চালকবিহীন গাড়ির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হঠাৎ বিগড়োলে সামাল দিতে পারবে তো এই গাড়ি?

চালকবিহীন গাড়ির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ

default

চালকবিহীন গাড়ি নিয়ে এখন সারা বিশ্বে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে৷ স্বয়ংচালিত গাড়ির সুবিধা হলো, সাধারণ পরিস্থিতিতে তার জুড়ি নেই৷ কিন্তু পরিস্থিতি হঠাৎ বিগড়োলে সামাল দিতে পারবে তো এই গাড়ি?
গাড়ির মাথায় ঘুরছে তার চোখ! বিজ্ঞানীরা গাড়িটার নাম রেখেছেন ‘মেড ইন জার্মানি'৷ এই গাড়িটিকে কিছু ‘মানবিক' বৈশিষ্ট্য দেবার জন্য, সেই সংক্রান্ত গবেষণা ও গাড়ি তৈরিতে পনেরো লাখ ইউরোর বেশি খরচ হয়েছে৷ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল: গাড়ি তার অব্যবহিত পারিপার্শ্বিককে চিনবে কী করে৷
আইটি-বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডক্টর রাউল রখাসের কথায়, ‘‘স্বয়ংক্রিয় গাড়িচালনার সবচেয়ে মুশকিল ব্যাপার রাস্তা চেনা বা নেভিগেশন নয় – সে তো আজকালকার সাধারণ গাড়িগুলোও পারে৷ মুশকিল হলো ট্র্যাফিক লাইট, ট্র্যাফিক সাইন আর পথচারীদের চেনা৷ বিশেষ করে রাস্তায় মানুষজন কোথায় দাঁড়িয়ে, গাড়িকে সেটা জানতে হবে, তার খেয়াল রাখতে হবে৷''
ইউরোপের সবচেয়ে বড় ড্রাইভিং সিমিউলেটর এই জার্মানিতেই৷ এখানেই পরীক্ষা করে দেখা হয়, গাড়ি চালানোর সময় মানুষের কি ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় – তা সে সাধারণ পরিস্থিতিতেই হোক, আর বিপজ্জনক পরিস্থিতিতেই হোক৷ কম্পিউটারে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেন, মানুষের তথাকথিত সপ্তম ইন্দ্রিয় কিভাবে কাজ করে৷

চালচালকবিহীন গাড়ি


প্রযুক্তিবিদদের স্বপ্ন হলো এমন একটি বুদ্ধিমান গাড়ি, যা সাধারণ গাড়িচালকদের চেয়ে বেশি যুক্তযুক্তভাবে কাজ করবে৷
যে সব বিশেষজ্ঞরা সেই গাড়ির নকশা করেছেন, তাদের একজন হলেন প্রফেসর লেমার৷ তিনি জানান, ‘‘স্বয়ংচালিত গাড়ির রহস্য হলো, গাড়িটা ঠিক একজন মানুষের মতো তার পারিপার্শ্বিকের খোঁজখবর রাখতে পারবে৷ সেজন্য দরকার এমন সব সেন্সর, যেগুলো বিভিন্ন ধরনের আলো, বিভিন্ন ধরনের আবহাওয়ায় কাজ করবে৷ তাছাড়া ঐ গাড়ির একজন গাড়িচালকের মতো অভিজ্ঞতা থাকা চাই: সামনে হয়ত কেউ সিগনাল না দিয়েই মোড় নিচ্ছে৷ এই তথ্যটিকে প্রযুক্তিগতভাবে সংগ্রহ করে সেই অনুযায়ী কাজ করা, যাতে কোনো বিপদ না ঘটে, এটাই হলো স্বয়ংক্রিয় গাড়ি চালানোর একটা কেন্দ্রীয় প্রশ্ন৷''
বার্লিনের মুখ্য রেলওয়ে স্টেশনের কাছে প্রতিদিন প্রায় পনেরো লক্ষ গাড়ি চলে – তার মধ্যে একটি ভুতুড়ে গাড়ি! কেননা সে গাড়িতে ব্রেক, অ্যাক্সিলারেটর কিংবা স্টিয়ারিং, সবই কম্পিউটার চালিত৷ ভুতুড়ে গাড়ির চারপাশে যে সব গাড়ি চলছে বা পথচারীরা চলাফেরা করছেন, লেজার স্ক্যানার, রাডার ও ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে তাদের খোঁজ রাখা হয়৷

