সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রতিষেধক নিতে হবে। এ ছাড়া হজের আগে উত্তরা আশকোনা হজ অফিসেও এ কাজ সম্পন্ন করা হয়। প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিষেধক টিকা এবং স্বাস্থ্যসনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। হজে যাওয়ার আগে এই স্বাস্থ্যসনদ নিতে হবে। আর ৭০ বছর বা ততোধিক বয়স্ক হজযাত্রীদের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত বোর্ডের বিশেষ স্বাস্থ্যসনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। সৌদি আরবে বিমানবন্দরে পৌঁছে প্রত্যেক হজযাত্রীকে স্বাস্থ্যসনদ, পরিচয়পত্র এবং কবজি বেল্ট বহন করতে হয়। এটি বাধ্যতামূলক। তাই হজের আবেদনপত্রে স্বাস্থ্যসম্পর্কিত তথ্য যথাযথভাবে পূরণ করা জরুরি। 

পাঁচ. আর্থিক প্রস্তুতি অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থে হজ করতে গেলে তা আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। এ ধরনের ব্যক্তি ‘লাব্বাইক’ বললে আল্লাহ তার লাব্বাইক প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, তোমার কোনো লাব্বাইক নেই, তোমার জন্য সৌভাগ্য বার্তাও নেই। তোমার পাথেয় হারাম, তোমার অর্থ-কড়ি হারাম, তোমার হজ গায়ের-মাবরুর, অগ্রহণযোগ্য। সে হিসেবে হজের প্রাথমিক প্রস্তুতিই হবে হালাল রুজি-রোজগারের মাধ্যমে নিজের ও পরিজনের প্রয়োজন মেটানো ও সম্পূর্ণ হালাল রিজিক-সম্পদ থেকে পাই-পাই করে একত্রিত করা। যদি হালাল রিজিক উপার্জন করে হজে যাওয়ার মতো পয়সা জোগাড় করতে না পারেন তবে আপনার ওপর হজ ফরজ হবে না। হজে আপনাকে যেতেই হবে, কথা এ রকম নয়। বরং ঘরসংসারের জরুরি প্রয়োজন মিটিয়ে হজে যাওয়ার খরচা হাতে আসলে তবেই কেবল হজ ফরজ হয়। তাই কখনো হারাম পয়সায় হজ করার পরিকল্পনা করবেন না। যদি এমন হয় যে আপনার সমগ্র সম্পদই হারাম, তাহলে আপনি তাওবা করুন। হারাম পথ বর্জন করে হালাল পথে সম্পদ উপার্জন শুরু করুন। আর কোনো দিন হারাম পথে যাবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করুন। এক পর্যায়ে যখন প্রয়োজনীয় হালাল পয়সা জোগাড় হবে কেবল তখনই হজ করার নিয়ত করুন। আপনার কোনো ঋণ থেকে থাকলে হজ করার পূর্বেই তা পরিশোধ করে দিন। তবে আপনি যদি বড়ো ব্যবসায়ী হন, ঋণ করা যার নিত্যদিনের অভ্যাস বা প্রয়োজন, তাহলে আপনার গোটা ঋণের ব্যাপারে একটা আলাদা অসিয়ত নামা তৈরি করুন। আপনার ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার যারা হবেন তাদেরকে এ বিষয়ে দায়িত্ব অর্পণ করে যান। ব্যালটি বা ননব্যালটি উভয় ক্ষেত্রে যে পরিমাণ টাকা আপনাকে চার্জ করা হয় তার থেকেও বিশ-ত্রিশ হাজার টাকা অতিরিক্ত সঙ্গে নেয়ার চেষ্টা করবেন। পারলে আরো বেশি নেবেন। এ পয়সা প্রয়োজনের সময় ব্যয় করাÑ যেমন কোনো ভুলের কারণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দম ওয়াজিব হয়ে যাওয়া—ব্যতীতও সহযাত্রী হাজিদের আপ্যায়ন করা, অভাবী হাজিদেরকে সাহায্য করা ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যয় করবেন। এমনকি ক্ষুধা-পিপাসা পেলে কার্পণ্য না করে প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ ইত্যাদির জন্য আপনাকে অতিরিক্ত অর্থ হাতে রাখতে হবে। তাছাড়া আত্মীয় স্বজনদের জন্য হাদিয়া তোহফা ক্রয় করাও আপনার কাছে একটি প্রয়োজন বলে মনে হতে পারে সে জন্যও আপনি অতিরিক্ত পয়সা সঙ্গে নিতে পারেন। পয়সাকড়ি নিরাপদ স্থানে হেফাজত করবেন। কোমরের বেল্টে একসাথে সব পয়সা রাখবেন না। আপনার ব্যাগে অথবাÑবিশ্বস্ত হলেÑ হোটেলের মালিক অথবা মুয়াল্লিমের অফিসে রিসিপ্ট নিয়ে টাকা জমা রাখতে পারেন। মিনা ও আরাফাতেও বেশি টাকা সঙ্গে নিয়ে যাবেন না। কেননা হজের নাম ধরে কেউ কেউ মানুষের ভিড়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ধান্দায় থাকে। তাদের খপ্পর থেকে পয়সাকড়ি হেফাজত করুন। 
ছয়. পার্সপোর্ট তৈরি করার প্রস্তুতি ঢাকায় আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। এটিসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মোট ৩৩টি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। হজযাত্রীরা নিজ নিজ জেলা অনুযায়ী পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়সহ আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে পাসপোর্ট বানাতে পারবেন। এ ছাড়া প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাসপোর্টের আলাদা শাখা রয়েছে, সেখান থেকেও ওই জেলায় বসবাসকারীরা পাসপোর্ট বানাতে পারবেন। আবেদনপত্রসহ আরও তথ্য িি.িঢ়ধংংঢ়ড়ৎঃ.মড়া.নফ ঠিকানায় পাওয়া যাবে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট যার সংক্ষিপ্ত রূপ এমআরপি (গজচ)। এমআরপির জন্য বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর নতুন আবেদন ফরম তৈরি করেছে। যা আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস থেকে বিনামূল্যে সংগ্রহ করা যায়। তাছাড়া যঃঃঢ়://িি.িফরঢ়.মড়া.নফ -এই ওয়েবসাইট থেকেও ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর একটি রঙিন ছবি নির্ধারিত স্থানে আঠা দিয়ে লাগানোর পর সত্যায়িত করতে হবে। অপ্রাপ্ত বয়স্করা তাদের মা-বাবার একটি করে স্টাম্প সাইজ রঙিন ছবি নির্ধারিত স্থানে লাগিয়ে সত্যায়িত করতে হবে। আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম সনদের ফটোকপি এবং সাথে থাকবে ব্যাংক টাকা জমা দেওয়া রসিদ। সাধারণ এমআরপি’র জন্য টাকা জমা দিতে হয় ৩০০০ টাকা। ১৫ দিনে পেতে হলে লাগে ৬০০০ টাকা। আবেদনকারীকেই আবেদন ফরম জমা দিতে হবে কারণ চারটি আঙুলছাপ রাখা হচ্ছে। তোলা হচ্ছে মুখের ছবি, নেয়া হচ্ছে স্বাক্ষর।