বিশেষ একটি সফটওয়্যার সঙ্গে সঙ্গে ট্র্যাফিক পরিস্থিতি ধরতে পারে ও গাড়িকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়৷ সেফটির জন্য একজন ড্রাইভার সিটে বসে থাকলেও, গুরুতর বিপদ ছাড়া তিনি স্টিয়ারিং-এ হাত লাগান না৷
প্রফেসর ডক্টর রাউল রখাস বলেন, ‘‘ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত লাগে বৈকি, গাড়িতে বসে আছি অথচ কেউ গাড়ি চালাচ্ছে না! সেজন্য আগে থেকে মানসিক প্রস্তুতি লাগে৷ বিশেষ করে গাড়ি যখন ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে মোটরওয়ে ধরে চলেছে আর আপনি দেখছেন, স্টিয়ারিং আপনি থেকে ঘুরছে! সে এক অদ্ভুত অনুভূতি৷''
শুধু বার্লিনের জমাট ট্র্যফিকেই নয়, মোটরওয়েতে – যেখানে অনেক জায়গায় স্পিড লিমিট আছে – সেখানেও মেড ইন জার্মানি গাড়ি ঠিকই তার চ্যানেল ধরে চলে৷ এই গাড়ির ব্রেন হলো তার কম্পিউটার, সে-ই কম্পিউটারই নিজে থেকে গাড়ির চলা-ফেরা-ব্যাঁকা ঠিক করে দেয়৷
গাড়ির বুটে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি, যা বিশেষ করে বিপদ এড়াতে সাহায্য করে৷ যানচলাচল বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডক্টর কার্স্টেন লেমারের কথায়, ‘‘ভবিষ্যতের পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় গাড়ির উপকারিতার একটা দৃষ্টান্ত হতে পারে এই যে, চালকের হার্ট অ্যাটাক মতো সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে গাড়ি নিজেই সেটা বুঝে রাস্তার ধারে পার্ক করবে৷''

সব সিদ্ধান্ত নেবে গাড়ি!

চালক ছাড়া ৬০০ মাইল

এ বছরের শুরুর দিকে এই আউডি-৭ গাড়িটি যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি থেকে নিজে নিজেই পৌঁছে যায় ৬০০ মাইল দূরের লাস ভেগাসে৷ সাবধানের মার নেই- ভেবে স্টিয়ারিং হুইলের পেছনে একজন বসেছিলেন বটে, কিন্তু তাঁকে কিছুই করতে হয়নি৷

চালকের প্রয়োজন কমছে, গাড়িই হয়ে উঠছে কর্তা

Audi A7 (Jack)


পথচারীদের ভাবনা কম

কম্পিউটার গাড়িকে জানায় চারপাশের কোন বস্তু কোন দিকে যেতে পারে৷ গাড়ি সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়৷ ছবির এই গাড়ির সামনের পথচারী ডান দিক থেকে রাস্তা পার হচ্ছেন৷ তাঁকে কমলা রংয়ে আর ডান দিকের গাড়িগুলোকে সবুজ রংয়ে দেখানো হচ্ছে, যার অর্থ, এখন কোনো বিপদের আশঙ্কা নেই৷
Deutscher Zukunftspreis 2011 Nominierung Daimler Technologie

মেড ইন জার্মানি

ডাইমলারের গবেষকরা নিরাপদ গাড়ি তৈরির জন্য অপটিক্যাল ক্যামেরাও ব্যবহার করছেন৷ উইন্ডশিল্ডের পেছনের সেন্সরটা রাস্তায় কী ঘটছে তা দেখে৷ গাড়ি চালনার এই নিরাপদ ব্যবস্থা ২০১১ সালে জার্মানির সেরা উদ্ভাবনের পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল৷

Deutscher Zukunftspreis 2011 Nominierung Daimler Technologie

লেজার স্ক্যানারের চোখে....