অনলাইনে পাসপোর্ট : শিক্ষা, ভ্রমণ, প্রশিক্ষণ, কনফারেন্স, ব্যবসা, চিকিৎসা যে কোনো প্রয়োজনে বিদেশ যাওয়ার জন্য দরকার একটা বৈধ পাসপোর্ট। আগে পাসপোর্ট তৈরির জন্য আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করতে আঞ্চলিক অফিসে যেতে হত। ফর্ম পূরণ করার পর আবার যেতে হত পাসপোর্ট অফিসে। তারপর লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা, জমা দেওয়া। এই চিত্র দিনদিন কমতে শুরু করেছে। হাতে পূরণ করা পাসপোর্টের আবেদন ফর্ম জমা দেওয়ার লাইনের পাশাপাশি এখন অনলাইনে ফর্ম জমাদানকারীদের লাইনও চোখে পড়বে। অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণের সুবিধা সম্পর্কে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, “অনলাইনে যেসব আবেদন জমা পড়ে সেগুলোতে ভুল কম হয়। ফর্ম জমা দেওয়ার আগে সব তথ্য আবেদনকারী নিজেই যাচাই করে নেন। এতে নিজেই ভুলগুলো শনাক্ত করতে পারেন। তথ্যগুলো কেন্দ্রীয় সার্ভারে জমা হয়। তাছাড়া এই পদ্ধতিতে হাতে পূরণ করা ফর্মের মতো তথ্যগুলো হালনাগাদ করতে সার্ভারে নতুন করে ইনপুট করতে হয় না। এতে সময় ও শ্রম বাঁচে। ভুলভ্রান্তিও কম হয়।” অনলাইনে আবেদন পূরণ করতে প্রথমেই যঃঃঢ়://িি.িঢ়ধংংঢ়ড়ৎঃ.মড়া.নফ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। এখানে আবেদন ফর্ম পূরণ সম্পর্কিত নির্দেশনাগুলো আগে পড়ে নিন। পড়া শেষ হলে ও যধাব ৎবধফ ঃযব ধনড়াব রহভড়ৎসধঃরড়হ ধহফ ঃযব ৎবষবাধহঃ মঁরফধহপব হড়ঃবং যুক্ত স্থানে টিক চিহ্ন দিন। এবার কনটিনিউ টু অনলাইন এনরোলমেন্ট-এ ক্লিক করুন। অনলাইনে আবেদনের জন্য প্রথম পৃষ্ঠা দেখাবে। এখানে ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য, স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা, আপনার উচ্চতা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসহ আরও কিছু তথ্য পূরণ করতে হবে। নাম লেখার সময় নামের সংক্ষিপ্তরূপের পরিবর্তে যেমন— মোঃ/গউ.-এর স্থলে মোহাম্মদ/গঙঐঅগগঅউ লিখা অপরিহার্য। তাছাড়া পিতা, মাতা, স্বামী, স্ত্রী— মৃত হলে তাদের নামের আগে মৃত/মরহুম/খঅঞঊ ব্যবহার করা যাবে না। এ নিয়ম সম্পর্কে সিরাজ বলেন, “অনেকের সার্টিফিকেটে নামের সংক্ষিপ্ত রূপ লেখা থাকে। এছাড়া পাসপোর্টে নামের আগে কোনো পদবি বা নামের সংক্ষিপ্ত রূপ থাকলে কিছু দেশের ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তবে কেউ চাইলে সার্টিফিকেট অনুযায়ী নিজের নাম ব্যবহার করতে পারেন।” প্রথম পৃষ্ঠা আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ পূরণ করার সময় ইমেইল অ্যাড্রেস দিয়ে সেইভ করলে পরে যেখানে শেষ করেছেন সেখান থেকেই আবার শুরু করতে পারবেন। ইমেইলে একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর ও পাসওয়ার্ড সরবরাহ করা হবে। তৃতীয় পৃষ্ঠা পূরণের সময় পাসপোর্টের জন্য ফি জমা সংক্রান্ত তথ্য পূরণ করতে হবে। এখানে ব্যাংক বা বাংলাদেশ মিশনের যে শাখায় আবেদন ফি জমা দিয়েছেন সে তথ্য, জমা দেওয়ার তারিখ ও রসিদ নম্বর পূরণ করতে হবে। তাই পাসপোর্ট তৈরির জন্য নির্ধারিত ফি আগে জমা দিয়ে তারপর ফর্ম পূরণ করতে বসুন। পুরোটা পূরণ করার পর আপনার ইমেইলে ফর্মের একটা কপি চলে আসবে। এখান থেকে ২ কপি প্রিন্ট করে ছবিসহ জমা দিতে হবে পাসপোর্ট অফিসে। এ সময় টাকা জমা দেওয়ার রশিদের কপিও জমা দিতে হবে। “পাসপোর্টের জন্য ছবি তুলতে আবেদনকারীকে সশরীরে উপস্থিত হতে হবে। এখানে আবেদনকারীর ২ হাতের আঙুলের ছাপও সংগ্রহ করা হয়। এতে কেউ পরপর ২টি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরি করতে গেলে সহজেই ধরা পড়ে যাবেন।” বললেন সিরাজ।

 সাত. হজ প্যাকেজ গ্রহণমূলক প্রস্তুতি ক. সরকারি হজ প্যাকেজ : নিয়ম-পদ্ধতি : হজের আবেদনপত্র জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দ্বীনি দাওয়াত বিভাগের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, তালিকাভুক্ত ৩৩টি ব্যাংকের শাখা (যেখানে টাকা জমা দিতে হবে) এবং বাংলাদেশ সচিবালয়, ভবন নম্বর ৮, হজ শাখা, কক্ষ নম্বর ১০৩, ঢাকায় হজ অফিস, আশকোনা থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ এবং জমা করা যাবে। এ ছাড়া িি.িযধলল.মড়া.নফ ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে ফরম পূরণ করে ডাউনলোড ও প্রিন্ট আউট নিয়ে স্বাক্ষরসহ ওই সব কার্যালয়ের যেকোনোটিতে জমা দেওয়া যাবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় আবেদনপত্র আগামী ৫ জুনের মধ্যে জমা দিতে হবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গেলে নিজ নিজ এজেন্সি থেকে আবেদন সংগ্রহ এবং আবেদনপত্র ও টাকা জমা দেওয়া যাবে ২৯ মের মধ্যে। 
সরকারি প্যাকেজসমূহ : প্যাকেজ ১ : সৌদি আরবের ভিসা, বিমানে যাওয়া-আসা, মক্কায় কাবা শরিফ থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার ২০০ মিটার ও মদিনায় মসজিদে নববী থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ মিটারের মধ্যে তাসরিয়াযুক্ত (সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের যাচাই করা বাসস্থান) বাসায় থাকার ব্যবস্থা। প্যাকেজ ২ : সৌদি আরবের ভিসা, বিমানে যাওয়া-আসা, মক্কায় কাবা শরিফ থেকে সর্বোচ্চ দুই কিলোমিটার ও মদিনায় মসজিদে নববী থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ মিটারের মধ্যে তাসরিয়াযুক্ত বাড়িতে আবাসন। এ ছাড়া উভয় প্যাকেজে মক্কায় ও মদিনায় সৌদি নিয়ম অনুযায়ী একটি খাট, একটি বেড, একটি বালিশ ও একটি কম্বল (কক্ষ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হবে, কোনো কোনো কক্ষে অতিরিক্ত পাখা থাকতে পারে), পাঁচ থেকে আটজনের জন্য একটি সংযুক্ত সাধারণ গোসলখানা-শৌচাগার, মিনায় তাঁবুতে প্রত্যেক হাজির জন্য জায়গা, জেদ্দা-মক্কা-মদিনা-মিনা-আরাফাতের ময়দানে যাওয়া-আসার জন্য পরিবহন, মক্কা ও মদিনায় সাধারণ চিকিৎসা, ফ্লাইটের আগে ঢাকার আশকোনা হজ ক্যাম্পে থাকার ব্যবস্থা, হজের আহকাম-আরকান সম্পর্কে নিবিড় প্রশিক্ষণ, বইপুস্তক সরবরাহ প্রভৃতি সুবিধা পাবেন হাজিরা। প্রতি ৪৫ জন হাজির জন্য একজন গাইড নিয়োগ করা হবে।