জার্মান সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গাড়িটি কেমন দুর্গম পথ দিয়ে চলছে দেখুন! চলতে কিন্তু সমস্যা হচ্ছেনা৷ লেজার স্ক্যানার চার পাশটাকে স্ক্যান করছে, কম্পিউটার ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করে দিচ্ছে আর তা দেখে দেখে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ি৷
Laserscanner auf dem Dach des autonomen Fahrzeuges der Universität der Bundeswehr

সব তথ্যের জন্য আলাদা আলাদা সেন্সর

রোবোটিক গাড়ি তার চারপাশের সবকিছু আলাদা আলাদা চোখ দিয়ে দেখে৷ চোখের কাজটা করে সেন্সর৷ গুগল কার-এ থাকে এই ধরণের লেজার সেন্সর যার মাধ্যমে চারপাশের সবকিছুর ত্রিমাত্রিক ছবি ফুটে ওঠে৷

Wachtberg Fraunhofer Institut Kommunikation Informationsverarbeitung und Ergonomie

দুর্ঘটনা এড়ানো

অনেক সময় চালক সামনের পথ না দেখেও যখন দ্রুত গাড়ি চালাতে যান তখনই দুর্ঘটনা ঘটে৷ কুয়াশায় ঢাকা পথ, কিংবা প্রবল বর্ষণের মধ্যে প্রায়ই এমন হয়৷ কিন্তু রোবোটিক গাড়ির বেলায় কখনো এমন হবেনা৷ এ গাড়ি নিজেকে যেমন সামনের গাড়ি থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখবে, তেমনি পেছনের গাড়িকেও সতর্ক করবে৷ ভবিষ্যতে এমন গাড়ি তৈরি করা হবে যে গাড়ি সামনে যে বাধা আছে সে খবর পেছনের গাড়িকেও জানিয়ে দেবে৷
Deutschland Rostock Massenkarambolage Sandsturm

একে অন্যকে অনুসরণ করবে

মিউনিখে অদ্ভুত এক প্রতিযোগিতায় নেমেছিল জার্মান সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুটি গাড়ি৷ প্রথমটিকে দ্বিতীয়টি সবসময় পেছন থেকে অনুসরণ করবে- এমন প্রতিযোগিতা৷ পেছনের গাড়িটি কিন্তু একবারও নিয়ম অমান্য করেনি!
Bildergalerie Autonome Militärroboter

অস্থির লোকদের জন্য নয়

যাঁরা সবসময় শুধু দ্রুতই ছুটতে চান তাঁদের জন্য কিন্তু এই গাড়ি নয়৷ স্বয়ংক্রিয় গাড়ি বিপদ এড়ানোর জন্য প্রয়োজনে যে-কোনো মুহূর্তে গতি মন্থর করবে৷ সামনের গাড়ি বা অন্য কোনো বাহন থেকে নিরাপদ দূরত্বও বজায় রাখবে সবসময়৷

Symbolbild Drängler im Verkehr

চালকের আসনই নেই!

স্বয়ংক্রিয় গাড়ি কেমন হতে পারে তার একটা নমুনা মার্সিডিজ বেঞ্জের এই এফ০১৫ মডেল৷ গাড়িতে চালকের আসন নেই৷ যাত্রীদের আসনগুলোই মুখোমুখি৷ পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি এ গাড়ি রাস্তায় নামলে ঘণ্টায় ১২৫ মাইল বেগে ছুটতে পারবে৷

Mercedes Benz automatisch fahrendes Auto selbstfahrendes Auto F015

গাড়ি মানেই দূষণ?