 সরকারি ব্যবস্থাপনায় খরচের খাত : দুই ধরনের প্যাকেজেই প্রতি হজযাত্রীর জন্য বিমানভাড়া এক লাখ ১৯ হাজার ৩৫৪ টাকা, জেদ্দা-মক্কা-মদিনা-মিনা-আরাফাতের যাতায়াত ব্যয়, মিনায় তাঁবু ভাড়া ও মোয়াল্লেম ফি ২৩ হাজার ২৮৯ টাকা, মিনা-আরাফাতে মোয়াল্লেমের অতিরিক্ত খরচ ১৭ হাজার ৮৫০ টাকা, হজ গাইড সাত হাজার ৭০৩ টাকা, মিনা আরাফাতে ট্রেন ভাড়া পাঁচ হাজার ২৫০ টাকা, স্থানীয় সেবামূল্য ৮০০ টাকা, হজ প্রশিক্ষণ ফি ৩০০ টাকা ও আপৎকালীন তহবিল ২০০ টাকা, খাবার খরচ বাবদ ২৯ হাজার ৪০০, ব্যাগ বাবদ এক হাজার ৭০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি হজযাত্রীর জন্য মক্কা-মদিনায় বাড়িভাড়া একটি প্যাকেজে এক লাখ ৪৮ হাজার ৪৭০ টাকা, অন্য প্যাকেজে ৯১ হাজার ২০৩ টাকা। হজ গাইড একটি প্যাকেজে সাত হাজার ৭০৩ টাকা, অন্য প্যাকেজে ছয় হাজার ৪৩০ টাকা। হজের টাকা কোন ব্যাংকে জমা দেবেন : হজের ব্যয় বাবদ টাকা নিম্নলিখিত ব্যাংকের যেকোনো শাখায় জমা দেওয়া যাবে— ১. সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ২. অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড ৩. জনতা ব্যাংক লিমিটেড ৪. রূপালী ব্যাংক লিমিটেড ৫. পূবালী ব্যাংক লিমিটেড ৬. বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক লিমিটেড ৭. রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, রাজশাহী ৮. আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ৯. ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ১০. দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড ১১. প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড ১২. প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড ১৩. মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড ১৪. স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড ১৫. ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড ১৬. ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড ১৭. ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড ১৮. সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ১৯. শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ২০. ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড ২১. ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) লিমিটেড ২২. এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড ২৩. স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক লিমিটেড ২৪. এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড ২৫. যমুনা ব্যাংক লিমিটেড ২৬. আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড ২৭. এবি ব্যাংক লিমিটেড ২৮. ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড ২৯. ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড ৩০. মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড ৩১. এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড ৩২.সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড ৩৩. আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড।
 সর্তকতা : সঠিক স্থানে সঠিক লোকের মাধ্যমে কাজগুলো সমাধান করানোর চেষ্ঠা করুন।

 খ. বেসরকারি হজ প্যাকেজ : নিয়ম-পদ্ধতি : হজ এজেন্সির মাধ্যমে প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য বিমানভাড়া এক লাখ ১৯ হাজার ৩৫৪ টাকা, জেদ্দা-মক্কা-মদিনা-মিনা-আরাফাতের যাতায়াত ব্যয়, মিনায় তাঁবু ভাড়া ও মোয়াল্লেম ফি ২৫ হাজার ২৮৪ টাকা, স্থানীয় সেবামূল্য ৮০০ টাকা, প্রশিক্ষণ ফি ৩০০ টাকা ও আপৎকালীন তহবিল ২০০ টাকা, খাবার খরচ বাবদ ৩০ হাজার ৮৭০ এবং ব্যাগ বাবদ এক হাজার ৭০০ টাকা খরচ হবে। এ ছাড়া মক্কা-মদিনায় বাড়িভাড়া, মিনা-আরাফাতে মোয়াল্লেমের অতিরিক্ত খরচ, মিনা-আরাফাতে ট্রেন ভাড়া, হজ গাইড ও কোরবানির খরচ এজেন্সি প্যাকেজ অনুযায়ী ঠিক করে থাকে।

 সর্তকতা : অনেকেই ফিরে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এজেন্সিগুলোর ব্যাপারে। অনেক এজেন্সি চুক্তি অনুযায়ী সেবা দেয় না হাজীদের। সেই ক্ষেত্রে যাচাই-বাচাই করে সরকার অনুমোদিত এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হোন। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত হজ এজেন্সির তালিকা, কোন কোন এজেন্সির বিরুদ্ধে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ রয়েছে, তা জেনে নেবেন আগেই। মক্কায় কাবা শরিফ থেকে বাসার দূরত্ব আর মদিনায় মসজিদে নববী থেকে বাসার দূরত্বের ওপর নির্ভর করে ব্যয়ের টাকা। সরকারি বা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যেভাবেই যান না কেন কোথায় এবং কীভাবে থাকবেন, তা আগেই জেনে নেয়া জরুরি। হজ প্যাকেজে সৌদি আরবে যাওয়া-আসা, মক্কা-মদিনায় থাকা-খাওয়াসহ চুক্তিপত্রে উল্লিখিত সুবিধাগুলো বুঝে নিতে হবে। প্রয়োজনে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করুন। পড়ে, বুঝে, যাচাই করে চুক্তিপত্রে সই করুন। এ ছাড়া কখন কি ধরনের সেবা দেবে এসব বিষয় ভালো করে জেনে বিবেচনা করে হজের প্যাকেজ নির্ধারণ করুন। এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো, আর তা হল হজ এজেন্সির সঙ্গে নিজের সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টি একদম খোলামেলা আলোচনা করে নেয়া উচিত। এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ টাকা ছাড়াও আপনার মক্কা-মদিনা আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়ার জন্য যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন তা সংগ্রহে রাখুন। বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ ব্যক্তির সঙ্গে হজ করার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত টাকা সঙ্গে রাখা দরকার, কারণ কখন কী প্রয়োজন হয় তা বলা মুশকিল। যে কোনো বিপদ-আপদ বা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো প্রয়োজনীয় টাকা সঙ্গে রাখা উচিত। আর এজেন্সির টাকা জমা দেয়ার আগে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা এজেন্সিগুলো যাচাই করে নিন। যে এজেন্সিগুলো বিরুদ্ধে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ রয়েছে, তাদের সঙ্গে লেনদেন করবেন না।