পথে যত গাড়ি, ততই যানজট ও দূষণ৷ জার্মানির পরিবেশবাদী সংগঠন প্রদর্শনীর বাইরে তাই এই নেতিবাচক দিকগুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে প্রতিবাদ দেখিয়েছে৷ কার্বন নির্গমন কমাতে গাড়ি-নির্মাতাদের অনীহা তাদের রোষের কারণ৷ পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও অটোমোবাইল ও পেট্রোলিয়াম কোম্পানির চাপে বিকল্প জ্বালানির গাড়ির বিকাশ থেমে রয়েছে বলে তাদের অভিযোগ৷

default

স্বচ্ছ ডিজাইন

মার্সিডিস কোম্পানির ভবিষ্যতের এই গাড়ির মডেলে বসে চালক ও সহযাত্রীরা কার্যত বিনা বাধায় উপর-নীচ ও আশেপাশের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন৷ এখনো পর্যন্ত শুধু এর প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়েছে৷
default

চালকবিহীন গাড়ি

এবারের গাড়ি প্রদর্শনীতে চালকবিহীন গাড়ি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ জার্মানির ডাইমলার গ্রুপ এমনই একটি প্রোটোটাইপের মডেল পেশ করেছে৷ গুগল সহ বিভিন্ন কোম্পানি ভবিষ্যতে এমন গাড়ি বাজারে আনতে চায়৷
default

মঞ্চে অঘটন

বিএমডাব্লিউ কোম্পানির প্রধান হারাল্ড ক্র্যুগার সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন৷ শীর্ষ কর্তাদের কতটা স্ট্রেস বা মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়, এই ঘটনাকে তারই উদাহরণ হিসেবে দেখছেন অনেকে৷ শরীর খারাপ হওয়া সত্ত্বেও ক্র্যুগার তাঁর দায়িত্ব পালন করতে এগিয়ে এসেছিলেন৷

default

ডিজাইন মানেই চমক

পর্শে কোম্পানির ‘মিশন ই-কনসেপ্ট’ গাড়ি রূপে-গুণে চমকপ্রদ৷ সামনের ও পেছনের দরজা নিজস্ব ভঙ্গিতে খুলে যায়৷ ব্যাটারিচালিত এই গাড়ি চার্জ করতে নাকি মাত্র ১৫ মিনিট লাগে৷ ফলে অ্যামেরিকার ‘টেসলা’ কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতা হবে এই মডেলের৷
default


উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ম্যার্কেল

শরণার্থী সংকট থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে ব্যস্ত জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল শুধু প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই উপস্থিত থাকেননি, প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে ঘুরে দেখেছেন৷ কিছু গাড়ির স্বয়ংক্রিয় পার্কিং-এর ক্ষমতা দেখে তিনি খুব খুশি৷ বলেছেন, একমাত্র নারীরাই স্বীকার করে যে, তাঁদের পার্কিং করতে অসুবিধা হয়৷ পুরুষরাও এই সুবিধা উপভোগ করে৷

default


লাম্বোরগিনি৷

ইটালির হাল ফ্যাশনের লাম্বোরগিনি হুরাকান মডেল শুধু চার চাকার যান নয়, রীতিমতো ফ্যাশনদূরস্ত ডিজাইনই হলো এই কোম্পানির গাড়ির মূলমন্ত্র৷ গাড়ির ভিতরে-বাইরে প্রতিটি কোণেই পাওয়া যায় আভিজাত্যের ছাপ৷ মানুষের ‘ইনস্টিংক্ট’ বা সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী এই মডেল ডিজাইন করা হয়েছে বলে দাবি করছে লাম্বোরগিনি৷
default

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

The national flag Cambodia

world map

Schengen Visa Types & Validity- Visa Fees --Travel Insurance-statistics