 আট. ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন মালপত্রের পাশাপাশি একজন হাজিকে হজের সফরে বেশ কিছু অতিরিক্ত মালপত্র সঙ্গে নিতে হয়। তদুপরি উচিত মালপত্র যথাসম্ভব হালকা রাখা। কারণ গোটা সফরে এই বোঝা আপনাকেই বহন করতে হবে। হজ সফরের প্রয়োজনীয় মালপত্রের একটি তালিকা প্রদত্ত হলো। পাসপোর্ট, টিকিট এবং ডলার সংগ্রহ করা, ভিসা এবং টাকা রাখার জন্য গলার সঙ্গে ঝোলানো ব্যাগ, ইহরামের কাপড় (কমপক্ষে দুই জোড়া) আর মহিলাদের জন্য সাদা সালোয়ার-কামিজ এবং বোরকাই যথেষ্ট। ইহরামের সময় কপালে বাঁধার জন্য ক্যাপ এবং কোমরে বাঁধার বেল্ট, স্পঞ্জের স্যান্ডেল বা জুতা এবং জুতা রাখার জন্য কাপড়ের ব্যাগ, মাথা মু-নের জন্য ব্লেড বা রেজার, মেসওয়াক, ব্রাশ, পেস্ট, টিস্যু, আয়না, চিরুনি, তেল, সাবান, দাঁতের খিলান, বিছানার চাদর, পাম্পিং বালিশ, গায়ে দেওয়ার চাদর, প্লেট, গ্লাস, ছোট হ্যান্ডব্যাগ, বড় ব্যাগ বা লাগেজ, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ। পুরুষের এক মাসের জন্য প্রয়োজনীয় লুঙ্গি, গামছা, গেঞ্জি, টুপি, জুতা, মোজা এবং মহিলাদের এক মাসের প্রয়োজনীয় এমন সালোয়ার, কামিজ, ওড়না, শাড়ি, ব্লাউজ, বোরকা, স্যান্ডেল, প্রয়োজনীয় কিতাব বা বই এবং ব্যক্তিগত খরচের জন্য টাকা, কাগজপত্র হেফাজতের জন্য হাজিব্যাগ ও যাবতীয় মালপত্র রাখার জন্য একটি বড় ব্যাগ বা লাগেজ। শুদ্ধ এবং নিয়ম মোতাবেক হজব্রত পালন হোক আপনার অঙ্গীকার। 
নয়. সঙ্গী বা ভালো মুয়াল্লিম নিবার্চন হজের সফরের সঙ্গী নির্বাচনে আপনাকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আপনি যে দেশে যাচ্ছেন, সেখানকার পরিবেশ আপনার অপরিচিত-অচেনা, অনেকে হজের হুকুম-আহকাম সম্পর্কেও তেমন অবগত নন, কোথায়-কখন কী করতে হবে তাও ভালো করে জানেন না। এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য একজন অভিজ্ঞ এবং আলেম হজ গাইড বা মুয়াল্লিমের সঙ্গে হজে গেলে সুবিধা পাবেন। তাছাড়া সঙ্গী হিসেবে আত্মীয়স্বজন কিংবা পূর্ব পরিচিত বিশ্বস্ত লোক হলে অনাকাক্সিক্ষত অনেক ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকবেন।

 হজ-বিজ্ঞ আলেম খুঁজে নিন : সবচেয়ে বড় কথা হল হজ শুধু সৌদি আরব যাওয়া আর আসার নাম নয়, হজ ইসলামের ৫টি মৌলিক স্তম্ভের একটি অন্যতম স্তম্ভ এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হজে যাওয়ার আগে সর্বপ্রথম ইসলামী শরিয়তে হজ সম্পর্কে যেসব জরুরি মাসআলা-মাসায়েল রয়েছে তা ভালোভাবে জেনে নিতে হবে এবং অত্যন্ত যতেœর সঙ্গে প্রতিটি আবশ্যক কাজ আদায় করতে হবে, অন্যথায় সব অর্থ-শ্রম বৃথা যাবে। এর জন্য এখন থেকেই কোনো বিজ্ঞ আলেমের তত্ত্বাবধানে প্রয়োজনীয় বিষয় আত্মস্থ করে রাখা অধিক জরুরি। 
দশ. নারীর হজ প্রস্তুতি হজ ও ওমরা পালনের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর প্রায়ই একই রকম নিয়ম। তবে কোনো কোনো বিষয়ে কিছুটা পার্থক্য আছে। যা নিম্নরূপ- প্রথমেই মহিলা হজযাত্রীর সঙ্গে একজন মাহরাম পুরুষ থাকতে হবে। ২০১৩ সাল থেকে সৌদি সরকার আইন করেছে, একবার হজ করলে পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার হজ করা যাবে না, তবে মহিলাদের মাহরাম বা গাইড হয়ে যেতে চাইলে যে কোনো পুরুষ প্রতি বছরও যেতে পারবে। ইহরাম বাঁধার সময় সেলাই করা কাপড় অর্থাৎ সালোয়ার-কামিজ ও যে কোনো জুতা পরতে পারবে। চেহারা খোলা রাখবে। তবে মাথা ঢেকে রাখতে হবে। তালবিয়া ও অন্যান্য দোয়া-দরুদ উচ্চৈঃস্বরে পড়া যাবে না। তাওয়াফে রমল করা, ইজতেবা করা, সায়িতে সবুজ দুই খুঁটির মাঝখানে পুরুষদের ন্যায় দৌড় দেয়া যাবে না। সায়ি শেষে চুলের মাথা থেকে আঙ্গুলের পুরা এক গিরা পরিমাণ নিচে অথবা মাহরাম দ্বারা কেটে নেবে। পর্দা রক্ষা করে যথাসম্ভব পুরুষ এড়িয়ে চলে হজ ও ওমরা কাজ শেষ করতে হবে। তাওয়াফরত অবস্থায় নামাজের সময় হয়ে গেলে নামাজ সেরে নিতে হবে। যেখানে তাওয়াফ শেষ হবে সেখান থেকে নামাজের পর ফের শুরু করতে হবে। নামাজের জন্য মহিলাদের আলাদা বসতে বলা হয়; কিন্তু এ ক্ষেত্রে অনেক মহিলা বাড়াবাড়ি করেন। আলাদা বসতে চান না। আবার অনেক সময় দেখা যায় একত্রে বসে অনেকে গল্প শুরু করে দেন। এটাও ঠিক নয়। যত সময় হেরেমে থাকা হবে, তত সময় ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানোর প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে। হেরেমের চারপাশে মহিলাদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা আছে, যা ব্যবহার করতে হবে। মাসিকের সময় তাওয়াফ করা যাবে না। এহরাম বাধার পর মাসিক শুরু হলে নামাজ, তাওয়াফ ও সায়ি কোনোটাই করা যাবে না। পবিত্র হলে গোসল করে ওমরাহ শেষ করতে হবে। হজের সফরে বেরিয়ে মিকাতে পৌঁছার আগেই যদি মাসিক শুরু হয়, তাহলে মিকাতে পৌঁছে এহরাম বেঁধে নেবে। নামাজ, তাওয়াফ ও সায়ি ছাড়া হজের সব কাজ করতে পারবেন। পবিত্র হয়ে তাওয়াফ ও সায়ি করতে হবে। তাওয়াফ শুরুর আগে একটি স্থান নির্দিষ্ট করে রাখতে হবে। মোবাইলে মাহরাম ও মোয়াল্লিমের নাম্বার সেভ করে রাখতে হবে। তাওয়াফরত অবস্থায় হারিয়ে গেলে মাহরামকে খোঁজাখুঁজি না করে তাওয়াফে সায়ি শেষ করে নির্দিষ্ট স্থানে ফোনে খোঁজ করতে হবে। এ ছাড়া মহিলাদের সঙ্গে যা রাখতে হবে মিসওয়াক, ব্রাশ বা টুথপেস্ট, একটি গামছা, ২টি বিছানার চাদর, একটি প্লেট, ছোট আয়না, চিরুনি, একটি গ্লাস, তেল, খিলাল, টয়লেট পেপার, জুতা, মোম, একটি বালিশ, ছোট একটি হাতব্যাগ, গলায় ঝুলানো একটি ব্যাগ, একটি বড় ব্যাগ, পাথর রাখার ছোট একটি ব্যাগ, একটি জুতা রাখার ব্যাগসহ পবিত্র হজবিষয়ক ও প্রয়োজনীয় দোয়ার কিতাব, ডাক্তারের প্রেসক্রিপসন ও ওষুধ, এক কেজি চিড়া ও কিছু গুড়, দুই সেট সালোয়ার-কামিজ প্রত্যেক মহিলা হজযাত্রীকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে। গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : মাওলানা মিরাজ রহমান

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০০০ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ দুর্ঘটনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।

বাংলাদেশের সকল রাজবাড়ী ও জমিদার বাড়ীগুলির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্হা কি (ভিডও সহ )